রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৩

বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য দরকার বহুদলীয় মিডিয়া


শফিক রেহমান


আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মি. মাহমুদুর রহমান এখন কোথায়? কাওরান বাজারে তার পত্রিকার অফিসে তিনি এখন নেই। 
তিনি আছেন কাশিমপুর জেলে। 
ভিন্ন মতাবলম্বী মিডিয়া দমন ও দলনে ঐতিহাসিকভাবে পারদর্শী আওয়ামী লীগের বহু ভিকটিমের মধ্যে একজন ভিকটিম, নির্যাতিত দলিত মি. মাহমুদুর রহমান। 
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার মাত্র এক বছর পরেই জানুয়ারি ১৯৭৩-এ মিডিয়া-পীড়ন শুরু করেছিল তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার। পররাষ্ট্র দফতরের সামনে বগেনভিলিয়া ফুল চত্বরে পুলিশের গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারীদের বিষয়ে সেদিন বিকেলেই একটি টেলিগ্রাম সংখ্যা প্রকাশের দায়ে দৈনিক বাংলার সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাৎক্ষণিকভাবে। সেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি পুলিশের গুলিতে বাঙালি বিক্ষোভকারী নিহত হবার ঘটনাটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান। এর খেসারত তাকে দিতে হয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধে অনুপস্থিত তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতার সিদ্ধান্তে। 
সেই থেকে শুরু। 
এর বছর দুয়েক পরেই সেই নেতা ও তার সরকারের কালো আইনের ফলে মাত্র চারটি দৈনিক পত্রিকা বাদে অপর সব পত্রপত্রিকা নিষিদ্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশে। ওই চারটি দৈনিক পত্রিকাই হয় সরকারি মালিকানাধীন। সেই সময়ে টেলিভিশন এবং রেডিও ছিল সরকারি মালিকানাধীন। অর্থাৎ, সরকারের বাইরে মত প্রকাশের কোনো সুযোগই তখন আর ছিল না। 

মনোবৃত্তি বদলায়নি 
তার প্রায় চল্লিশ বছর পরে বাংলাদেশে মিডিয়ার ছবি অনেক বদলে গেলেও আওয়ামী লীগের মনোবৃত্তি বদলায়নি। 
এখন বাংলাদেশে একদিকে রয়েছে সরকরি মালিকানাধীন টেলিভিশন, রেডিও এবং সংবাদ সংস্থা বাসস বা বিএসএস। অন্যদিকে রয়েছে বেসরকারি দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টেলিভিশন, রেডিও এবং ইন্টারনেট, অনলাইন মিডিয়াÑ যার একাংশ বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। 
কিন্তু এখন চলছে নির্বাচিত মিডিয়া দলন। অর্থাৎ, মিডিয়ার যে অংশটি ভিন্ন মতাবলম্বী, যে মিডিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দ নয় তাকে দমন করা হচ্ছে। দেশী-বিদেশী উভয় ধরনের নির্বাচিত মিডিয়াই গত সাত বছরে আওয়ামী পৃষ্ঠপোষক সরকার এবং আওয়ামী সরকার দ্বারা দলিত হয়েছে। ইন্টারনেটে ফেসবুক ও ইউটিউব সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে সোনার বাংলাদেশ ওয়েবসাইট এবং তার পরিচালক আমিনুল মোহাইমেনকে জেলবন্দি করা হয়েছে। তার পরিবার এখন নিদারুণ অর্থকষ্টে আছে। বন্ধ হয়ে গেছে চ্যানেল ওয়ান টিভি, দিগন্ত টিভি এবং ইসলামিক টিভি। বন্ধ হয়ে গেছে দৈনিক আমার দেশ। সরকারি বিজ্ঞাপন কমিয়ে দেয়া হয়েছে দৈনিক নয়া দিগন্ত-র। এর ওপর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ আরো কিছু মন্ত্রী নিয়মিতই নিন্দা করছেন টিভি টক শো-র। চেষ্টা চলছে টক শো নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিধিমালা প্রণয়নের। 
অর্থাৎ, মিডিয়া দলনের ক্ষেত্রে চারিত্রিকভাবে চল্লিশ বছর পরেও আওয়ামী লীগ বদলায়নি। 

ক্ষতিগ্রস্ত হন কারা? 
এখানে আমি আপনাদের একটু বুঝিয়ে বলতে চাই, মিডিয়া দলনের ফলে কারা ব্যক্তিগত এবং পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। 
আমার দেশ নিষিদ্ধ হবার ফলে শুধু সম্পাদক মাহমুদুর রহমানই ননÑ তার সঙ্গে তার প্রায় ৮০০ কর্মচারী সাংবাদিক ঢাকা ও মফস্বলে এবং প্রেস শ্রমিকের পরিবার বিপন্ন হয়েছে। ঈদ তাদের জন্য আনেনি বেতন-বোনাস আনন্দ। শুধু এরাই নন, এদের বাইরে বৃহত্তর পরিধিতে রয়েছেন দেশজুড়ে শত শত পত্রিকা হকার, যারা পত্রিকা বিক্রি করে আয় করেন। তাদের আয়ও কমে গেছে। 
জুলাই ১৯৮৬-তে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ হয়েছিল। আমার মনে পড়ে তখন এক সন্ধ্যায় গুলশান এক নাম্বার মার্কেটের সামনে ছেড়া প্যান্ট ও ময়লা শার্ট পরা এক কিশোর হকারকে, যে আমাকে চিনত। আমার কাছে এসে সে বলেছিল, সাহেব, আপনার যায়যায়দিন তো বন্ধ হয়ে গেল। আপনি বড়লোক। আপনি বেচে থাকতে পারবেন, কিন্তু আমার কী হবে? যায়যায়দিন বিক্রি করে যে বাড়তি টাকাটা আমি পেতাম, তারই ভরসায় আমি গ্রাম থেকে আমার মাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলাম। এখন কী হবে? মাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে হবে? আমাদের চলবে কী করে? 
এই বলে সে ঝরঝর করে কেদে ফেলেছিল। 
গণভবনে বসে পত্রিকা নিষিদ্ধ করা তাদের পক্ষেই সম্ভব, যারা এসব গণমানুষের পত্রিকানির্ভর জীবিকার কথা বিন্দুমাত্র ভাবেন না। 

জীবনের ঝুকি নিতে হয় 
আমার দেশের মতো একইভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন ও চ্যানেল ওয়ান টেলিভিশনের কর্মচারীদের পারিবারিক জীবন। ওয়ান ইলেভেনের পরে একইভাবে বিপন্ন হয়েছে দৈনিক যায়যায়দিনের কর্মচারী-সাংবাদিকদের জীবন। প্রকৃত মালিক হারিয়েছেন যায়যায়দিনের মালিকানা। এখানে একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, ভিন্নমত প্রকাশের কারণেই মাহমুদুর রহমানকে জেলে যেতে হয়েছে। ভিন্নমত প্রকাশের কারণেই আমাকে অতীতে এরশাদ সরকারের আমলে প্রায় পাচ বছর নির্বাসিত থাকতে হয়েছিল, যার ফলে আমি আমার পিতা-মাতা উভয়কেই তাদের মৃত্যুর সময় সেবা করতে পারিনি। সম্প্রতি ৬ মে ২০১৩-র ভোর রাতে যখন শাপলা চত্বরে হেফাজতের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর হত্যা অভিযান চলছিল, তখন আমার বাড়িতে বোমাবাজির পর আমাকে বারো ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল আওয়ামী সরকার সমর্থকরা। অর্থাৎ, ভিন্নমত প্রকাশের জন্য, মাহমুদুর রহমান, আমাকে এবং আরো অন্যান্যকে তাদের প্রতিষ্ঠানই যে শুধু হারাতে হয়েছে তা নয়Ñ আমাদের জীবনের ঝুকিও নিতে হয়েছে। 
বহু সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। যেমন সাগর-রুনি দম্পতিকে। এরা ছাড়াও আরো অনেক সাংবাদিক-মিডিয়াকর্মী হতাহত হয়েছেন। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দায়িত্ব নতুন সরকারকে নিতে হবে। প্রসঙ্গত আমি বিএনপি নেত্রীকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এই সাগর-ই আপনার ইন্টারভিউ নিতে বার্লিন থেকে এসেছিলেন ঢাকায়Ñ এবং আপনি তাকে ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। 

সরকার পরিবর্তন হলে কী হবে? 
এখন ধরা যাক, ভবিষ্যতে কোনো এক সময়ে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু এবং অবাধভাবে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন হবে। বর্তমানে যারা বিরোধী দল, ধরা যাক তারা সেই নির্বাচনে বিজয়ী হবে। 
তখন কী হবে? 
বিজয়ী দলের নেতারা এমপি হবেন, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী হবেন। বাড়ি-গাড়ি পাবেন। ডিউটি ফৃ গাড়ি কেনার সুযোগও হয়তো পাবেন। 
বর্তমানে নির্যাতিত এবং ওএসডি আমলারা ফিরে পাবেন বকেয়া বেতন-ভাতাসহ মর্যাদাপূর্ণ নতুন চাকরি। তারা হবেন যুগ্ম সচিব, সচিব, রাষ্ট্রদূত ইত্যাদি। 
শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা ফিরে পাবেন দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ, যেখানে তারা আবার আয় এবং লাভ করবেন। রিহ্যাব ফিরে পাবে দেশজুড়ে ফ্যাট বিক্রির সুযোগÑ এখন যেটা প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। সেই সঙ্গে আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সব ব্যবসা, যেমন টাইলস, পাইপ, স্টিল রড, স্যানিটারি ফিটিংস, ইলেকটৃক ফিটিংস, সবই আবার স্বচ্ছন্দ গতিতে চলবে। মিডল ইস্টে লোক পাঠানোর ব্যবসাও আবার পুরো দমে শুরু হতে পারবে। 
তখন ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ আক্রান্ত হবে না। আওয়ামী সমর্থক চ্যানেল আইতে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিয়ে যায় ইসলামী ব্যাংক। তখনো তারা তাই করতে পারবে। তখন দেশে সুন্দর পরিবেশে সুন্দর ব্যাংকিং ব্যবসা করতে পারবে, বর্তমানে আক্রান্ত গ্রামীণ ব্যাংক। সেই সঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকসহ অন্য সব ব্যাংক এবং সব ইনসিওরেন্স কোম্পানি। সবাই। সবাই। 
অর্থাৎ, সারা দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতির ফলে বিএনপি এবং তার সহযাত্রী রাজনৈতিক দলগুলো, আমলাতন্ত্র, শিল্প এবং ব্যবসা-ব্যাংকিংতন্ত্র সবাই দেশের পরিবর্তিত অবস্থার সুফল ভোগ করবে। 

নির্যাতিত মিডিয়ার কী হবে? 
কিন্তু এই পরিবর্তনের জন্য যারা জীবন ও প্রতিষ্ঠানের ঝুকি নিয়ে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন, তাদের কী হবে? 
মাহমুদুর রহমানের কী হবে? দৈনিক আমার দেশসহ অন্যান্য নির্যাতিত এবং দলিত মিডিয়ার কী হবে? 
উত্তরটা হচ্ছে, মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশকে জিরো বিজ্ঞাপন এবং জিরো সার্কুলেশন থেকে আবার শুরু করতে হবে। 
মাহমুদুর রহমানকে তার অফিস থেকে গ্রেফতার করার রাতে আমি তার সঙ্গে তার অফিসে ছিলাম। তিনি বলছিলেন, আমার দেশ-এর সার্কুলেশন, প্রথম আলোর সার্কুলেশন ছুই ছুই করলেও, চট্টগ্রাম এবং উত্তর বাংলায় প্রেসের অভাবে তিনি অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে পারছেন না। 
সেই অবস্থা তিনি আর ফিরে পাবেন না। 
আমার দেশ-এর তালাবন্ধ প্রেসে মরচে ধরছে। আয় না থাকলেও পত্রিকাটির বিভিন্ন খরচ থেকেছে, যেমন অফিস ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফোন, কর্মীদের বেতন ইত্যাদি। সরকার পরিবর্তিত হলে, প্রেসের যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক করা, কর্মচারী-সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন মেটানো, আয় না থাকার ফলে যে ধার হয়েছে, সেসব শোধ দেয়া নিয়ে মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশ কর্তৃপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হবে। যে বিরাট ক্ষতি তার হয়েছে, সেটা কিভাবে তিনি পূরণ করবেন? 
একই সমস্যায় পড়বে দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান টিভি ইত্যাদি। 

বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য দরকার বহুদলীয় মিডিয়া 
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভিন্ন মতাবলম্বী মিডিয়া যদি তখনো দুর্বল থাকে, তাহলে নতুন সরকার কত দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে? নিউজপেপার, টিভি, রেডিও, অনলাইন সার্ভিস-এর অধিকাংশই আওয়ামী সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও পাচ বছরে আওয়ামী সরকারকে বিদায় নিতে হচ্ছে। আর যদি মিডিয়ার সেই অংশটি নতুন বিএনপি সরকার বিরোধী হয়, তাহলে পাচ বছরে নয়Ñ পাচ মাসেই নতুন সরকারের পতন ঘটবে। 
সুতরাং বহুদলীয় গণতন্ত্র যদি এই দেশে টিকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে অবশ্যই বহুদলীয় মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

দয়াভিক্ষা নয় Ñ ক্ষতিপূরণের দাবি 
আর সে জন্যই নতুন সরকারের দরকার হবে গত সাত বছরে ক্ষতিগ্রস্ত মিডিয়াকে যথোপযুক্ত এককালীন ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের অবিলম্বে কার্যকর হবার ব্যবস্থা করা। 
এখানে আরো বলা উচিত, আমার দেশ অথবা দিগন্ত টিভির জন্য আমি করুণাভিক্ষা করছি না। কারো দয়াভিক্ষা করছি না। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই জনপ্রিয় ছিল এবং ব্যবসায়িকভাবে চালু ছিল। সুতরাং সেই অবস্থায় ফিরে যাবার সুযোগটি তাদের অতি ন্যায্য দাবি। নতুন সরকারকে এই দাবি মেটাতেই হবে। 

এতে খরচ পড়বে কত? 
ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে দু শকোটি টাকা করে এককালীন ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রস্তাব আমি করছি। 
এটা এমন কোনো বড় পরিমাণ নয়, বিশেষত সেই দেশে, যেখানে হলমার্ক কর্তৃপক্ষদের মতো দুর্বৃত্তদের সরকারি ব্যাংক থেকে লুটপাটের সুযোগ দেয়ার পর আওয়ামী অর্থমন্ত্রী বলতে পারেন, ৪০০০ কোটি টাকা কিছুই নয়। নিউ ইয়র্কে চলতি সপ্তাহে আওয়ামী অর্থমন্ত্রী আবার বলেছেন, ৪০০০ হাজার কোটি টাকা পিনাট, অর্থাৎ চিনাবাদাম মাত্র! আপনারা এটাও জানেন, এসব ব্যাংক লুটপাটের টাকাতেই গড়ে উঠেছে অনেক আওয়ামী সমর্থক মিডিয়া। যেমন, ডেসটিনির বৈশাখী টিভি। আর তাই আমার দাবি, রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে যখন দলীয় মিডিয়া গঠিত হতে পারেÑ তখন রাষ্ট্রীয় প্রতিকূলতায় ক্ষতিগ্রস্ত ভিন্ন মতাবলম্বী মিডিয়াকে ক্ষতিপূরণ রাষ্ট্রকেই দিতে হবে। 
আরেকটি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মিডিয়াকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। 
নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক সৃষ্টি ছাড়া ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক সৃষ্টি দুঃসাধ্য হবে। বহুদলীয় মিডিয়া গঠনের লক্ষ্যে ভিন্ন মতাবলম্বী মিডিয়াকে আর্থিকভাবে সুসংহত করতে হবেÑ এবং সেটা বৈধভাবেই করতে হবে। তা না হলে ভিন্ন মতাবলম্বী মিডিয়াতে যোগ্য সাংবাদিক-কর্মচারী যোগ দেবেন না। 
শুধু বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং মালিকানা বদল হয়ে যাওয়া মিডিয়াই নয় Ñ যেসব মিডিয়া গত সাত বছরে কিছুটা হলেও মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সেনা সরকার এবং আওয়ামী সরকারের উচিত সমালোচনা করেছে এবং যার ফলে তারা বিজ্ঞাপনী আয় হারিয়েছে এবং বিভিন্ন হুমকির মুখে পড়েছে, তাদেরও এককালীন ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব আমি করছি। 

ন্যাশনাল প্রেস কাবের গণতান্ত্রিক ভূমিকা 
এরপর আমি আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে, ক্ষতিপূরণ নয়Ñ অর্থসাহায্য দেয়ার প্রস্তাব করছি। এটি ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রেস কাব। সাম্প্রতিক কালে জাতীয় প্রেস কাব যে সাহসী ভূমিকা রেখেছে তার ফলে সেখানে একের পর এক ভিন্নমতের সম্মেলন, সেমিনার এবং গোলটেবিল বৈঠক হতে পেরেছে। যখন আমার লেখা আটটি বই প্রকাশনা আওয়ামী সরকার মরিয়া হয়ে বন্ধ করতে চাইছিল, যখন সোনারগাও হোটেল ও শেরাটন হোটেল (রূপসী বাংলা হোটেল) কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে প্রকাশনা উৎসব বাতিল করে দিয়েছিল, যখন আওয়ামী সন্ত্রাসের ভয়ে আর কোনো হল আমাদের স্থান দিতে চাইছিল না, তখন একমাত্র জাতীয় প্রেস কাব আমাদের বই প্রকাশনার স্থান দিয়েছিল। এই প্রেস কাবকে তার গণতান্ত্রিক ভূমিকার জন্য পুরস্কৃত করা উচিত। এই প্রেস কাবের দ্বিতীয় হলভবনটি নতুন করে নির্মাণ এবং সেখানে এয়ারকুলারসহ ভালো সাউন্ড সিস্টেম স্থাপনের প্রস্তাব আমি দিচ্ছি। সেখানে দোতলায় আরো কয়েকটি বিভিন্ন সাইজের কনফারেন্স রুম বানানোর প্রস্তাব দিচ্ছি। পাশাপাশি এই প্রেস কাবে আমি ১০০ রুমবিশিষ্ট গেস্ট হাউস বানানোর খরচও দেয়ার প্রস্তাব করছি। ঢাকা কাব এবং চিটাগাং কাবের গেস্ট হাউসের মতোই এই গেস্ট হাউসে এসে থাকতে পারবেন মফস্বলের সাংবাদিকেরা। 
বিএনপি নেতৃবৃন্দের কাছে আমার প্রত্যাশা, তারা ক্ষমতাসীন হলে যেন আমার এই তিনটি প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়িত করেন। 

অকার্যকর হয়ে থাকা ধিকৃত একটি সংসদ আর কয়েক দিন পরেই বিদায় নেবেÑ তার বদলে পাঠকেরাই এখন জনগণের সংসদ। যদি পাঠকেরা মনে করেন ক্ষতিগ্রস্ত মিডিয়াকে আমার প্রস্তাবিত পরিমাণের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত, তাহলে আপনারাও সবাই এ দাবি জানান। 
এ দাবি পূরণ হলে বহুদলীয় মিডিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে। 
বহুদলীয় গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হবে।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads