বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১২

বিএনপি দমনে সরকার হার্ডলাইনে




প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দমনে সরকার এখন হার্ডলাইনে। দলটির ওপর নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুলিশি অ্যাকশন চলছে নতুন উদ্যোগে। দু’দিন ধরেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। মামলায় জড়ানো হয়েছে বিএনপির সাত শতাধিক নেতাকর্মীকে। তিন মামলায় যুবদল সভাপতি আলালসহ ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২ জনকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এরই মধ্যে হুঙ্কার দিয়েছেন, ২০০১ সালের ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের’ সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের ১৮ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। ড্যান্ডি ডাইং কোম্পানির ঋণখেলাপির কারণে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ওপর প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ হামলা চালালেও গত মঙ্গলবার বিকালে ছাত্রদল সভাপতিসহ ২৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগ জহুরুল হক হল শাখার এক কর্মী মামলা করেছেন।
এদিকে দুই দিন ধরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি অবরুদ্ধ করে রেখেছে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। কার্যালয়ের ভেতরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর প্রায় দু-শ’ নেতাকর্মী খাবার, সুপেয় ও ব্যবহারের পানির অভাবে মানবেতর পরিস্থিতির সম্মুখীন রয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখতে সামনের রাস্তা ও আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের সাঁজোয়া যান রীতিমত টহল দিচ্ছে।
পুলিশের এ রণপ্রস্তুতিতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে ও বের হতে পারছেন না। এতে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রায় ২০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হলে তাকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পল্টন থানা পুলিশের দায়ের করা মামলায় আটক দেখিয়ে আলালসহ ২২ নেতাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তবে সন্ধ্যা ৭টার কিছুর পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের হতে সক্ষম হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু ।
মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের অতর্কিত হামলা ও পরে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে নয়াপল্টন থানা পুলিশ। এসব মামলায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এতে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় অফিসে যেতে পারছেন না। এ কারণে গতকালের নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে পারেনি ছাত্রদল। এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে চায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামী ৮ অক্টোবর সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। একই সঙ্গে ১৮ দলীয় জোটের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চলবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম।
দুই দিন অবরুদ্ধ বিএনপি কার্যালয় : রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে কার্যালয়টি ঘিরে রেখেছে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। কার্যালয়ে কাউকে ঢুকতে ও বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার বিকাল ৪টা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ ঘণ্টা একই হালে রয়েছেন তারা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মুহিদুল হাসান হিরু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সেক্রেটারি ওমর ফারুক মুন্নাসহ অন্তত ১৮০ জন নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ে আটকে আছেন। মঙ্গলবার রাতে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবসহ আটক কিছু নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ে থেকে কৌশলে বের হতে সক্ষম হন। এদিকে সন্ধ্যা ৭টার কিছু পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের হতে সক্ষম হন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও শফিউল বারী বাবু।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যম কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছে। সেখানে পুলিশের একাধিক গাড়ি রাখা হয়েছে। অস্ত্রহাতে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় পুলিশি পাহারা রাখা হয়েছে। কর্তব্যরত একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশ-কে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছু সময় পর পর পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে গেলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও শাসিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া পুলিশের সাঁজোয়া যান পল্টন এলাকা টহল দিচ্ছে। অবরুদ্ধ নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হারুনুর রশীদ, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সংরক্ষিত আসনের এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, নীলুফার চৌধুরী মনি ও রাশেদা বেগম হীরা দলীয় কার্যালয়ে যান। এছাড়া আইনজীবীদের মধ্যে কার্যালয়ে যান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার নেত্রকোনায় ১৮ দলের সমাবেশে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারি করা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের গাড়িবহরে সরকার-সমর্থকদের হামলা ঘটনায় নয়াপল্টনে বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি দেয় যুবদল, ছাত্রদলসহ বিএনপির কয়েকটি অঙ্গসংগঠন। বিকাল সোয়া চারটার দিকে বিএনপির মিছিলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। নয়াপল্টন এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় ওই এলাকায় দুটি গাড়িতে আগুন ও প্রায় ১০টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। পুলিশ ও বিএনপির কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পল্টনসহ আশপাশের এলাকায়। এর পরপরই পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয় ঘিরে ফেলে—যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এতে ভেতরে আটকা পড়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী।
গ্রেফতার-মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি : পল্টনে সংঘর্ষে ঘটনায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। দলীয় কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে এক জরুরি সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারা আগামী ৮ অক্টোবর সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন। একই সঙ্গে ১৮ দলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তিনি অবিলম্বে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ আটকদের মুক্তি এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৮দলীয় জোটের উদ্যোগে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে নেত্রকোনা, শেরপুর ও মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিগুলোকে বাধা দিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তাদের একদলীয় শাসন পাকাপোক্তের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চায়। তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতি আড়াল করতেই হীন অপচেষ্টা করে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করছে। আমরা সরকারকে এ হীন অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
সংবাদ ব্রিফিংয়ের আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার কক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকাসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতারা সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এ বৈঠকের পর সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ব্যারিস্টার মীর নাসির উদ্দিনসহ সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন তিনি।
যেভাবে আলাল গ্রেফতার : রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মামলায় যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ যুবদল নেতার সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আমার দেশ-কে জানান, মঙ্গলবার সারারাত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করার পর বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বের হন আলাল। এর কিছুক্ষণ পর কাকরাইল মোড়ের কাছে গাড়ি থামিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তাকে নিয়ে যায়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, মঙ্গলবারের ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা দুটি মামলায় আলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার বাদী উপ-পরিদর্শক ইদ্রিস আলী জানান, দুই মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও প্রায় আড়াই হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
আটক যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সঙ্গে দেখা করতে গতকাল ডিবি অফিসে যান বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার, নিজাম উদ্দিন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নিলুফার চৌধুরী মনি, অ্যাডভোকেট সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানুসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য মিন্টো রোডের গোয়েন্দা অফিসে আলালের খোঁজখবর নেন।
৩ মামলায় আলালসহ ২২ নেতাকর্মীর রিমান্ড : নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদল, যুবদল স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আড়াই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার মধ্যরাতে পল্টন থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলা দ্রুত বিচার আইনে এবং অন্য মামলায় গাড়ি ভাংচুর, পুলিশকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ধারায় ফেলা হয়েছে। এ দু্ই মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও প্রায় আড়াই হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলা দুটির বাদী হয়েছেন পল্টন থানার এসআই ইদ্রিস আলী। একই ঘটনায় অপর একটি মামলা হয়েছে রমনা থানায়। বেআইনি সমাবেশ ও ভাংচুরের অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে একজনকে। এ ব্যাপারে পল্টন মডেল থানার ওসি গোলাম সরোয়ার জানান, মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে রমনা মডেল থানার ওসি শাহ আলম জানান, মামলার বাকি আসামিদের ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে পুলিশের দায়ের করা মামলায় যুবদল সভাপতি আলাল এবং বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ২১ নেতাকর্মীকে ২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা দুটি মামলায় আলালসহ অন্যদের রিমান্ডে আনা হয়। গতকাল দুপুরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে আলালকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে আদালতে হাজির করে সাত দিনে রিমান্ড আবেদন জানানো হলে মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন। তবে আলালসহ গ্রেফতার ২৫ আসামির মধ্যে তিনজন আইনজীবী হওয়ায় তাদের দুই মামলাতেই রিমান্ড বাতিল করে জামিন দেন বিচারক। জামিন পাওয়া ওই তিন আইনজীবী হলেন মোশারফ, সোহাগ ও মানিক। মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর ভুইয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করেন। একই থানায় দায়ের হওয়া দণ্ডবিধির অপর মামলায় আলালসহ ওই আসামিদের ১০ দিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানান এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপ-পরদির্শক ইদ্রিস আলী। একই বিচারক তাদের এ মামলায় রিমান্ড না মঞ্জুর করেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা তাদের প্রয়োজনে দ্রুত বিচার আইনের মামলার রিমান্ডে থাকাকালে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন বলে আদেশ দেন। আদালতে আসামিদের পক্ষে দুই মামলায় আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, বোরহানউদ্দিন, ওমর ফারুক ফারুকী, দিদারুল ইসলাম, আবদুল খালেক মিলনসহ বেশ কিছু আইনজীবী। এছাড়া বিএনপি সমর্থিত প্রায় শ’খানেক আইনজীবী এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলা-ঘেরাওয়ে আন্দোলন থামবে না —রিজভী : মামলা দিয়ে এবং কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখে বিরোধী দলের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না বলে সরকারকে হুশিয়ার করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।গতকাল সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের ঘেরাওয়ের মধ্যে বসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরকার আমাদের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বাইরে বিভিন্ন স্থানে সাদা মাইক্রোবাস অবস্থান করছে। আমাদের নেতাকর্মী যারাই বের হচ্ছেন, তাকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। মামলাও দেয়া হয়েছে।
ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলায় উল্টো ছাত্রদলের ২৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ২৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল শাখার কর্মী অহিদুজ্জামান মুকুল বাদী হয়ে মঙ্গলবার বিকালে শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার এসআই আবু জাফর।
প্রসঙ্গত, গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ মামলা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের ১৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ঢাকার নিম্ন আদালতে একটি মামলা করেন ছাত্রদল কর্মী আব্বাস আলী।
এসআই আবু জাফর জানান, ছাত্রলীগ কর্মী মুুকুলের করা মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads