শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৩

শ্রমিকদের অধিকার কি বাস্তবে রয়েছে?


শ্রমিকদের শোষণ ও নিপীড়নের ইতিহাস বহু পুরনো। ইসলামের আবির্ভাবের আগেও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ছিল উপেক্ষিত ও অবহেলিত। ইসলাম-পূর্ব অন্ধকার যুগে দাস প্রথার করুণচিত্র ছিল লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক। পণ্যদ্রব্যের মতো শ্রমিকদের হাট-বাজারে বিক্রি করা হতো। ইসলামের সুশীতল স্পর্শ মেহনতি এই মানুষগুলোর পশু ও দাসসুলভ জীবন-যাপনের যবনিকাপাত করে শ্রমিক শ্রেণী ও মালিক শ্রেণীর মধ্যকার সব ধরনের বৈষম্য বিদূরিত করে এমন শ্রমনীতির প্রবর্তন করে গেছেন, যার সিকি শতাংশ বিশ্বমানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ, আইএলও এমনকি জীবন ও রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত মহান মে দিবস পালনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়নি। ইসলাম দেখিয়ে দিয়েছিল শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চমৎকার ও গ্রহণযোগ্য সমাধান।
সাধ্যের বাইরে শ্রমিকের ওপর কোনো কাজ চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ ঘোষণা দেন : কারো ওপর সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কিছু চাপিয়ে দেয়া যাবে না (সূরা আল-বাকারাহ-২৩৩)।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদিসে নবী (সাঃ) বলেন, শক্তি-সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কাজ শ্রমিকদের ওপর চাপাবে না। যদি তার সামর্থ্যরে কোনো কাজ থাকে দাও তবে সে কাজে তাকে সাহায্য কর (বুখারী ও মুসলিম)।
হযরত ওমর ইবনে হুরাইস (রা:) কর্তৃক বর্ণিত অপর এক হাদিসে আছে : তোমরা তোমাদের কর্মচারীদের থেকে যতটা হালকা কাজ নেবে, তোমাদের আমলনামায় ততটা পূণ্য লেখা হবে।
 শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি দেয়া সম্পর্কে রাসূল (সা:) বলেন, কিয়ামতের দিন তিন ধরনের মানুষের সঙ্গে আমি ঝগড়া করব আর আমি যার সঙ্গে ঝগড়া করব তাকে পরাজিত করে ছাড়ব। তার মধ্যে এক ব্যক্তি হলো শ্রমিক থেকে সে পুরোপুরি কাজ আদায় করে কিন্তু সে অনুপাতে মজুরি আদায় করে না (বায়হাকি শরীফ)।
হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে এ বিষয়ে আরো বলেছেন যে, বিত্তবানের সামর্থ্য থাকাবস্থায় অন্যের পাওনা পরিশোধে বিলম্ব করা চরম জুলুম ও অন্যায় (বুখারী ও মুসলিম)।
ইসলাম কেবল শ্রমিকের শারীরিক ও আর্থিক দিকেই দৃষ্টি দেয়নি, তার সামাজিক মর্যাদাও নিশ্চিত করেছে। উসুদুল গাবার এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, একবার এক সাহাবীর হাতে কালো দাগ দেখে প্রিয়নবী জিজ্ঞেস করলেন : হাতে কি হয়েছে? সাহাবী উত্তর দিলেন শক্ত জমিতে কোদাল চালাতে গিয়ে হাতের এ অবস্থা। নবীজী তার হাতে চুমু খেলেন এবং বললেন, ওই হাত সর্বোত্তম হাত যে হাত দিয়ে হালাল জীবিকা অর্জন করা হয়। এছাড়াও শ্রমিকদের উৎসাহ দেয়ার জন্য তিনি নিজ হাতে জুতা সেলাই করেছেন, খন্দকের যুদ্ধে বড় বড় পাথর নিজ হাতে সরিয়েছেন এবং ভিক্ষুকের হাতে কুঠার তুলে দিয়ে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহের নির্দেশ দিয়ে অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
অথচ আমাদের শ্রমিকদের অধিকার শুধু মে দিবসের লাল ফিতায় আবদ্ধ। প্রতি বছর ১ তারিখে মে দিবস এলে বিশ্ব শ্রমিকদের জন্য নানা রকম আশ্বাসের কথাবার্তা ধ্বনিত হয় কিšুÍ সেটা সেখানেই থেমে যায় ধীর মন্থরে একটা বছরের জন্য। সবারই জানা, ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা মে চলমান শ্রমিক আন্দোলনের একটা চরম বিস্ফোরণ ঘটে পুঁজিবাদের জন্মস্থান আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশজুড়ে শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণ এবং ন্যায্য মজুরির দাবিতে ধর্মঘট ডাকে। যুক্তরাষ্ট্রের শহরে-বন্দরে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। মালিকপক্ষ নিজেদের পোষা গু-াবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় এ ধর্মঘট নস্যাৎ করবার চেষ্টা চালায়। শিকাগো শহরের হে মার্কেটের জুতার কারখানার শ্রমিকরাও এই ধর্মঘট সর্বাত্মকভাবে সফল করার দৃঢ় প্রত্যয়ে রাস্তায় নেমে আসে  দুনিয়ার মজদুর এক হও আহ্বান নিয়ে। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হতে থাকে ‘শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে, দিতে হবে’, ‘৮ ঘণ্টার বেশি আর কাজ নয়, কাজ নয়; অতিরিক্ত কাজের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হবে, দিতে হবে।’
এমনিভাবে এগিয়ে চলে মিছিল। পুলিশ গুলি চালায় মিছিল লক্ষ্য করে, গু-াবাহিনীও ঢুকে পড়ে মিছিলের ভেতর। তরতাজা বেশ কয়েকজন শ্রমিক ঢলে পড়েন রাস্তার উপর। সেই রক্তদেয়া শ্রমিকদের স্মরণে বিশ্ব শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। আন্দোলনের নেতাদের বিচার করে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু শ্রমিক আন্দোলন থেমে থাকেনি।
আমেরিকার পত্র-পত্রিকাসমূহ সেদিন শ্রমিকের এ আন্দোলনকে কমিউনিষ্ট অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেছিল। তারা দাবি জানালো, ‘প্রত্যেকটি ল্যাম্প পোস্ট কমিউনিস্ট লাশ দ্বারা সজ্জিত করা হোক।’ বুর্জোয়া শাসকদের মনে তখন কমিউনিস্ট ভীতি কাজ করতো। এ ঘটনার তিনদশক আগে মার্কস ও এঙ্গেলস ঘোষণা করেছিলেন, ‘ইউরোপকে কমিউনিজমের ভূত তাড়া করে বেড়াচ্ছে।’ শাসকগোষ্ঠীর চরম নিপীড়ন সত্ত্বেও আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবির সংগ্রাম থেমে থাকেনি। ফেডারিক এঙ্গেলসের নেতৃত্বে গঠিত দ্বিতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৮৯০ সালে ১ মে শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস হিসেবে পালন করা হোক।
১৮৯০-এর প্রথম মে দিবসেই এঙ্গেলস লিখেছিলেন কমিউনিস্ট ইশতেহারের জর্মন সংস্করণের ভূমিকা। তিনি লিখলেন, ‘আজকের দিনের দৃশ্য সকল দেশের পুঁজিপতিদের ও জমিদারদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে যে, আজ সব দেশের শ্রমিকরা সত্যই এক হয়েছে।’ কার্ল মার্কস এর আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এঙ্গেলস তাই আরও আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, ‘নিজের চোখে এ ঘটনা দেখার জন্য মার্কস যদি এখনও পাশে থাকতেন।’
এভাবেই মে দিবসের শুরু এবং তার সূত্রপাত হয়েছিল আট ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিকে কেন্দ্র করে। এরপর অনেক সাহসী ও ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সব সভ্য দেশেই আট ঘণ্টা শ্রম দিবস স্বীকৃতি লাভ করেছে।
আজও প্রশ্নাকারে দেখা যাচ্ছে শ্রমিকরা কি বিশ্বজুড়ে ভালো আছে। যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক হত্যার কারণে বিশ্ব শ্রমিক দিবসের জন্ম হয় সেই আমেরিকার ব্রিটিশ নীল সাহেবদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর যশোর, খুলনা প্রভৃতি অঞ্চলে নীল বিদ্রোহ ব্যাপকভাবে সংঘটিত হয়েছে। কৃষক আন্দোলনের শক্ত বুনিয়াদ স্থাপিত হয় এই নীল সাহেবদের বিরুদ্ধে এবং নীল চাষ বন্ধের দাবির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। যশোরের চৌগাছায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল। তখন সাতক্ষীরার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন নবাব আব্দুল লতিফ। তিনি কৃষকদের পক্ষ অবলম্বন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। সেই সময় বিদ্রোহীদের উপর কি জুলুম-নির্যাতন করেছিল নীল সাহেবরা তার বর্ণনা আমরা ‘নীলদর্পণ’ উপন্যাসে দেখতে পাই।
কৃষক-শ্রমিকদের আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা থাকলেও ১৯৪৭ সালে ইংরেজ এদেশের মাটি থেকে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ বলে পাততাড়ি গুটিয়ে স্বদেশে পাড়ি জমালেও পাকিস্তান, হিন্দুস্থান নামে দু’টো আলাদা রাষ্ট্র কায়েম হলেও তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো লক্ষ্যণ দেখা গেলো না। ইংরেজ আমলে এখানে দু’একটি মিল গড়ে উঠেছিল। কুষ্টিয়া মোহিনী মিলে উৎপাদিত বস্ত্রের কদর সারা উপমহাদেশে ছিলো। তখনকার বস্ত্রমিলের কথা কবি গোলাম মোস্তফা ফুটিয়ে তুলেছিলেন এইভাবে-
বাগেরহাট কুষ্টিয়াতে নারায়ণগঞ্জে আছে মিল
মিহি শাড়ী পরবো মোরা মোমেনশাহী টাঙ্গাইল।
পাকিস্তানের উদ্ভব ঘটলো। পূর্ব বাংলা হয়ে গেলো পূর্ব পাকিস্তান। ব্রিটিশ বেনিয়ারা চলে গেলো, শুরু হলো পাকিস্তানী অন্যভাষী বেনিয়াদের বাণিজ্য। আদমজী, বাওয়ানীদের বাণিজ্য রমরমা হয়ে গেলো। গড়ে উঠলো এশিয়ার বৃহত্তম জুটমিল নারায়ণগঞ্জে যার নাম আদমজী জুট মিল। ঢাকার টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, খুলনার দৌলতপুর, খালিশপুর প্রভৃতি স্থানে শিল্প-কারখানা পল্লী গড়ে উঠলো, কিন্তু শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হতেই লাগলো। শ্রমিক আন্দোলন দমিয়ে রাখার জন্য তখনকার মালিক ও সরকার অত্যাচার, গ্রেফতারসহ নির্যাতনের সব কৌশল প্রয়োগ করলো।
মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল ছাত্ররা মাঠে নামলো স্বাধীনতার দাবি নিয়ে মিছিলে মিছিলে সেøাগান উঠলো-
‘কৃষক শ্রমিক অস্ত্র ধরো
 পূর্ব বাংলা স্বাধীন করো।’
সেই কৃষক শ্রমিকরা অস্ত্র ধরেছিল, যার ফলে দেশ স্বাধীন হলো। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েম হলো। তবুও প্রশ্ন জাগে আজকে আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা কেমন আছেন? কেমন আছেন আমাদের কৃষক ভাইয়েরা? তাদের ঘামে গড়ে উঠা পুঁজিপতিদের বিলাসিতা ও শোষণ কি এখন সততার ভিত্তিতে শ্রমিকদের ভাগ্যে জুটেছে? নাকি আগের মতই তারা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে? কৃষকরা কি তাদের শ্রমে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে? কৃষি প্রধান ও শ্রমনির্ভর এই বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নতি যে কৃষক-শ্রমিকদের গতরের খাটুনির ওপর নির্ভর করে তা আমাদের ক’জনারই বা বোধগম্য আছে।
আমাদের দেশে শ্রমিক আন্দোলন যেমন আছে তেমনভাবে কৃষক আন্দোলন নেই। এক সময় তেভাগা আন্দোলন হয়েছিল, কিন্তু তার ফলাফল বেশি ফলদায়ক হয়নি। কৃষক নেতা হাজী দানেশ, কমরেড আব্দুল হক. আজাদ সুলতান যেতো হারিয়ে যাচ্ছেন, এদেশে বলিষ্ঠ ট্রেড ইউনিয়ন থাকলেও দলীয় কোন্দলে তারা অনেকধা বিভক্ত। এদেশে বলিষ্ঠ কৃষক সমিতি গড়ে তুলেছিলেন মওলানা ভাসানী। তার শিবপুরের কৃষক সম্মেলন, টঙ্গীর শ্রমিক সম্মেলন কি সবাই ভুলে আছেন।
আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাবার পূর্বেই তাঁর ন্যায্য মজুরী দিয়ে দাও। হাদীসের এই বাণীর বস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে তা দেখতে হবে। আর এটা দেখার জন্য আজও শুনতে হয় সেই সেøাগান-
 দুনিয়ার মজদুর এক হও।
আমাদের দেশের পুঁজিপতি শ্রেণী ও সরকারি কর্মকর্তাদেরও মনোভাব এ রকম-শ্রমিকরা যেন শ্রমদাস ছাড়া আর কিছুই নয়। বস্তুত গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকরা কার্যত শ্রমদাসে পরিণত হয়েছে। গার্মেন্টসে চাকরি নিয়ে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা (মেয়েরাই বেশি) খাটতে খাটতে, না খেতে পেয়ে, না ঘুমাতে পেরে জীবনী শক্তিই হারিয়ে ফেলছে। একেকজন শ্রমিক বিশ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়, এমন দৃষ্টান্ত খুব বিরল নয়। প্রায় দৈনিক ১৬-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। তার ওপর এক-দেড় মাইল পথ হেঁটে কারখানায় যেতে হয় এবং কারখানা থেকে আসতে হয়। ঘরে গিয়ে রান্না করতে হয়, গোসল করতে হয়, টুকটাক কাজ করতে হয়। ঘুমানোর সময়ই বা কতটুকু? ক্ষুধায় কাতর দেহ, তার ওপর ঘুমে নিস্তেজ হয়ে পড়ে শরীর। তবু মেশিনের সামনে ঝুঁকে ঝুঁকে কাজ করতে হয়। এত অমানবিক ব্যবস্থা। এর বিরুদ্ধেই তো ছিল মে দিবসের সংগ্রাম। পৃথিবীর প্রায় সব সভ্য দেশে অন্তত শ্রম দিবসের বিষয়টি চূড়ান্তভাবে ফয়সালা হলেও আমাদের দেশে আজও হয়নি। তার ওপর মালিক গোষ্ঠীর কি স্পর্ধা যে তারা শ্রম ঘণ্টা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করে।
শ্রমিক দিবস হিসেবে ১লা মে জাতীয় ছুটি পালিত হলেও বাংলাদেশ হলো চরম শ্রমিক নির্যাতনের দেশ, শ্রমিকদের নিকৃষ্ট শ্রেণীশত্রুদের দ্বারা শাসিত দেশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকে তাই ছিল এবং এখনো পর্যন্ত তাই আছে।
শুধু সরকারী ছুটিই নয়, ১ মে শাসক শ্রেণীর সরকারি ও সরকারি বহির্ভূত বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীরা দেশজুড়ে এদিন শ্রমিকদের অনেক মাহাত্মা কীর্তন করবেন এবং সেই সঙ্গে কীর্তন করবেন নিজেদের শ্রমিকপ্রীতির। শ্রমিকদের জন্য এখন সরকার থেকে এবং আগে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়, তারা কত কিছু করছেন তার ফিরিস্তিরও অভাব হবে না। মে দিবসের নানা সরকারি অনুষ্ঠানে একটা উৎসবের আমেজ পাওয়া যাবে।
এই আবহাওয়াতেই বাংলাদেশে চলছে শ্রমিকদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত শোষণ-নির্যাতন। এই নির্যাতনের একটা নীরব রূপ হলো বেকারত্ব, কর্মচ্যুতি বা কাজ হারানো। ছাঁটাই ছাড়াও কলকারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করে দেয়াই হলো এই নির্যাতনের মূল প্রক্রিয়া। নতুন নতুন কিছু শিল্প গড়ে ওঠায় সেগুলোতে কিছু কর্মসংস্থান হলেও বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানার শ্রমিকদের একটা বড় অংশ নতুন কাজ পায় না। বেকার হয়ে গিয়ে তারা নানা ধরনের হকারের কাজ, অনিয়মিত খ-কালীন কাজ, ভিক্ষা ইত্যাদির দ্বারা কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে থাকে।
আমাদের দেশের গার্মেন্টস শিল্প থেকেই সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। জাতীয় আয়ে যারা এ অবদান রাখছে সেই গার্মেন্টস শ্রমিকরা সেই জাতীয় আয়ের সামান্যতম ভোগ করতে পারে না। অথচ তাদেরই অর্জিত আয়ে কিছু লোকের ভোগ-বিলাস চলে, জাতীয় উন্নয়ন হয়। কিন্তু সেই শ্রমিকরা নিজেরা খুব মানবেতর জীবনযাপন করছে। শুধু কম মজুরি বা অতিরিক্ত বর্ধিত শ্রম ঘণ্টাই নয়, অধিকাংশ গার্মেন্টসে এবং অনেক বস্ত্রকল ও পাঠকলেও শ্রমিকরা মাসিক বেতনও পান না। বাকি পড়ে থাকে। এক মাস, দেড় মাস, দুই মাস বাকি যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। বকেয়া বেতন দাবি করলে পুলিশ দিয়ে মারধর করা হয়, এমনকি গুলি চালানো হয়। এ রকম ঘটনা ঘটেছিল ২০০৩ সালের নভেম্বরে নারায়ণগঞ্জে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে ২০০৪ সালের নভেম্বরেই চট্টগ্রামে। (অসমাপ্ত)

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads