সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৩

একটি নৈশভোজ ও একটি জাতির ভাগ্য


 
 
বুশরা হোসেন
১৭৩ দিন হরতাল পালনকারীরা যখন বলেন --- ‘একের পর এক হরতাল দিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী জন জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন’ --- এটা জাতির সাথে করা সরকারী দলের উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। একতা জাতি ৫ টি বছরে আর কত উপহাস সহ্য করবে ?? আওয়ামী মন্ত্রীরা একের পর এক যেমন নির্লজ্জের মত কথা বলে যাচ্ছেন এগুলি উপহাস নয় ত কি? আপনারা এখন কি ভাবেন এই দেশবাসী কে অনেক মূর্খ অথবা আপনারা সর্বোত্তম বুদ্ধির অধিকারী ? অথবা শেখ হাসিনা কি ভাবেন যে এই জাতির পিতা বানিয়েছেন আপনার পিতা কে তাই এই গোটা জাতি আপনার পৈতৃক সম্পত্তি । যত হেঁয়ালি পনা আপনাদের মন চায় তা আপনারা করতে পারেন এই জাতির আত্মসম্মান আর সম্ভ্রম নিয়ে। আপনাদের ক্ষেত্রে আইনের একরকম প্রয়োগ আর অন্যদের জন্য ভিন্ন প্রয়োগ – সবাই কি অন্ধ ,মানুশ কি কিছুই বোঝে না,কিছুই দেখে না? মিথ্যাচার করতে করতে আপনার ভুলেই গেছেন যে সত্য কথা কাকে বলে? নিরবতাকে যদি আপ্নারা দুর্বলতা ভাবেন তবে তা ভুল হবে।সমুদ্র যখন স্থির থাকে তখনি প্রলয়ঙ্কারি তুফান আসে। আপনাদের মনে রাখা উচিৎ এই জাতি শুধু সহ্য করতে জানে না গর্জে উঠতে জানে , বহুবার দেখেছে বিশ্ববাসী সেই গর্জে ওঠা।
আমরা আপনাদের সংক্ষেপে মনে করিয়ে দিতে চাই আপনাদের করা কিছু নির্মম নির্লজ্জ রসিকতা আর মিথ্যাচার---
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের আগেই সরকারের কাছে সিপাহীদের বিদ্রোহের পূর্বাভাষ পৌঁছেছিল এবং সিপাহীরা নানক ও তাপসের শরনাপন্ন হয়েছিল।কিন্তু সরকারের কি কারনে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি... কেন প্রধান মন্ত্রী প্রধান অতিথি হওয়া সত্তেও সেখানে জান নি.....? বন্দী করার সাথেসাথে কেন সরকার নিরব দর্শক এর মত অপেক্ষা করেছিলেন আর কালক্ষেপণ করে ১৫৭ জন সুদক্ষ অফিসার এর জীবন শেষ হয়ে গেল আর সেখানে বন্দী পরিবারগুলি নির্যাতিত হতে দিল। তাৎক্ষণিক উপযুক্ত বাবস্থা গ্রহন করলে এই তাণ্ডব ঠিকই দমন করা যেত । যে সরকার কয়জন সিপাহীর হাত থেকে এত কয়জন অফিসার কে রক্ষা করতে পারল না তারা এই জাতিকে এর সার্বভৌমত্ব কে কি রক্ষা করবে?
শেয়ার বাজার সর্বকালের সর্বনিম্ন দরপতনের পরে অর্থমন্ত্রীর করা মন্তব্য—এটা একটা দুষ্টু বাজার,এই কথা শেয়ার ব্যবসায়ীদয়ের কষ্টের আগুন আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল । সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার ভিতর সাগর-রুনির খুনিদের ধরার প্রতিশ্রুতি দিলেন আর নিজেদের অপকর্ম ও ব্যর্থতার দায় সারাতে অপবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন কারো বেডরুম পাহারা দেবার দায়িত্ব সরকারের নয় । একের পর এক গার্মেন্টস দুর্ঘটনা আর শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে সাংবাদিকদের সৈয়দ আশরাফ বলেন যে এটা একটা প্রাইভেট সেক্টর এর দায়ভার সরকারের না। আর রানাপ্লাজা ধসে পড়ার কারন দেখালেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর করা উক্তি তো সকল মশকরাকেও হার মানায়। চট্রগ্রাম এর ফ্লাইওভার ধস , পদ্মাসেতু দুর্নীতি, ডেস্টিনি - হলমার্ক কেলেঙ্কারি আরও নানান সব দুর্নীতিতে দেশ বাসি কিন্তু দেখে যাচ্ছে সরকারের নির্লজ্জতা। নিজ দলের সন্ত্রাসীদের কুকর্ম অকপটে বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু সবাই দেখছে প্রকৄত সত্যটা ।
যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করার মহান ইচ্ছা যদি আপনাদের থাকত তাহলে তা কেন সিভিল কোর্টএ হবে? পৃথিবীর যে দেশে এই বিচার হয়েছে তার প্রত্যেকটি হয়েছে মার্শাল কোর্টএ – এটাই প্রমান করে যে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারটা আপনাদের জন্য দেশ বাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য একটি Emotional Issue আর কিছুই নয়,যদি সত্যি বিচারটা আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হত তবে মুজিবকন্যা একজন রাজাকার এর সাথে পরম আত্মীয়টা করতে পারতেন না আর নিজ দলের যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার আগেই করতেন আর তা করে ফেলতেন ১৯৯৬ এ ক্ষমতায় আসার পরেই। এই বিচার নিয়ে শাহাবাগে কিছু বিতর্কিত নাস্তিক-নাট্যকার-নেশাখোরদের নিয়া মঞ্চস্থ করা হল ‘গনজাগরন মঞ্ছ’। ৯০% মুসলমান আর দেশে নাস্তিকদের সব নোংরামি হচ্ছে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় আর তারা আল্লাহ-নবীরাসুল কে নিয়ে সমানে আজেবাজে কথা বলে যাবে তার প্রতিবাদ করলেই যুদ্ধ অপরাধী স্বীকৃতি পেতে হবে। আর আই বিচারের প্রহসন নিয়ে Skype এর সংলাপে সরকারের পাপ জনসম্মুখে প্রকাশ করায় কারা বরন করছেন অসীম সাহসী সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান। হেফাজতের হত্যাযজ্ঞ দেশ বাসীকে যেন জানান না হয় তার জন্য বন্ধ করে দেয়া হল দিগন্ত টিভি। এক শ্লোগান কন্যার চরিত্রের কথা প্রকাশ করায় চাপের মুখে আরেক সংবাদপত্রও। দেশটা স্বাধীন হলেও কথা বলার যেন এততুকু স্বাধীনতা নাই কারও। এই নোংরামির প্রতিবাদে হেফাজত ইসলাম এর শান্ত কর্মসূচির উপরে চালান প্রতিটি গুলির হিসাব আপনাদের দিতে হবে আর কানে ধরে শহর মুসুল্লিদের থেকে বের করে দেয়ার অপমানে আল্লাহও আপনাদের ক্ষমা করবে না !!
মহান জাতিও সংসদে দাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার সাংসদদের অশালীন বক্তব্য ও মিথ্যাচার দেখে প্রতিটি মানুষ নির্বাক হয়ে যায় এটা কি জাতিও সংসদ নাকি নিষিদ্ধ পল্লী। সরকারী দলের সংসদে আচরন প্রতিটি মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে তাদের শেকড় সম্পর্কে । ইচ্ছামত সংবিধান কে পরিবর্তন করে যাচ্ছে স্কুলের রাফখাতার লেখার মত।প্রত্যেকটি টিভি টক শো তে সরকারী দলের ব্যক্তিদের ঔদ্ধত আচরন সবাইকে খুব্ধ করে তুলছে।তারা সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন অসাংবিধানিক ভাবে। পাঁচ টি সিটি কর্পোরেশন জনগন তাদের ক্ষোভের কিছুটা বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে । আর এতে আওয়ামি অপশক্তি ভয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে। গতবারের মত এবার তাই ক্ষমতায় আসার জন্য খুঁজছে তারা পিছনের দরজা । এজন্য তত্ত্বাবধায়ক আথবা নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন সঠিক রূপরেখা – এই প্রসঙ্গ আসলেই যেন এ সরকারের বধির আচরন শুরু হয় ।
আবার ৫ বছর পরে ফিরে এসেছে নির্বাচনী মহেন্দ্রক্ষণ। একটি নিরপেক্ষ নিরপেক্ষ নির্বাচন দেশবাসীর প্রত্যাশা। আপনারা যদি এত আত্মবিশ্বাসী থাকেন তাহলে কেন ভয় পাচ্ছেন দেশবাসীর প্রত্যাশা পুরনে? একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে দুই দলের দুই মেরুর প্রস্তাব কি একটি বৈঠকে একদিকে ধাবিত হবে? স্বভাবগত আচরনে একজন টিপ্পনীপ্রিয় অপরজন আপোষহীন ।আজ আমাদের এই কঠিন সমস্যা যদি একটি নৈশ ভোজের মাধ্যমে সমাধান হয় তাহলে বুঝবো যে আসলেই আমরা শুধরাতে পেরেছি । আমাদের সুন্দর দিনের আগমন ঘটছে। আর যদি জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার কোন ষড়যন্ত্র করা হয় ,মনে রাখবেন যে আমরা গর্জে উঠে অধিকার আদায় করতে জানি।     

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads