বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১২

ত্যাগী পিতার ভোগী কন্যা




ভাই সোহেল তাজের পরিত্যক্ত জাতীয় সংসদ আসনে বোন রিমি ‘নির্বাচিত’ হয়ে বিরল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন-তনয়া বর্তমান শাসক দলেয় বিলীয়মান জনসমর্থন ধরে রাখার নিমিত্তে ‘স্বইচ্ছায়’ না বিশেষ সংস্থার চাপে পড়ে ক্ষমতার টোপ গিললেন, তা বলা যায় না। তবে নির্বাচনোত্তর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সিমেন হোসেন রিমি জয়ের আনন্দ চেপে রাখতে পারেননি। আপন চাচাকে নির্বাচনে হারাতে পেরে মহা খুশি রিমি। ধন্য রিমি, ধন্য। এ সময় এক দণ্ডের জন্য তার মনে আসেনি কী অমর্যাদাকর পরিস্থিতিতে তারই ভাই সোহেল তাজকে অতিমনোকষ্ট নিয়ে সরে যেতে হয়েছে ক্ষমতার বলয় থেকে। সোহেল তাজকে শাসক দলের হাতে রাখার সব চেষ্টা নস্যাত্ করে দেন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এই তরুণ। বহু চেষ্টা-তদবির করেও সোহেলকে বাগ মানাতে ব্যর্থ হয় বর্তমানের ক্ষমতাধররা। অথচ ক্ষমতার মোহে রিমি ধরা দেন ভাইয়ের বেরিয়ে আসা জালে।
শাসকদের প্রয়োজন নির্লোভ, নির্মোহ, দৃঢ়চেতা সত্ ও মহান রাজনীতিবিদ তাজউদ্দিনের ব্র্যান্ড নেমটাকে ব্যবহার করা। সাবাস সোহেল, পিতার কিছু গুণ রয়েছে তার মধ্যে। অন্যদিকে রিমির ভূমিকায় বাকরুদ্ধ বেশিরভাগ কাপাসিয়াবাসী। তাই তারা যাননি ভোট দিতে। তবুও ভোটের বাক্সে রিমির পক্ষে ভোট পড়েছে অনেক। ভোট তারা না দিলেও যে রিমি ‘বিপুল ভোটে’ জিতবে—এ ব্যাপারে জনমনে কোনো সন্দেহ ছিল না। এই ভোটকে রিমির প্রতিদ্বন্দ্বী চাচা আফসারউদ্দিন প্রহসনের নির্বাচন আখ্যা দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। একই কারণে অন্য স্বতন্ত্র কমিউনিস্ট প্রার্থী আসাদুল্লাহ বাদলও একই রকম মন্তব্য করেন ।
এদিকে সরকারের আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিবুদ্দিন সাহেব কম ভোটার উপস্থিতির জন্য প্রবল বৃষ্টিপাতকে দায়ী করেন। আওয়ামী নেতাদের কণ্ঠে এরই প্রতিধ্বনি শুনি আমরা। যে কোনো অঘটনের জন্য কেউ না কেউ দায়ী হবেন। এখানে চিহ্নিত শত্রু-প্রকৃতির বিরূপ আচরণ। তোফায়েল সাহেব বলেছেন, নির্বাচনে কোনো গোলযোগ হয়নি। কথাটা সর্বৈব সত্য। গোলযোগ সৃষ্টির জন্য লাগে দু’পক্ষ। কিন্তু এখানে রাজত্ব ছিল শুধু এক পক্ষের, গোলযোগ হবে কি করে? ভোটের দিন তো আফসারউদ্দিনের ভাষ্যমতে, তার এজেন্টদের নিজেদের ‘জানের নিরাপত্তার’ জন্য পুলিং বুথের বাইরে যেতে সাহায্য করে আওয়ামী সোনার ছেলেরা। এখানে, টেন্ডারের ব্যাপার হলে ভিন্ন রূপ নিতে পারত ঘটনা প্রবাহ। ‘ত্যাগী’ ছাত্র-যুব নেতারা টেন্ডার নিজেদের মধ্যে আপসে টেন্ডার ভাগাভাগী করে নিতে না পারলে তখন অস্ত্রের আশ্রয় নেয়া জায়েজ। কাপাসিয়ায় তা হয়নি ভোটকে কেন্দ্র করে। ভবিষ্যতে রিমিকে চলতে হবে অতি সতর্কতার সঙ্গে কারণ, তাকে খুশি রাখতে হবে তার বিশাল কর্মী বাহিনীকে। তা না হলে তাকেও মন্ত্রী রাজুর অবস্থায় পড়তে হবে। নিজ নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী রাজুর মতো বহু মন্ত্রী, এমপি অবাঞ্ছিত হতে হবে। মহান নেতা তাজউদ্দিনের কন্যার কপালে যেন এমন না হয় এ আমাদের কামনা। ত্যাগী পিতার ভোগী কন্যা রিমির ইচ্ছা পূরণ করবেন বিধাতা।
রিমির কি মনে কি পড়ে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক তার পিতাকে কি রূপ অপমানজনক পরিস্থিতিতে তার মন্ত্রিত্বের পদ থেকে অপসারণ করেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান? রিমি কি জানেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ব্যক্তি জীবনে কি কৃচ্ছ্রসাধন করে চলতেন তার দেবতুল্য চরিত্রের-অধিকারী সর্বজন শ্রদ্ধেয় পিতা জাতির গর্ব মরহুম
তাজউদ্দিন? বাংলাদেশে এক শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ছিল তাজউদ্দিনের লক্ষ্য, তার জীবনের মূলমন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীনও তাকে বহু রকমের উত্পাত সহ্য করতে হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ভারতে মোর্চা গঠন করেন জাতির পিতার স্নেহধন্য ভাগ্নে শেখ মনি।
আর ভাই সোহেল তাজকে সহ্য করতে হয়েছিল চরম অপমান। জাসদ নেতা ও বর্তমানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কমিউনিস্ট প্রার্থী বাদলের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা করতে গিয়ে বলেছেন, সোহেল তাজের মুখে থাপ্পড় মারা, সারা কাপাসিয়াবাসীর গালে থাপ্পড় মারার শামিল। কথিত আছে, প্রশাসনিক এক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করলে এক প্রবল প্রতাপান্বিত আওয়ামী নেতা ভীষণ ক্ষুব্ধ হন সোহেলের ওপর এবং বিনা প্ররোচনায় তার মুখে চড় মারেন। আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে সোহেল তাত্ক্ষণিকভাবে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তেফা দেন। তার পদত্যাগপত্র বহুদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়। অবশেষে সোহেল ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে জাতীয় সংসদ থেকেও পদত্যাগ করতে কামিয়াব হন। তারই শূন্য পদ পূরণ করতে হাসিমুখে এগিয়ে আসেন তারই স্নেহের বোন রিমি 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads