সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১২

দশ ইস্যুতে অস্থির সরকার বিরোধী দলের নতুন কৌশল



আবুল কাসেম হায়দার
বিরোধী দল বেশ ঘরমুখো হয়েছে। যেন ঘরোয়া রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। রাজপথে আন্দোলন নেই। ১৮ দলীয় জোটকে ঈদুল আজহা পর্যন্ত অনেকটা নমনীয় কর্মসূচি হাতে দেখেছি। বিরোধী দল দেশে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা শুরু করেছে। আমাদের দেশে একটা ধারণা ছিল, বিরোধী দল শুধু হরতাল, অবরোধ করে। কিন্তু এখন তারা গঠনমূলক রাজনৈতিক চর্চা শুরু করেছে। এটি একটি চমত্কার রাজনৈতিক অবস্থা। বিরোধী দলকে তাই আন্তরিক ধন্যবাদ দিতে হয়।
বিরোধী দলের রাজনৈতিক কোনো বড় আন্দোলন কর্মসূচি না থাকলেও, সরকার তার নিজের অপকর্মের জন্য রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। সরকারদলীয় রাজনৈতিক দলের সৃষ্ট এসব ইস্যু আজ দেশে বড় আকারের সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই সরকারও হিমশিম খাচ্ছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, গ্রামীণ ব্যাংক, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশের বিদেশে শ্রমবাজারে লাল সঙ্কেত, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, জাতীয় সংসদ ও বিচার বিভাগ বিতর্ক, দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অস্থির অবস্থা, বিদ্যুত্সহ সব পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যে দিশেহারা মানুষ, রাষ্ট্রের সর্বত্র দুর্নীতি, দুর্নীতির কালো মেঘ—এসব ইস্যুতে সরকার বড়ই ব্যস্ত। আমাদের দেশে শেষবর্ষে এসে বিরোধী দলের আন্দোলনে সরকার কাবু হয়ে পড়ে। এবার কিন্তু ভিন্ন চিত্র। এবার সরকার কর্তৃক সৃষ্ট অন্যায়-অবিচার ইস্যুতে সরকার নিজেই দিশেহারা। বিরোধী দলের আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন পড়ছে না। দেশের পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া আজ সরকারের এসব ব্যর্থতার চিত্র নিয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত।
গত ৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক ‘আট ইস্যুতে অস্থির সরকার’ শিরোনামে বিরাট এক বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট করেছে। রিপোর্টটি যুক্তিপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। শুধু আট ইস্যু নয়, তার দ্বিগুণ ইস্যু সরকারকে দিশেহারা করে ফেলেছে। বিরোধী দলের কঠোর কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন হয়তো হবে না। এক্ষেত্রে ড. আকবর আলী খানের কথাটি বেশ উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, আগে দেখতে হবে সমস্যাগুলো কেন সৃষ্টি হলো। যারা এসব সমস্যা সৃষ্টি করেছে আগে তাদের জবাবদিহিতায় আনতে হবে। তা না হলে এভাবে একের পর এক আরও ঘটনা ঘটবে, আরও সঙ্কট আমাদের ঘিরে ধরবে।
শেয়ারবাজার : বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেয়ারবাজারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দরপতন ঘটে বছরের শেষের দিকে। ৯০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সমমূল্যের শেয়ারবাজার থেকে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট হাতিয়ে নেয়। ১০ লাখের অধিক বিনিয়োগকারী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিয়েও শেয়ার বাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনতে পারেননি। বাজার তখন অস্থির। শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রায় ১০ লাখ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে দুই কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে আত্মহত্যা করেছে। অনেকে ক্ষোভে, অপমানে, দুঃখে মারা গেছে।
পদ্মা সেতু : পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণের প্রাণের দাবি। মহাজোট সরকার পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংক, নাইকো, এডিবি ঋণচুক্তিও করেছে। সরকার ভূমি অধিগ্রহণের কাজও করেছে। কিন্তু গত ২৯ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণে চরম দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করেছে। দুর্নীতির অভিযোগে যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে। তাকেও ছুটিতে যেতে হয়েছে। সরকার বিশ্বব্যাংকের বেশিরভাগ শর্ত পূরণসাপেক্ষে গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক পুনরায় ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। এটি দেশের ও সরকারের জন্য একটি সুসংবাদ। তবে এক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত কর্মকাণ্ডের জবাব জনগণের কাছে দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত কাজ করার অঙ্গীকার করেছে সরকার। আমরা আশা করি সরকার ওয়াদা পূরণ করবে।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস : সরকার একান্ত ব্যক্তিগত জেদের কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করেছে। এর ফলে দেশি-বিদেশি চাপে সরকার পড়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে সরকার আজ নিজের সম্মান ও প্রভাব হারিয়ে ফেলেছে। সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ২০১২ জাবি করে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই দিনটিকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বিদেশি বড় বড় শক্তি সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। অস্ট্রেলিয়াও গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে সরকারের পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু সরকার অনড়। বিরোধী দলসহ দেশের সব সুশীল সমাজ গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের চরম সমালোচনা করছে। এই ইস্যুর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান না হলে নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যেভাবে সরকারের ৪টি ব্যাংক অনেকটা দেউলিয়া। সরকার কোনোদিন ব্যবসা করতে পারে না। তাই তো ১৯৭২ সালের জাতীয়করণনীতি থেকে সরকার সরে এসেছে। একে একে সব শিল্প-কারখানা বেসরকারি মালিকদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। তাই সরকারি ৪টি ব্যাংকও বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে। সব ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে নিয়ে আসতে হবে। গ্রামীণ ব্যাংককেও তার স্বকীয়তা বজায় রেখে পূর্বের অধ্যাদেশ অনুযায়ী চলার সুযোগ দিতে হবে।
হলমার্ক কেলেঙ্কারি : তাজা ইস্যু হলমার্ক ব্যাংক জালিয়াতি। সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সুবাদে হলমার্ক গ্রুপের ৫টি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা ঋণ আত্মসাত্ করেছে। সোনালী ব্যাংকের রূপসী হোটেল শাখা সবমিলিয়ে অগ্রিম ও ঋণ দিয়েছে ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে। এই অর্থের ২ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ নিজে। এই জালিয়াতির সঙ্গে জনতা ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক জড়িত। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। আইন প্রতিমন্ত্রীও এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলে খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। দুদক উপদেষ্টা ও অন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের ৩১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে। পরিচালক পরিষদ ভেঙে দিতে বলেছে। দুই উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে ওএসডি করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছে মামলাও হবে। অর্থ আদায়ও করা হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত হবে। দোষী হলে শাস্তির জন্য খোদ আওয়ামী লীগের নেতা হানিফ ও সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমদ দাবি করেছেন। কিন্তু কাজ ধীরে চলেছে। অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মতো সরকার বিষয়টি ধামাচাপা দেবে কি? তাতে ভবিষ্যত্ অবশ্যই খারাপ হবে। আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে।
শ্রমবাজার : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সরকার হারাতে বসেছে। একমুখী বিদেশনীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার হারাচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সরকারের একমাত্র সফলতা বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন, মামলা, হামলা ও গুম। এই কারণে মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ শ্রমবাজার থেকে বাংলাদেশকে বিদায় করছে।
২০০৮ সাল থেকে কুয়েত, ২০০৯ সাল থেকে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। শেষ ভরসা ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাতেও লাল সঙ্কেত দেখা দিয়েছে। সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা শ্রমবাজার হারানোর মূল কারণ। প্রধানমন্ত্রী উল্লিখিত দেশ সফর করেও কোনোকিছু করতে পারেননি। পারবেনও না। সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন, মামলা-হামলা বন্ধ না হলে শ্রমবাজারে কোনো উন্নতি হবে না। একমুখী ভারতীয় কূটনীতি দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ধস থামানো যাবে না। অন্যদিকে ব্রিটেন থেকে ছাত্রদের ফেরত আসতে হচ্ছে। এটি আরেকটি নতুন দুঃসংবাদ। প্রায় ২ হাজার ৫০০ ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সরকার ও বায়রার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে।
আইনশৃঙ্খলা : দেশে আইনশৃঙ্খলার দারুণ অবনতি ঘটেছে। সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের এখনও একজন আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি। বিষয়টি বড়ই রহস্যজনক। ইলিয়াস আলী গুম, চৌধুরী আলম গুম, এমনি শত শত গুম ও হত্যার কোনো বিচার দেশে হচ্ছে না। হচ্ছে শুধু বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার বিচার। প্রতিদিন সারাদেশে খুন, হত্যা, গুম লেগে রয়েছে। দিনে-দুপুরে খুন হচ্ছে মানুষ। নিজের বেডরুমে খুন হচ্ছে। বাসাবাড়িতে খুন হচ্ছে। গ্রামেগঞ্জে চাঁদাবাজি, খুন আজ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭৪-৭৫ সালের চিত্র যেন আমাদের চোখের সামনে ভাসছে। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে দেশে আইনের শাসন বলে আর কিছুই থাকবে না। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, হত্যা, গুম প্রভৃতিতে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। এছাড়া ’৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজে কী দেখা যাচ্ছে। বেশ দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে। যদিও বিরোধী দল বলছে, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিচার। প্রকৃত কোনো বিচার নয়। সরকার তা মানতে নারাজ।
ঘুষ, দুর্নীতি, অবিচার : দেশে ঘুষ, দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। চাঁদাবাজি চরম আকার ধারণ করেছে। চাঁদা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। চাকরি, পদোন্নতি ঘুষ ছাড়া একেবারে অসম্ভব। ‘কালো বিড়াল’ চাঁদার টাকাসহ গাড়ি ধরা পড়ার আর কোনো বিচার হলো না। তাই চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি সমানতালে, ঊর্ধ্বগতিতে রাষ্ট্রে প্রবেশ করছে। মন্ত্রী, এমপিসহ সমাজের সব স্তরের মানুষ ঘুষ-বাণিজ্যে জড়িত। ঘুষের বিরুদ্ধে, সুদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলছে না। এর কোনো বিচারও হয় না। বরং ঘুষখোর, চাঁদাবাজরা সমাজের প্রভাবশালী। তারাই সমাজের হর্তাকর্তা, সেবক, শাসক। সাধারণ মানুষ আজ অসহায়। তাদের কোনো বক্তব্য নেই। সমাজে চুপ করে থাকা ছাড়া তাদের কোনো কাজ নেই। বিচার আজ আর নেই। বিচার নিভৃতে ক্রন্দন করে। বিচার সাধারণ মানুষ পায় না। ন্যায়বিচার বলতে কিছুই নেই। টাকা দিয়ে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজের পক্ষে বিচারের রায় লাভ আজ আর কোনো ব্যাপার নয়। তাই সমাজে যত অস্থিরতা। অসামাজিক কর্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্বৃত্ত, অন্যায়কারী, দুর্নীতিবাজরাই সমাজের নেতা।
উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা : দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অস্থিরতা। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই অস্থিরতার জন্য সরকার বিব্রত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও অস্থিরতা কাটেনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অস্থিরতা রয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ এখনও উন্নত হয়নি। বুয়েট সঙ্কটে সরকার দিশেহারা। সবশেষে অনেক শর্তসাপেক্ষে বুয়েটে শিক্ষার পরিবেশ কিছুটা ফিরে এসেছে। মেডিকেলে ভর্তি সমস্যা নিয়ে বেশ আন্দোলন হয়ে গেল। সবশেষে মামলা ও নানা জটিলতা নিয়ে মেডিকেলে ও ডেন্টালে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা হবে। এদিকে এমপিওভুক্তির জন্য সারাদেশের কলেজ, স্কুল, মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলনে নেমেছে। জানি না এই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে কী রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুমোট হাওয়া বিরাজমান। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাড়া অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের তত্পরতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এরই মধ্যে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার আবেদন করেছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সব ছাত্র সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিশ্চিতের দাবি করেছে। কিন্তু ছাত্র-রাজনীতি ও অবস্থান এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠানে কার্যকর হয়নি।
সংসদ ও বিচার বিভাগ বিতর্ক : সাংবিধানিক এখতিয়ার নিয়ে সরকার বিতর্কে সংসদ ও বিচার বিভাগ। দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত, অশোভন আচরণ ও ব্যক্তিগত আক্রমণের মাধ্যমে বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৮(১) লঙ্ঘন করেছেন বলে স্পিকার আবদুল হামিদ যে রুলিং দিয়েছেন, হাইকোর্ট সম্প্রতি সেটিকে ‘আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ও অকার্যকর’ বলে রায় দেয়ায় বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার গত সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর আপিল করেছে। এই বিষয়টি নিয়েও সরকার বেশ বিব্রত। এসব বিব্রতকর বিষয়গুলো সরকারকে বেশ দিশেহারা করে ফেলেছে। ব্যস্ত করেছে। বিরোধী দলের আন্দোলনের তেমন কোনো প্রয়োজন হয়নি।
দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুত্ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি : দেশে দ্রব্যমূল্য লাফ দিয়ে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহাজোট সরকারের ঘোষণা ছিল দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখবে। কিন্তু পারেনি সরকার। ২০ টাকা কেজি চাল ও বিনামূল্যে সার দেয়ার ওয়াদা ছিল মহাজোট সরকারের। আর এখন সেই চাল ৫০ টাকা, সারের দামও অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব পণ্যের দাম বর্তমানে ২০০৮ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বিদ্যুতের মূল্য প্রতি তিন মাস পর পর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৭ বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন বৃদ্ধি করেছে সাড়ে ৩ টাকা থেকে ১২ টাকা। তাই এবার সব জিনিসের দাম আবারও বৃদ্ধি পাবে। পণ্য উত্পাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুত্মূল্য ও গ্যাসবিহীন দেশ আজ এক অরাজকতার ঢেউয়ে নিপতিত। এসব ইস্যু মোকাবিলায় বিরোধী দলের আন্দোলন ছাড়াই সরকারকে এক বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। বিষয়গুলো এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে আগামী নির্বাচনের পূর্বে অবশ্যই সব ইস্যু নিয়ে জোট সরকারকে জবাব দিতে হবে। এসব ইস্যুর প্রকৃত উত্তরের ওপর ভিত্তি করবে আগামী সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকারের জয়পরাজয়। এরই মধ্যে মহাজোট সরকার ১০০টির অধিক সংসদ আসনে প্রার্থী সমস্যা চিহ্নিত করেছে। আগামী নির্বাচনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধী দলের দাবি আজ গণদাবিতে রূপান্তরিত হয়েছে। উল্লিখিত ইস্যুগুলো সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের দাবিকে আজ মহাজোট সরকারের উপেক্ষা করার কোনো শক্তি থাকল না।
লেখক : চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও সাবেক সহ-সভাপতি এফবিসিসিআই

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads