শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

এখন যা হচ্ছে তা মূলত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস


বিজয় সব সময়ই আনন্দের বার্তা বহন করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সে বিজয়টি যখন কোনো দুঃখের বার্তা নিয়ে আসে, তখন সবারই মনের মধ্যে একটু হলেও দাগ কাটে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় বিজয়। আর সে বিজয়কে উদযাপন করতে প্রতি বছরই দেশের জনগণ ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এবারের বিজয় আনন্দ সাধারণ মানুষ মনে প্রাণে উপভোগ করতে পারছে বলে মনে হয় না। বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করার মতো যে মনমানসিকতা থাকার প্রয়োজন, তা এবার দেশবাসীর মধ্যে অনেকটাই অনুপস্থিত ছিল। এর ফলে বিজয়ের মাসেও স্বাধীন দেশের জনগণকে পুলিশের গুলিতে নিহত হতে হয়েছে, যা বিবেকের কুঠরিতে কষ্টের ঝাঁকুনি লাগে? অন্য দিকে এবারই প্রথম স্বাধীনতার ৪২ বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যায়নি। বিজয়ের মাসে আমরা দেখতে চেয়েছিলাম সুখী ও স্বনির্ভর সুন্দর বাংলাদেশ। তার বিপরীতে দেখলাম হত্যা, গুম, খুন আর রক্তের বাংলাদেশ।

পাতানো নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। এক দিকে বিরোধী দলের হরতাল আর অবরোধ অন্য দিকে পুলিশবাহিনীর নির্মম দমনাভিযান। মহান বিজয় দিবসের ভোরের আলো আসতে না আসতেই সাতীরাসহ সারা দেশে পুলিশ-বিজিবি আর র‌্যাবের গুলিতে ১৮ দলীয় জোটের অনেক নেতাকর্মীর জীবন চলে গেছে না ফেরার দেশে। সরকার এক দিকে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলছে, অন্য দিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের যেনতেন মামলা দিয়ে রিমান্ডের হোলিখেলা খেলছে। রোম যখন পুড়েছিল, নিরু তখন বাঁশি বাজিয়েছিল। ঠিক একই কায়দায় বিরোধী দল যখন পুলিশের লাঠিপেঠা আর গুলি খেয়ে গণতন্ত্রের কথা বলছে, সরকার তখন বাঁশি বাজিয়ে ৫ জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে। 

সরকার দেশকে দিন দিন সঙ্ঘাতের শেষ কিনারায় নিয়ে যাচ্ছে। আজ আমরা ল করছি যে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। পুলিশবাহিনী, র‌্যাব আর বিজিবিকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী মতার সিঁড়িকে কুগিত করার যে চেষ্টা চালাচ্ছেন, তাতে এ সরকারকেই তার মাশুল দিতে হবে। সরকারের নিপীড়ন, জেল-জলুম আর হত্যা হরহামেশাই সারা দেশে হচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষও আজ ভয়ে শঙ্কিত। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে বাসার ছাদে জামায়াত নেতা ডা: ফয়েজকে নৃশংসভাবে হত্যা ইতিহাসের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। যারা হত্যার আদেশ দিচ্ছেন, তাদেরও মনে রাখা উচিত মশা তার হাতেই মরে যার গায়ের রক্ত সে খায়। 

অতীতের ভুলভ্রান্তির পুনরাবৃত্তি হবে না বলে নাকে খত দিয়ে শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের শেখ হাসিনা সরকারের ইতিহাস জনগণ বেমালুম ভুলে গেছে বলেই তিনি ২০০৮ সালের মইন-ফখরুদ্দীন সরকারের পাতানো নির্বাচনে জয়ী হতে পেরেছেন। মতা পেয়েই তিনি উসকানি আর প্রতিশোধের নারকীয় খেলায় মেতে উঠলেন। যার ফলে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে বিতাড়িত করলেন। ইতিহাস বারবার ফিরে আসে, ইতিহাস ভুলে যাওয়া কথাগুলোকে মনে করিয়ে দেয় বলেই ইতিহাস নীরব সাীর মতো ভূমিকা পালন করে আসছে সেই আবহমানকাল থেকে। তবু কেন জানি শাসকগোষ্ঠীরা মতার মোহে অতীতকে ভুলে যায়। প্রধানমন্ত্রী যখন হত্যার বিপে কথা বলেন, তখন সাধারণ মানুষের বিবেকে কষ্টের ঝাঁকুনি লাগে। ১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন বহুবার প্রকাশ্যে সন্ত্রাসের আহ্বান দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের একটি বদলে ১০টি লাশ ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা শাড়ি পরেন বলে শ্লেষ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, বাঘের ভয়ে কোনো বাঘ শঙ্কিত থাকে না কিন্তু মানুষের ভয়ে মানুষই শঙ্কিত থাকে।

সরকার যতই বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করুক, তা বুমেরাং হবে। এ সহিংসতার দায়ভার শুধু বিরোধী দলের ওপর দিলেই হবে না সরকারকেও তার দায়ভার নিতে হবে। সরকার মতার দাপটে পুরো রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে দেশকে অনিশ্চিত গন্তব্যে দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সারা দুনিয়ার সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করে ভোটারবিহীন নির্বাচন করলে এ জাতি সরকারকে মা করবে না। 

সরকারকে বিনয়ের সাথে বলব মাথায় টিউমার হলে যেমন পায়ের নখ কাটলে সারে না, ঠিক তেমনি বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। সুতরাং সময়ের এক ফোড় আর অসময়ের দশ ফোড় দেয়ার আগেই কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে জাতিকে মুক্তি দিন। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads