মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০১৩

এত উন্নয়ন করে কী হবে? ভোট তো পাই না।’


কখনও কখনও স্তম্ভিত হয়ে যাই। কখনও কখনও আমাদের দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের বক্তব্যে ঠিক দিশা করে উঠতে পারি না যে এরা  প্রকৃতিস্থ আছেন কি নেই। কিংবা গণতন্ত্রের ন্যূনতম বিষয়াদি সম্পর্কেও তাদের কোনো ধারণা আছে কি নেই। এর আগে শ্রদ্ধেয় গবেষক রাজনীতিক শিক্ষাবিদ বদরুদ্দীন উমর এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, দেশে এখন উন্মাদের শাসন চলছে। বদরুদ্দীন ওমর কখনোই বাত কি বাত কিংবা মুখ ফসকানো কথা বলেন না। তিনি যা বলেন চিন্তা করে, হিসেব করেই বলেন। তখনো মনে হয়েছিলো শ্রদ্ধেয় বদরুদ্দীন উমরই সত্য। উন্মাদের শাসনই চলছে। এখন বোধ করি, সে উন্মাদনা আরো বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ কথা আকস্মিকভাবে মনে হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনা এবং সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের কিছু বক্তব্য আমাদের তেমনি মনোভাব পোষণে বাধ্য করছে। তার ভেতরে কোনো স্বাভাবিকতা, গণতন্ত্রপ্রিয়তা, সহনশীলতাÑ কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। আগের ঘটনা আরো চমকপ্রদই ছিলো। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আপনারা কি হাতে চুড়ি পরে থাকেন? একটি লাশ ফেললে ১০ টি লাশ ফেলে দেবেন। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই হোক আর প্রতিপক্ষের সাথে বিবাদেই হোক, আওয়ামী লীগের যদি একজন কর্মীও নিহত হয়, তাহলে তারা যেন প্রতিপক্ষের ১০ জনকে খুন করে। এ কথাটিও স্বাভাবিক ছিল না। কথাটি সুস্থ মস্তিস্ক-প্রসূত হতে পারে না। সত্যি যদি এরকম ঘটত, তাহলে বাংলাদেশ খুনের উৎসবে ইতিমধ্যে জনশূন্য হয়ে পড়ত। এদেশের উর্বর মাটি সে লাশের ভার বইতে পারত কিনা সন্দেহ।
সে তো আগের আমলের ঘটনা। আমরা আশা করেছিলাম, রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী আরও পরিপক্বতা অর্জন করেছেন। এ কথা সত্য যে, যদি তাকে আঁতাতের মাধ্যমে নির্বাচন করতে না হতো, প্রকৃতপক্ষেই জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে হতো, তাহলে হয়তো আমরা সেই পরিপক্বতার দৃষ্টান্ত পেতাম। কিন্তু আঁতাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার ফলে সে পরিপক্বতা অর্জন তার জন্য প্রয়োজনীয় হয়নি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হয়। তাদের মন মানসিকতা বুঝতে হয়। তাদের চাহিদা, দাবি-দাওয়া, আকাক্সক্ষার সঙ্গে একাত্ম হতে হয়। শেখ হাসিনার সরকারকে তার কোনো কিছুই করতে হয়নি। ফলে তিনি  চরম উচ্ছৃংখল আচরণ করতে শুরু করেন। তার দলের লোকেরা যখন লাশ ফেলতে শুরু করল, তখন তিনি ঐ লাশ ফেলার পক্ষে হাজার রকম যুক্তি উপস্থাপন করতে শুরু করলেন। কখনও তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যে ব্যক্তি খুন করেছে তার পিতাকে রাজাকাররা খুন করেছে। অতএব এখন যে কোনো লোককে খুন করার অধিকার তার আছে। এটিকেও বোধ করি পাগলের প্রলাপ বলে অভিহিত করা যায়। 
এটি ঘটেছিল নাটোরের বড়াই গ্রামের পৌরসভা মেয়র হত্যার সময়। যার বাবাকে কথিত রাজাকাররা খুন করেছিলো। তার বয়স তখন মাত্র কয়েক বছর হওয়ার কথা। আর নিহত পৌরসভা মেয়র মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মগ্রহণই করেননি। তারপরেও প্রধানমন্ত্রী নিজে কোনো ব্যক্তির হাতে হত্যার অধিকার তুলে দিয়ে গৌরব বোধ করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্র তো ব্যক্তিকে হত্যার অধিকার দেয় না। যদি কারো স্বজন খুন হন, তবে তিনি আদালতে সে খুনের বিচার চাইবেন। আদালত তার বিচার করবেন। তিনি যদি সরাসরি খুনী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের দেশের আইনে আদালত তাকে মৃত্যুদ- দিতে পারে। সেভাবেই খুনের বদলা হয়। কিন্তু লাশ ফেলে দেয়া কিছুতেই আইনের শাসন নয়। যেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন, সেখানে অন্য নাগরিকের কাছ থেকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা আশা করা যায় না। এতে সমাজে ব্যাপক অরাজকতার সৃষ্টি হয়। গত সাড়ে চার বছরে সরকার তেমন এক ভয়াবহ অরাজকতাই সৃষ্টি করেছেন।
সে অবস্থা বাড়তে বাড়তে এখন এক উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে। যেন উন্মাদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আফগানিস্তানে বাদশা আমানুল্লাহর পতনের পর এক ডাকাত দল রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলো। সে ডাকাত দলের সর্দারের নাম ছিলো বাচ্চায়ে শকাব। সে ক্ষমতা গ্রহণ করে খুন-খারাবি, লুণ্ঠন, খেয়ালখুশি মতো আইন জারি করে মাস খানেকের মধ্যে পুরো সমাজ একেবারে তচনছ করে দিয়েছিলো। এখন দেশে যেন সেই বাচ্চায়ে শকাবের শাসন চলছে। সরকার ভাবতে শুরু করেছে যে, এই রাষ্ট্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভূমি, এইসবটুকুই তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। আর জনগণ যেন তাদের দাসানুদাস প্রজা। সম্রাটের কথার বাইরে যদি প্রজা যায়, তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে। সেই অবর্ণনীয় দুঃখের ভার এখন আমরা প্রতিটি নাগরিক বয়ে বেড়াচ্ছি। সে ভার ক্রমশই দুঃসহ হয়ে ওঠছে। ১৬ কোটি মানুষ যদি এই দুঃসহ বোঝার ভার সরকারের মাথার ওপর ছুঁড়ে ফেলে দেন, তবে যে এই সরকার ধূলোয় মিশে যাবে, সে কা-জ্ঞান সরকারের লুপ্ত হয়েছে।
অতিসম্প্রতি সংঘটিত কয়েকটি উদাহরণ দিলে এর একটি খ- চিত্র পাওয়া যেতে পারে। তা হলো, (১) মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত দৃষ্টিকটু মনোভঙ্গি। কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজ দলের লোকদের সরকারি চাকরিতে ঢোকানোর যে মহাপরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করেছে, তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রতিবাদে নেমেছিলো মেধাবী ছাত্ররা। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)-এর চাকরি ক্ষেত্রে দেখা গেলো যে, পরীক্ষায় ৮০ নম্বর পেয়েও কেউ কেউ পাস করতে পারেনি। আবার ৫০ নম্বর পাওয়া অনেককেই পাস করিয়ে দেয়া হয়েছে। আর কোটা ব্যবস্থা খেয়ে ফেলছে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ চাকরি। এরই প্রতিবাদে একদিন রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত শাহবাগ চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলো মেধাবী শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা ব্যবস্থার বাতিলের দাবি জানাচ্ছিলো। সরকার প্রজন্ম চত্বর নামে শাহবাগে এক বান্দরের খেলার আয়োজন করেছিলো। প্রায় মাস দেড়েক ধরে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ও মদদে সে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হয়। সন্দেহ নেই, এই দীর্ঘ সময় ধরে শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালসহ পুরো ঢাকা শহরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সরকার খাদ্য দিয়ে, পানি দিয়ে, সিসি ক্যামেরা বসিয়ে, ভ্রাম্যমান টয়লেট বসিয়ে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলো। কিছু অপগত লোক সেখানে গান-বাজনা, ঢোল-ডাগড়া বাজিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নেমেছিলো। করতালি দিতে গিয়ে হাজির হয়েছিলো সরকার দলীয় লোকেরা। ভারত থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিলো আরও কিছু খোল-করতাল বাঁদর। খোদ ভারত সরকারের প্রতিনিধি বলেছিলেন, প্রজন্ম চত্বরের এই সং-যাত্রার প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। এটি বেশ ভালো কথা। কারণটা কি? কারণটা নাকি তারুণ্যের উত্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তার মন পড়ে থাকে শাহবাগে। আর কী দারুণ ব্যবস্থা! শাহবাগীরা অল্প সময়ের মধ্যেই সরকারের উপর সরকার হয়ে উঠলো।
তারা বলল, ঘরে ঘরে মোমবাতি জ্বালাও। মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়া হলো। তারা বলল, স্কুল-কলেজে জাতীয় পতাকা তোলো। জাতীয় পতাকা উঠে গেলো। তারা বললো, সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা তোলো। সরকার জাতীয় পতাকা তুলে দিলো। নাটক এই পর্যন্ত হলে বোধ করি এ বিষয়ে আর কোনো কথা থাকতো না। কিন্তু এক সময় দেখা গেলো এই শাহবাগীরা মুক্তিযুদ্ধের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্লগে উচ্চারণ-অযোগ্য কটূক্তি করতে শুরু করে দিল। আর এর ভেতর দিয়েই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের উত্থান ঘটলো। সঙ্গতভাবেই বলা যায়, যদি শাহবাগীদের এই উত্থান না ঘটানো হতো তাহলে হয়তো এমন তীব্র আকারে হেফাজতে ইসলামের উত্থান ঘটতো না। খানিকটা প্রসঙ্গান্তরে এসে গেছি।
আমরা আলোচনা করছিলাম মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে। তারা শাহবাগে একদিন বিক্ষোভ করেছিলেন মেধার স্বীকৃতির দাবিতে। কিন্তু রাষ্ট্রশক্তির চোখে তা ছিল যার পর নাই ঔদ্ধত্য। মেধা আছে, অথচ রাষ্ট্রশক্তির অনুগত নয়, এমন মেধার চাইতে রাষ্ট্রশক্তির অনুগত মেধাহীন অস্ত্রবাজরাই সরকারের কাছে অধিক প্রিয় হয়ে ওঠে। আর তাই, দ্বিতীয় দিন তাদের শাহবাগে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। পুলিশ আর ছাত্রলীগ মিলে ধুম পিটিয়ে তাদের এলাকা ছাড়া করে দিয়েছিল। এতে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না।
আমরা ভেবেছিলাম, সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেধাবীদের জন্য একটি সম্মানজনক সুরাহার কথা বলবেন। কিন্তু বেলারুশে ভাগ্নির বিয়ে থেকে ফিরে তিনি এমন কথা বলে বসলেন যাতে চমকে উঠতে হলো। বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর করে, স্থাপনা ধ্বংস করে, তারা কীসের মেধাবী? মেধাবীরা এ ধরনের কাজ করতে পারে না। যারা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত, তাদের পিএসসির অধীনে কোনো চাকরি হবে না। যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেছে, তা-ব চালিয়েছে, তাদের ছবি সংরক্ষণ করে পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে। ছবি দেখে ভাইভা নেয়া হবে। তাদের পাবলিক সার্ভিস কমিশনে চাকরি হবে না। যারা মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে খাটো করে দেখতে চায়, গাড়ি ভাঙচুর করে, তাদের চাকরি হওয়ার অধিকার নেই।
তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে। মেয়েদের কোটা দেয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কিসের আন্দোলন? মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাটো করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা যদি ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন না করতো, তাহলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনই হতো না। তাদের অবদানকে খাটো করার জন্য কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? মেধাবী ছাত্ররা গাড়ি পোড়ায় না। উচ্ছৃংখল হতে পারে না। এরা কি চাকরি পাওয়ার যোগ্য? তাদেরকে যারা উস্কানি দিচ্ছে, তারা কি আগামীতে রাজাকার, আল বদর কোটা দিয়ে দেশ চালাবে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরা এদের উস্কানি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আন্দোলন করে অন্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। যারা গাড়ি ভাঙচুর করে, স্থাপত্য ভাঙচুর করে, তারা কতটুকু মেধাবী? তাদের মেধা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এ কথার মধ্যে যতটুকু আবেগ আছে তার সামান্যও যুক্তি নেই। এবং তা প্রকৃতস্থ কথাও নয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, জাতির উন্নতি চাইলে মেধার মূল্য দিতেই হবে। মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। তাদের আর কোটার প্রয়োজন নেই। তারা পুরুষকে ডিঙিয়ে প্রতিযোগিতায়ই অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বেলায় যা সত্য ছিল, তা তাদের ছেলে মেয়ে, নাতি-নাতনীদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হতে পারে না। আর বহু মুক্তিযোদ্ধা নিতান্তই দিন-মজুর ছিলেন। রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। তারা কোটার খবর রাখেন না। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য লড়াইয়ের ডাকে তারা শরীক হয়েছিলেন, দায়িত্ব হিসেবে। যুদ্ধ শেষ হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তাদের কর্তব্য সাধিত হয়েছে। তারা আবার স্ব স্ব পেশায় ফিরে গেছেন। কোনোদিন কোটার খবর নেননি। পাকিস্তানীদের হেফাজতে থেকে শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের কোটার বড় বেশি খবর নিচ্ছেন।
এরপর ২৪ জুলাই কালের কণ্ঠ খবর দিয়েছে যে, “তিন সিটি উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত/ প্রধানমন্ত্রী বললেন, অনুমোদন দিলে নির্বাচিতরা বসে বসে খাবেন।” ঐ খবরে বলা হয়েছে, বরিশাল, সিলেট ও খুলনার উন্নয়নে নেয়া দু’টি প্রকল্প অনুমোদন করেনি জাতীয় অর্থনীতি পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী ২৮২ কোটি টাকা খরচে বরিশাল ও সিলেট মহানগরীর রাস্তাঘাট উন্নয়ন, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন এবং ৮১ কোটি টাকার খুলনা রেল স্টেশন ও ইয়ার্ডের রিমডেলিং এবং বেনাপোল রেল স্টেশন উন্নয়ন বরাদ্দ স্থগিত করে দেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত উন্নয়ন করে কী হবে? ভোট তো পাই না। আমরা ক্ষমতায় এসে দেশের এত কাজ করি, অথচ জনগণ আমাদের উন্নয়ন দেখে না। আর ভোটই যদি না পাই, তাহলে কার জন্য উন্নয়ন করবো?” তিনি বলেন, এ দুটো প্রকল্প অনুমোদন দিলে, যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তারা এই ঘরে বসে বসে খাবেন। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও নানা ধরনের অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক কথাবার্তা বলেন। এর প্রধান কারণ সম্ভবত এই যে, এই তিনটি সিটি করপোরেশনসহ মোট পাঁচটি সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত জোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। জনগণ কেন শেখ হাসিনার দলকে ভোট দিল না, তার মাশুল হিসেবে তাদের করপোরেশনে উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেয়া হলো। এ উন্নয়ন কাজ যদি হতো, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর দলের লোকদের যারা ভোট দিয়েছিল, সেই বিপুল সংখ্যক লোকও উপকৃত হতো। তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী কী বাণী পৌঁছাবেন, বলা দুষ্কর।
আপাতত সর্বশেষ আরও একটি অপ্রকৃতস্থ সমালোচনা আমরা করতে চলেছি। আর তা হলো, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনগুলোতে সরাসরি মেয়র পদে নির্বাচনে যেহেতু আওয়ামী লীগ একেবারেই জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে, অতএব চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে যে, সরাসরি জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচন আর নয়। ষাটের দশকের জেনারেল আইয়ূব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের ধারায় দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সে ধারা হলো, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রথমে কাউন্সিলর নির্বাচিত হবে। অর্থাৎ কমিশনার। এই কমিশনাররা ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচন করবে। সেক্ষেত্রে কেউ যদি এমন কি কোটি টাকার ঘুষ দিয়েও একজন কমিশনারকে কিনে নিতে পারেন, তাহলে জয় তার সুনিশ্চিত। জনগণ বড় বাজে ব্যাপার। শত উন্নয়ন করলেও ভোট দিতে চায় না। ধিক্ এই জনগণকে।
এর সকল কিছু উন্মাদ কর্মকা- বলে প্রতিভাত হচ্ছে। সরকার সম্ভবত নিজেও জানে না, তারা কোথায় যেতে চায়, কী পেতে চায়, কী করতে চায়। ক্ষমতা যে পেতে চায় তা বুঝি। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ক্ষমতা পেতে চাই। জনগণ-ফনগণ বুঝি না। তাই কি কখনও হয়? অতীতেও হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। জনগণ যাতে ভোট দেয়, সরকারকে সেই মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads