রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৩

নতুন ধারার রাজনীতি


দেশে এখন রাজনীতি সুষ্ঠু ধারায় চলছে না। এ রাজনীতি নষ্ট-ভ্রষ্ট রাজনীতি। অসহিষ্ণু সহিংস রাজনীতি। ভেদাভেদের রাজনীতি। বিদ্বেষের রাজনীতি। কূটকচালের রাজনীতি। ল্যাং মারার রাজনীতি। মারামারি-কাটাকাটি-হানাহানির রাজনীতি। এই অশিষ্ট রাজনীতির কবলে পড়ে দেশ-সমাজ আজ বিপন্ন। মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে নষ্ট ধারার রাজনীতি দেশ থেকে বিদায় নেবে। এ রাজনীতি প্রতিস্থাপিত হবে নতুন সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি দিয়ে, যার ফলে দেশের সব মহলের মধ্যে বহুপ্রত্যাশিত স্বস্তি ফিরে আসবে। মানুষ নিরাপদ বোধ করবে ঘরে ও কর্মস্থলে। অর্থনীতির চাকা সচল হবে, কাটবে জাতীয় দৈন্য। দেশ-জাতি এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর পর্যায়ে। আমাদের অগ্রগতিতে গোটা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবে। আমরা নিজেদের ভাবতে শিখব গর্বিত এক জাতি হিসেবে। ঘুচবে জাতীয় যত দুর্নাম। বলার অপেক্ষা রাখে না, অতীতের কাদা ছোড়াছুড়ি আর অসহিষ্ণুতার পথ আঁকড়ে ধরে কাক্সিত সেই নতুন সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিতে উত্তরণ সম্ভব নয়। নষ্ট-ভ্রষ্ট আর হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির পথ বেয়ে জাতীয় জীবনে যে অনৈক্য আর বিভাজন শেকড় গেড়েছে; এর মূলোৎপাটন করতে না পারলে জাতীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। জাতীয় অনৈক্য আর বিভেদ জিইয়ে রাখলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায় না। ‘আমরা আর মামুরা ভালো, আর সবাই খারাপ’Ñ এ মনোভাব পরিহার করতে না পারলে নতুন ধারার সুষ্ঠু রাজনীতি দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে না। এ সত্যটুকু সাধারণ মানুষও উপলব্ধি করে। আর এমনটি উপলব্ধি করে বলেই আর কোনো বিতর্কে না গিয়েই বলা যায়, বর্তমান সরকারকে এ দেশের মানুষ প্রায় পাঁচ বছর ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কারণ, বর্তমান সরকারি দল ভোটের আগে আর সবের সাথে একটি কথা বেশ জোরালোভাবেই বলেছিলÑ ক্ষমতায় গেলে হিংসার রাজনীতি পরিহার করে দেশে সহিষ্ণু ধারার রাজনীতি চালু করবে। ক্ষমতায় বসে এরা সে কথা রাখেনি, বরং হিংসা আর অসহিষ্ণু রাজনীতি আগাগোড়া অনুশীলন করেছে শতভাগ। জাতীয় ঐক্য পুরোপুরি বিনাশ করে দেশকে ঠেলে দিয়েছে চরম বিভাজনের দিকে। বিরোধী মত-পথের মানুষের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে চরম পর্যায়ে। সুশাসনকে পাঠিয়েছে নির্বাসনে। দুর্নীতিকে করে তুলেছে অদম্য। এসবের বিশদ বিবরণে যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ এই পাঁচ বছরে যা কিছু ঘটেছে, তা দেশের সাধারণ মানুষের চোখের সামনেই ঘটেছে। এখন দেশের মানুষের তীব্র কামনা এই বিপন্ন দশা থেকে উত্তরণ। এমনই যখন অবস্থা তখন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীকে শুনিয়েছেন, তার দল বা জোট ক্ষমতায় গেলে আগামী দিনে তিনি দেশে নতুন ধারার রাজনীতি চালু করবেন। তিনি বলেছেন, এ জন্য দলের ভেতরে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা শুরু হয়েছে। অতীতের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে গণমানুষের চাহিদা পূরণের রাজনীতি করে রাজনীতিতে একটি আমূল পরিবর্তন আনতে চায় তার দল। বলেছেন, তার নতুন ধারার এই রাজনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আশা-আকাক্সার প্রতিফলন ঘটিয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হবে। তিনি এও বলেছেন, তার নতুন ধারার রাজনীতির পরিকল্পনায় অতীতাশ্রয়ী রাজনীতি আর থাকবে না। সাধারণ মানুষের চাহিদা, আন্তর্জাতিক রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা এবং দেশের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে এ রাজনীতি পরিচালিত হবে। দল ও সরকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে যাবে। ক্ষমতায় গেলে দলটির প্রধান লক্ষ্য হবে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন কায়েম এবং সুশাসন নিশ্চিত করা। একতাবদ্ধ জাতি হিসেবে সবাইকে উন্নয়নের সম-অংশীদার করার নীতি থেকেও বিএনপি সরে আসবে না। দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত করতে দলটির সুনির্দিষ্ট নীতিমালাও থাকবে। প্রতিহিংসা, দলীয়করণ ও দুর্নীতিকে এ ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্রয় দেয়া হবে না। বেগম জিয়া যদি তার দলের অতীত ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে এই নতুন ধারার রাজনীতি ক্ষমতায় গেলে অনুশীলনের কথা বলে থাকেন এবং আন্তরিকভাবে এর বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দেন, তিনি আজ যে কথা বলছেন, যে প্রতিশ্রুতি উচ্চারণ করছেন, তা শুধু কথার কথা নয়, বরং তা তার অন্তরের কথা; তবে দেশের মানুষ তাকে নিশ্চিত অর্থেই মোবারকবাদ জানাবে। কারণ মানুষের চাওয়া তো তাই। দেশের সাধারণ মানুষ চায় তার মৌল অধিকার। দেশের প্রত্যেক মানুষ ঘর থেকে বের হবে নিরাপদ নিশ্চিতে। সারা দিনের কর্মশেষে ঘরে ফিরবে সেই একই প্রশান্তি নিয়ে। ঘুমাতে যাবে নির্বিঘেœ-নিশ্চিন্তে। আবার পরদিন ঘুম থেকে উঠে কাজে যাবে যাবতীয় শঙ্কামুক্ত হয়ে। কোনো মায়ের ভাবনা থাকবে নাÑ কখন জানি তার সন্তান গুম, হত্যা, খুন আর রাহাজানির শিকার হয়। শুধু ভিন্নমত পোষণ করার কারণে কেউ যেন সরকারি দলের দমন-পীড়নের শিকার না হয়। রাজনৈতিক সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের শিকার হয়ে নিরীহ-নিরপরাধ কোনো মানুষের প্রাণহানি না ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে পাঠিয়ে প্রত্যেক মা যেন ঘরে নিরুদ্বিগ্ন সময় কাটাতে পারেন। তার সন্তান যেন ক্যাম্পাস থেকে লাশ হয়ে না ফেরে। যোগ্যজন যেন যথাযোগ্য চাকরি পায়। মেধাবীজনের মেধার যেন অবমূল্যায়ন না ঘটে। প্রশাসনে দলীয়করণের যেন চির অবসান ঘটে। ‘ওএসডি’ নামে দুষ্টক্ষত যেন চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দুর্নীতি যেন রূপ নেয় সুনীতিতে। সরকারি দলের কার্যালয় যেন রূপ না নেয় তদবিরকেন্দ্রে। যারা সরকারি দল করেন না, সরকারি দলের সমর্থকও নন, কিংবা এ-দল ও -দল কোনো দলেরই নন; এদের যেন পেছনে ঠেলে দলীয় লোকদের দাবি সামনে টেনে আনা না হয়Ñ এমন সব কিছুই চায় দেশের মানুষ। আর মানুষের এই চাওয়া-পাওয়া নিশ্চিত করার নামই তো সুশাসন। যাকে এখন আমরা বলছি নতুন ধারার রাজনীতি। বেগম জিয়া সেই নতুন ধারার রাজনীতি চালু করার কথাই বললেন। কিন্তু সংশয় নিয়ে প্রশ্ন করতে চাইÑ আপনি এবং আপনার দলের নেতাকর্মীদের সেই নতুন ধারার রাজনীতি দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, সে জন্য কি আপনাদের আন্তরিক প্রস্তুতি আছে? যদি তা না থাকে, তবে আপনার নতুন ধারার সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়া ও অতীতাশ্রয়ী রাজনীতি পরিহারের ঘোষণা আপনার জন্য ও আপনার দলের জন্য ব্যাক ফায়ার হয়ে দেখা দেবে। অতএব সুজন সাবধান। আর সাবধানে পা ফেলার কাজটি শুরু করতে হবে ঠিক এই মুহূর্ত থেকে। বিরোধী দল হিসেবে আপাতত যে আরো ছয় মাস ভূমিকা পালন করতে হবে সেখানেও সাবধানী সিদ্ধান্ত চাই। সাবধানী সিদ্ধান্ত দিয়েই জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। নইলে জনগণ ভাববে, নতুন ধারার রাজনীতি চালুর যে ঘোষণা আপনি উচ্চারণ করেছেন, তা শুধু বলার জন্য বলা ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনাকে সতর্ক বিবেচনায় রাখতে হবেÑ আপনার অবস্থান যেখানেই থাকুক, সরকারে কিংবা বিরোধী দলে, সবখানে ন্যায় ও সত্যের পথে এবং সুশাসন ও গণতন্ত্র রক্ষায় আপনাকে আপসহীনতা অব্যাহত রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এই আপসহীনতাই আপনার সম্বল। এর সাথে অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে নেয়া শিক্ষার সংযোজন এনে দিতে পারে আপনার ঘোষিত নতুন ধারার রাজনীতির পূর্ণতা। বেগম জিয়া যখন গত ২৩ জুলাই তৃণমূলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করার সময় বিএনপির নতুন ধারার রাজনীতির চিন্তাভাবনার কথা তুলে ধরেন, ঠিক এর দুই দিন পর ২৫ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নির্মাণে তার নিজের ভাবনাও প্রকাশ করেন। তার এই ভাবনা প্রকাশকে দেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম ‘তারেক রহমানের লন্ডন ঘোষণা’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছে। এতে তিনি সাত দফা ঘোষণা দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে অনড় অবস্থান প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। সুতরাং বিএনপি নেতৃবৃন্দকে এখন নির্বাচনমুখী হওয়ার চেয়ে দরকার কিভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তা নিশ্চিত করা। তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য শুধু ক্ষমতায়ন নয়, এটি আমাদের লক্ষ্য মাত্র; রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন রাজনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশ-বিদেশে যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে সব সময় ভাবি আমাদের ধর্ম, বিশ্বাস, মত বা আদর্শ ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু দেশটা আমাদের সবার। আমরা সবাই দেশকে ভালোবাসি। আমাদের এক হয়ে গড়ে তুলতে হবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে বহুদূর। এই অগ্রযাত্রার গতি হতে হবে খুব দ্রুত, লক্ষ্য হতে হবে সুনির্দিষ্ট। অতীতমুখী নয়, আমাদের চেতনা ও দায়বদ্ধতা হতে হবে ভবিষ্যৎমুখী। গতানুগতিক রাষ্ট্র পরিচালনায় আবদ্ধ থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ কিন্তু খুব উজ্জ্বল নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করে সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে, যার আবর্তন রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং বিবর্তন জনসাধারণের সমস্যার সমাধান। তার এ বক্তব্যে দু’টি তাগিদ স্পষ্ট। প্রথমত, পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে নামতে হবে আমাদের সবাইকে। এই উপলব্ধি যথাযথ, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করে সেই কাক্সিত জাতীয় ঐক্য গড়া নিশ্চিত করার কাজটি তখনই সম্ভব যখন আমরা সবাই অতীতের ভুলত্রুটি ভুলে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে পা ফেলব। আমরা কি পারব সেই ঐক্যের মহাসড়কে পা রাখতে? প্রশ্নটা সবার কাছে। তারেক রহমান ও তার দলের লোকদের কাছে তো অবশ্যই। তারেক রহমান তার সাত দফা কর্মপরিকল্পনায় কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকির উপযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। কৃষিবান্ধব মূল্য নির্ধারণ কমিশন গঠনের কথা বলেন। উৎপাদন মূল্যের সাথে ১০-১৫ শতাংশ লাভ ধরে বিক্রি মূল্য নির্ধারণের কথা বলেন। শিক্ষা সংস্কারের কথা বলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যুগোপযোগী করার কথা বলেন। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ঘটানোর ওপর গুরুত্ব দেন এবং অন্যান্য খাতের উন্নয়নের কথাও বলেন। এ ক্ষেত্রে একটা কথা বলা দরকারÑ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অন্যান্য সরকারের মতোই দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেবে দলীয় ঘোষিত নীতির আলোকে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার পূর্ববর্তী সরকার যা করেছে সবই খারাপ ও বাতিলযোগ্যÑ এমনটি ভাবা অনুচিত; বরং যেকোনো নতুন সরকারের উচিত পূর্ববর্তী সরকারের ভালো কাজগুলো অব্যাহত রাখা। এর বিপরীত কিছু ঘটলে অহেতুক রাজনৈতিক বিদ্বেষ বাড়ে। এতে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই দেশবাসীর প্রত্যাশা, এ ব্যাপারে সব সরকারকেই ইতিবাচক ভাবনাচিন্তা মাথায় রেখে চলতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্যÑ বড় কয়েকটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিপুল বিজয়ে এমনটি ভেবে বসলে চলবে না, আগামী নির্বাচনেও একই ফলের ধারা অব্যাহত থাকবে। ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত। বরং জয়-পরাজয় উভয়টিই মাথায় রেখে চলতে হবে। উভয়ের জন্য মানসিক ও রাজনৈতিক প্রস্তুতি থাকা চাই। নইলে ভবিষ্যত বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য চাই এ ধরনের প্রস্তুতি। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, সে দলকে মেনে নেয়ার মানসিক প্রস্তুতিটাও থাকা চাই। তারেক রহমান একই অনুষ্ঠানে যথার্থ কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন। আর নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যা বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে যদি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচিত সরকার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন দেশের মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে এই সময়ের গণদাবি হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন। কিন্তু সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে না, এটাই শেষ কথা বলে জানিয়ে দিয়ে বলছেÑ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও তেমনি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। অপর দিকে বিরোধী দল বিএনপি বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। সরকার চাইছে বিএনপি নির্বাচনে না গেলে বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন করবে। হয়তো নামসর্বস্ব একটি গৃহপালিত দল গড়ার প্রয়াস চলবে। কিন্তু এ ধরনের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে নিশ্চিতভাবে। তা ছাড়া এতে করে দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্ঘাত সৃষ্টি হবে, তার মাত্রা ও পরিধি কোন পর্যায়ে পৌঁছবে, তা অনুমান করাও এখন মুশকিল। অতএব দেশবাসীর প্রত্যাশাÑ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে একটি সমঝোতা অচিরেই প্রয়োজন। সেই সাথে সব পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি-পরিবর্তনের রাজনীতি চালু হবে অতীতাশ্রয়ী রাজনীতি পরিহার করে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads