মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০১৩

রমজান মাসে সেই আবেগের দিনে


রমজান মাস। ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। বিএসএমএমইউ (পিজি) হাসপাতালকে ঘিরে রেখেছিল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। ওই দিন তারেক রহমান জামিনে মুক্ত হওয়ার পর হাসপাতালের বারান্দার পাশে ছোট একটি ক থেকে উঁচু জানালা দিয়ে হাতের ইশারায় জানিয়ে দেন আমি জামিনে মুক্ত, এরপর ৫৪৬ দিন প্রতীা শেষে সোমবার ১১ সেপ্টেম্বর ১০ রমজান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য সেই দিন লন্ডন চলে যান। এখন সবার প্রত্যাশা তারেক রহমান দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে সম্ভাবনাময় দেশকে আগামী দিনে অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উজ্জ্বল করে তুলবেন। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরি। তারেক রহমান সম্ভাবনাময় এক তরুণ নেতা হিসেবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব দায়িত্ব নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী দল গোছানোর কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তার সাংগঠনিক যোগ্যতার কারণে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচির সফলতায় সমাজের সর্বস্তরে তিনি গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। এক দিকে সরকারের রাষ্ট্রীয় সব সফল কর্মসূচি, অন্য দিকে তারেক রহমানের দলীয় সফল কর্মসূচি এটিই হয় তার প্রতিপরে ঈর্ষার কারণ। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তে ঈর্ষাকাতর হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এসব ষড়যন্ত্র ব্যাপকভাবে দেশ-বিদেশে প্রচার প্রপাগান্ডার সহযোগী হয়ে আবির্ভূত হয়। একই ধারার কিছু বুদ্ধিজীবী, সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মী নানা কিসসা কাহিনীর মধ্য দিয়ে তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার করতে থাকে। বিশেষ করে বহুল প্রচারিত একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা, একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা, একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে ছিল সুশীলসমাজ পরিচয়ধারী কিছু বুদ্ধিজীবী। এসব প্রচারণার মাধ্যমে অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। এই প্রচারণার সুযোগে পশ্চিমা বিশ্ব সক্রিয় হয় ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে। এক দিকে মিডিয়া ও সুশীলসমাজের নামধারী দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণা, অন্য দিকে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ধ্বংসাত্মক আন্দোলন। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ রাজধানীর পল্টনসহ কয়েকটি এলাকায় আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবলীলায় প্রায় ২১টি তাজা প্রাণ হারায়। দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এমন প্রপাগান্ডা শুরু হয়। দেশকে বাঁচানোর কথা বলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জরুরি আইন জারির মধ্য দিয়ে ১১ জানুয়ারি ২০০৭ ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে জেনারেল মইন ইউ আহমেদের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শুরু হয় গভীর ষড়যন্ত্র, দেশের দু’টি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ দুই নেত্রীসহ অংখ্যক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। সরকারের ভেতরের একটি অংশ গোপন অভিলাষে আরো একটি কার্যক্রম শুরু করে, যার নাম দেয়া হয় ‘সংস্কার’। সরকারের ভুলনীতির ফলে ‘সংস্কার’ কার্যক্রম দেশ ও জনগণের তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত দু’টি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ভাঙার আয়োজন। সরকারের ছত্রছায়ায় দলের অতীতের সুবিধাভোগী অংশটি বিপ্লবী হয়ে ওঠে। জরুরি আইনের মধ্যে রাজনৈতিক দলের মূল স্রোতাধারা সরকারের আক্রমণের ল্যবস্তুতে পরিণত হয়। দলীয় প্রধানসহ শীর্ষ নেতারা কারাগারে, নেতাকর্মীরা দিশেহারার মধ্যেও প্রায় দুই বছর বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি তাদের আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রকাশ ঘটিয়েছে। এর প্রকাশ ঘটে ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। বেগম খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জামিনে মুক্তি হয়ে জনসমুদ্রে আসেন। তারেক রহমান বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশত্যাগ করেন। সর্বশেষ গত ২৪ জুলাই লন্ডনে যুক্তরাজ্যে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিল-পূর্ব এক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নয়নের রূপরেখা উপস্থাপন করেন। যে রূপরেখায় তিনি বলেছেন, ‘অতীতমুখিতা নয়, দৃষ্টি দিতে হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দিকে।’ ঠিক একইভাবে ২১ জুলাই জাতীয় সংসদ মেম্বার হলে মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বক্তব্যে বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে নতুন ধারার, আমরা যদি নির্বাচিত হতে পারি তবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সৎ ও যোগ্যদের নিয়ে দেশ পরিচালিত করব। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বক্তব্যের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা জাতির ঘনঘোর দুর্দিনে তারা সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। তবেই ১৬ কোটি জনগণের সেই দিনের আবেগ-অনুভূতির শেষ পরিণতি শুভ হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads