বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১২

মিডিয়ার বিরুদ্ধে মামলার হুমকি সুরঞ্জিতের : সত্য ধামাচাপা পড়ে না



অতিশয় বাকপটু সাবেক রেল ও বর্তমান দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে। শরীর দুলিয়ে বাঁকামুখে তিনি হুমকি দিয়েছেন সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে। ক’দিন আগেও তিনি নিজ এলাকার জনসভায় একইভাবে সাংবাদিকদের আদালতের কাঠগড়ায় তোলার হুমকি দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিক কেন এভাবে ক্ষেপেছেন সেটা এখন সবার জানা। তার সাবেক এপিএসের গাড়িচালক আজম খানের বোমা ফাটানো বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়াতেই মাথা গরম হয়ে গেছে সুরঞ্জিতের। এর ফলে প্রায় ধামাচাপাপড়া বিষয়টি এখন আবারও মানুষের মুখে মুখে ফিরছে।
এ বছরের ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে তখনকার রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে ৭০ লাখেরও বেশি টাকার বস্তাসহ বিজিবি গেটে ধরিয়ে দেন আজম। সেই গাড়ির আরোহী এপিএসসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা টাকা নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে যাচ্ছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। রেলের নিয়োগ-বাণিজ্যে মন্ত্রীর ভাগের ১০ কোটি টাকার অংশ ছিল সেটা। গত ৪ অক্টোবর আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে এসব কথা একটি টিভি চ্যানেলকে বলে বিষয়টি উসকে দিয়েছেন গাড়িচালক আজম। উল্লেখ্য, সেই মধ্যরাতে এত বিপুল পরিমাণ টাকার বস্তা ধরা পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে তত্কালীন রেলমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দেনদরবারের ফলে বিজিবি সদর দফতর থেকে টাকাসহ সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। আসল ঘটনা অনুসন্ধানের চেষ্টাও করেনি কেউ। সেই টাকা নিজের দাবি করে একটি চিহ্নিত বেসরকারি ব্যাংকে জমাও দেন এপিএস। পরে অবশ্য পরিস্থিতির চাপে বিভাগীয় তদন্তের পর এপিএসসহ সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তারা চাকরিচ্যুত হন। রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হলেও দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে থেকে যান সুরঞ্জিত। এভাবে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যাওয়ায় সেই থেকে গাড়িচালক আজম নিরাপত্তাহীন অবস্থায় আত্মগোপনে না থেকে পারেননি। এখন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত তার বক্তব্যকে সাজানো নাটক বলে উড়িয়ে দিতে চাইছেন সুরঞ্জিত। আগে গাড়িচালককে চেনেন না, কোনোদিন দেখেননি বললেও এখন তিনি বলছেন সহজ-সরল ড্রাইভারের বদলে যাওয়ার কথা। সুরত ও ভাষা বদলে যাওয়ার পেছনে কাদের হাত আছে সেটা উন্মোচন করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি বলেছিলেন, আজমের বক্তব্যের পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে। আর এখন বলছেন দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি। মন্ত্রীদের মুখ থেকে এমন গত্বাধা কথা অবশ্য নতুন নয়। তবে এমন উদ্ভ্রান্তের মতো কথাবার্তা নজিরবিহীন। এসব রহস্য উন্মোচনে সরকারের ভূমিকা ছেড়ে তিনি কেন সংবাদমাধ্যমের দ্বারস্থ হলেন সেটাও পরিষ্কার নয়। সরকার কি এতটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে?
তবে গাড়িচালক আজমের বক্তব্য প্রচারের কারণে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে তিনি মানুষের মনের সন্দেহকে আরও গভীর করে তুলেছেন সন্দেহ নেই। দুদকের সার্টিফিকেট নিয়েও তিনি যে স্বস্তিতে নেই সেটাও একেবারে প্রকাশ হয়ে পড়ল! পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি না হওয়ার সার্টিফিকেটও দিয়েছিল দুদক। সেটা ধোপে টেকেনি। তাই কি দফতরবিহীন মন্ত্রী হয়েও সুরঞ্জিত মিডিয়ার সত্যানুসন্ধানী ভূমিকার পেছনে লেগেছেন? তার মতো একজন প্রবীণ রাজনীতিকের মুখে মিডিয়ার বিরোধিতা বড়ই বেমানান। তিনিও কি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দুর্নীতির ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছেন? ক্ষমতার জোরে এদেশে অনেক কিছুই করা সম্ভব হলেও জনগণের মন থেকে যে সত্য মুছে ফেলা যায় না, সেটাও তিনি ভুলে গেছেন। তবে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের এমন অবস্থাই বার বার মহাবিপদ ডেকে এনেছে, সেটা অবশ্য মানুষ ভুলে যায়নি। সুরঞ্জিত বাবুদের ক্ষমতার মোহ দূর না হলে এমন বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads