বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কাভারে বাধা : গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে



আওয়ামী লীগের শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা স্থায়ী হয় না। আবারও তেমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নতুন তথ্যমন্ত্রী যত কথাই বলুন না কেন, সরকারের পদক্ষেপই এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছে। জনপ্রিয় টিভি টকশো নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিরূপ মন্তব্যের পরপরই বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোকে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে না ডাকার কোনো যোগসূত্র আছে কি-না ভেবে দেখার বিষয়। এছাড়াও বিভিন্নভাবে সাংবাদিকদের হুমকি-ধমকি দেয়া ও হামলা-মামলার ঘটনার শেষ হয়নি। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশগ্রহণকারী জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক এবং টিভি মালিকদের পক্ষ থেকে এসব বিষয় তুলে ধরার কথা জানা গেলেও ওই আলোচনা প্রসঙ্গে সরাসরি কেউই মুখ খুলতে চাননি। কেন? এর কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে। যদিও বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য কোনো আমন্ত্রণই জানানো হয়নি দৈনিক আমার দেশসহ কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদককে।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। টিভির দু’একটি অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়ার কারণ নেই। সংবাদ সংগ্রহে বাধা-নিষেধ আরোপের ঘটনাও অস্বাভাবিক। বিটিভির অনুষ্ঠান প্রচারে অন্য চ্যানেলগুলোকে বাধ্য করার ঘটনা সংবাদ প্রচারের স্বাধীনতা হরণের শামিল ছাড়া আর কী বলা যায়! গত সোমবার রাত থেকে হঠাত্ করেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস শাখা থেকে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের কর্মসূচি পাঠানো বন্ধ করে বিকল্প নির্দেশনা দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তথ্যমন্ত্রী কিছু না জানার কথা বলেছেন। তবে গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচারের ব্যাপারে খোদ প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তার খবর যথাযথভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে প্রধানমন্ত্রীর নাখোশ হওয়ার কথাও জানা গেছে। এর ফলেই যে সংবাদ সংগ্রহে অলিখিত বাধা-নিষেধ, সেটা অবশ্য নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে এটা তো সবার জানা যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেফাঁস কথা বলতে অভ্যস্ত। এ নিয়ে উচ্চ আদালতের মন্তব্যও নিশ্চয়ই মানুষের মনে আছে। বর্তমান বাধা-নিষেধের পেছনে এ বিষয়টিও ভূমিকা রেখেছে কিনা সেটাও আমাদের জানার কথা নয়। তবে যাই হোক ঘটনা থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ এখন অনেকাংশেই দৃশ্যমান নেই। বিশেষ জায়গা থেকে বিভিন্নভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সংশ্লিষ্টরা ভালোভাবেই জানেন। তবে তথ্যমন্ত্রী সম্পাদকদের আশ্বস্ত করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য কাজ করার নিশ্চয়তা দিয়েছেন এবং গণমাধ্যমের জন্য একটা নীতিমালা করার কথা জানিয়েছেন। আমরাও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সর্বজনগ্রাহ্য নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করি এবং বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। তবে এ নিয়ে ভিন্ন কিছু করা হলে সেটা কারও কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না, এটাও জোর দিয়ে বলা যায়।
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিদ্যমান তথ্য কমিশন ও প্রেস কাউন্সিলের কার্যকর ভূমিকা নেই বহুদিন ধরেই। অবাধ তথ্যপ্রবাহের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও তার ভূমিকাই বা কতটা, সেটা নিয়ে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। অহরহই সম্পাদক-সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সরাসরি আদালতে মামলা দায়ের ও পুলিশি হয়রানির ঘটনা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এ সবই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করাকেই উত্সাহিত করে। কীভাবে আমার দেশ বন্ধ করা হয়েছিল এবং সম্পাদক-সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা-পুলিশি নির্যাতন চালানো হয়েছিল, সেটা সবার মনে আছে। এখনও সে মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে। চ্যানেল ওয়ান বন্ধ ও যমুনা টিভি সম্প্রচারের অনুমতি না দেয়ার পেছনে ভালো কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করার ভয়াবহ পরিণতি মানুষ কোনোদিন ভুলবে না। কথায় বলে না, ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। এ কারণেই আওয়ামী লীগের মহাজোট সরকারের অস্বাভাবিক পদক্ষেপ থেকে সন্দেহ জাগতেই পারে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নস্যাতের পথ পরিষ্কার করতেই কি এ পথ ধরা হয়েছে?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads