বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১২

বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা



মাঈন উদ্দিন জাহেদ
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। ’৭১-এর যে মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল তা এ প্রজন্মকে গর্বিত করে। আমরা আরো কিছু অধ্যায় পার হয়ে এসেছি। দুর্ভি-লুট-রাষ্ট্রনায়কের হত্যা-উর্দিধারীদের রাজনীতিতে প্রবেশ-স্বৈরশাসন-গণতান্ত্রিক আন্দোলন। ছাত্রহত্যা-গুম-মিছিলে ট্রাক তুলে দেয়া-রাজনীতিবিদদের কেনাবেচা-রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট স্বৈরাচারীর স্বপ্ন দেখা, মতায় আরোহণের জন্য আওয়ামী লীগ যখন সহযোগী করলÑ জনগণ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করল। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে কী হচ্ছে?
১. দশ বছরের গণ-আন্দোলনের ফসল নির্দলীয় নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণাকে বাতিল করা হলো; ২. বর্বরভাবে লাঠিপেটা করা হয়েছে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের; ৩. সব বিরোধী দলের অফিস ও নগরীর মসজিদগুলো অবরুদ্ধ করা হয়েছে; ৪. জাতীয় সম্পদ তুলে দেয়া হচ্ছে বিদেশী কোম্পানিকে; ৫. জাতীয় সম্পদের লুটপাট হচ্ছে;  ৬. নির্বিচারে মানুষ হত্যা হচ্ছে কিন্তু সরকার দায় নিচ্ছে না;  ৭. বাকস্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু অনলাইন মিডিয়া ও টকশোকে চোখরাঙানো হচ্ছে।
দলন-নিপীড়ন কোন গণতন্ত্র? রাষ্ট্রের কি ন্যূনতম নৈতিকতা থাকবে না? শুধুই কি মতায় যাওয়া আর টিকে থাকার প্রতিযোগিতা  রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠান কি কোনো সভ্যতা অর্জন করবে না? বোধসম্পন্ন মানুষেরা আসুন যে যার অবস্থান থেকে কথা বলি সভ্যভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে। আমাদের বাংলাদেশ অর্জন করুক নাগরিক নিয়মনীতি, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক মূল্যবোধ। বর্বর হিসেবে যেন চিহ্নিত না হই বিশ্বসমাজে।
রাজনীতি চলে গেছে দুর্বৃত্তদের হাতে। আশির দশকের পর যারা বুর্জোয়ার রাজনীতিতে এসেছে তারা ক’জন ছাত্রজীবনে ফার্স্ট বেঞ্চারÑ তা আজ গবেষণার বিষয়।
যত আন্দোলন হোক মানুষ ধরে নিত সরকার পরিবর্তন হবে পাঁচ বছর পর। কিন্তু জনগণের এ আস্থা নষ্ট করে দিল মতাসীনরা।
আদালত আরো দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি থাকার পে মতামত দিলেও প্রধানমন্ত্রী জনমতকে উপো করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বাতিল করলেন। কূটকৌশলে মতায় যাওয়া ও টিকে থাকার বদলে জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা না হবে, তত দিন স্থিতিশীল গণতন্ত্র আসবে না।
রাজনৈতিক দলগুলো কি গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল? প্রধান দলগুলোর আচরণ তার স্যা দেয় না। মতায় যাওয়ার আগে গণতন্ত্র, যাওয়ার পর ফ্যাসিবাদী আচরণ পূর্ণ গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা আমাদের হতাশ করে।
দলীয় সরকারের সময় সব নিয়োগে দলের ছোঁয়া থাকে যা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ব্যাহত করছে। পিএসসি, নির্বাচন কমিশন, বিচারপতি নিয়োগ, দুদকসহ সব গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো যতণ দলীয় প্রভাবমুক্ত হবে না, ততণ গণতন্ত্র আশা করা সোনার পাথরবাটি আন্দোলনের মাধ্যমে যা হবে তা গণতান্ত্রিক পরিবেশ আনবে না, আনবে দলতন্ত্র বা ব্যক্তিতন্ত্র, যা আমরা চর্চা হতে দেখছি। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রত্যেককে আজ  গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার  কাজ করতে হবে। তা না হলে মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লরেন্স জিরিংয়ের মত : ‘বাংলাদেশ স্ববিরোধিতায় জর্জরিত একটি দেশ,’ তা আরো একবার প্রমাণিত হবে।
jahed৩১3@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads