সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৩

এক পেশে মিডিয়া : সুবিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তরায়


গতকালের পর 
এ কেমন কথা, এটি কি ফ্যাসিবাদী ও নৈরাজ্যকর মনোবৃত্তি নয়? আপনারা বলছেন, এরা বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে, মন্দিরে ভাঙচুর করেছে। সত্য কথা হলো, গুলী করে পাখির মত মানুষ মারার পর বিক্ষুব্ধ জনতা এসব করতেই পারে। এর চেয়েও বড় কথা হলো, এগুলো জামায়াত-শিবিরের লোকেরা করেনি বলে তাদের দাবি খতিয়ে দেখেছেন কি? সাঈদী ভক্ত সাধারণ মানুষ ওসব আবেগে আপ্লুত হয়ে ঘটিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি দলের লোকেরাই অন্তর্ঘাতমূলক কা- ঘটিয়েছে বলে পত্রিকায় ছবিসহ এসেছে সেগুলোকে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকা- বলবেন না? এসব ক্যাডারদের কেউ কেউ ধরাও পড়েছে। আপনারা এগুলো দেখবেনও না ছাপাবেনও না। দেখলেও না দেখার ভান ও জানলেও না জানার ভান করে থাকেন। তাহলে সত্য প্রকাশিত হবে কি করে? ঢাকা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সাতক্ষীরায় ও রংপুরে নিরস্ত্র মানুষের উপর পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি কি নারকীয় তা-ব চালিয়েছে তা কি দেশবাসী দেখেনি? ধরে নিয়ে পায়ে গুলী করা কিংবা সরাসরি গুলী করে হত্যা করা এখন পুলিশের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব ন্যক্কারজনক ঘটনায়ও আপনারা পুলিশের পক্ষ নিচ্ছেন। আশ্চর্যজনক আপনাদের মনোবৃত্তি। তাতে লাভ কি এতে বরং পুলিশের ভিতর লুকিয়ে থাকা পুলিশ নামীয় নরঘাতকরা আসকারা পেয়ে যাচ্ছে না?
আপনারা অনবরত সরকারি দলের লোকদের মত বলছেন জামায়াত-শিবিরের নারকীয় তা-ব। এরা যদি সত্যিই তা-ব চালাত তাহলে কয়েকদিনের সংঘর্ষে এদের দু’শর কাছাকাছি লোক মারা গেল কিভাবে? এদের দ্বারা সরাসরি পরিকল্পিতভাবে এ পর্যন্ত একটি হত্যার ঘটনাও ঘটেনি বলে ওদের দাবি কি মিথ্যা প্রমাণ করতে পেরেছেন? পুলিশ নিহতের ঘটনায় আমরাও দুঃখিত। আমরা অন্যান্য সকল হত্যাকা-ের মত এটিরও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। অথচ পুলিশকে নিরস্ত্র মানুষের উপর গুলী চালানোর আদেশ যারা দিল তারা কি কোন না কোন দিন হুকুমের আসামী হবে না? যদি নিষিদ্ধ করতে হয় সবার আগে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে। কেন না স্বাধীনতার পর থেকে যারা সন্ত্রাসের জন্ম দিয়েছে তারা এখনও পর্যন্ত থেমে নেই। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে জাসদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল কারা? গত তিন সরকারের সময়ও কি হল দখল, মাঠ দখল বন্ধ হয়েছে? এ মাঠ, এ হল কারা দখল করছে? এটি কি আপনারা জনেন না? এটি কি কারো অজানা আছে? এ পর্যন্ত কত হাজার রাজনৈতিক অফিস ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে? কত লাখ ধর্মীয় ও অন্যান্য বই-পুস্তক, কুরআন হাদিস পায়ের তলে পিষ্ট করেছে, আগুন লাগিয়ে উল্লাস করেছে তার কি হিসাব আছে? তার একটিও কি আপনারা টিভিতে প্রচার করেছেন, পত্রিকায় ছেপেছেন সন্ত্রাসীদের দোষারোপ করেছেন? না করেননি। বরং উদোর পি-ি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়েছেন। কেন জানতে পারি কি?
শাহবাগে কিছু অগণতান্ত্রিক, উন্নাসিক অজ্ঞাত ভীনদেশী পুষ্ট-লালিত বেকার ছাত্র-যুবক ও নাস্তিক ব্লাগারের খিস্তিখিউরকে বলছেন, অহিংস আন্দোলন। অথচ এদের প্রতিটি কথা, প্রতিটি বক্তব্য, প্রতিটি শ্লোগানই সহিংস বাণীতে ভরা। কাউকে উৎখাত কিংবা হত্যা করার আবদার কি কখনও অহিংস আন্দোলনের নমুনা হতে পারে? মোটেও না। অথচ আমাদের সাংবাদিক ভাইদের কেউ কেউ এদের বক্তব্য নিয়ে রাত-দিন কোরাস গাইছেন, গুটি কয়েক লোকের সমাবেশ নিয়ে লাইভ দেখাচ্ছেন অনবরত। এটা কেমন কথা বিচারের রায় যাই হোক, ফাঁসি ঘোষণা করতেই হবে আর স্লোগান দেয়া হচ্ছে সে রকম ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই। এগুলো কি ফ্যাসিবাদি স্লোগান নয়?
সোভিয়েত রাশিয়ায় রুশ বিপ্লবের পর পলিতারিয়ান ডিক্টেটরশিপ কায়েম হয়েছিল যেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন হয়তো এসব কথা মানাত। সেসব বস্তা পচা জিনিস বহু আগেই বাসী হয়ে গেছে। বিংশ শতাব্দীর এ গণতান্ত্রিক বিশ্বে এসব কথা আর মানায় না। তাহলে ওরা এসব শিখল কোথায়? ওদের এতো ভ-ামি না করে এটা বললেই তো হতো যে, বিচার বুঝি না ফাঁসি দিয়ে দাও। তবে ওরা যদি বলতো স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার চাই তাহলে তো কারো কোনো কথা থাকত না। কারা যুদ্ধাপরাধী সবাই জানে অথচ যাদেরকে ধরা হয়েছে তারা কি যুদ্ধ করেছে? তাদের নাম তখন যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় ছিল না। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের নাম বাদ দিয়ে আজ যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে তাদের নাম কি তখন কোনো অপরাধীর খাতায় ছিল? তাদের নামে সারা বাংলাদেশের কোনো থানায় একটি জিডিও নেই। তাহলে এদেরকে অত্যাচার করা হচ্ছে কেন? এটাই তো এখন সকলের কাছে জিজ্ঞাসা। তাই তো ডিফেন্সের লোকেরা বলছে, এটি একটি প্রহসনের বিচার, রাজনৈতিক বিরোধীদের খতম করার একটা নীল নকশার বিচার। কেউ কেউ বলছেন, ভারত এতে জড়িত নতুবা ভারত এ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে কেন? শাহবাগীদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করছে কেন? এটি তো বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
সকলের জানা আছে যে, পাকিস্তান আন্দোলনের সময় অনেকে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয়নি? তখন দেওবন্দ আকিদার লোকেরা ভারতবর্ষের বিভক্তি চায়নি। এমনকি বাংলার বাঘ নামে খ্যাত এ. কে. ফজলুল হকও এভাবে পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে ছিল না। তাই বলে কি পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার মত বছরের পর বছর রক্তারক্তি, হানাহানি সৃষ্টি হয়েছিল? উপরন্তু এ. কে. ফজলুল হক পাকিস্তানের বড়লাট হওয়ার মত গৌরব অর্জন করেননি? অথচ ১৯৭১ সালের রাজনৈতিক বিভাজনকে ৪০ বছর ধরে চরম ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন কেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তা ভেবে দেখা উচিত। সকলের জানা আছে, তিনি জাতীয় ঐক্যের খাতিরে ছোটখাট অপরাধীদের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। তখন লুটপাটে অংশ নিয়েছিলেন যারা অথবা যারা খুন ধর্ষণে জড়িত ছিল তারা তো রেহাই পায়নি। এসব অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার পরিবর্তে টাটকা টাটকা হত্যা করে কবরে পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তি পাগল মানুষেরা সেদিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। তারপরও যদি কেউ বেঁচে যায় তাকে ধরুন প্রত্যক্ষ সাক্ষী নিয়ে দ্রুত ফাঁসির ব্যবস্থা করুন, কারও আপত্তি থাকবে না।
আজকে যাদেরকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা হচ্ছে তাদের কারো নাম তখন ধর্ষণ, হত্যা বা লুটপাটের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের নামের তালিকায় ছিল না? ছিল না বলেই এ বিচারে কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষীও নেই। যদি না থাকে তাহলে তাদের বিচার হচ্ছে কিভাবে? কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী না থাকার পরও বিচার প্রক্রিয়া চলছে কিভাবে আমরা জানি না। আবার ফাঁসীর রায়ও হচ্ছে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বিচরকরা যেন জনগণের অনুভূতির কথা বিবেচনায় রেখে রায় দেন”। দেশের প্রধান নির্বাহীর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্যের পর স্বচ্ছ বিচারের কি কোন অবকাশ থাকে? ইতোমধ্যে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা এক জনের দোষকে অন্য জনের ঘাড়ে চাপিয়ে জুডিসিয়াল কিলিং এর পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন। সাক্ষীদেরকে সেফহোমে রেখে দীর্ঘদিন ধরে তৈরী করে মিথ্যা সাক্ষী হিসাবে দাঁড় করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ রকম একটি উদাহরণ আসামী পক্ষের আইনজীবীরা আদালতের সামনে উপস্থাপনও করেছেন। অপর পক্ষে সরকারি সাক্ষী হয়েও সত্য বলায় সুখরঞ্জন বালী নামের এক সাক্ষীকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে অপহরণ ও গুম করার অভিযোগ করেছেন আসামী পক্ষের আইনজীবীরা।
স্কাইপি সংলাপ কি তাহলে সত্য নয়? নতুবা বিচারপতি নাজমুল হক পদত্যাগ করলেন কেন? এমনিতেই পুলিশের লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নাই। ভুক্তভোগীরাই কেবল পুলিশ সম্পর্কে ভাল জানতে পারে। বাস্তবে পুলিশের একদল লোক চিন্তার চাইতেও বেশী খারাপ। তাদের মধ্যে থেকে সৎ যারা তারা মূলতঃ কোনঠাসা। সেই সব নোংরা পুলিশদের নিয়ে তদন্ত করিয়ে সে তদন্ত রিপোর্ট সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করবে আদালত, কি সুন্দর ব্যবস্থাপনা! যেভাবেই হোক নিজেদের পক্ষে রায় নিয়ে নিতে হবে। এ রকম একটা আশঙ্কার কথা আসামী পক্ষ বার বার বলে আসছে। কোনো দুরভিসন্ধি আছে কিনা আল্লাহই ভাল জানেন। সত্য কথা হলো এখানে ন্যাচারাল আইনের পরিপন্থী অনেক আইনই সংযোজিত হয়েছে। যার প্রতিবাদ করেছেন দেশী বিদেশী আইন বিশেষজ্ঞরা।
দিনরাত এপক্ষীয় সমালোচনা চলছে। এর অবসান হওয়া উচিৎ। আর তা ন্যায় বিচারের স্বার্থে হওয়া উচিৎ। প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, দু-একজন লোকের ছবি, কান্না দেখিয়ে আপনারা বলতে চান জামায়াত-শিবিরের তা-ব কত ভয়াবহ! অথচ ওদের যত লোক নিহত হয়েছে তার শত গুণ আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, আর গ্রেফতার হয়েছে হাজারগুণ। সহায় সম্পদ ধ্বংস হয়েছে বেশুমার। ওদের ওপর ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়ে তো আপনারা চোখ বন্ধ করে রেখেছেন। তাহলে গত ৪ বছর ধরে ওদের কত লোক নির্যাতিত হয়েছে, কি ভয়াবহ নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের শিকার ওরা তা বুঝতে পারবেন কিভাবে? এ লোকগুলো কি সবাই অপরাধী? আপনারা দয়া করে নিহত-আহত ও গ্রেফতারকৃতদের বাড়ী ঘরে গিয়ে তাদের সমাজ-মহল্লায় ও পাড়ায় একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখুন। কি ধরনের সন্ত্রাসীদের সরকার নির্যাতন চালাচ্ছে আর হত্যা করছে। খবর নিয়ে দেখুন এ লোকগুলোর বিরুদ্ধে থানায় একটি জিডি পর্যন্ত আছে কি না? একটি হলেও সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করে প্রকাশ করুন। উৎসুক্য বশত হলেও একটু ঘাটাঘাটি করুন।
আমরা জোর গলায় বলতে পারি পুলিশ বাড়াবাড়ি না করলে, বাধা না দিলে, গুলী না করলে কোথাও অঘটন ঘটতো না। এই সেদিন ঢাকায় যখন পুলিশ জামায়াত-শিবিরকে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে দিয়েছিল সেদিন কি দৃশ্যপট পাল্টে যায়নি? ফুল দিয়ে কি পুলিশের লোকদের বরণ করেনি ওরা? এরকম দৃশ্যই যুগ-যুগ ধরে দেশবাসী দেখে আসছে জামায়াত-শিবিরের কাছ থেকে। হঠাৎ করে এরা সন্ত্রাসী হয়ে গেল কিভাবে? তাদের এতগুলো লোক নিহত হলো যেখানে নারী আছে, শিশু আছে, বৃদ্ধ আছে, হিন্দু আছে, ছাত্র আছে তাহলে বিক্ষুব্ধ জনতা কিছু একটা করতেই পারে। এসব ক্ষেত্রে কি কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে তখন? স্মরণ করুন হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন একজন ঈমানদারকে হত্যা করা মানে আমার ইচ্ছা হয় পুরো পৃথিবীটাকে আমি ধ্বংস করে দেই। সুতরাং আল্লাহর গজবকে ভয় করুন।
দেশের হাজারো সমস্যা যেমন বিডিআর হত্যাযজ্ঞ, শেয়ার কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ-হলমার্ক গ্রুপ কর্তৃক ব্যাংক জালিয়াতি, ইস্পিক এশিয়া, ইউনিপে টু, ডেসটিনি, কুইক রেন্টাল কেলেঙ্কারির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট কি ছেড়ে দেয়ার বিষয়? পদ্মা সেতু দুর্নীতি, সীমান্তে  কিশোরী ফেলানীসহ অগণিত বাংলাদেশী হত্যাকা-, টিপাই মুখ বাঁধ নির্মাণও শত শত নদীর ওপরে ভারত কর্তৃক ড্যাম-বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারাসহ হাজার হাজার রাষ্ট্রীয় সমস্যা বাদ দিয়ে ব্লগাররা শুধু তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে কেন এত ব্যস্ত হয়ে পড়ল তাও ভাববার বিষয়। আর ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বলেই দিল তারা নাকি ক্ষমতাসীন সরকারের চেয়েও শক্তিধর। আসলেই কি তাই? নাকি ঐরং গধংঃবৎ’ং ঠড়রপব-এর নাটক চলছে? বুদ্ধিমানরা সবকিছু ঠিক ঠিক বুঝতে পারেন। দেশের মানুষকে এত বোকা ভাবা ঠিক না। দুঃখের বিষয় হলো এসব বিষয়ে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর যেভাবে কথা বলা উচিৎ ছিল সেভাবে বলেনি। এটা হয়তো এজন্যই যে, নবীর ভাষায় “সমস্ত কুফরী শক্তি এক ও তাদের চিন্তা-চেতনা অভিন্ন।” ইসলাম ফোবিয়া চলছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশ কি বাদ যাবে? মুসলিম দেশ হলে কি হবে? অরাজনৈতিক ইসলাম বলে কি কিছু আছে? যেটি তাদের পছন্দ? এগুলো ভন্ডামী বৈ কিছু নয়।
ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো একজন হিন্দুর জন্য, একটি মন্দিরের জন্য, একজন কাদিয়ানির জন্য আমাদের মিডিয়া তোলপাড় করে ফেলে  আর যেভাবে দরদ দিয়ে রিপোর্ট করে, হৈ চৈ ফেলে দেয় তা অবাক হওয়ার মতই। তা ভাল কথা, অথচ জামায়াত-শিবিরের হাজার হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও মিডিয়ায় টু শব্দটি নাই এবং এর বিন্দু মাত্রও প্রচার পায় না বরং উল্টো জামায়াত-শিবিরের ওপর দোষ চাপানোর সব আয়োজন। এসব হামলায় ক্ষমতাসীন দলের হোমরা-চোমরাদের মদদ দেয়ার ও জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এসব নেতারা প্রকাশ্যে সরকার বিরোধীদের উৎখাতের জন্য হুমকি দিচ্ছে ও দলীয় লোকদের ও পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছে আর তাদের নির্দেশ মত দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের লোকেরা গুম ও লোমহর্ষক হত্যাকা- সংঘটিত করছে। এমন কি সরকারি দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ অনুযায়ী সারা দেশে তাদের দলীয় ক্যাডার বাহিনী বিরোধীদের তালিকা তৈরী করছে ও তালিকা অনুযায়ী নিরপরাধ লোকদের নিজেদের লোকেরা ধরিয়ে দিচ্ছে অথবা পুলিশ-র‌্যাব গ্রেফতার করছে আর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে মনের ঝাল মিটাচ্ছে। এভাবে রাত নাই, দিন নাই, কারণে-অকারণে মেসে, বাসা বাড়ীতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে পুলিশ-র‌্যাব ও সরকার দলীয় ক্যাডাররা আর যাকে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা, যেখান থেকে ইচ্ছা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর গুম-হত্যার শিকার হচ্ছে নিরীহরা। এভাবে তছনছ করে দিচ্ছে হাজারো মানুষের সোনার সংসার, স্বপ্ন সাধ ও জীবন জীবিকা। সারা দেশে নিপীড়িত মানুষের যে কান্নার রোল বইছে তা আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠছে।
পত্রিকার খবরে প্রকাশ ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ-র‌্যাব গ্রেফতার বাণিজ্য চালিয়ে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে নিরীহ লোকদের কাছ থেকে জোর পূর্বক হাতিয়ে নিচ্ছে ও তাদেরকে সর্বস্বান্ত করে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। আমরা সততার সাথে বলতে পারি এরকম ঘৃণ্য মনোবৃত্তি ও জঘন্য পরিস্থিতি স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়েও কল্পনা করা যায়নি। দুর্ভাগ্যের বিষয় এসব বেআইনী কর্মকা-ে সরকার দলীয়রা ও পুলিশ প্রকাশ্যে জড়িত থাকলেও মিডিয়া চুপ, টু শব্দটি পর্যন্ত করে না। উপরন্তু মিডিয়া অন্যায়কারীদের সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ওরা যেন পয়সার বিনিময়ে বিক্রী হয়ে গেছে। অনেকে বলেন, বাস্তবেও তারা মাথা বিক্রি করে দিয়েছে বহু আগে থেকেই। এজন্য তাদের সাহস নেই সত্য বলার।
পুলিশ জামায়াত-শিবিরের লোক খুঁজে সারাক্ষণ, এত খোঁজাখুঁজির কি দরকার আছে? এদের কি পালানোর কোনো পথ আছে? ওরা তো লাখের মধ্যে, হাজারের মধ্যে একজন, রাস্তার কুচকুচে কালো লোকটির, ছেলেটির চেহারায় খোদায়ী নূর ভাসছে। সে সব লোক দেখলে তো বুঝা যায় ওরা কারা? ওদের যেমন চেনা যায় আপনাদের চেহারা দেখলেও জনগণ বুঝতে পারে আপনারা কারা। বাসা-বাড়িতে খোঁজার দরকার নাই, রাস্তা-ঘাট থেকে ওদের চেহারা দেখে ধরে নিয়ে যান। তারপর যা ইচ্ছা তাই করেন। কে বাধা দিবে আপনাদেরকে? আপনারা তো এখন সর্বেসর্বা, মহা ক্ষমতাবান, শক্তিধর এবং দুনিয়া আপনাদের পায়ের তলায়।
আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী, বিশ্ব মানবতার নবী, অনুপম চরিত্রের নবী, মহানবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ছ.)কে নিয়ে এ সরকারের আমলে বিগত ৪ বছরে যে পরিমাণ বেয়াদবী করা হয়েছে নোংরা, কুরুচিপূর্ণ ও অমানবিক ন্যক্কারজনক লেখালেখি হয়েছে আর সর্বশেষ মুসলিম নামধারী মুসলিম সমাজের সুবিধাভোগী নাস্তিক, মুরতাদ ব্লগাররা যেভাবে নবীজীকে অপমান করেছে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় লেখালেখি করেছে, মহান আল্লাহ তাঁর সত্বা, ইসলাম, নামায-রোজা নিয়ে কটূক্তি করেছে, নবীজীর পবিত্র স্ত্রীদের নিয়ে অশ্লীল ভাষায় ব্লগে লিখেছে মানব সভ্যতার ইতিহাসে তা কল্পনাও করা যায় না এমন কি বিগত ১৫শত বছরে ইহুদী-খ্রীস্টান-মুশরিক-কাফিররা পর্যন্ত এ রকম দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। দুর্ভাগ্যের বিষয় এ সমস্ত কুলাঙ্গার ধর্মদ্রোহী ব্লগাররা আস্কারা পাচ্ছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বৃহত্তম অংশের কাছ থেকে। সরকারের একটি অংশও এ সমস্ত মিডিয়া ছলে বলে কৌশলে এসব নাস্তিকদের বাঁচানোর জন্য দিন রাত কাজ করছে। এমনকি তাদের দুষ্কর্মের দালিলিক বিষয়গুলো সুস্পষ্ট হওয়ার পরও চেপে গেছে বারবার। মিডিয়া সরকারের অন্যায় পক্ষাবলম্বনকে সব সময় সমর্থন দিয়ে গেছে অকুণ্ঠচিত্তে। অথচ এদের মধ্যে যারা মুসলিম বলে দাবি করে তারা বুঝতে পারছে না কি রকম আগুন নিয়ে তারা খেলছে। তাদের মুসলিম দাবি যে অসার হয়ে যাচ্ছে তা তারা দুনিয়াবী স্বার্থের জালে আটকা পড়ে বেমালুম ভুলে গেছে। সরকার বুঝতে পারছে না যে এ নবীর জন্য জীবন দিতে সারা পৃথিবীর ১৭৫ কোটি মুসলমান প্রস্তুত। তাদের জীবন যাবে তবুও নবীর মান যেতে দেবে না।
পরিশেষে বলব, আত্মঘাতী ভ্রাতৃঘাতী ও জাতিঘাতী খেলা বন্ধ করুন। নিরীহ ও দুর্বল মানুষদের উপর অন্যায় আচরণ ও অপপ্রচার এখনই বন্ধ হোক। এটা ন্যায়ের স্বার্থে, সততার স্বার্থে ও জাতীয় স্বার্থে জরুরি। মনে রাখতে হবে অন্যায়কারীদের থামানো ও অসহায়ের পক্ষ নেয়া রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব, এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়া শফত ভঙ্গেরই শামিল। যে প্রাণঘাতী খেলা শুরু হয়েছে তার পরিণতি কি হবে তা আশপাশের দেশগুলোর দিকে তাকালে অনায়াসেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশটি চায় আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হোক, আমাদের দেশ তাদের অধীনে করতলগত হয়ে থাকুক আর তাই তারা আমাদের বিভাজনে ইন্ধন জোগাচ্ছে ও দেশকে দুর্বল করে দিয়ে অন্যান্য ফায়দা হাসিল করার কোশেশ করছে। এটা কি আমাদের সরকার বোঝে না? ঐ দেশটির কোনো আদর্শ নেই, শক্তিই তাদের আদর্শ, কূটকৌশল আর ভ-ামিই তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
সরকার কি বুঝে না কমিউনিস্টরা সরকারের ঘাড়ের উপর সওয়ার হয়ে সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। আমরা সরকারকে বলবো তাদের ফাঁদে পা দেবেন না। তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। যাদের পিষে মারা হচ্ছে আর যারা ধর্মের জন্য, আদর্শের জন্য, নবীর জন্য জীবন দিচ্ছে তাদের ভয় কিসের? কেননা আল্লাহ ও তার রাসূলুল্লাই (সা.) তাদের জন্য যথেষ্ট। আপনাদের কে সুপারিশ করবে কেয়ামতের দিন? ক্ষমতার বড়াই ছেড়ে একটু চিন্তা করে দেখুন। কোন অতল গহবরে তলিয়ে যাচ্ছেন আর হারাচ্ছেন দুনিয়া ও পরকাল। এটা তাদের বলছি যারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন। মনে রাখবেন, মুসলমান দাবি করা এত সহজ নয়। কুরআনের আইন মানবেন না আর যারা কুরআনের কথা বলবে তাদেরকে অত্যাচার করবেন আর দাবি করবেন মুসলমান, এটা তো নিছক মিথ্যা আত্মতুষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়। যার কোনো ভিত্তি নেই। যেসব আলেমে ছুঁ’দের (কুরআনের পরিভাষায় দুনিয়াদার বা বদ আলেম) নিয়ে খুশি খোশালিতে আছেন আর সার্টিফিকেট নিচ্ছেন সে সমস্ত আলেমে ছুঁ’দের কি দশা হবে পরকালে কুরআন-হাদিস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন।
আপনারা হয়তো মনে করছেন, পরকালেও দুনিয়ার মতো খুব সহজেই পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু প্রিয় ভাই-বোনেরা বাস্তব অনেক কঠিন। সময় আসলেই কেবল হাড়ে হাড়ে টের পাবেন। কত ধানে কত চাল। শক্তির দাপটে এ দুনিয়ায় যাচ্ছে তাই করছেন, কিন্তু পরকালে এক জাররা ভাল এ এক জাররা মন্দেরও বিচার হবে। এটা কুরআনের ঘোষণা আর এক জাররা মানে একটি বালির ৮০ ভাগের এক ভাগ-আর আপনারা যা করছেন এখন তা কি জাররা। একটু নিরপেক্ষ মন নিয়ে ভেবে দেখুন। আপনাদের অপরাধগুলো সাগর-মহাসাগরের চেয়েও বড় নয় কি? আপনারা তো ইসলামকে সর্বাত্মক জীবন বিধান হিসেবেই মানেন না। আর যারা মানবে না কিংবা তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে না তাদের আল্লাহ ক্ষমাও করবেন না। সুতরাং সময় থাকতেই হুঁশিয়ার-সাবধান হোন। আমরা হুঁশিয়ার করছি এজন্যই যে, আমরা আপনাদের ভালোবাসি। যাদের নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে তারাও এদেশের মানুষ বরং তাদের এলাকার উত্তম মানুষ। নিরপেক্ষভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখুন আমাদের কথা সত্য কি না?
তাহলে তাদের অপরাধ কি? অপরাধ কি তাহলে সেটিই যে, আল্লাহর নির্দেশে ওরা তার দ্বীনকে এ দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সমাজকে তাগুতের হাত থেকে রক্ষা করে আল্লাহর রঙে রাঙিয়ে দিতে চায়। হ্যাঁ এটিই তাদের বড় অপরাধ আর তা আপনাদের সহ্য হয় না। তাই তো জালিমের বেশে আবির্ভূত হয়েছেন? সাংবাদিক ভাই-বোনেরা দয়া করে আর জালিম হবেন না বা জালিমদের পক্ষ নেবেন না বরং সাহস করে সত্য কথা বলুন। সমস্যা কারা সৃষ্টি করছে বলুন। মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত কিংবা লিপ্ত হবেন না। আপনি একটি দল করতেই পারেন তাই বলে কি সাংবাদিকতার মূল্যবোধকে দু-পায়ে দলিত-মথিত করবেন? এটা আপনার ব্যক্তিত্বের জন্যও মানানসই নয়। জামায়াত-শিবির সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। কেন এত অপপ্রচার ও ঘৃণা ছড়ানোর পরও আধুনিক ও উচ্চ শিক্ষিত মানুষ দলে দলে সেদিকে ঝুঁকছে? তাহলে অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাবেনও একদিন অনুতপ্ত হবেন। আমরাও একদিন তন্ত্রমন্ত্রের পিছু ছিলাম আল্লাহর মেহেরবাণীতে সত্য পথের দিশা খুঁজে পেয়েছি। আপনারা তাদের উত্থানটাকে দেখছেন অথচ তাদের উপর মানব ইতিহাসের নিকৃষ্টতম অত্যাচার-নিপীড়ন, রিমান্ড, গুম আর হত্যাযজ্ঞের কথা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন। মনে রাখবেন এরা এদেশকে ভালবাসতে বাধ্য কেননা যে কোন সংকটকালীন সময়ে এদের পালাবার কোন পথ নেই। প্রো-ইন্ডিয়ানরা ইন্ডিয়ায় পালাবে আর প্রো-কমিউনিস্টরা বার্মায়। ওদের পালাবার কি কোন পথ আছে, উপায় আছে? পার্শ্ববর্তী দেশ দুটি ইসলামপন্থীদের গ্রহণ করবে না। তাই এদের কি এদেশকে ভাল না বেশে উপায় আছে? সুতরাং জামায়াত-শিবিরের লোকেরা ও ইসলামপন্থীরাই সবচেয়ে বেশি দেশপ্রেমিক হবে এটিই বাস্তবতা, এটিই স্বাভাবিক। দেশের জন্য পালিয়ে না গিয়ে বড়াইবাড়ীর মতো জীবন দেবে। অথচ আপনারা অন্যায়ভাবে এদর বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছেন আর তাদের বলছেন স্বাধীনতার শত্রু। কি জঘন্য মনোবৃত্তি। অনেক তো হয়েছে, এবার না হয় একটু থামুন না? অবাক লাগে! মুসলমান ঘরের সন্তান হয়েও জ্ঞানের অভাবে আপনারা ইসলাম ফোবিয়ায় ভুগছেন। এর পরিণতি আল্লাহর উপরই ছেড়ে দিলাম আর আমরা হুঁশিয়ার করে বলছি “আল্লাহপ্রেমিকদের কষ্ট দিয়ো না, হত্যা করো না প্রকৃতি প্রতিশোধ নেবে।”

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads