বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১২

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তাণ্ডব


এদের থামাবে কে?

বর্তমান সরকারের গোটা সময়ে আমরা দেখছি ছাত্রলীগ সময়ের সাথে ক্রমেই আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গণমাধ্যমে ও বিবেকবান সুশীলসমাজের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা চলছে অব্যাহতভাবে। তবু এদের সন্ত্রাসী তাণ্ডব থামছে না। কোথাও এরা চাঁদাবাজ, কোথাও টেন্ডারবাজ কিংবা দখলবাজ। কোথাও এরা অস্ত্র হাতে দিনদুপুরে পুলিশের সামনে প্রতিপক্ষ দমনে সরকারের ঠেঙ্গারে বাহিনী। কিন্তু ছাত্রলীগের মুরব্বি সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতারা যেন নিশ্চুপ। ফলে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছেÑ ছাত্রলীগ যা করছে, তা কি আওয়ামী লীগের ইন্ধনেই করছে? আরো প্রশ্ন জাগেÑ আওয়ামী লীগের নেতারা প্রতিদিন তো কত হাতিঘোড়াই মারেন, তবে ছাত্রলীগকে থামানোর শক্তি কি এরা রাখেন না? না এরা ছাত্রলীগকে থামাতে চান না?
আমাদের মনে হয়, আওয়ামী লীগ যদি আন্তরিকভাবে চাইত, তবে বহু আগেই ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হতো এবং অতি সম্প্রতি রাজশাহী ও দিনাজপুরে ছাত্রলীগের নানা তাণ্ডবের জের শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন করে তাণ্ডব শুরু হতো না। গতকাল বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তাণ্ডবের খবরটি ছাপা হয়। একটি জাতীয় দৈনিকের খবর মতে, এবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্রফ্রন্টের ওপর চড়াও হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ভর্তি ও আবাসন ফি বাড়ানোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালনকালে তাদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ। শুধু তাই নয়, ওই সময় ছাত্রলীগের হামলায় আহত হন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কমপক্ষে ৫০ জন নেতাকর্মী। আহতদের কয়েকজন ছাত্রীও রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫ জনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ার সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পুলিশের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগ এদের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা চালায় বলে দাবি করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বাকৃবি শাখার সভাপতি সেঁজুতি চৌধুরী।
অতি সম্প্রতি শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের তালিকা অনুযায়ী কর্মচারী নিয়োগ না দেয়ায় প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রশিবিরের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় উত্তপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার ও কমিটি গঠন নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা। দিনাজপুরে পুলিশের ছত্রছায়ায় সশস্ত্র ছাত্রলীগ কর্মীরা বিভিন্ন ছাত্রাবাসে হামলা চালিয়ে শিবির সন্দেহে ৩০ জনকে পিটিয়ে আহত করে। ছাত্রাবাসে আগুন দেয়।
এসব ঘটনা প্রমাণ করে ছাত্রলীগের এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বর্তমান সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। সরকারকে বুঝতে হবে, সরকারের এ ভূমিকা দেশের সাধারণ মানুষ যথার্থই আঁচ করতে পারে। আর সে জন্যই সরকারের জনপ্রিয়তা সময়ের সাথে দ্রুত কমছে। আমরা চাইব, সরকার অবিলম্বে সরকারের নিজের স্বার্থে এবং সেই সাথে দেশবাসীর স্বার্থে ছাত্রলীগকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনবে। নইলে সবার জন্য সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ বিপর্যয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads