মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১২

প্রশ্নপত্র ফাঁসেও বেপরোয়া ছাত্রলীগ নেতারা : আশ্রয়-প্রশ্রয়ের ফল



শেখ হাসিনা সরকারের ডিজিটাল ব্যবস্থার সাফল্যে যারা মুখর তারা প্রমাণ খুঁজতে যেয়ে বিপদে পড়েন। দৃশ্যমান প্রমাণ পাওয়াটা কঠিনই বটে। আগে থেকে রাস্তায় চালু থাকা স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এ সরকারের আমলে ডিজিটাল না হয়ে পুরোপুরি ম্যানুয়ালে পরিণত হয়েছে। এখন সিগন্যাল বাতি সবুজ হলেও হাত তুলে গাড়ি আটকে রাখা হয়। কত মিনিট কোনো ঠিক নেই। আবার লালবাতির মধ্যে গাড়ি ছাড়া হয়। এরকম বিশৃঙ্খলা আর জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী উদাহরণের শেষ নেই। তবে জননেত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা ডিজিটাল ব্যবস্থায়ও যে আগ্রহী হয়ে উঠেছে সেটা সম্প্রতি জানা গেছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজির মতো পুরনো পদ্ধতির পাশাপাশি এখন বিসিএসসহ ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর সরবরাহে ডিজিটাল ব্যবস্থার ব্যবহার করে মিডিয়ার খবর হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা। তাদের নাটেরগুরু হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক কর্মকর্তাও ধরা পড়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে। এসবের পেছনেও সবক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য দাবির যোগসূত্র থাকাটা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এবং দুদকের এক সহকারী পরিদর্শক ডিজিটাল চুরির মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ভর্তি পরীক্ষা এবং পিএসসি, ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নের উত্তর পাঠিয়ে চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। এসব কাজে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও জড়িত বলে গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়েছে। চীন থেকে আমদানিকৃত ঘড়িসদৃশ্য মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্রেই পাঠানো হতো। মোবাইলগুলো ঘড়ি হিসেবেই সবার চোখের সামনে কৌশলে ব্যবহার করতে অসুবিধা হতো না। এভাবে অর্জিত লাখ লাখ টাকার অংশবিশেষ ছড়িয়ে তারা সবকিছু ম্যানেজ করে আসছিল। কিন্তু কথায় বলে চোরের দশ দিন আর গেরস্থের একদিন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া একজনের সঙ্গে টাকার লেনদেন নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে তাকে ঢাবির হলে আটকে রেখে মুক্তিপণের টাকা আদায় করার ঘটনায় সবকিছু প্রকাশ হয়ে পড়ে। আটক ছাত্রটিকে উদ্ধার করার পাশাপাশি জড়িত কয়েক ছাত্রলীগারকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সংগঠিত জালিয়াতচক্রের হদিস পায় পুলিশ। মুক্তিপণের টাকা আনার ফাঁদে পা দিয়ে আরও কয়েকজন ধরা পড়ে। মাত্র ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার লোভে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের মেধাবী ছাত্ররাও এই জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। আর সবকিছুর পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা, যাদের নাম-পরিচয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে।
এভাবে দেশের উচ্চ শিক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি ও চাকরি পেয়েছেন ঠিক কতজন সেটা এখনও জানা যায়নি। এই জালিয়াতির পেছনে আরও কারা আছে সেটাও প্রকাশ পায়নি। কোনোদিন পাবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ তারা নিঃসন্দেহে প্রভাব ও ক্ষমতাশালী। তবে এ থেকে বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট, জালজালিয়াতিতে ক্ষমতাসীন ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা মাথা থেকে পা পর্যন্ত কীভাবে জড়িয়েছে সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
শুরু থেকেই ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের সন্ত্রাস-ছিনতাইয়ের মতো অপকর্মের রাস টেনে না ধরায় এখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এরকম অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ করে বলা যায়, আলোচিত ডিজিটাল জালিয়াতিতে জড়িতরাও ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয় থেকে বঞ্চিত হবে না। কারণ এদের দাপটের ওপরই তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। ঘটনাচক্রে যা প্রকাশ পেয়েছে সেটা ধামাচাপা পড়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ নেতাদের ঘটনাই এর প্রমাণ। এ সরকারের কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি কিছু আশা করা বাতুলতা মাত্র।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads