মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৩

প্রধানমন্ত্রীর জন্য সঠিক কাজ একটাই এখন


আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন একটাই ঠিক কাজ করতে পারেন। তা হলো, এই নির্বাচন আয়োজন ও সম্পন্ন করার জন্য নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনের ব্যবস্থা করে দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া। এ ছাড়া আর যা কিছুই তিনি করতে যান না কেন, সব কিছুই ভুল হবে। প্রতিপক্ষের জন্য গর্ত খুঁড়তে গিয়ে তিনি নিজেও গর্তে পড়ে গেছেন এবং সেই সাথে দেশের মানুষদেরও তিনি গর্তে ফেলে দিয়েছেন। এই গর্ত থেকে তার উদ্ধার পাওয়ার এবং দেশের জনগণকে উদ্ধার করার ওই একটাই উপায়। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি এ দেশের জনগণের, শুধু খালেদা জিয়া বা ১৮ দলীয় জোটের নয়। একমাত্র কট্টর দলীয় মনোভাবাপন্ন আর একান্ত স্বার্থপর মানুষ ছাড়া সবাই স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতির যা বাস্তব অবস্থা তাতে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থাপনায়ই সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। মানুষ চায়, প্রত্যেকেই নিজের ভোটটা নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে দিতে পারুক। মানুষ চায় তার ভোটটার মূল্য থাকুকÑ তার ভোটটা হারিয়ে না যাক বা অন্যায়ভাবে বাতিল হয়ে না যাক এবং যাকে সে ভোট দিয়েছে, তার নামেই এটা যোগ হোক। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগে এমন একটা ব্যবস্থা মানুষ দেখতে চায়, যাতে এসব ব্যাপারে তারা আশ্বস্ত হতে পারে। এ জন্যই খালেদা জিয়া বা ১৮ দলীয় জোটের যারা রাজনৈতিক সমর্থক নন, তারাও চান এমন একটা ব্যবস্থা যাতে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনটি নিরপেক্ষ, ন্যায্য এবং একেবারে স্বচ্ছ হওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। দেশের মানুষ বোঝে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী করে বর্তমান সরকার যে নির্বাচনপদ্ধতি ঠিক করেছে, তাতে কোনো সুষ্ঠু, ন্যায্য এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদৌ সম্ভব নয়। দেশের মানুষের মনের এই একান্ত সঙ্গত চাহিদা আমাদের প্রধানমন্ত্রী যতই উপেক্ষা করতে চাইবেন, ততই সমস্যা জটিল হবে এবং ততই তার বিপদ বাড়বে। সেই সাথে, দেশের মানুষের কপালও পুড়তে থাকবে। এই নির্জলা বাস্তব সত্যটি তিনি যত তাড়াতাড়ি মেনে নিতে পারবেন, ততই তার জন্যও মঙ্গল এবং দেশের জন্যও। তার বোঝা দরকার, আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে তিক্ত ও উত্তপ্ত বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তার একটা সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত নিষ্পত্তি দেখার জন্য অধীর হয়ে উঠেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। জনগণ চায় না এই বিবাদ দীর্ঘায়িত হোক বা এর ফলে তাদের জীবন লণ্ডভণ্ড হয়ে যাক। মানুষ বোঝে, এই বিরোধের মধ্যে কী প্রচণ্ড আগুন নিহিত। এর মধ্যে এমন আগুন আছে যা আমাদের সবার জীবনকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে। এমনকি দেশটার অস্তিত্বকেও বিপন্ন করে ফেলতে পারে। মানুষের এই যুক্তিসঙ্গত শঙ্কাকে যথার্থ মূল্য এবং ন্যায্য ইচ্ছাকে প্রকৃত সম্মান দিতে ব্যর্থ হলে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের, তার দলের ও দেশের সবার জন্য বিরাট বিপর্যয়ই ডেকে আনবেন শুধু। আগামী সংসদ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি নিজে ক্ষমতা থেকে সরে গেলেই কেবল মানুষ স্বস্তি লাভ করবে। আরো বোঝা দরকার যে, তার হাতে সময়ও অতি অল্প এখন। তিনি যদি তারই হাতের তৈরী এই সমূহ বিপদ থেকে দেশের মানুষদের বাঁচাতে চান, তবে তাকে এখনি তা করতে হবে। তার জন্য একটা চরম সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই মুহূর্তেই। মানুষ অনেক সময় একটার পর একটা ভুল করতে করতে এমন একটা অবস্থায় গিয়ে ঠেকে যে, তখন তার জন্য পছন্দজনক বিকল্প আর কিছুই থাকে না। থাকে কেবল এমনই একটা পন্থা যা তার সবচেয়ে অপছন্দ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান অবস্থা ঠিক সে রকমই। ক্ষমতা হাতে পেয়ে প্রথম থেকেই তিনি একটার পর একটা করে অগণিত ভুলের জালে আটকে গেছেন। এই জালকে তিনি খুবই পছন্দ করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তার এত দিনের এই পছন্দের জাল নিজের হাতে না কেটে বেরোবার আর কোনো উপায় নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে তার জন্য একমাত্র সঠিক কাজটা ঠিক সেটাই, যেটা তার সবচেয়ে বেশি অপছন্দ। বিদেশীদের বল-ভরসায় কেউ দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট মোচন করতে পারবে ভাবলে মহা ভুল হবে। বিদেশীরা শুধু সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে এবং জটিল করে ফেলতে পারবে। এর নজির দুনিয়াতে ভূরি ভূরি। চোখের সামনেই অনেক। তাই এটা বোঝা মোটেই কঠিন নয়। কটা বিদেশী শক্তি আছে যারা বাংলাদেশের ও এখানকার জনগণের সত্যিকার কল্যাণ চায়? টা বিদেশী শক্তি এ দেশের জনগণকে ভালো করে জানে ও বোঝে এবং আমাদের জাতির অন্তরের আকাক্সাকে মূল্য দেয়? আমরা যাদের চিনি তারা তো কেবল আমাদের কোনো কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণীকে ব্যবহার করে তাদের অশুভ মতলব হাসিল করতে চায়। তা ছাড়া অনেকেই আছে যারা চায় বাংলাদেশে আমরা দিনের পর দিন বিবাদ-বিসম্বাদে ও হানাহানিতে লিপ্ত থাকি, আমাদের মধ্যে অস্থিরতা ও অশান্তি লেগেই থাকুক এবং আমরা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে ও স্থির হয়ে কিছু না করতে পারি। বিদেশীরা নন, আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। নতুবা দেশের বিপদ বহু গুণে বাড়বে এবং আমাদের দুঃখের কোনো শেষ থাকবে না। আল্লাহ তায়ালা যেন এই কাণ্ডজ্ঞান আমাদের সবাইকে দান করেন।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads