রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৩

সাধু সাবধান!


আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা সব সময়ই ক্ষমতায় থাকতে চায়। যারা সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে কোনো বিরোধী দলের অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, যারা কখনোই জনমতের তোয়াক্কা করে না। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, যাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার পরিমাণ নজিরবিহীন। আওয়ামী লীগ এমন একটি শক্তি, যাদের হাতে গণতন্ত্র কখনোই নিরাপদ নয়। কথাগুলো আমরা সবাই জানি। ১৯৭২ সাল থেকে ’৭৫, ’৯৬ থেকে ২০০০, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেছে এ কথাগুলো বারবার প্রমাণিত হয়েছে। তার পরও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেছে এবং আবারো ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আওয়ামী লীগ কিভাবে ক্ষমতায় গেছে তার উত্তর আমাদের সবারই জানা। ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়া কতটা বৈধ ছিল সে প্রশ্ন করেছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুস সালাম তার বিখ্যাত সম্পাদকীয় দি সুপ্রিম টেস্টে। তার জন্য তাকে চাকরি হারাতে হয়েছিল। অথচ প্রশ্নটা যুক্তিযুক্ত ছিল। ’৭০-এর নির্বাচন পাকিস্তানের সংবিধানের আওতায় হয়েছিল। সুতরাং স্বাধীন বাংলাদেশে সেই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কোনো দল সরকার গঠন করতে পারে না। তাই ’৭২-এর আওয়ামী লীগ সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, তা ছিল সদ্যমুক্ত দেশে একটি বিপ্লবী অস্থায়ী সরকার। সেদিন আওয়ামী লীগের উচিত ছিল বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় একটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করা। আওয়ামী লীগ তা করেনি। কী করেছিল, কী হয়েছিল তা আজ ইতিহাসের অংশ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ এসেছে জনগণের প্রতি বিএনপি সরকারের উদাসীনতা এবং তৎকালীন মন্ত্রিসভার কিছু সদস্যের দুর্নীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় বিএনপির অভিজ্ঞতাহীন ব্যর্থতার কারণে। জনগণ আওয়ামী লীগকে একটি সুযোগ দিতে চেয়েছিল। ভেবেছিল ইতিহাস থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা নেবে। অভিজ্ঞতার ঘাটতি পুষিয়ে যাবে অতীত ইতিহাসের আলোকে। বাস্তবে তা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ সরকার আরো বেশি ব্যর্থ হয়েছে। অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরও তারা সফল সরকার হিসেবে জনগণের সামনে নিজেদের দাঁড় করাতে পারেনি। পাশাপাশি বিএনপির দুর্নীতির সাথে পাল্লা দিয়েছে তারাও। জনগণের আস্থা তারা হারিয়ে ফেলেছে। ২০০৯ সালে তারা ক্ষমতায় এসেছে। কারণ তাদের ক্ষমতায় আনা হয়েছে। অত্যন্ত সুকৌশলে, ষড়যন্ত্রের নীলনকশা এঁকে একটি বিশেষ মহল নিজেদের গায়ের চামড়া বাঁচাতে তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বও জানেন, এ আসাই শেষ আসা। গত পৌনে পাঁচ বছরে এতসব কাণ্ডকারখানা তারা করেছে যে কোনোভাবেই পরবর্তীকালে তাদের আসা সম্ভব হবে না। বিগত সময়ে বিরোধী দলের সাথে তাদের আচরণ, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, গ্রামীণ ব্যাংক সঙ্কট, হলমার্ক ষড়যন্ত্র, ডেসটিনি সংক্রান্ত জটিলতা, মানবতাবিরোধী অপরাধের তথাকথিত বিচার, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, জননিরাপত্তাহীনতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে তাদের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের ঘরে নেমে এসেছে। এ সম্পর্কে তারা নিজেরাও সচেতন। তাই থলের কালো বিড়াল এখনো দফতরবিহীন মন্ত্রী। আবুল হোসেনের দল এখনো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ লোকের চোখে ধুলো দিতে চেয়েছে। চেয়েছে নিজেদের ‘নিদাগ’ ভাবমূর্তি তৈরি করতে আগামী নির্বাচনের জন্য। যদিও বিভিন্ন ঘটনার কারণে আওয়ামী লীগ টের পেয়েছে যে তার পক্ষে ‘কিন ইমেজ’ তৈরি আর কিছুতেই সম্ভব হবে না। তাই তারা এখন অন্য চিন্তা করছে। যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের আওতায় জাতীয় নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। তারা জানে কেবল দলীয় সরকারের আওতায়, প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সূক্ষ্ম নয়, স্থুল কারচুপির মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে। তা ছাড়া আর কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবে না। এই একটি মাত্র কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘ছাড়’ দিচ্ছে। বিএনপির জন্য এসব নির্বাচন অত্যন্ত লোভনীয় ‘টোপ’। এ টোপ গিলে যদি বিএনপি দলীয় সরকারের আওতায়ই জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তবে ভবিষ্যতে সে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা, গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে একটি কথা বলার অধিকার বিএনপির থাকবে না। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি এ টোপ গেলে কি না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিএনপির জন্য একটি ভুল। যে ভুলের মাশুল বিএনপিকে পৌনে পাঁচ বছর ধরে দিতে হচ্ছে। সেদিন যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করত পৌনে পাঁচ বছরের ইতিহাস তবে বদলে যেত। হয়তো ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগই আওয়ামী লীগ পেত না। এবার যদি দলীয় সরকারের আওতায় বিএনপি নির্বাচন করে তবে এবারো ইতিহাস বদলে যাবে। বিষয়টি বিএনপিকে মনে রাখতে হবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক নয়। বিএনপি যদি তা ভুলে যায় তবে ছলে-বলে-কৌশলে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে তখন বিএনপির দলীয় অস্তিত্বও হুমকির মুখোমুখি হবে। এমনিতে আওয়ামী লীগের বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে, যেকোনো রাজনৈতিক ভুল বিদায়ের ঘণ্টাকে বিজয়ের ঘণ্টায় পরিণত করতে পারে। তাই সাধু সাবধান!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads