সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১২

আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় ইতিবাচক ভূমিকা চাই

মিয়ানমারে গণহত্যা
মিয়ানমারে জাতিগত সঙ্ঘাত এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। জুন মাসে রাখাইন প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে যে নির্মূল অভিযান শুরু করেছিল, তা সম্প্রতি আরো ব্যাপক রূপ নিয়েছে। কয়েকটি অঞ্চলে এখনো প্রকাশ্যে মুসলমান গণহত্যা চলছে। নতুন করে শুরু হওয়া এই জাতিগত নির্মূল অভিযানে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন ২২ হাজার মানুষ। মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নৌকায় করে মানুষ সমুদ্রে পালিয়ে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। শত শত রোহিঙ্গা আত্মরক্ষার জন্য বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ৪২টি নৌকায় প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার জন্য তিন দিন ধরে সমুদ্রে ভাসছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তাও স্বীকার করেছে, পরিস্থিতি ভয়াবহ। অনেক মানুষ জঙ্গল, দ্বীপ বা পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। রাখাইন প্রদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অহিংস বলে দাবিদার সংখ্যাগরিষ্ঠ এই মানুষ সহিংস আচরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। যেখানে মানুষ হত্যা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ প্রদেশটিতে সব মিলিয়ে গৃহহারা মানুষের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কোনো কোনো মহলের মতে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
জাতিগত নির্মূল অভিযানের শিকার এই অসহায় মানুষদের জন্য আন্তর্জাতিক মহল চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড ও উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ বা মানবিক সাহায্য দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ইসলামি সম্মেলন সংস্থা ওআইসি। মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি কিংবা জাতিসঙ্ঘকে দিয়ে দেশটির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের মতো সক্ষমতাও দেখাতে পারেনি সংস্থাটি। মুসলিম দেশগুলো সম্মিলিতভাবে কোনো পদক্ষেপও নিতে পারেনি। মিয়ানমার আসিয়ানভুক্ত দেশ। দেশটিকে আসিয়ানের সদস্য করতে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। অথচ জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধে আসিয়ান বা অন্য কোনো ফোরামে এই দেশ দু’টি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
পশ্চিমা দেশগুলোও মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধে কার্যত নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। দেশটির সাথে জ্বালানি ও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো এখন ব্যস্ত। সামরিক সরকারের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ব্যাপারে তারা এখন চোখ বন্ধ করে আছে। অথচ এর চেয়েও সামান্য ঘটনায় এরা পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানে অনেক বেশি তৎপর ছিল এবং অল্প দিনের মধ্যে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। অথচ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর যখন বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করা হচ্ছে, তখন তা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করছে না। এসব দেশ মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ না করে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার দাবি করছে, যা মিয়ানমার সরকারের কৌশলের পরিপূরক।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ এসব অসহায় গণহত্যার শিকার নারী-শিশুদের সীমিত আকারে আশ্রয় দেয়া যায় কি না তা সরকার ভেবে দেখতে পারে। একই সাথে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে সোচ্চার হবে বলে আমরা আশা করি। এই সময়ে প্রয়োজন এ গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় ইতিবাচক ভূমিকা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads