সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৩

স্থানীয় সরকারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ


স্থানীয় সরকারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি সবচেয়ে জোরালোভাবে সমালোচিত। উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপসহ গোটা স্থানীয় সরকারকেই কার্যত সরকার অকেজো করে রেখেছে সাড়ে চার বছর ধরে। এ ধরনের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে আমরা মাঝে মধ্যেই উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নানাধর্মী আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করতে দেখেছি। কারণ তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা চর্চা করতে না দিয়ে এবং যখন-তখন তাদের ওপর সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ শুধু স্থানীয় সরকারকে অকেজো করেই রাখেনি, সেই সাথে জন্ম দেয়া হয়েছে একধরনের দুর্নীতির। থেকে থেকে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন মহল এ ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অবসান কামনা করেছে। বাদ-প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু নাছোড়বান্দা সরকার তা হতে দেয়নি। ফলে এই ধারা এখনো অব্যাহত। এতে করে স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেমন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হারাচ্ছেন, তেমনি স্থানীয় সরকারে দুর্নীতি বাসা বাঁধছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) আয়োজিত সংশ্লিষ্ট এক গোলটেবিল বৈঠক এবং মেয়র নির্বাচনের আড়াই বছর পর কক্সবাজারের ১৭ মেয়র ও কাউন্সিলরের শপথ গ্রহণের ঘটনার মধ্যে এ সত্যেরই প্রতিফলন রয়েছে। গত পরশু রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘স্থানীয় সরকার : সুশাসনের সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, স্থানীয় সরকারে উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপই দুর্নীতির প্রধান কারণ। তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপি ও সচিবসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপের কারণে বিভিন্ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা থাকে না। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সরকার প্রশাসনের ক্ষেত্রে এই সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রবলভাবে সমালোচিত। বিশেষ করে কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে, যেমন উপজেলা ও পৌরসভা প্রশাসনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যদি বিরোধীদলীয় হন, তবে তাদের হয়রানি সৃষ্টিতে সরকারি দলের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চরমপর্যায়ে। এর একটি জায়মান উদাহরণ হচ্ছে আড়াই বছর আগে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি এই সুদীর্ঘ সময়ে। কারণ, সেখানে পৌরমেয়র ও কাউন্সিলর যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা সবাই বিরোধী দলের। সেখানে পৌরমেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সরকারের চুশূল জামায়াতে ইসলামের একজন প্রার্থী। সে কারণেই নানা অজুহাতে এই ১৭ জন মেয়র ও কাউন্সিলরকে সুদীর্ঘ আড়াই বছর ধরে শপথ গ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত নানা সমালোচনার মুখে গত শনিবার ২০ জুলাই ২০১৩ এই মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে এই আড়াই বছর কাউন্সিলর রাজবিহারী দাশকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদে বসিয়ে এই পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিলম্বের কারণ হিসেবে উচ্চ আদালতে মামলা ও নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন জটিলতার কথা উল্লেখ করা হলেও কার্যত এটি সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। তা ছাড়া এই তো কিছু দিন একই ধরনের অজুহাত খাড়া করে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের অজুহাত তুলে বিরোধী দলের সমর্থক বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করা হয়। এ ধরনের প্রবণতা নিশ্চিতভাবে জনবিরোধী। আমরা মনে করি, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো চলুক জনগণের ইচ্ছানুযায়ী, জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে। এমনটি নিশ্চিত করতে না পারলে স্থানীয় উন্নয়ন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হবে, দুর্নীতি জোরদার হবে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত আরো সম্প্রসারিত হবে। আর তা কারো জন্যই কাক্সিত নয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads