রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৩

গরীবের ইফতার


বিশ্বব্যাপী কোন জাতীয় বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান আসলে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সুবিধার জন্য মূল্য হ্রাস ঘোষণা করা হয়। এতে ক্রেতা এবং ব্যবসায়ী উভয়েরই লাভ হয়। ক্রেতারা কম দরে পণ্য ক্রয় করতে পারে। পাশাপাশি কম দর হলে বেশি বিক্রি হবে ফলে কম লাভ করে বেশি বিক্রি করবে। দাম কম হলেও বেশি বিক্রি করে তা পুষিয়ে নেয়। এটাই বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ীদের নীতি।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করে কবে রমযান বা ঈদ আসবে। তখন বেশি দামে বিক্রি করে এক মাসে এক বছরের ব্যবসা করে নেবে। সারা বছর এ জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা। রমযান আসার আগেই মাল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করে। ঈদ বা যে কোন পার্বনে যেসব পণ্য বেশি বিক্রি হবে ঐ সব পণ্য গোপনে মজুদ করে ফেলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীরা দেদার ব্যবসা করে নেয়। এটাই বাংলাদেশের সার্বিক চিত্র।
এক্ষেত্রে মিডিয়ারও একটা ভূমিকা থাকে। কোন পণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা কোন মিডিয়ায় ছাপা হলে সেই দাম বৃদ্ধিটা বাজারে স্বীকৃত হয়ে গেল বা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। ফলে দাম বৃদ্ধিটা স্ট্যান্ডার্ড হয়ে ঐ দাম বাজারে স্বীকৃতি হয়ে গেল। মিডিয়ায় ছাপানো দামটাই এখন বাজারের দাম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গেল।
এসব দামের কারসাজিতে মিডিয়ারও কিছু ভূমিকা থাকে। ব্যবসায়ীদের সাথে কোন কোন মিডিয়ার আঁতাত থাকে। আঁতাতের মাধ্যমেই ঐ মিডিয়ায় বর্ধিত দামের খবর ছাপা হয়। মিডিয়ায় প্রকাশিত সেই বর্ধিত দামটাই বাজারের দাম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ফলে মিডিয়া ব্যবসায়ী আঁতাতের ফলে বাজারে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পায়।
আবার দাম বৃদ্ধির অন্য কৌশল হলো টিসিবি। টিসিবির কাজ হলো বাজারে পণ্য মূল্য স্থিতিশীল রাখা। সে ক্ষেত্রে টিসিবি পণ্য আমদানি করে আমদানি মূল্যে বা প্রতীকী লাভে পণ্য বাজারে ছেড়ে মূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করে। টিসিবির কাজ হলো ব্যবসায়ীদের বিপরীতে ক্রেতাদের সুবিধা দেয়া। সেখানেও ব্যত্যয় ঘটে। শোনা যায়, বড় বড় মজুদকারীদের সঙ্গে টিসিবির কোন বিশেষ কর্মকর্তার সাথে গোপন আঁতাত থাকে। আঁতাতের কারণে টিসিবি দেরিতে বাজারে পণ্য সরবরাহ করে। ফলে মজুদকারীরা বাজারে ত্বরিত প্রবেশ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যবসা করে নেয়। ব্যবসায়ীদের সাথে টিসিবির আঁতাত বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আঁতাত অনুসারে টিসিবি টেন্ডার কারসাজি করে ধীর গতিতে পণ্য ক্রয় করে। ধীরগতি নীতির ফলে ক্রেতাদের চাহিদার সময় টিসিবির পণ্য বাজারে আসে না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে নেয়। টিসিবির পণ্য যখন বাজারে আসে তখন আর পণ্যের চাহিদা নেই। কিংবা পার্বন শেষ ঠিক তখন টিসিবির পণ্য বাজারে আসলো। বাজার তখন ক্রেতাশূন্য। আবার এমন হতে পারে টিসিবি আমদানি খরচ বেশি দেখিয়ে টিসিবির পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। ফলে বাজার মূল্য আর টিসিবির দামের ব্যবধান এত সামান্য থাকে যে টিসিবির পণ্যের প্রতি মানুষের আর আগ্রহ থাকে না। অর্থাৎ টিসিবির পরিবর্তে অসৎ ব্যবসায়ীরাই পণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অর্থাৎ টিসিবির ভূমিকা একেবারেই নেতিবাচক। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির কোন ভূমিকাই থাকলো না।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা সব সময়ই নেতিবাচক। রমযান আসলেই সরকারের একটা রুটিন ওয়ার্ক থাকে কিছু কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয় কিংবা শুল্ক হ্রাস করা হয়। পণ্য বাজারে পণ্য মূল্য হ্রাস। সরকার তো শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস করে তার দায়িত্ব খালাস। শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাসের প্রভাব বাজারে পড়লো কি না সে ব্যাপারে সরকারের কোন দায়-দায়িত্ব নেই।
এদিকে ব্যবসায়ীরা শুল্ক প্রত্যাহারের পর পণ্য আমদানিতে যে সুবিধা পেল তা তার নিজের পকেটে তুলে নিল। শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা সাধারণ ক্রেতারা পেল না। অর্থাৎ শুল্ক প্রত্যাহারের কোন প্রভাব বাজারে পড়লো না। শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধাও সাধারণ ক্রেতারা পেল না। বাজার পূর্বের অবস্থায়ই থাকলো। আগেই বলেছি, সরকার তো শুল্ক প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েই তার দায়িত্ব পালন শেষ করেছে। শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা সাধারণ ক্রেতারা পেল কি না এ ব্যাপারে সরকারের কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিং থাকলে বাজারে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রভাব পড়তোই এতে কোন সন্দেহ নেই।
বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা যদি থাকেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাজারে আসলে ব্যবসায়ীরা লেগে যায় তার পেছনে হাতে কিছু ধরিয়ে দিলে তেনারা চলে গেলেন। টেলিভিশনে একটা সাক্ষাৎকার দিয়ে বাজার মূল্য পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মনিটরিং-এর দায়িত্ব পালন করে গেলেন। মানুষ জানলো সরকার বাজার মনিটরিং করে চলছে। সরকার বাজার মনিটরিং খবর ফলাও করে প্রচার করে চলছে। মানুষও বুঝলো সরকার খুব বাজার মনিটরিং করছে। তবে ফলাফল শূন্য। মনিটরিংয়ের প্রভাব বাজারে পড়ছে না। ফলে বাজার যেখানে থাকার সেখানেই আছে। সাধারণ ক্রেতাদের কোন লাভ নেই।
এদিকে বাজারে চড়া দাম। সব কিছুই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বলা যায় বাজারে আগুন। এই আগুনে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। বিশেষ করে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস।
ইফতারি একটা সোনার হরিণ। বর্তমান বাজারে যে পরিমাণ চড়া দাম তাতে গরীব মানুষের পক্ষে ইফতার কিনে খাওয়া এক দুঃস্বপ্ন। অথচ বিত্তশালীরা হরদম কিনে নিচ্ছে, গরীব মানুষগুলো চেয়ে চেয়ে দেখছে। আহা ইফতার গরীবের জন্য নয়। তাই বলে গরীব মানুষগুলো ইফতার খেতে পারুক আর না পারুক রোজা বন্ধ করবে না। কারণ রোজা ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের জন্যই ফরয। রোজা তার ইচ্ছার ব্যাপার আর ইফতার সাধ্যের ব্যাপার। অর্থাৎ গরীরের জন্য রোজা ইফতার নয়। এটা তার সাধ্যের বাইরে। রোজা আর ইফতারের মধ্যে যেন একটা বিভেদ তৈরি হয়ে গেছে। রোজা গরীবের জন্য আর ইফতার ধনীদের।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads