রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৩

দেশের শেষ গন্তব্য কোথায়


বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্ধকারের অমানিশা বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধীদলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমদ বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচন হবে। একটি ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচনের কথা শুনে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আর এ নির্বাচন কতটুকু নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তি হিসেবে যে কথাটি বলেছেন তা হল পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন হবে। অপরদিকে প্রধান বিরোধীদলসহ ১৮ দলীয় জোট আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জাতীয় নির্বাচনের আর বেশি দিন বাকি নেই। ২৫ অক্টোবরের মধ্যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। আর ২০১৪ সালের ২৫শে জানুয়ারীর মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্পন্ন হবে সে ব্যাপারে উভয় দলের মধ্যে কোন সমঝোতা হয়নি। ফলে দেশ এক অনিশ্চয়তার পথে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল আবার ক্ষমতাসীন দলকে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানালেও তারা সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ করছে না। আওয়ামী লীগ চাচ্ছে আবার কোন পথে ক্ষমতায় আসা যায়। কিন্তু ইতিহাস বলে ক্ষমতার লোভ অতীতে বহু জাতিকে ধ্বংস করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশে নির্বাচন হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যে পরিবেশ রয়েছে আমাদের দেশে সে পরিবেশ নেই। বিরোধী দলীয় নেতাদের মিথ্যা মামলা হয়রানির নজির অন্য দেশে নেই। বিশেষ করে ইসলামী ছাত্র শিবির, জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতা কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় আটক রাখা হয়েছে। পৌণে ৫ বছরের মধ্যে বিরোধীদলকে রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়া হয়নি। অথচ এ সরকার নিজেদের গণতান্ত্রিক সরকার বলে দাবী করে। আর এ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন নির্বাচনে যে পেশী শক্তি ব্যবহার করা হবে না এমন নিশ্চয়তা তারা দিতে পারবে না। অতএব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকারি দলের পেটুয়াবাহিনী দেশের বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুককে যেভাবে রাজপথে পিটিয়ে আহত করেছে অন্য দেশে বিরোধী দলের উপর এভাবে নির্যাতন করা হয় না। সরকারের অনিয়ম দুর্নীতির কথা আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ করার কারণে পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। হেফাজতের বাবুনগরী, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেন কে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয় যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। এ সরকারের আমলে ৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করেছে। ফলে এ সরকারের প্রতি জনগণের কোন আস্থা নেই। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবশ্যকতা অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। আর সরকারের দলীয়করণ সকল কালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে। এ দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। কিন্তু এবিচার করতে যেয়ে ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের নির্মূলের নীল নকসা এদেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নাম দিয়ে এ বিচার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে ফেলেছে। সম্পূর্ণদলীয় লোকদের দ্বারা বিচার কার্য সম্পন্নের কাজ চলছে। সরকার এ বিচারের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের কলঙ্ক থেকে দেশকে মুক্ত করতে চাচ্ছে। অথচ ১৯৯৫-৯৬ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তৎকালীন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করেছিল। জামায়াতের নেতারা যদি যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী কাজ করে থাকে তাহলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিভাবে নিজামীকে সাথে নিয়ে এক টেবিলে বসে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। আসল কথা হল আজ যদি জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে থাকত তাহলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা মানবতাবিরোধী সকল অপরাধ থেকে নিষ্কৃতি পেত। জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে একমত না হওয়ায় আজ তাদের কেন্দ্রীয় নেতারা ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামী। ইতিমধ্যে জানা গেল, জামায়াতের যে সমস্ত নেতারা আদালতের রায়ে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে তারা কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। তারপর আবার শোনা গেল, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। সরকারের নির্দেশে অবশেষে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হল। এ দিকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনীকে আটক করা হল সাংবাদিক পেটানো মামলায়। সকল প্রকার দুর্নীতির ক্ষেত্রে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিলে হেফাজতে ইসলামকে ৫০টি সিটের প্রস্তাব দেয়া লাগত না। জামায়াতকে পক্ষে নেয়ার জন্য এ রকম কঠিন ফাঁসির আদেশ দিতে হত না। আমাদের দেশে রয়েছে প্রচুর অর্থনৈতিক সম্পদ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য পোশাক শিল্পের জেএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। আমাদের সম্ভাবনাময় পোশাক শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। এদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪২ বছর অথচ মালয়েশিয়া স্বাধীন হয়েছে ২০ বছর। কিন্তু তারা অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে আছে। বর্তমান সরকারের আমলে ডেসটিনি, পদ্মা সেতু, হলমার্ক ইত্যাদি দুর্নীতির কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, গভীর রাতে আলো নিভিয়ে হেফাজতের উপর হামলা সরকারের ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। হেফাজতের আলেম ওলামাসহ ৩ হাজার ব্যক্তিকে হত্যা করা হলেও কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। সরকার বলছে, শাপলা চত্বরে একজন মানুষও মরেনি। অথচ মানবাধিকার সংস্থা নাম পরিচয় সহ ৬১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজতের লোকজন শাপলা চত্বরে রং মেখে একত্রিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেন বলেন, হেফাজতওয়ালারা সুবহানাল্লাহ বলতে বলতে শাপলা চত্বর থেকে পালিয়ে যায়। দেশের মানুষ এগুলো সহজভাবে মেনে নেয়নি। ৫টি সিটি নির্বাচনে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রধানমন্ত্রী স্বাভাবিকভাবে দেশের অভিভাবক। প্রধানমন্ত্রীর একটি মন্তব্য নব নির্বাচিত মেয়রদের আহত করেছে। তিনি বলেছেন, সৎ যোগ্য প্রার্থী রেখে জনগন দুর্নীতিবাজদের ভোট দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এ রকম বক্তব্য জাতি কখনও আশা করে না। ভোট মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। যাকে খুশি তাকে ভোট দিবে। জনগণকে ভোট দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পরামর্শ নিয়ে কি ভোট দিবে? প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থীকে ভোট না দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর জনগণের উপর নাখোশ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট না দেয়ার প্রতিশোধ নিবেন রমজানের পর বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে। ক্ষমতা কারো চিরস্থায়ী নয় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। এত দিন প্রধানমন্ত্রী জনগণের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে ছিল। এখন জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চায়। আজ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় অথচ এ সরকার জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে একগুঁয়েমীভাবে দেশ চালাতে চাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আবার ক্ষমতায় আসার সকল প্রকার নীল নকসা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে খবর আছে আওয়ামী লীগ নাকি আবার ক্ষমতায় আসবে। সিটি নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর এরকম স্বপ্ন দেখা কতটা যুক্তিসংগত সে বিচার দেশবাসী করবে। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া হল এবার যদি আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নয়, তা কারচুপির মাধ্যমে। আজ যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নেয়া হতো তাহলে দেশের চলমান সংকট নিরসন হয়ে যেত। কিন্তু সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানতে ভয় পাচ্ছে। আজ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। তারা যদি ক্ষমতাটি স্থায়ী করতে চায় তাহলে তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। এর মাশুল দিতে হবে দেশবাসীকে। হয়তবা বহু মানুষের প্রাণ ঝরে যেতে পারে। দেশ অর্থনৈতিক ভাবে অনেক পিছিয়ে যেতে পারে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দেশের প্রতি মায়া মমতা অনেক কম। তার একটা উক্তির মাধ্যমে এর প্রমাণ পাই। তিনি বলেছিলেন,আমার বাবা মাসহ সপরিবারে নিহত হওয়ার পরও দেশের মানুষ এক ফোটা চোখের পানি ফেলেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রাজনীতিতে এসেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। যে কারণে পৌনে ৫ বছরে জামায়াতসহ বিরোধী দলের উপর মামলা হামলা চালিয়ে সকল কালের রেকর্ড ভঙ্গ করে। চোর, ডাকাত, দেশদ্রোহীদের উপর যে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় তা থেকে শতগুণ বেশি নির্যাতন করা হয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের উপর। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের হাত কড়া পরানো হয়। যা রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। শিবিরের সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতাকে পুরুষাঙ্গে কারেন্ট শক দেয়া হয় যা মানবতা বিবর্জিত কাজ যা ইতিপূর্বে কখনও দেখা যায়নি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads