শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১২

নিয়োগবাণিজ্যে সুরঞ্জিতের ভাগ নিয়ে কথা : শুধু ‘বোগাস’ বলেই পার পাওয়া যাবে না



অবশেষে সেই ড্রাইভারের খোঁজ পাওয়া গেছে। বর্তমান দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, আজম নামের এই ড্রাইভার তখন মন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুকের গাড়ি চালাত। একজন ড্রাইভারকে নিয়ে এত আগ্রহের কারণ সম্পর্কে নিশ্চয়ই বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখে না। মাস ছয়েক আগে, ৯ এপ্রিল রাতে এই ড্রাইভার আজমই ৭৪ লাখ টাকাভর্তি বস্তাসহ গাড়ি পিলখানায় বিজিবির সদর দফতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। গাড়িতে মন্ত্রীর এপিএসও ছিলেন। সে সময় আজমের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়েছিল, টাকাভর্তি ওই বস্তা যাচ্ছিল মন্ত্রী সুরঞ্জিতের বাসায়। টাকাটা ছিল রেলওয়েতে চাকরি দেয়ার বিনিময়ে পাওয়া অর্থাত্ ঘুষের টাকা। বস্তায় তাই বলে ঘুষের সব টাকা ছিল না। টাকা এর আগেও মন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে, পরবর্তীকালেও ‘ভাগে-ভাগে’ পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে ঘুষ হিসেবে মোট ১০ কোটি টাকা দেয়ার চুক্তি ছিল। কিন্তু মাঝখানে ঝামেলা বাঁধিয়েছিল ওই ড্রাইভার। তাকে তার বিবেক নাকি বাধা দিয়েছিল। সে কারণেই আজম জিগাতলায় মন্ত্রীর বাড়িতে যাওয়ার পরিবর্তে বিজিবির সদর দফতরে গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছিল। খবর রটে গেলে নানাভাবে গাঁইগুঁই করেছেন বটে, কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে পদত্যাগও না করে পারেননি সুরঞ্জিত। প্রশ্নসাপেক্ষ কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তাকে একেবারে বিদায় না করে দফতরবিহীন মন্ত্রী পদে রেখে দিয়েছেন। ওদিকে সেই থেকে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিল ড্রাইভার আজম। তার খোঁজ পাওয়া গেছে এতদিন পর। বুধবার রাতে একটি টিভি চ্যানেল তার সাক্ষাত্কার প্রচার করেছে। এই সাক্ষাত্কারেও ড্রাইভার আজম সে সময় দেয়া বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করেছে। আবারও জোর দিয়েই বলেছে, ৭৪ লাখ টাকাভর্তি বস্তা যাচ্ছিল সুরঞ্জিতের বাসায় এবং এটা ছিল মন্ত্রীর ‘ভাগের’ ১০ কোটি টাকার অংশ।
অন্যদিকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অবশ্য যথারীতি ঘাড় বাঁকিয়েই রেখেছেন। তিনি উল্টো জানতে চেয়েছেন, ‘কথিত’ আজম এতদিন কোথায় ছিল? অর্থাত্ টিভিতে যার সাক্ষাত্কার প্রচারিত হয়েছে তাকে তিনি আসল ড্রাইভার আজম হিসেবে স্বীকার করতে চাননি। কীর্তিমান সেই এপিএসও এই আজম সেই আজম কি-না সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ, সেই আজমের মুখে লম্বা দাড়ি ছিল, কিন্তু এই আজমের মুখে দাড়ি নেই। সাবেক এপিএসের সঙ্গে সুর মেলানোর পাশাপাশি মিস্টার সেনগুপ্ত আবারও ষড়যন্ত্রের কথাই তুলেছেন। মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধরনের গত্বাঁধা শব্দগুলো তো বলেছেনই, এ অভিযোগও করেছেন যে, তাকে ফাঁসানোর জন্যই নাকি অন্য কাউকে আজম সাজিয়ে টিভিতে হাজির করা হয়েছে! এটা নাকি মিডিয়ার সৃষ্টি! আজম যা বলেছে তার সবও নাকি ‘ফালতু’ এবং ‘বোগাস স্টোরি’!
বলা দরকার, মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে একমত হতে পারলে আমরাও খুশি হতাম। কিন্তু এরই মধ্যে বুড়িগঙ্গা দিয়ে শুধু নয়, সুরমা-কুশিয়ারা দিয়েও তো অনেক জল গড়িয়ে গেছে! নিজেদেরই লোকজনের সমন্বয়ে ‘কথিত’ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে কেউ কেউ ‘ধোয়া তুলসী পাতা’ সেজে বসারও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ‘শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখা যায় না’ প্রবাদও তো এদেশের মানুষই বলেন! সুতরাং কেবলই ‘ফালতু’ ও ‘বোগাস স্টোরি’ ধরনের শব্দযোগে কথার মারপ্যাঁচ খাটালেই এত গুরুতর একটি বিষয়ের মীমাংসা হয়ে যাবে না। ড্রাইভার আজমের পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাকে মানুষ বরং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ই বলবে। কারণ ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ থাকার সময় যে চেহারার এদিক-সেদিক করতে হয়, নিজে বহুবার ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ থেকেছেন বলে সে কথাটা তো মিস্টার সেনগুপ্তেরও ভালোভাবে জানার কথা। সুতরাং মুখে দাড়ি না থাকলেই ড্রাইভার আজম ‘কে না কে’ হয়ে যায় না। ৭৪ লাখ টাকাভর্তি বস্তার ব্যাপারটাও কেউ বললেই ‘বোগাস স্টোরি’ হয়ে যায় না! ‘কথিত’ ষড়যন্ত্র এবং তাকে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে আপাতত এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, প্রথম থেকে চিত্কার করলেও মিস্টার সেনগুপ্ত কিন্তু আজও পর্যন্ত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে পারেননি। কারা বেছে বেছে শুধু তাকেই ফাঁসাতে চাচ্ছে তা জানতে পারলে আমরাও হয়তো তার পাশে দাঁড়াতে এবং এত সত্ একজন নেতার সমর্থনে দাঁড়াতে পেরে ধন্য এবং কেতাত্থ হতে পারতাম। কিন্তু আমাদের ধন্য ও কেতাত্থ করার সে উদারতাটুকু দেখাতেও কঞ্জুষি করে চলেছেন মিস্টার সেনগুপ্ত! গুজবের ডালপালাও তাই বাড়ছে ধেই ধেই করে। আমরা মনে করি, বস্তাভর্তি টাকাসহ ‘কথিত’ ঘুষের পুরো বিষয়টির মীমাংসা হয়ে যাওয়া দরকার। না হলে ক’দিন পরপর ‘কথিত’ আজমরা যেমন হাজির হতে থাকবে, অতি সজ্জন সেনগুপ্তও তেমনি বিড়ম্বনার শিকার হতে থাকবেন। এভাবে চলতে দেয়া যায় না বলেই দুদকসহ সরকারের উচিত
নতুন পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ঘুষের বিষয়টিকে জীবনের নামে পরকালে
পাঠিয়ে দেয়া।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads