মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

বিরোধী দলের অভিযোগ এখন সত্য প্রমাণিত হচ্ছে


দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় যেসব বিশ্লেষণ প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন কোনো উপাদান নেই। বরং দেশের দুই রাজনৈতিক জোটের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক সহিংসতায় রাষ্ট্রযন্ত্রই বিকল হতে বসেছে বাংলাদেশের। ভেঙ্গে পড়ছে রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলো। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, দেশে এখন চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ধসে পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতি। বিপর্যয় দেখা দিয়েছে শিক্ষাঙ্গনেও। এমন অবস্থায় প্রধান দুই জোটের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। কিন্তু কাক্সিক্ষত সেই সংলাপের কোনো লক্ষণ নেই। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এমন কি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের আহ্বানের পরও কাক্সিক্ষত সংলাপ অনুষ্ঠিত হলো না। সংলাপ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মূল দায়িত্ব বর্তায় সরকারের ওপর। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এমন দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করা হয়নি। বরং সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন সব খোঁচা দেয়া কথা বলা হয়েছে, যাতে সংলাপের পথ রুদ্ধ হওয়ার পথে। এতদিন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,  সরকার সংলাপের ব্যাপারে আন্তরিক নয় বরং তারা একতরফা নির্বাচনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। বিরোধী দলের সেই অভিযোগের সত্যতা এখন জনগণ সুস্পষ্টভাবেই লক্ষ্য করছে। একতরফা এমন নির্বাচনের জন্য তো জনগণ এতদিন ধরে অপেক্ষা করেনি। আর এমন নির্বাচন তো গণতন্ত্রসম্মত নয়।
একতরফা কোনো নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণীয় হবে, না আন্তর্জাতিক মহলে সে নির্বাচন স্বীকৃতি পাবে। এমন নির্বাচনে দেশে সংঘাত ও অশান্তির মাত্রাই বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি পড়বে বিপর্যয়ের মুখে। তারপরও এমন একটি অগণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে সরকার কেন এগিয়ে যাচ্ছে, সেই রহস্য জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। হয়তো আগামীতে সে রহস্য জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠবে।
বর্তমানে বিরোধী জোটকে রাজপথের আন্দোলনে অনেক ক্ষেত্রে সহিংস হতে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে সরকার বিরোধী দলের তীব্র সমালোচনা করছে। সরকারি প্রচার যন্ত্রও বিরোধী দলের ভাংচুর ও ককটেল ফোটানো নিয়ে বেশ সরব। তবে এখানে বলে রাখা ভাল যে, সমালোচনার কাজটি যতটা সহজ, আত্মসমালোচনার কাজটি ততটাই কঠিন। আমাদের রাজনীতিতে আত্মসমালোচনার সংস্কৃতি চালু থাকলে দেশের পরিস্থিতি আজ এ পর্যায়ে পৌঁছাতো না। আত্মসমালোচনায় অভ্যস্ত হলে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ভুলত্রুটি উপলব্ধি করে সংশোধনের পথে হাঁটতে পারতো। সামান্য আত্মসমালোচনা করলেও সরকার বুঝতে পারতো, বিরোধী দল বর্তমান সময়ে কেন এতটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে? বিগত পাঁচটি বছরে সরকার কী বিরোধী দলকে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার দিয়েছে? বরং জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে এবং আইনি চাতুর্যে বিরোধী দলকে দমন ও বিপর্যস্ত করতে চেয়েছে। নির্বাচনকালীন বর্তমান সময়েও একই চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ কারণেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করছে না জনগণ। ফলে তাদের মধ্যে হতাশার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংলাপ বা সমঝোতা নয়, দমন-অবদমনের মাধ্যমেই যেন বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার। এ কারণেই পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, একদলীয় ও একপেশে নির্বাচনই এখন সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যেই সরকার বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা করছে ও একের পর এক গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাচ্ছে। এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো সহিংস হয়ে উঠছে। সংঘাত-সংঘর্ষের এমন এক পরিবেশে সরকার বিরোধী জোটকে বাদ দিয়ে একপেশে নির্বাচনী অভিযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো জটিল আকারধারণ করেছে। ফলে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন আর অভ্যন্তরীণ বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দুঃখজনক হলেও এটা এখন পরিপূর্ণভাবে একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই প্রথম বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট এবং নির্বাচনের বিষয়টি একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠলো। এর পরিণতি কি হতে পারে ইতোমধ্যে তা দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সরকার এ বিষয়টিকে কতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে তা আমরা জানি না। তবে আমরা মনে করি, রাজনীতি ও নির্বাচন যদি দেশ জনগণের স্বার্থে হয়, তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপ ও সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। এর বদলে যদি ক্ষমতার মোহ ও সংকীর্ণ স্বার্থে একপেশে নির্বাচনের পথেই সরকার অবিচল থাকে, তাহলে তা শুধু দেশ ও জনগণের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনবে না, আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীও। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাই উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads