শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

রাজনৈতিক পরিস্থিতি


মহাজোট সরকারের সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবুও এখন পর্যন্ত নির্বাচন সমস্যার সমাধান হলো না। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে। গত ১৯ নভেম্বর বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রবীণ ব্যক্তিত্ব এ বি এম মূসা টকশোতে বললেন, কখন যে কি হয়; তিনি শঙ্কিত। তিনি একবার বলেছিলেন, সে সময় যদি বঙ্গবন্ধুকে সমালোচনা করতাম, তাহলে তিনি হয়তো ভুলগুলো করতেন না। তিনি একজন খাঁটি আওয়ামী লীগপন্থী। অথচ তিনিও আওয়ামী লীগের বর্তমান নীতিতে শঙ্কিত।
২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনের রেবার্ন অফিস ভবনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর শুনানির আয়োজন করে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সংশ্লিষ্ট একটি উপকমিটি। এশিয়া বিষয় : বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা, খাদের কিনারে একটি জাতি?’ এই কমিটির চেয়ারম্যান স্টিভ শ্যাপেট সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেছেন। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইন্ডিয়া ঘুরে যুক্তরাষ্ট্র ছুটলেন। তিনি ঢাকা ফিরেছেন। এ দিকে নবনিযুক্ত মার্কিন সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাইকে শপথ নেয়ার সময় না দিয়েই ঢাকাতে পাঠাল ওয়াশিংটন। সবাই ভাবছে বাংলাদেশ খাদের কিনারায়। প্রতিনিধি পরিষদের উপকমিটির শুনানিতে বাংলাদেশের নির্বাচনে সন্ত্রাসÑ সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়।
কুরআন মজিদের এক আয়াতে আরববাসীকে আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়ে তাদের বিপদের কথা এভাবে জানানো হয়েছিল। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন।’ (৩ সূরা আল ইমরান : আয়াত ১০৩)। প্রায় সব মুসলিম রাষ্ট্রই খাদের কিনারে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, লেবানন, সোমালিয়া, মিসর, সুদান, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, আলজিরিয়া, মালি ও নাইজেরিয়াসহ বহু দেশে একই অবস্থা। এর জন্য মুসলিমরা শুধু নয়, বাইরের চক্রান্তও দায়ী।
বাংলাদেশে আজ যে রাজনৈতিক সঙ্কট তার জন্য অনেকটাই দায়ী বিশেষ একটা দেশ। কিছু দেশ এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে সামান্য কিছু চেষ্টা নিলেও তাতে বাদ সাধছে কোনো কোনো পক্ষ। সরকারের এক উপদেষ্টা তো বলেই ফেললেন, ড্যান মজিনা যেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। শোনা যায়, মজিনা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না প্রায় আড়াই বছর। তাই দুধের সাধ ঘোলে মিটাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্কিনি গ্রিন কার্ডধারী জয়ের সাথে কথা বললেন। এর আগে অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী মহিলা প্রতিনিধিকে ব্যঙ্গ করে বললেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাম লেখাতে। পররাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নিয়ে এসব কী হচ্ছে? কূটনৈতিক শিষ্টাচার আমরা দেখাতে ব্যর্থ। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সম্পর্কেও শিষ্টাচার নেই।
যুক্তরাষ্ট্র যখন রবার্ট ব্লেককে বাদ দিয়ে ইন্ডিয়া-বংশোদ্ভূত নিশা দেশাইকে সহকারী মন্ত্রী করে তার ওপরে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার দায়িত্ব দিলো।তখন মনে হচ্ছিল যেন যুক্তরাষ্ট্র এখন আমাদেরকে ইন্ডিয়ার চোখ দিয়ে দেখবে। বিশেষ করে নিশা নরেন্দ্র মোদির গুজরাট থেকে আসা। নিশার শপথের আগেই তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানো একটা ব্যতিক্রমী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা মনে হয়। নিশা হোয়াইট হাউজে শপথ অনুষ্ঠানে সবার সামনে বলেছেন যে তিনি এ অঞ্চলে আমেরিকান মূল্যবোধের যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেন না। আমরা জর্জ ওয়াশিংটন ও আব্রাহাম লিংকনকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। আমেরিকান মূল্যবোধের সব চেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষ অবস্থান। আমাদের দেশে এখন এ তিনটাই হুমকির সম্মুখীন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বারবার বলছেন, দেশ বাকশালের দিকে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে উপদেষ্টারা ভুল পরামর্শ দিয়ে বিপদের ভেতর দিয়েছিলেন, এ দিকে কিছু উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীকে সেই বিপজ্জনক পথে ঠেলে দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার তো চাওয়া-পাওয়ার তেমন কিছু আর নেই। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদ পড়েন, ফজরে কুরআন মজিদ পড়েন। ওমরাও করলেন। তিনি যদি একটা রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ নেন, তাহলে জাতি নিশ্চয়ই তার সঠিক মূল্যায়ন করবে। সোনিয়া গান্ধীর মতো গদিতে না থেকেও তো প্রভাবশালী হতে পারেন। নামাজি শেখ হাসিনার এখন সময় এসেছে তার স্বঘোষিত ধার্মিকতার প্রমাণ দিতে।
সমগ্রজাতি এখন একজনের দিকে তাকিয়ে আছে। এ দিকে সমাধানের সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে। দেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ বহু কিছু হুমকির মুখে। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads