বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১২

ব্যাংক লুটের নেপথ্যে পরিচালক নামধারী সরকারদলীয় নেতারা



আসাদুল্লাহিল গালিব,সুত্র-  আমার দেশ 
সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিল যাচাই-বাছাই না করেই জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক কিনেছে। ঋণ প্রদানে কর্মকর্তাদের অনৈতিক চাপসহ সীমার অতিরিক্ত ঋণ দেয়ার ঘটনা অহরহ ঘটেছে। ব্যাংকের পর্ষদ এসব কাজে সরাসরি জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন—এসব অনিয়মের নেপথ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে পরিচালক নামধারী সরকারদলীয় একডজন নেতা। আওয়ামী লীগ সরকার আর্থিক খাতের মতো একটি স্পর্শকাতর সেক্টরে তাদের নিয়োগ দিয়েছে। তারা দলীয় ক্ষমতায় ব্যাংকের আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে চলেছেন।
সূত্র মতে, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতে সরকারের নিয়োগ করা সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছেন। সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিল অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া কিনেছে। এমনকি অনেক বেসরকারি ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিল পরিশোধ করছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছিল। তখন সোনালী ব্যাংকের কাছে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওনা বিলের তথ্য চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক কোনো অভিযোগ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, অনেকটা সাধু সাজতে গিয়ে চলতি বছরের আগস্ট মাসে জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক স্বীকৃত বিলের পাওনা পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করে। অভিযোগের তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিম জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া বিল ক্রয়ের প্রমাণ পায়। এতে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের রাজনৈতিক পরিচয়ের পরিচালকদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, এ চক্রটি বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে কাজ করেছে। ভুয়া বিল ক্রয়ে কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন এসব ব্যাংকের পরিচালকরা। কিন্তু এখন ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হলেও পর্ষদে জড়িত সদস্যরা ঠিকই রাজনৈতিক বিবেচনায় ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতা দলীয় ১২ পরিচালক : দলীয় এসব নেতাদের বেশিসংখ্যকের ঠাঁই হয়েছিল দেশের বৃহত্ বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালীর পর্ষদে। সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তারা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত সাবেক ভিপি সুভাষ সিংহ রায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক সাইমুম সরোয়ার কমল, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় পরাজিত প্রার্থী এবং মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী, দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাশেম হুমায়ুন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সত্যেন্দ্র চন্দ্র ভক্ত, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর-গোপালপুরের সংসদ সদস্য এম আসাদুজ্জামানের ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক কেএম জামান রোমেল।
অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক ভিপি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মঞ্জুরুল হক লাভলু, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহাজাদা মহিউদ্দিন। জনতা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দার। আর রূপালী ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান হিরণ।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ও জাতীয় পার্টি থেকে বাগেরহাট-১ আসন থেকে কয়েক দিনের সংসদ সদস্য শেখ আবদুল হাই বাচ্চু এবং কৃষি ব্যাংকের পরিচালক জাহাঙ্গীর কবির রানা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন মহিকে প্রথমে সমবায় ব্যাংকের পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, পরে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছেন।
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আরও ২২ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা : অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকারি ব্যাংক ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকার আরও অন্তত দুই ডজন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারকে নিয়োগ দিয়েছে। তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় অয়েল কোম্পানি, মত্স্য উন্নয়ন করপোরেশন, তিতাস গ্যাস, এটলাস করপোরেশনে পরিচালক, ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ইকবাল হোসেন অপু মেঘনা পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ছাত্রলীগের আরেক সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন এটলাস মোটরের পরিচালক হয়েছেন। যমুনা অয়েল করপোরেশনের পরিচালক হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হাসান কবির আরিফ নিয়োগ পেয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুকে পদ্মা অয়েল কোম্পানির পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খিজির হায়াত লিজু এখন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের পরিচালক।
ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু রাজশাহী বরেন্দ্র উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগ বর্তমান কমিটির সহসভাপতি শামীম আল সাইফুল সোহাগ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের এপিএস হিসেবে রয়েছেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউল মাহমুদ। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিটন পোদ্দার বিআরটিসির পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া মহানগর দক্ষিণের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন একই সঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও এটলাস মোটরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ফজলুল ইসলাম নোমান নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ সহসভাপতি লুত্ফুন্নাহার মুন্নী। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মনোয়ার আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহির এপিএস হিসেবে কাজ করছেন। এদিকে সম্প্রতি ছাত্রলীগ গত কমিটির অর্থ সম্পাদক মুর্শেদুজ্জামান সেলিম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সহসভাপতি আলমগীর হাসান বাংলাদেশ মত্স্য উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক হিসেবে দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান।
একইভাবে যুবলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মিজানুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। যুবলীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এমরান কবির চৌধুরী পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। যুবলীগের সহ-আইন সম্পাদক মোতাহার হোসেন সাজু হয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। যুবলীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের উপপরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মঞ্জু নাজনীন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় অধিকসংখ্যক লোককে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দলীয় ক্যাডাররা নিয়োগ পেয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাতে নানা ধরনের ফন্দি-ফিকিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
পরিচালকদের রক্ষায় রাষ্ট্র উঠে পড়ে লেগেছে : আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে পরিচালকদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুদক এ ঘটনায় পর্ষদকে রক্ষায় কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানিয়েছে, দলীয় পরিচালকদের যোগসাজশে সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত্ করা হয়েছে। আত্মসাতের ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুইবার পর্ষদকে অবহিত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা। এমনকি দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অযোগ্যতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্ষদ ভেঙে দিতে বললেও তা বাস্তবায়ন করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন দুদক হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করছে, তবে তাদের তদন্তেও পর্ষদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পায়নি সংস্থাটি। মূলত পরিচালকদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে সরকারের উচ্চমহলকে রক্ষায় দুর্নীতি দমন কমিশনও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং তাদের ধোয়া তুলসি পাতা বানানো হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, হলমার্কের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ কিছুই জানত না—এটা হতে পারে না। কেননা সোনালী ব্যাংকের মতো একটা ব্যাংক কলমানিতে নিয়মিত জোগানের পরিবর্তে নিয়মিত ধার নিচ্ছে, সিআর শর্টফলের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা বের হয়ে আসত। তাই এ ঘটনায় পর্ষদ অবশ্যই দায়ী। তবে সে দায় অসতর্কতা হতে পারে আবার অসততাও হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসনের অভাবে হলমার্ক অর্থ আত্মসাতের সুযোগ পেয়েছে। এখানে পরিচালনা পর্ষদ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা পর্ষদ এ ঘটনা একেবারেই জানে না—এটা হতে পারে না।
পর্ষদের একাল-সেকাল : পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় বিএনপি সব সময় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ বরাবরের মতো নানা কেলেঙ্কারির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এতে বিএনপির সময়ে দেশের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল আর বর্তমান সরকার দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি করেছে। সঙ্কট তৈরির পেছনে রয়েছে পরিচালক নিয়োগে রাজনৈতিক নেতাদের পুনর্বাসন। বিএনপি রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকে কোনো দলীয় নেতাকে নিয়োগ দেয়নি। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি ব্যাংকেই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের নিয়োগ দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি সরকার সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবউল্লাহকে। সে সময় পরিচালক ছিলেন শেখ আবদুল হাফিজ এফসিএ, এরশাদুল্লাহ, মো. শহিদুজ্জামান, মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারি (বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আর আওয়ামী লীগ সরকার দেশের বৃহত্তম এ ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগে অভিজ্ঞজনের পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়কে বড় করে দেখেছে। যার ফলে তারা বড় ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ পেয়েছেন।
সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তত্কালীন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এম ফজলুর রহমান। পরিচালকরা হলেন সাবেক সচিব সৈয়দ মুস্তাক, পরিকল্পনা বিভাগের তত্কালীন যুগ্ম সচিব অচিত্য পদা গোস্বামী, এয়ার কমোডর খন্দকার ইফতেখার আহমেদ, বিজিএমইএর পরিচালক নুরুল হক এবং ড্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. শাহরিয়ার হোসাইন চৌধুরী।
অথচ আওয়ামী লীগ অগ্রণী ব্যাংকে পরিচালক হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মঞ্জুরুল হক লাভলু, আবদুস সবুর এবং শাহাজাদা মহিউদ্দিনের মতো লোকদের নিয়োগ দিয়েছে।
বিএনপির আমলে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের তত্কালীন সচিব খন্দকার শহিদুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তত্কালীন অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, অর্থ মন্ত্রণালয়ের তত্কালীন অতিরিক্ত সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, কমোডর মোহাম্মদ এমদাদুল হাসান, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসাইন এবং ফেনী চেম্বারের তত্কালীন সভাপতি শেখ নুরুল আলম।
আর বর্তমানে জনতা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলরাম পোদ্দার। একইভাবে রূপালী ব্যাংকের পরিচালক করা হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী ও যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান হিরণকে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads