সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৩

কোটাপ্রথা বাতিলের এখনই সময়


কোটাপদ্ধতি বাতিল ও ৩৪তম বিসিএসের ফলাফল বাতিলের আন্দোলন শাহবাগের মেধামঞ্চ ছাড়িয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিার্থীর প্রাণের দাবিতে রূপ নিয়েছে। ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি থেকেই কোটাপদ্ধতি প্রয়োগ করায় এ আন্দোলনের সূচনা। মেধাবীদের একটি বড় অংশ সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে শুরুতেই ছিটকে পড়েছে। উত্তীর্ণ ১২ হাজার ৩৩ জনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সাড়ে তিন হাজারের মতো। প্রায় হাজারখানেক নারী কোটায়। উপজাতি কোটায় ৫০০ জন। পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহ গণনা অনুযায়ী বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে ুদ্র নৃগোষ্ঠী ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১ জন। প্রতিবন্ধী ২০ লাখ ১৬ হাজার ৬১২ জন। দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। ুদ্র নৃগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ১.১০ শতাংশের জন্য কোটা সংরতি থাকছে ৫ ভাগ, প্রতিবন্ধী ১.৪০ শতাংশের জন্য ১ ভাগ আর মাত্র .১৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের জন্য সংরতি কোটা থাকছে ৩০ ভাগ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ১.৬৩ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ৩৬ শতাংশের বেশি কোটা সংরতি। জেলা ও নারী কোটাসহ মোট ৫৬ শতাংশ সরকারি চাকরির পদ কোটাধারীদের জন্য সংরতি। বাকি মাত্র ৪৪ শতাংশ পদ রয়েছে সাধারণ শিার্থীদের জন্য। আন্দোলনের মঞ্চ থেকে অভিযোগ আসছে, কোটাধারীরা ৬০ থেকে ৬৫ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর সাধারণ শিার্থীরা ৭৫ থেকে ৭৮ নম্বর পেয়েও উত্তীর্ণ হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে যোগ হয়েছে নতুন আরেক যন্ত্রণা; সংরতি কোটায় কোনো প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো খালি থাকবে। মৌখিক পরীায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় ওপরের দিকে থেকেও চাকরি পাচ্ছে না। চাকরি পাবে কম মেধাবীরা কোটার জোরে। আর মেধাবীদের কোনো মূল্যায়ন হবে না। এটা সাধারণ শিার্থীদের ওপর অনেক বড় জুলুম। তাই সমাজের সর্বস্তর থেকে জোরালো দাবি আসছে কোটাপ্রথা বাতিলের প।ে কোটাপ্রথা আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়েছে। বিগত আট বছরে পিএসসি প্রশাসনিক ক্যাডারে নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে এক হাজার ১৮৯ জনকে। যার ৬২৯ জনকে বিভিন্ন কোটায়। আর মাত্র ৫৬০ জনকে মেধায়। সুতরাং ৭০-৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে যারা নিয়োগ পেল আর যারা ৫০-৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে একই ক্যাডারে নিয়োগ পেল, তাদের মান কখনো কি সমান হতে পারে? নিয়োগ-পদোন্নতিতে তাই প্রশাসনে সৃষ্টি হয় চরম ােভ। ছাত্রলীগ কেন এর বিপে অবস্থান নিলো। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলো কোটার অন্তরালে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগের যে সুবিধা নিত, কোটাপ্রথা বাতিল হলে সেই সুযোগ তারা আর নিতে পারবে না। তাই ছাত্রলীগ মরিয়া হয়ে উঠেছে। অবস্থান নিয়েছে কোটাপ্রথা বাতিলের বিপক্ষে। দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন কোটাপ্রথা বাতিলের সপে অবস্থান নিয়েছে। চলমান আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী। তিনি বলেন, কেউ ৮০ পেয়ে পাস করবে না, আর কেউ ৫০ পেয়ে পাস করবেÑ এই প্রহসন মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সামিয়া রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন মাসুদ কোটাপদ্ধতির যৌক্তিক পুনর্বিন্যাসের আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়েছেন। কোটার কথা উঠলেই ভারতের উদাহরণ চলে আসে। অথচ ভারত অনুন্নত সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অবিরত কাজ করে যাচ্ছে । দেশের সরকারি চাকরির উচ্চপদগুলো ব্রিটিশ থেকে প্রাপ্ত চাকরি কাঠামোগুলোকে ভেঙে কোটার ওপর ছেড়ে দেয়নি। তবে সীমিত সংখ্যায় সর্বভারতীয় ও রাজ্যপর্যায়ে প্রথম শ্রেণীর চাকরির পদে সুযোগ করে দেয়ার জন্য কিছু ব্যবস্থা করেছে। ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য বিপি মণ্ডলের নেতৃত্বে অনুন্নত সম্প্রদায়গুলোকে সরকারি চাকরি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি ইত্যাদি বিষয়ে বিবেচনার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন ১৯৮০ সালে তাদের প্রতিবেদনে ৪৯.৫ শতাংশ চাকরি তাদের জন্য সংরতি রাখা আর ঠিক এই একই অনুপাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংরতি রাখার প্রস্তাব করে। কিন্তু ভিপি সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এ সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। সমগ্র ভারতবাসী দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ কমিশনের রিপোর্টের বিপরীতে জোর অবস্থান নিয়েছিল। আমাদের দেশজুড়ে যেখানে জনমত সৃষ্টি হয়েছে কোটার বিপ,ে তাহলে সরকারের টনক নড়ছে না কেন?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads