রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৩

সুশাসন ব্যর্থতা ও জনদুর্ভোগ


দার্শনিক হব্স (Hobbes) ও লক (Locke)-এর মতে, ‘রাষ্ট্র একটি মৃত যন্ত্রের মতো’ হলেও ফরাসী বিপ্লবের মহানায়ক রুশো (Rousseau) বলেছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, ‘রাষ্ট্র একটি প্রাণবন্ত চলৎ শক্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান’ আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রুশোর মতকেই অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়। আসলে রাষ্ট্র কখনো গতিহীন নয় বরং এক নান্দনিক ও ছন্দময় গতিময়তায় আন্দোলিত। প্লেটোর রাষ্ট্র চিন্তায় আদর্শ রাষ্ট্রের লক্ষ উত্তম জীবন। তাই তিনি মনে করেন, শুধু তারাই আদর্শ রাষ্ট্রের দায়িত্ব  গ্রহণের যোগ্য যারা জানেন সমাজ জীবনের সর্বোত্তম পন্থা কি! শুধু তারাই শাসন দ- ধারণ করার যোগ্য যারা নাগরিক জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা সম্পর্কে সচেতন এবং জ্ঞানের আলোয় সমুজ্জল। সুতরাং রাজদ- গ্রহণ যেমন সকলের জন্য যৌক্তিক নয়, ঠিক তেমনিভাবে নাগরিকের উত্তম জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানে ব্যর্থতাও সফল রাষ্ট্রের মানদ- নয়।
সুশাসনের ধারণা থেকেই আধুনিক রাষ্ট্রের উৎপত্তি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সরকার ক্রিয়াশীল থাকে। কোন দেশে কি ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠিত থাকবে তা সে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বোধ-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা সর্বোপরি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ধারার ওপর নির্ভর করে। তবে আধুনিক বিশ্ব গণতন্ত্রায়নের বিশ্ব। সে ক্ষেত্রে আধুনিক সরকার পদ্ধতি হচ্ছে গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি। মূলত সরকার যে অনুসঙ্গ দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চর্চা করে তা একটি ‘শক্তি’। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই এই শক্তি সরকারের হাতে তুলে দেয় সুশাসন ও ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য। এ প্রসঙ্গে ম্যাকআইভার বলেন, ÔThe state in an association which acting through law as promulgated by a government endowed to this end with coercive power, maintaining within a community territorially demarcated.. অর্থাৎ রাষ্ট্র এমন একটি সংঘ, যা সরকারের ঘোষিত আইন অনুসারে কার্য করে। সরকার আইন ঘোষণা করার এবং তা পালন করার শক্তির অধিকারী। ঐ শক্তির সাহায্যে সরকার নির্দিষ্ট ভূ-খ-ের মধ্যে সামাজিক শৃঙ্খলার বাহ্যিক ও সর্বজনীন অবস্থা বজায় রাখে।
রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হলো সুশাসনের মাধ্যমে নাগরিকদের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা বিধান করা। এ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ(The Executive) ক্রিয়াশীল থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক গার্নারের মতে, প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের কার্যাবলী মোটামুটি পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যথা- (এক) অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা বিষয়ক (Administrative), (দুই) পররাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও বৈদেশিক সম্বন্ধ (Diplomatic), (তিন) সামরিক ব্যবস্থা ((Military), (চার) বিচার বিষয়ক ক্ষমতা (Judicial) ও (পাঁচ) আইন বিষয়ক ক্ষমতা (Legislative). মূলত শাসন বিভাগের এসব উপ-বিভাগ যদি ক্রিয়াশীল ও যথাযথভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারে তাহলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত আছে বলে মনে করা হয়।
আমাদের দেশের শাসন বিভাগে এসব সকল উপ-বিভাগই বিদ্যমান। কিন্তু রাষ্ট্রের এসব বিভাগ কতখানি ক্রিয়াশীল ও কার্যকর তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। এই নিবন্ধের ক্ষুদ্র পরিসরে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই। তাই সংক্ষিপ্ত ধারণার মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করতে হচ্ছে।
একটি রাষ্ট্রের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলার ওপর। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় না থাকলে নাগরিক তার অধিকার পুরোপুরি ভোগ করতে পারে না। আর নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখতেই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা বিস্তৃতি লাভ করে। মূলত বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব সরকারের ওপর ন্যস্ত। তাই অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলার ওপর নির্ভর করে সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার কি এ মহান জাতীয় দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে সফল? এটিই এখন আলোচ্য বিষয়।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতা লাভ এই প্রথম নয়। বর্তমান মেয়াদের আগেও তারা দু’দফা দেশ শাসন করেছে। সেসব মেয়াদে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে সুশাসন উপহার দিত পেরেছে কি না তা কারো কাছে অজনা নয়। সেসব আলোচনা করতে গিয়ে নিবন্ধের পরিসর বাড়াতে চাই না বরং সর্বসাম্প্রতিক সময়ে সরকারের দেশের আইনশৃঙ্খলাবিরোধী অপৎপরতা,  রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সর্বপরি গণহত্যার বিষয়ে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
সরকারের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়াদে সরকার গঠন করার মাত্র ১ মাসের মাথায় পিলখানা ট্রাজেডির ঘটনা ঘটে। এই নির্মম ঘটনার মাধ্যমে দেশের ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে সরকারি এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন এবং দীর্ঘ তদন্ত শেষে পৃথক দু’টি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও সেসব প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এতে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে যে, সরকার পক্ষই এই নারকীয় হত্যাকা-ের সাথে জড়িত।
দেশের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের হলেও তারাই পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতর অবনতি ঘটাচ্ছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাধী মানসিকতার কারণে বিরোধী দল রাজপথে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারছে না বরং বিরোধী দলের ঘরোয়া কর্মসূচিগুলোকে কথিত গোপন বৈঠক আখ্যা দিয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে কথিত রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলী চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান হলেও সরকার প্রকারান্তরে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর সাথে দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো আচরণ করছে। কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে যে আইন করা হয়েছে তা কথিত অভিযুক্তদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ করেছে। কোন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সময়সীমা ৬০ দিন হলেও কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে করা হয়েছে ৩০ দিন। কথিত বিচারের ক্ষেত্রে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধি ও সাক্ষ্য আইনকে অকার্যকর করে এমনভাবে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে যে, যাতে স্বাভাবিকভাবেই যেকোন ব্যক্তিকে দ-িত করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা যায়। গণতান্ত্রিক সমাজে যেকোন বিষয়ে ব্যক্তির মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করলেও জনগণ প্রতিবাদের অধিকারটুকুও পায়নি।
সরকার গোটা দেশকেই অপরাধ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। একদিকে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর ওপর মামলা, হামলা, জেল-জুলুম চালানো হয়েছে, পক্ষান্তরে তারা দলীয় অপরাধীদের নানাভাবে আস্কারা দিয়ে গোটা দেশেই এক নৈরাজ্যকার পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসীরা বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর ওপর হত্যা-সন্ত্রাস, নৈরাজ্য চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া তো হয়ইনি বরং তাদেরকে নানানভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে দর্জি দোকানী বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করলেও মূল হত্যাকারীদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। যা করা হচ্ছে তা শুধু আইওয়াশ মাত্র। গত ৩ জুলাই পছন্দের প্রার্থীকে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে নিয়োগ না দেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ বায়তুল্লাহ কাদরীকে লাঞ্চিত করেছে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সরকারি আস্কারা পেয়েই তিন লীগ (আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ) নেতা-কর্মীরা নিয়ন্ত্রণের বাইবে চলে গেছে। এতে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরের শাসনামলে সারা দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৫শ’ ৩২টি, যৌতুকের কারণে নারী নিগ্রহের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ১শ’ ৭০, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩ হাজার ৫ জন এবং সারাদেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ১শ’ ৮৫টি। এ সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান থেকেই আওয়ামী দুঃশাসনের বিষয়টি সহজেই অনুমেয়।
সরকার দেশের পুলিশ বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। জনতার বিক্ষোভ দমনের জন্য সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী বিজিবিকে মাঠে নামানো হয়েছে। এতে সীমান্তে অপরাধ প্রবণতা ও চোরাচালান মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা সরকারের ইচ্ছামত বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন তাদেরকে নানাভাবে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুকের ওপর হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদকে প্রেসিডেন্ট পদকে ভূষিত করা হয়েছে। পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোলামেলাভাবেই বলেছেন, পদক প্রদানে বিরোধীদলীয় চীফ হুইপের ওপর হামলার বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী হাসানকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তা-ব চালানোর পর তাকে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে প্রভূত অর্থ দিয়ে সিঙ্গাপুরে প্রমোদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে সরকার পুলিশকে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর ওপর নিগ্রহের ওপেন লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এসব সরকারের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না বরং তারা বিরোধী দলের জন্য যে গর্ত খুঁড়ছে সময়ের ব্যবধানে হয়তো তাদেরকে সে গর্তেই পড়তে হবে।
একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রতিটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন দেশের পররাষ্ট্রনীতি সমতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে না হয়ে নতজানু হয়, সেক্ষেত্রে দেশটির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অসার হয়ে পরে। বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি শুধু নতজানু নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে জানু কাটার পর্যায়ে পরে। ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতালিপ্সার কারণেই তারা অতিমাত্রায় ভারত তোষণ করে চলেছে। ভারত সীমান্তে আমাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে বর্তমান সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সবগুলোই ভারতের পক্ষে চলে গেছে। এমনকি ভারতীয় পত্রিকাগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারত যা কখনো দাবি করেনি এমন কিছুও সরকার ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। সরকার ভারতকে একতরফাভাবে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তিস্তা চুক্তি এখনো সম্পাদন করেনি। অথচ ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তান সরকার উভয় পাকিস্তানের মধ্যে সড়ক পথে সংযোগ স্থাপনের জন্য কড়িডোর বা ট্রানজিট চেয়ে ছিল। ভারত তখন এই বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল যে, এতে ভারতের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে।
বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে ভারত তোষণকেন্দ্রিক। এর প্রমাণ মেলে প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের টেলি কথোপকথনের মাধ্যমে। মিসেস ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি তার প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, বিষয়টি নাকি ভারতই ভাল বলতে পারবে। মূলত কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হচ্ছিল তখন সরকারে পক্ষে বলা হতো বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু মিসেস ক্লিনটনের কাছে প্রধানমন্ত্রী ভারতের দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করে কি স্ববিরোধিতায় লিপ্ত হননি? এজন্য অবশ্যই তাকে এবং কথিত বিচারের কুশীলবদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
সরকারের ভ্রান্ত পররাষ্ট্রনীতির কারণে মারাত্মক কূটনৈতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বৈদেশিক রেমিটেন্ট প্রবাহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হলেও সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বের শ্রমবাজারে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃক স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো অমান্য করায় আন্তর্জাতিকভাবে দেশ মারাত্মক ইমেজ সংকটে পরেছে। কিন্তু সরকার ভারত কেন্দ্রীয় নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। ফলে দেশ আন্তর্জাতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এবং দেশের মানুষকে নানাবিধ বৈরী পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি গঠন করতে হলে শক্তিশালী ও যুগোপযোগী সেনাবাহিনীর কোন বিকল্প নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ দেশে সেনাবাহিনীর আবশ্যকতাই অস্বীকার করেছিল।   পিলখানার নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ৫৭ জন চৌকস ও দেশপ্রেমী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী বিডিআরকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেশের প্রতিরক্ষা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগ কখনোই দেশে শক্তিশালী ও স্বাধীনচেতা সেনাবাহিনীর অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর সমান্তরালে রক্ষীবাহিনী তৈরী করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের হীনমনোবৃত্তির কারণেই দেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংশের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।  দলীয় আনুগত্যের কারণে হত্যা এবং প্রধান বিচারপতির এজলাসে ভাংচুরের অভিযোগে অভিযুক্তকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পুরো বিচার ব্যবস্থা কলঙ্কিত করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত বিষয়গুলোকে আদালতে টেনে এনে একের পর এক নিজেদের অনুকূলে রায় নেয়া হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে উচ্চ আদালতের দোহাই দিয়ে। আর এই বিতর্কিত রায় নিয়েও মহাকেলেঙ্কারির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ের সাথে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর রায় লেখা হয়েছে শপথের বাইরে থাকা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে। যার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সর্বমহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর আগে সেই বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করে আওয়ামী লীগের হাতে চাঁদ তুলে দিয়েছেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রণীত ও পাসকৃত ৫ম সংশোধনী তিনি এই বলে বাতিল করেছেন যে, মার্শাল ল’ বলতে সংবিধানে কোন ল’ নেই। দ্বিতীয়ত এ সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক স্থাপনা (Basic Structure) বদলে দিয়েছে। এটা জঘন্য অপরাধ। বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ) গঠন ও বাকশালী শাসনকে কিন্তু বেআইনী বলা হয়নি ঘোষিত রায়ে বরং Doctrine of necessity-এর অধীনে এনে বিষয়টি ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে, যদিও এ বিষয়ে কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।  ’৭২-এর সংবিধানে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিলনা। কিন্তু সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সে Basic Structure পরিবর্তন করে দেয়া হয়। চালুু করা হয় একদেশ এক নেতা পদ্ধতি। এ পরিবর্তন সম্পর্কে বিচারপতি খায়রুল হক বলেছেন,  Violation of the constitution is a grave legal wrong and remains so for all time to come. It can not be legalized and shall remain illegitimate for ever. (P.242 of Judgment) কিন্তু ৪র্থ সংশোধনীর কুশীলবদের না চাইতেই ক্ষমতা করে দেয়া হয়েছে। এটা আর যা হোক কোন বিচারকের কাজ হতে পারে না।  আর কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তো যা করা হয়েছে তা তো জাতি হিসেবে আমাদের মাথা নিচু করে দেয়া হয়েছে। দেশে আইন থাকলেও বাস্তব প্রয়োগ নেই। ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের অনুকূলে প্রণয়ন করছে এবং তা তাদের প্রতিকূলে গেলে বাতিলও করা হচ্ছে। এভাবে কোন সভ্য সমাজ চলতে পারে না।
আওয়ামী লীগের অতিমাত্রায় ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে জনগণের সমস্যা সমাধানের কোন সুযোগ হয়েছে বলে মনে হয় না। সরকারের এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কোন বিষয়েই দেশের মানুষ প্রতিকার পাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের আমলেই ইতিহাসের সর্ববৃহত্ত শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এতে লাখ লাখ আমানতকারী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদকারীদের অর্থমন্ত্রী ফটকাবাজ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের উপহাস করেছেন। ঘটনা তদন্তে সরকার ঘনিষ্ঠ খন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন তাতে তো সরকারের শ্যাম-কুল উভয়ই যায় যায় অবস্থা। খোদ অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রতিবেদনে যাদেরকে দায়ী করা হয়েছে তাদেরকে ধরার মতো ক্ষমতা সরকারের নেই। অবশ্য তিনি এ প্রতিবেদনকে অগ্রণযোগ্য বললেও বিষয়টি পুনঃতদন্তের কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রকারান্তরে সরকার ইব্রাহিম খালেদের রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন।
সরকারের পদ্মা সেতু দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে। সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির জন্য সরকারের শীর্ষ মহল দায়ী হলেও সরকার তা বরাবর অস্বীকার করে আসছে এবং অভিযুক্তদের পক্ষে খোদ প্রধানমন্ত্রী সাফাই গেয়েছেন। এমনকি পদ্মা সেতু দুর্নীতির মহারথী সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে দেশপ্রেমী আখ্যা দিয়েছেন। সরকার আজ্ঞাবহ দুর্নীতি দমন কমিশনও আবুল হোসেন ক্লিন ইমেজের সার্টিফিকেট দিয়েছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো বিশ্বব্যাংক প্রদত্ত প্রতিবেদনে আবুল হোসেনকেই পদ্মা সেতু দুর্নীতির দিকপাল হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে যেমন বহিঃর্বিশ্বে দেশের মান-মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিত্যক্ত হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে রীতিমতো ভাবলেশহীন।
এ সরকারের আমলেই ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ব্যাংক কেলেঙ্কারি হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হলেও বয়োবৃদ্ধ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নাকি বড় ধরনের ঘটনা নয়। এমনকি সরকার হলমার্ক গ্রুপের কাছে হাতিয়ে নেয়া টাকা আদায় না করে নতুন করে আবারো ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। এতে ঘটনার সাথে সরকারের শীর্ষ মহলের জড়িত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। হলমার্কের বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলেও ভেতরের খবর নাকি আরো খারাপ। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, বর্তমান সরকারের আমলে নাকি পুরো ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবে সরকার সবকিছুই গোপন রেখেছে। আর সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকতেই যেকোন মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। সেজন্যই কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে এই ভেবে যে ক্ষমতা হারালে তাদের পিঠের চামড়া রক্ষা সম্ভব নাও হতে পারে।
তৈরী পোশাক শিল্পে সীমাহীন নৈরাজ্য, শ্রমিক অসন্তোষ, শ্রমিকদের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা এবং শ্রমিক নেতা আমিনুল অপহরণসহ পোশাক শিল্পে নানাবিধ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করা হয়েছে। এতে আমাদের দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে অস্তিত্ব সংকটে পরেছে। সরকার পক্ষ এজন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীকে দায়ী করছে। যেমন পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের পর সরকারের পক্ষে নোবেল লরিয়েট ড. ইউনুুসকে দায়ী করা হয়েছিল। সরকার বোধহয় নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার বিরোধী দলসহ অন্যদের ওপর চাপিয়ে পুলকবোধ করে। জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীর কথিত নিবন্ধকে দায়ী করছেন। এর মাধ্যমে সরকার কি নিজেদের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করছে না? বিরোধী নেত্রীর একটি নিবন্ধের কারণেই যদি ওবামা প্রশাসন জিএসপি সুবিধা বাতিল করে তাহলে সরকারের কূটনৈতিক মিশনগুলো কি করেছে? বিরোধী দলের একটি নিবন্ধের কারণেই যদি সরকারের কূটনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয় তাহলে সরকার যে বৈদেশিক কূটনীতিতে কতখানি অসহায় তা সহজেই অনুমেয়। তাই এই অথর্ব সরকারের হাতে দেশ ও জাতি কোনভাবেই নিরাপদ বলে মনে হয় না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করার ওবামা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে প্রভাবশালী ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এটা আসলে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতার জন্য দেশটির জনগণকে শাস্তি দেয়ার শামিল। পত্রিকাটি বরং বাংলাদেশের তৈরী পোশাক যাতে বিনাশুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে  রফতানি করা যায়, সে সুপারিশ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের দারিদ্র্য কমবে বলে ১ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শ্রমিকরা বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরি পায় সত্য। তা সত্বেও গত দু’দশকে বাংলাদেশের গরীব মানুষের সংখ্যা ৭০ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে শিল্পে দ্রুত বিকাশের মর্মান্তিক পার্শ¦প্রতিক্রিয়া হলো নিরাপদ পরিবেশ বিষয়ক সমস্যাটি। আর সরকার ও সমাজের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে না। শিল্প নিয়ন্ত্রণ সামর্থ্য বিকাশ ও দুর্নীতি দমনের ঢাকার সহায়তা প্রয়োজন। তবে একথাও গোপন রাখা ঠিক নয় যে, এসব কারখানা আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে এবং তা উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
ওপরের আলোচনা থেকে সহজেই অনুমিত হয় যে, বিগত সাড়ে চার বছরের শাসনামলে সরকার জনগণকে সুশাসন উপহার দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সরকারি উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণে মারাত্মকভাবে গণদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিলের পর সরকার তা ফিরে পেতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো বিরোধী দলকে দোষারোপ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরকার বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় সেরেছে। গত ৪ জুলাই লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্ট মন্তব্য করে বলেছে, ‘বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য ড. ইউনুস ও আমিনুল ইস্যু কাজ করেছে’। কিন্তু সরকার বাস্তবতা উপলব্ধি না করে সকল ক্ষেত্রেই এ ধরনের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তারা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বিরোধী দলসহ জনগণের ওপর নিগ্রহ চালিয়েছে। ফলে জনগণের দুর্ভোগ যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনিভাবে সরকারও গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার ভাষায়, ‘শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা একেবারে তলানীতে ঠেকেছে’। এখন তারা খরকুটার আশ্রয়ে নিজেদের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার প্রাণান্তকর চেষ্টায় লিপ্ত। এতে তারা কতখানি সফল হবে তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads