রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৩

কোন পথে বাংলাদেশ


গত শনিবার দৈনিক ইত্তেফাকে আবার মাইনাস ফর্মুলা! শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। লিখেছেন পত্রিকাটির একজন বিশেষ প্রতিনিধি। বিশেষ প্রতিনিধি এই প্রতিবেদনে বলতে চেয়েছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে আম্পায়ারের ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানিয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন প্রকারান্তরে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা দিলেন। কারণ ক্রিকেট বোদ্ধারা স্বীকার করবেন, আম্পায়ার কখনো খেলেন না। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আম্পায়ার হলে তিনিও খেলতে পারবেন না। ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য সঠিক হলে এটি আরেকটি মাইনাস ফর্মুলা, তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।এই বিশেষ প্রতিনিধি তার প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখেনÑ ‘এমনকি বিএনপিও মাইনাস ফর্মুলায় বিশ্বাস করে না। তা হলে ড. কামাল হোসেন কেন প্রধানমন্ত্রীকে প্রকারান্তরে রাজনীতি থেকে সরে যেতে বললেন? তার এ বক্তব্য অন্য কোনো ইঙ্গিত বহন করছে কি না, এটাই এখন প্রশ্ন।
বিশেষ প্রতিনিধি এ প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেছেনÑ ড. কামাল হোসেন একই সংবাদ সম্মেলনে আরো দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তা হচ্ছে আগামীতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে চার-পাঁচটি মৌলিক বিষয়ে সংবিধানে সংশোধনী আনার কথা তারা এখনই ভাবছেন। এই চার-পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা ও দুই মেয়াদের বেশি কারো প্রধানমন্ত্রী না হতে পারা।ড. কামালের এ বক্তব্যকেও এই প্রতিনিধি সন্দেহের চোখে দেখে এর সাথে জেনারেল মইন ইউ আহমেদের একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “নিশ্চয় সবার মনে আছে, এক-এগারোর সময়ের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ তৎকালীন শেরাটন হোটেলে (বর্তমান রূপসী বাংলা) এক সুধী সমাবেশে একটি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, তিনি নিউ ফর্ম অব ডেমোক্র্যাসিআনতে চান। এ ক্ষেত্রে এক প্রশ্নের জবাবে জেনারেল মইন ইউ আহমেদ বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য এনে তিনি নিউ ফর্ম অব ডেমোক্র্যাসিবাস্তবায়ন করতে চান। 
এসব বিষয় উল্লেখ করে এই বিশেষ প্রতিনিধি কার্যত বোঝাতে চেয়েছেনÑ ড. কামাল এখন শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিয়ে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চান, ঠিক এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য যেভাবে নিয়ে আসা হয়েছিল বহুল আলোচিত মাইনাস টু ফর্মুলা। 
কয়েক দিন আগে ড. কামাল হোসেন শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দেয়ার যে কথা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, এর পেছনে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার লক্ষ্যে মাইনাস ওয়ানতত্ত্বতাড়িত কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, সেটি আমাদের পক্ষে বলা মুশকিল। তবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এ সময়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে যে মহা রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে, দেশে কার্যত একটা অচলাবস্থা বিরাজ করছে, যা থেকে উত্তরণের একটি উপায় হিসেবেই ড. কামাল হোসেন এ ধরনের একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তবে ইত্তেফাকের আবার মাইনাস ফর্মুলা!শিরোনামটি যখন আমার চোখে পড়ে, তখন মনে হয়েছিল এর বিষয়বস্তু হবে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করা সম্পর্কিত কিছু। কিন্তু তা পাঠ শেষে দেখা গেল না, সেটি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার একটি অনুমিত বিষয়কে অনুষঙ্গ করে লেখা। আমার এমনটি মনে হওয়ার কারণ, বর্তমান সরকারের দৃশ্যমান কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশের মানুষকে এমনটি বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে যে, সরকার এখন মরিয়া একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকাকে দীর্ঘায়িত করতে এবং ক্ষমতা ধরে রেখে দমন-পীড়নের মাধ্যমে বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়াকে অস্তিত্বহীন করার মাইনাস ওয়ানতত্ত্ব বাস্তবায়ন করতে। কেননা সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্থির বিশ্বাস জমেছে, নির্দলীয় কোনো সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ সরকারের জয়ী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সে জন্যই বর্তমান সরকার সন্ধানে নামে নানা কূটকৌশলের, যাতে করে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো সুযোগ না পায়। এরই অংশ হিসেবে সরকারের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে আদালতের দোহাই দিয়ে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তুলে দেয়া। আর দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর উদ্দেশ্যপূর্ণ রাজনৈতিক মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো, রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যেন তাদের কোনো বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে না পারে, সে জন্য তাদের সভা, সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন ও রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নানা অযৌক্তিক বিধিনিষেধ আরোপ করে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে অস্তিত্বহীনতার দিকে ঠেলে দেয়া। এরই অংশ হিসেবে সরকারবিরোধী পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার প্রয়াসও চলে এ সরকারের পক্ষ থেকে। এর ওপর আছে সাংবাদিক নির্যাতনের নানা মাত্রিক ঘটনা। আছে রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যা ও গুমের নানা অভিযোগ। বিরোধী দলের শীর্ষ সারির নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হাস্যকর অভিযোগ এনে কারাগারে পাঠানো। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, বারবার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান আজ যেভাবে ব্যাপকতা লাভ করেছে, তা এ দেশের রাজনীতির ইতিহাসে অভাবনীয়। রাজনৈতিক দলের অফিসে তালা ঝুলিয়ে রাখা মাসের পর মাস, দলীয় অফিসে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ঢুকতে না দেয়া, রাজনৈতিক দলের অফিসে ঢুকে অফিস তছনছ করে নেতাদের গ্রেফতার করার নজিরও বাংলাদেশে মনে হয় বর্তমান সরকারই স্থাপন করল। সর্বোপরি সরকারি দলের প্রথম সারির নেতাদের পক্ষ থেকে বিরোধীদলীয় নেতার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত বিষোদগার করে চরিত্র হননে আওয়ামী লীগের সমতুল্য খুঁজে পাওয়া ভার। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বক্তৃতা-বিবৃতিতে বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য রাখা আওয়ামী নেতাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। 
সবশেষে উল্লেখ্য, আজকে বিভিন্ন জরিপ যেখানে চলছে, দেশের ৭০-৯০ শতাংশ মানুষ চান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হোক, সেখানে জনমত উপেক্ষা করে নিজেদের ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা সংবিধানের দোহাই দিয়ে সরকার এখন সব বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন আয়োজনে মহাব্যস্ত। সুশীলসমাজ কেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে, সে জন্য তাদের নিয়ে নানা কথা বলছেন আওয়ামী নেতা-নেত্রীরা। এরই মধ্যে নানা কর্মসূত্রে বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন এক দিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে, অপর দিকে সরকার বিরোধী দলের ডজন ডজন শীর্ষসারির নেতাকে আটক করে কারাগারে বন্দী করছে। সরকার অনুগত নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে টুঁ শব্দ করছে না। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তিনি সব দলের জন্য একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবেন এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবেন। এভাবে বিরোধী দলের নেতাদের সবাইকে কারাগারে পাঠালে সরকার নির্বাচন করবেন কাকে নিয়ে? সরকার কি তা হলে খালি মাঠে গোল দেয়ার চেষ্টা করছেন? এভাবে একতরফা নির্বাচন করে জেনারেল এরশাদকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়ে দেশ চালানোর চিন্তায় কি সরকার এখন বিভোর? এমনই আরো বহু প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে। 
এক দিকে সরকারি দল ও অন্য দিকে বর্তমান সরকারের অনুগত নির্বাচন কমিশনের যৌথ প্রযোজনায় আয়োজিত হতে যাচ্ছে একতরফা প্রহসনের নির্বাচন; অপর দিকে বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে রাজপথের আন্দোলনে নেমেছে। বিরোধী দলগুলোর এক কথাÑ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সময়ের সাথে ১৮ দলীয় এ অবস্থানের সাথে যোগ হচ্ছে বেশি থেকে বেশি রাজনৈতিক দল। বি. চৌধুরীর বিকল্পধারা, আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টিসহ আরো কয়েকটি বাম দল, চরমোনাই পীরের ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও আরো কয়েকটি দল একতরফা নির্বাচনে না যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এমনকি এরশাদের জাতীয় পার্টি ভেঙে কাজী জাফর ও গোলাম মসিহর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন জাতীয় পার্টিও খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে তার পরিচালিত আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। সবচেয়ে মজার কথা, কয়েকজন নেতার মন্ত্রিত্ব উপহার পেয়ে মহাজোট সরকারে যোগ দেয়া জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদ এখন বলছেনÑ নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না, বর্তমান পরিবেশে নির্বাচন সম্ভব নয়, পরিবেশ ভালো না হলে তার দলও এই একতরফা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এরশাদ বলেছেন, প্রধান বিরোধী দল-জোট নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন সবাই মিলে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করি। এরশাদ তার দলের মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের বলেছেন, তারা যেন মনোনয়ন দাখিলের কাগজপত্র রেডি রাখেন। প্রয়োজনে তার নির্দেশে মনোনয়ন দাখিল কিংবা প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ তিনি তার প্রার্থীদের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিতে পারেন না। কারণ এসব প্রার্থী তার সন্তানের মতো। আসলে জেনারেল এরশাদ বিরোধী দলের আন্দোলনের ফলে যে জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে, তার দলের প্রার্থীদের এ জনরোষের মুখে ঠেলে দিতে চান না। তা ছাড়া সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছিলÑ বিরোধী দলের অনেক নেতাই খালেদা জিয়ার নির্দেশ অমান্য করে এ নির্বাচনে অংশ নেবেন। এসব দলছুট নেতারা তথাকথিত বিএনএফর ছাতার নিচে সমবেত হবেন; কিন্তু এরশাদ এখন দেখছেন, কার্যত তেমনটি ঘটছে না। অনেকের অভিমতÑ এরশাদ এখন পালানোর পথ খুঁজছেন নানা কথা বলে। একসময় এরশাদ ঠিকই ভোল পাল্টাবেন। 
শুধু দেশেই নয়, জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্বের সব দেশই চায় সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এ জন্য সরকারি দল ও বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের বারবার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। তা ছাড়া জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃত বিধান হচ্ছেÑ পূর্ববর্তী নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন হলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। মার্কিন কংগ্রেসে আমাদের দেশের এই একতরফা নির্বাচন নিয়ে শুনানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজনৈতিক সমঝোতার তাগিদ এসেছে। জার্মান পার্লামেন্টে একই ধরনের প্রস্তাব পাস হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া বিরোধী দলের নেতাদের মুক্তি দাবি করেছে। সর্বশেষ আবারো জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব রাজনৈতিক সমঝোতার তাগিদ দিয়ে দুই নেত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা আসছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। এর পরও যদি সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা না হয়, তবে ধরে নেয়া হবে বর্তমান সরকার একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার এবং বিরোধী দল বিএনপি ও দলটির নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার মাইনাস ওয়ানফর্মুলা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ধনুকভাঙা পণ করে বসেছেÑ হয় উদ্দেশ্য সাধন, নয় নিজের পতন; কিন্তু এর পরিণতিতে দেশ কোথায় যাবে সেই চিন্তা আপাতত মনে হয় সরকারি দলের নেতা-নেত্রীদের মাথায় একদম নেই। 
কিন্তু বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে দেশ যে আজ প্রায় একধরনের অচল হয়ে পড়েছে এবং দেশ ধীরে ধীরে সহিংসতার চরম পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; তা অস্বীকার করার উপায় নেই। রাজনৈতিক সমঝোতা করে তা থামাতে না পারলে আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে এক ভয়াবহ পরিণতি। কিন্তু রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো সম্ভাবনাই আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি না। বরং আমার শঙ্কা ও উদ্বেগ আরো শতগুণে বেড়ে যায় যখন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টির কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে বরং দলীয় সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে বলেনÑ ‘আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামেন। আপনি মাঠে নামেন, মাঠে নামেন, মাঠে নামেন। তখন রাজপথেই দেখা যাবে কার কত শক্তি।প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক সঙ্ঘাত-সংঘর্ষকে উসকে দেবে বলে মনে হয়। রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টির পথে এ ধরনের বক্তব্য বাধা হিসেবেই কাজ করবে। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, ‘যখন সরকারি দলের লোকেরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গাড়ির নম্বর ধরে ধরে ভাঙচুর ও পোড়ানো শুরু করবেন, তখন বিরোধী দলের নেত্রী কী করবেন’; তখনো সমঝোতার পথ তিরোহিত হয়, সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের পথ আরো প্রসারিত হয়। প্রধানমন্ত্রীকে উপলব্ধিতে রাখতে হবেÑ রাজনৈতিক সমঝোতা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আর এ পথেই সবার কল্যাণ। ভিন্ন পথে অকল্যাণ সবার। আমাদের মধ্যে যখন সে উপলব্ধির বড় অভাব, তখন দেশবাসী চেয়ে আছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যকর উদ্যোগের প্রতি। 
রাষ্ট্রপতি দেশের অভিভাবক। অভিভাবক ভেবেই ১৮ দলীয় জোটের নেতারা ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা আপনার সাথে সাক্ষাৎ করে দেশকে চরম এ সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি থেকে বাঁচানোর ব্যাপারে আপনার সহায়তা কামনা করেছেন। আপনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নিজেকে যুগসন্ধিক্ষণের রাষ্ট্রপতি অভিহিত করে সে দায়িত্ব পালনে সবার সহায়তা কামনা করেছিলেন। সত্যিই জাতি এক যুগসন্ধিক্ষণের মুখে। এ সময়ে আপনি অভিভাবকত্ব গ্রহণ না করলে জাতি আপনাকে নিয়েও প্রশ্ন তুলবে। কারণ আপনিই বলেছিলেন, আমি কোনো দলের রাষ্ট্রপতি নই, সবার রাষ্ট্রপতি। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads