বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

এরশাদের অংশ না নেয়ার ঘোষণায় স্পষ্ট হলো একদলীয় নির্বাচনের চিত্র


আজ ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস। ১৯৯১ সালের এই দিনে গণআন্দোলনের সুতীব্র ধাক্কায় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরশাসক এরশাদ পদত্যাগ করে। ২০১৩ সালের এই ডিসেম্বরেও এরশাদ স্বৈরাচারের ছলাকলার বাইরে আসতে পারেনি। প্রথমে ‘সব দল অংশ না নিলে নির্বাচনে যাবে না’ বলে ওয়াদা করেও পরে আওয়ামী লীগের একদলীয় নির্বাচনে অংশ নিতে উদ্যত এরশাদ অবশেষে আবারও ডিগবাজি দিয়ে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং নিজের দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলেছে। এতে একদিকে স্বৈরাচারের চারিত্র্য যেমন প্রকাশ পেলো, অন্য দিকে আওয়ামী লীগ আরও বন্ধুহীন, নিঃসঙ্গ ও একাকী হলো। একদলীয় ও স্বৈরতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে নিঃসঙ্গ আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারও পরিত্যাগ করায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে এক-ঘরে হয়ে গেছে। দুই-একটি ফতুর বাম ছাড়া আর কেউ তাদের সঙ্গে নেই। এরশাদের জাতীয় পার্টিও সঙ্গ-ত্যাগ করায়, এই একাকী অবস্থায় সকলের অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার মতো দাবি করার যৌক্তিক ও নৈতিক রাজনৈতিক অবস্থান তাদের সামান্যতমও আছে বলে কেউই বিশ্বাস করবে না। এতে স্পষ্ট হলো একদলীয় নির্বাচনের বাস্তব চিত্র। ফলে বিরোধী ১৮ দলীয় জোট প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রনায়কসুলভ প্রজ্ঞার প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বরূপ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটাধিকারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কায়েমের সংগ্রামের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা আরও সুস্পষ্ট ও সুতীব্রভাবে অনুভূত হলো। এখন যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে এবং তোড়জোড় করা হচ্ছে, তাতে আক্ষরিক অর্থেই আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ নেই। বিএনপি-জামায়াত জোট যে একদলীয় নির্বাচন মেনে না নেয়ার আন্দোলন করছে, সেটার প্রেক্ষাপটে প্রকৃত একদলীয় নির্বাচনের বাস্তব চিত্র এখন সামনে এসে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নয়, বরং সকলের অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপায় বের করাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বার্থে প্রথম ও প্রধান কর্তব্য।
ঐতিহাসিকভাবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা উপ্ত হয়েছিল আশির দশকের স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময়ে। লে. জে. এরশাদ তার অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা প্রদানের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তার মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান অন্যতম। বস্তুত এরশাদ নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতা অর্জনে বারংবার কেবল ব্যর্থই হয় নি; বরং নির্বাচন নামক প্রক্রিয়াটি এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং সাধারণ মানুষের কাছে এদের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা চরমভাবে ক্ষুণœ হয়। এরশাদের আমলে অনুষ্ঠিত প্রত্যেকটি নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয় এবং জনসাধারণের কাছে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়। ফলে এরশাদের অবৈধ সরকার কোনওভাবেই বৈধতার সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এইক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া ঐতিহাসিক-দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এরশাদের অধীনে কোনও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এরশাদের বৈধতার সঙ্কট সুতীব্র হয়। এবং আওয়ামী লীগসহ কতিপয় দলের অংশ গ্রহণের ফলেও এরশাদ তার বৈধতার সঙ্কট তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। গণতন্ত্রের আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকার কারণে এরশাদ তার শাসনের কপাল থেকে অবৈধ পদবী মুছতে পারেনি। বর্তমানেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া একদলীয় স্বৈরাচারমূলক শাসনকে একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতার সিল মোহর দিতে আগ্রহী নন। তিনি যে কোন ধরনের পাতানো ও প্রহসনমূলক নির্বাচনের বিরোধিতায় সারা জীবন অটল থেকেছেন। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হিসাবে অবাধ নির্বাচনকে তাই তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা কেেরন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এখন সব ধরনের আলোচনা ও আগ্রহই রাজনীতিকেন্দ্রিক। রাজনীতির বৃত্তকে আবর্ত করে হরতাল, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কর্তৃত্ববাদের মতো প্রাসঙ্গিক ইস্যুগুলোও চর্চা হচ্ছে। প্রতিটি ইস্যুই একটি-আরেকটিতে মিলে-মিশে বাংলাদেশের সর্বসাম্প্রতিক-চলমান রাজনৈতিক গতিপ্রবাহে বহাল রয়েছে। সরকার নির্বাচন করবেই এবং সেটাকে গ্রহণযোগ্য প্রমাণে এরশাদ ও ক্ষুদ্র বামপন্থীদের সগযোগিতায় গঠিত নতুন মন্ত্রিসভার বিষয়টি সামনে এনেছে। যদিও আগের মন্ত্রিসভার পদ্যতাগ ‘কখন এবং কার কাছে’ ধরনের সাংবিধানিক ও আইনগত জটিলতার জন্ম দিয়েছিল। আবার সম্মিলিত বিরোধী দল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় নেতৃত্বে  অবরোধ-হরতালকে হাতিয়ার করে সরকার পতনের আন্দোলন করছে এবং পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে একবার বিরোধী শিবির থেকে ধ্বনি উঠেছিল যে, বর্তমান সরকার অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এটা স্পষ্ট যে, দেশি-বিদেশি মদদে রাজনৈতিক পরিকল্পনা, কৌশল ও কর্মসূচি নিয়ে সরকার যে সুনিদিষ্টভাবে একতরফা নির্বাচনের পথে এগুচ্ছিল, এরশাদেও সটকে পড়ায় সেটাও ভ-ুল দশার সম্মুখীন। তদুপরি, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোটের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে তাদের সেইসব পরিকল্পনা ও নীল-নকশা বাস্তবায়িত হতে পারছে না। গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে বেগম খালেদা জিয়ার ঐতিহাসিক ভূমিকা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে নির্বাচন করে ফেলার জোরালো সরকারি উদ্যোগ সফল হয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠার আশঙ্কা তীব্র হতো যদি বেগম জিয়া গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন না থাকতেন। বেগম জিয়ার নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক উপস্থিতির তুলনাবিহীন দৃঢ়তার কারণে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সাজানো নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে মুছে ফেলা, একদলীয় স্বৈরাচার সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করা কিংবা তাঁবেদারির চূড়ান্তকরণ করা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী ও গণতন্ত্রের শত্রুদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যবেক্ষকরা গণতন্ত্রকে দেখতে পাচ্ছেন নির্বাচনের একটি মাত্র দিনে। একদিনের গণতন্ত্রও গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন। গণতন্ত্র কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক হয়ে পড়ায় কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন বেশ জোরের সঙ্গেই উঠেছে। যেমন, নির্বাচনের আগে কীভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে? তাতে সবার অংশগ্রহণের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হচ্ছে কি না? ভোটারদের অংশগ্রহণ ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি রয়েছে কি না? আদর্শিক বা ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিকূল পরিবেশ আছে কি না? প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হওয়ার কারণ হলো, এগুলোর অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ভোটের উৎসব হয় মাত্র; গণতন্ত্রের মৌলিক উপাদান পরিপূরণ করতে পারবে না। গণতন্ত্রের ভিত্তি ও প্রাতিষ্ঠানিকতা নিয়ে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গবেষণা করছেন, তারা এসব প্রশ্নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ কারণেই বাংলাদেশে যে নির্বাচন করার চেষ্টা চলছে, সেটা কেবল বিরোধী দলের দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, গণতন্ত্রের তত্ত্ব ও ব্যবহারিক চর্চার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এই সঙ্কট বর্তমানে সৃষ্টি হয়েছে তা নয়। সাম্প্রতিক অতীত থেকেই নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে সঙ্কট চলে এসেছে। যা ২০০৬ সালেও ছিল, ২০০৮ সালে ছিল এবং আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারেও সমপরিমাণে বহাল রয়েছে। অধুনা তাত্ত্বিকরা বলছেন, একটি দেশের গণতন্ত্র টেকসই ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে কি না, সেটা বোঝা যাবে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে ওই দেশ পর পর দুটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে পারছে কি না; যাতে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে সাংবিধানিক নিয়মে, শান্তিপূর্ণভাবে এবং সকলের আস্থায়। এটাকে স্যামুয়েল ফিলিপ হান্টিংটন  বলেছেন ‘টু টার্নওভার টেস্ট’ (দুবার বদলের পরীক্ষা)। পরাজিতরা ফলাফল মেনে নিয়েছে কি না এবং বিজয়ীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানকে পাল্টে দিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনের সূচনা করেছে কি না, সেটা গণতন্ত্রায়ণের নির্ধারক পরীক্ষা। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সেই পরীক্ষায় বারবার ব্যর্থ হয়েছে। কীভাবে তা ব্যর্থ হয়েছে, সেটা প্রতিটি নাগরিক ও রাজনীতি সচেতন মানুষেরই জানা। বাংলাদেশের মানুষ একদিকে আন্দোলন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অংশীদার যেমন হয়েছেন, তেমনি গণতন্ত্রের অবক্ষয়েরও সাক্ষী হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৪-৯৬ সালের সহিংসতা, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, ২০০৪ সালের চতুর্দশ সংশোধনী- সবই বিরাজমান সীমিত আকারের গণতন্ত্রের জন্যও হুমকি হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। ২০০৬ সালে ক্ষমতাসীনরা যে সাজানো নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়েছিল, সে সম্পর্কে তখন দেশে ও বিদেশে উদ্বেগ ও আন্দোলন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এখন বিরোধী দল উদ্বিগ্ন এবং এখনও আন্দোলন দানা বাঁধানোর চেষ্টা করছে। বিদেশিরাও এ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন এবং মৌখিকভাবে একদলীয় ও অংশগ্রহণহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে তাদের মতামত দিয়েছেন। ভারত ও চীনের মতো রাষ্ট্রও প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে সরব হয়েছে। এখন অ্যাক্টর কেবল ইউরোপীয় ও আমেরিকানরাই নন, আরও অনেকেই। এমন অবস্থায় বিদ্যমান আশঙ্কার দিকটি তুলে ধরেছেন ড. আলী রীয়াজ (পাবলিক পলিসি স্কলার, উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারস, ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র): “বাংলাদেশে যে ‘সংকর গণতন্ত্র’ চালু হয়েছে, তা সংহত গণতন্ত্রে রূপ নেবে, এমনটা এই মুহূর্তেই আশা করার কারণ নেই। এ পর্যন্ত  যেসব দেশ গণতন্ত্রে উত্তরণের পর এই নতুন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, সেগুলোর কিছু কিছু দেশের পেছনের দিকে হেঁটে কর্তৃত্ববাদী শাসনে ফিরে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। ২০০৬ সালের পর সারা পৃথিবীতেই এই প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করছি। ২০০৬ সালে সারা দুনিয়ার ৬৪ শতাংশ দেশকে কোনো না-কোনোভাবে ‘গণতান্ত্রিক’ বলে বর্ণনা করা যেত, এখন তার হার কমেছে। বাংলাদেশ সে পথেই যাবে কি না, সেটাই এই নির্বাচনগুলোতে মূল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বারবারই আমরা নির্বাচনকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে চিহ্নিত করি। কিন্তু মনে রাখা দরকার, এই প্রশ্নটা ওঠার মানে এই নয় যে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনই এই আশঙ্কা থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে। বরং একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন, সাংবিধানিক বিবেচনায় বাধ্যবাধকতামূলক হলেও সে পথেই দেশকে ঠেলে দিতে পারে।” বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নেত্রী এবং অনন্য রাষ্ট্রনায়ক বেগম খালেদা জিয়ার প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব ও সংগ্রামী রাজনৈতিক উপস্থিতির কারণে সামনের নির্বাচন বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথেই যেতে হবে। কর্তৃত্ববাদের পথে বা স্বৈরতান্ত্রিক একদলীয় পন্থার অনুসারীদের ব্যর্থ হতে হবে।
বেগম জিয়ার মধ্যে উচ্চ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং রাষ্ট্রনায়কের ভিশন ইতিহাসের নানা পর্যায়ে দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভুল তিনি করেননি বললেই চলে। বিশেষত দেশ, জাতি ও  গণতন্ত্রের স্বার্থে বার বার সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত যত কঠিনই হোক, তিনি সেটা নিয়েছেন এবং বাস্তবায়িত করেছেন। গণতন্ত্রের আন্দোলন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল হয়েছে বাংলাদেশে একজন অনন্য খালেদা জিয়ার তেজোদীপ্ত উপস্থিতি ও অবস্থানের কারণেই।
ইতিহাসে যেমন দেখা গেছে, এরশাদ স্বৈরশাসনাধীনে কোনও নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া অংশ গ্রহণ করেননি। তিনি অবৈধ শাসককে বৈধতা দেয়ার জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো ব্যবহৃত হননি। তার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ সঠিক ছিল, কারণ যারা এরশাদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা জাতীয় বেঈমান ও দালাল হয়েছে, আর বেগম জিয়া হয়েছেন দেশনেত্রী, অনন্য রাষ্ট্রনায়ক, গণতন্ত্র, জাতীয় স্বার্থ, জনগণের অধিকারের সার্থক সংরক্ষক।
ইতিহাসে এটাও লক্ষণীয় যে, ১৯৮২, ৮৪, ৮৬ এবং ৮৭ সালে এরশাদের নির্বাচন ছিল প্রহসন মাত্র। যারা এতে এরশাদের সঙ্গে অংশ নেয়, তারাও সেটা অবগত ছিল এবং জেনে-শুনেই সে নির্বাচনে গিয়েছিল নিজের ক্ষুদ্র ক্ষমতার স্বার্থে কিংবা এরশাদকে বৈধতা দিয়ে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। বেগম জিয়াও জেনে-বুঝেই সে নির্বাচনে যাননি এবং এরশাদের অবৈধ সরকারকে বৈধতা দিতে আগ্রহী হননি। কারণ, ভোটারবিহীন ভোটকেন্দ্রে ভোটের বাক্সে ব্যালট বোঝাই করা কিংবা অস্ত্রের মুখে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করা ছিল এরশাদ আমলের নির্বাচনগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য। উপরন্তু, মিডিয়া ক্যু’র মাধ্যমে নির্বাচনের সাজানো ফলাফল প্রচার এবং নির্বাচনে তার ও তার পছন্দের দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জঘন্যতম প্রক্রিয়াটি পরে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করে তোলার বহু আগেই টের পান গণতন্ত্রের সাচ্চা সংগ্রামী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বেগম জিয়ার অনবরত আন্দোলনের কারণে এরশাদীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দেশে বা বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা বা বৈধতা পায়নি এবং স্বৈরাচারের অধীনে গণতন্ত্র ও নিবাচনের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়। দেখা যায়, তথাকথিত নির্বাচন কমিশন উক্ত নির্বাচনগুলোতে সামান্যতম নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বলতে এরশাদের সরকার ও তার নির্বাচন কমিশনের কিছুই ছিল না। শেষ পর্যন্ত দেশ-বিদেশের সকল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, এরশাদকে ক্ষমতায় রেখে আর কোনও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আমেরিকান কংগ্রেসম্যান এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সাব-কমিটির চেয়ারম্যান স্টিফেন সোলার্জ সে সময় বাংলাদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে অনুরূপ অভিমত প্রকাশ করেন, যা বেগম জিয়ার উচ্চারিত বক্তব্যের প্রতিধ্বনি মাত্র। বর্তমানেও বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার যে দাবি করছেন, সেটাও ক্রমে দেশে-বিদেশে বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করছে। কারণ, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে যত বারই ক্ষমতায় ছিল, কখনওই অবাধ ও চাপমুক্ত নির্বাচন করতে পারেনি। তদুপরি বর্তমান আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনে সকল প্রতিষ্ঠানের মতো নির্বাচন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে ও দলীকরণের শিকার হয়েছে। উপরন্তু, একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অকস্মাৎ বাতিল করে দেয়ার সরকার দলীয় উদ্যোগ প্রশ্ন ও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।
কারণ, যে পবিত্র, নিষ্কলুষ, বিশুদ্ধ নির্বাচন ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে মানুষের ইচ্ছায় চালিত করে, সেই নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার বদলে দলীয় প্রভাবাধীন করার উদ্যোগ গণতন্ত্রের সঙ্গে মোটেও মানানসই নয়। গণতন্ত্রে সরকারের কর্তৃত্বের উৎসই হচ্ছে শাসিতের সম্মতি। আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের প্রতি জনগণের সম্মতি প্রতিফলিত হয়। তাত্ত্বিকরা বলেন, ‘সকল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু সকল নির্বাচনই গণতান্ত্রিক নয়।’ কারণ, একনায়ক, স্বৈরশাসক, সামরিক শাসন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় যেসব নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তা জনসম্মতির স্মারক নয়; ঐসব অবৈধ সরকারের বৈধতার সিলমোহর স্বরূপ। এমন ধরনের নির্বাচনে সবাই অংশ নিতে পারে না এবং জনগণের পক্ষে স্বাধীনভাবে ও মুক্তমনে পছন্দমত প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ থাকে না। বাংলাদেশে অতীতে স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে এ ধরনের পাতানো নির্বাচন হয়েছে এবং বর্তমানে (২০১৩) এমন নির্বাচনের পাঁয়তারা চলছে, যা দেশ ও বিদেশে গ্রহণযোগ্যতাহীন বলে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন। দেশনেত্রী-রাষ্ট্রনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য অনুপযুক্ত যে কোনও প্রহসনমূলক নির্বাচনের বিরোধিতায় অতীতে যেমন সোচ্চার ছিলেন; বর্তমানেও তেমনি সরব ও আন্দোলনমুখর। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনের পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রবাহকে যথাযথভাবে সচল রাখতে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান স্মরণীয়। তিনি কখনওই পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে বৈধতা দেন নি এবং এখনও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিহত করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক, সর্বব্যাপী এবং সুস্পষ্টভাবে নিরপেক্ষ আইন ও প্রয়োগ দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত, যেখানে সরকার পরিচালনাকারীরা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয় এবং যাদের সরকারের সমালোচনা এবং বিকল্প উপস্থাপনের অধিকার নিশ্চিত থাকে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক, কারণ, এখানে সকল দলই বিনা বাধায় তাদের মত প্রকাশ, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠান এবং প্রত্যেকেই ভোটারদের নিকট নিজ নিজ নীতি উপস্থাপন করতে পারে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন একটি মেয়াদী ব্যবস্থা। গণতন্ত্র কোনও একনায়ক বা আজীবন রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচন করে না এবং ক্ষমতায় বসে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে সরকার কর্তৃক নিজে নির্বাচিত করার ষড়যন্ত্র মেনে নেয় না। গণতন্ত্রের নির্বাচনে প্রকৃত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ দল বা দলনেত্রী নয়, জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকেন। এবং পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য ভোটারদের নিকট তারা একটি নির্দিষ্ট বিরতির পর পুনরায় ভোট প্রার্থনা করে। আর এর অর্থ হলো যে, গণতন্ত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পুনরায় নির্বাচিত না হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় কিংবা তারা যদি জনগণের দাবির প্রতি যতœবান থাকে তাহলে পুনরায় নির্বাচিত হতেও পারে। এজন্যই গণতন্ত্রে নির্বাচকমন্ডলী বা ভোটারদের Sidney Hook ‘The ultimate custodian of its own freedom’’ বলে উল্লেখ করেছেন। অতএব যে নির্বাচনে জনগণ নিজেদের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করবে, সেটাকে অবশ্যই অবাধ, চাপমুক্ত, অংশগ্রহণমূলক ও সর্বব্যাপী হতেই হবে। অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ, গোত্র, পক্ষ, বিপক্ষ নির্বিশেষে সকলেই একটি উদার ও চাপমুক্ত নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জনগণের সম্মতির সামনে দাঁড়াবে এবং হয় বিজয়ী হবে, নয় পরাজিত হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার এই মানদ- বাংলাদেশে বহুলাংশেই কার্যকরী হয় নি। নির্বাচন কমিশনও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে নি। সকল প্রার্থী ও ভোটার সমান স্বাধীন সুযোগ পাননি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার উৎপত্তি। সেই ব্যবস্থায় নির্বাচিত হয়েই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু ক্ষমতায় থেকে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে ব্যবস্থা (২০১৩) করেছে, তাতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সুযোগ নেই। অবাধ ও নিরপেক্ষতার পথও সঙ্কুচিত। বরং একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের নির্বাচিত হওয়ার পথই এ ব্যবস্থায় উন্মুক্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি উত্থাপন করে বেগম জিয়া জনগণের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে কলুষিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার এই আন্দোলন বীরোচিত গৌবরের অক্ষরে চিরদিন লিপিবদ্ধ থাকবে। এবং তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে সকলের অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রও দলীয় স্বৈরাচারের কবল থেকে রক্ষা পাবে। বাংলাদেশে শান্তি, সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বহু মত ও পথের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় উন্নয়ন ও অগ্রগতির জোয়ারে দেশ ও জাতির কল্যাণ সুনিশ্চিত হবে।
চলমান আন্দোলন-অবরোধ-সংগ্রাম অবশ্যই নতুন মাত্রা পেয়েছে নির্বাচন থেকে এরশাদের সরে আসায়। কিন্তু এরশাদ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনামলে গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার হনন করে হিমালয়সম যে রাজনৈতিক পাপের পাহাড় তৈরি করেছে, একটি বা দুইটি ভালো কাজে সেটা দূরীভূত হওয়ার নয়। তদুপরি, এখনও পর্যন্ত ডিগবাজিরত এরশাদ তার কোনও কাজ ও কথাকেই বিশ্বাসযোগ্য ও মানুষের আস্থার অংশে পরিণত করতে পারছে না। তার সঙ্গে উটকো ঝামেলার মতো ভিড়-করা কতিপয় ক্ষমতালিপ্সুর অতলস্পর্শী তৃষ্ণা মিটাতে এরশাদ জীবনের শেষ পাদে নিজেকে বলির পাঁঠা বানাবে; নাকি জনতার কাতারে এসে নিজেকে শুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক করতে সচেষ্ট হবে, সেটা একদার স্বৈরাচারের নিজস্ব ব্যক্তিগত ইচ্ছাধীন বিষয়। কিন্তু অতীতের নানা কাজের ব্যাপারে এরশাদের শত বিরোধিতা করেও বর্তমান বিতর্কিত ও একদলীয় নির্বাচন থেকে তার সরে আসার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শুধু এইটুকুই বলা যায় যে, ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের সংখ্যাহীন খারাপ কাজের মধ্যে এটা তার একমাত্র ভালো কাজ। শেষ পর্যন্ত ভালো কাজটিকে ধরে রাখার মতো দৃঢ়তা দেখাতে পারলে হয়ত ইতিহাস এই সাবেক স্বৈরাচারকে অন্য চোখে মূল্যায়ন করবে। এরশাদ বিচক্ষণ লোক। কবি। সংবেদনশীল মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে কোমল, দরদী ও স্পর্শকাতর। অনেকগুলো স্বৈরতান্ত্রিক ভুলের পর একটি সঠিক গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন কাজ করার মাধ্যমে এরশাদ যদি বাংলাদেশে ভোটের অধিকার ও একদলীয় স্বেচ্ছাচারকে হটাতে সামান্যতম অংশ নিতে পারে, তবে সেটা তারই সৌভাগ্য হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সৌভাগ্যকে ধরে রাখার সৌভাগ্য তার হবে তো? নাকি নিজের চারিত্রিক দোদুল্যমানতায় তালগোল পাকিয়ে আবারও একদলীয় স্বেচ্ছাচারের সঙ্গে সাবেক স্বৈরাচারের মৈত্রীতে জনতার ঘৃণা, ক্ষোভ ও ইতিহাসের নিন্দাই তার ললাট লিখন হবে? যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে; ভবিষ্যতে কি হবে? জনতার গণআন্দোলনের সঙ্গী না স্বেচ্ছাচারের দোসর? জাতির ক্রান্তিলগ্নে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি খোদ এরশাদকেই নিতে হবে। এর উপরই নির্ভর করছে তার রাজনৈতিক ভাগ্য ও ভবিষ্যত পরিণতি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads