শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে না আসার পরিণতি ভালো হবেনা


অতীতের অনেক উপলক্ষের মতো এবারও দারুণই দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার মুখ থেকে কথা বেরিয়ে আসার পর মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও আল-কায়েদা ধরনের আরো কিছু শব্দের আড়ালে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধকারীদের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় তিনি বলেছিলেন, তার কাছে ‘খবর’ আছে, অবরোধকারীরা এবার লঞ্চ, স্টিমার এবং ফেরিতেও অগ্নিসংযোগ করবে। সেগুলোকে ডুবিয়ে নদীপথেও মানুষ হত্যা করবে। কথাটা কেন বলছেন তার কারণ জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ইচ্ছা করলে আজকের যুগে সব খবরই জানা যায়। খবর শুধু তিনি একাই জানতে পারেন নাকি বিরোধী দলসহ অন্য সব মহলের কাছেও খবরের নানা সূত্র রয়েছে সে প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার পরিবর্তে এখানে জানিয়ে রাখা দরকার, নদীপথে আসলেও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা ঘাটে এমভি নড়িয়া-১ এবং এমভি সুরেশ্বরÑ১সহ তিনটি লঞ্চে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুন দেয়ার অভিযোগে জাজিরা থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দবির ব্যাপারীকে।
এভাবে নিবন্ধের শুরু করার পেছনে গুরুতর একটি কারণ রয়েছে। পাঠকরাও নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, সরকারের প্রচ- দমন-পীড়নের মধ্যেও ১৮ দলীয় জোটের ডাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অবরোধসহ আন্দোলন দুর্বার হয়ে ওঠার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ-দরদীদের সংখ্যাও দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। এই দরদীদের মধ্যে দেশের সুশীল নামধারী আওয়ামী বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা যেমন রয়েছেন তেমনি রয়েছেন অনেক বিদেশীও। অগ্নিদগ্ধ মানুষের মৃত্যুই শুধু দেখছেন তারা, অবরোধের প্রচ-তা এবং আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মতো বিষয়গুলো তাদের চোখে পড়ছে না। পুরো দেশই যে রাজধানী ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসার ভাষায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ যে  এরই মধ্যে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী ঢাকা’ নামের একটি খ-িত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছেÑ এসব বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই তাদের। তারা এমনকি একথাও স্বীকার করতে চাচ্ছেন না যে, কথাটা শুধু যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নয়, প্রশাসনের ক্ষেত্রেও প্রায় সমানভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হচ্ছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলার সঙ্গে সরকারের প্রশাসনিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আবেদন করেছেন। অনেক জেলায় পুলিশও নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। অর্থাৎ পুলিশ আর এতদিনের মতো সরকারের হুকুম তামিল করতে রাজি হচ্ছে না। সাবেক আমলাসহ তথ্যাভিজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে রাজধানী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি পাঠাতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এসব বাহিনী থেকে এত বিপুলসংখ্যক সদস্য পাঠানো সম্ভব কি না এবং পাঠালেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাবে কি না। কারণ, সাধারণ মানুষও এরই মধ্যে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলেও যে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের গণপিটুনির শিকার হওয়ার খবরে। ওদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনেও সরকার সঙ্গী হারাচ্ছে। আওয়ামী মহাজোট ও তথাকথিত সর্বদলীয় সরকারের দ্বিতীয় প্রধান দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ ইনু-মেনন ও দিলীপ বড়–য়াদের নামসর্বস্ব খানতিনেক দল ছাড়া অন্য কোনো দলকেই নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা যাবে না।
এমন এক অবস্থায় দায়িত্ব যেখানে ছিল সরকারের প্রতি দমন-নির্যাতন বন্ধ করার এবং বিরোধী দলের দাবি মেনে নেয়ার জন্য আহবান জানানো ও চাপ সৃষ্টি করা, চিহ্নিত মহলগুলো সেখানে বিরোধী দলের ওপর মানুষ হত্যার দায় চাপানোর সুপরিকল্পিত অভিযানকেই জোরদার করছে। প্রচারণাও তারা সম্মিলিতভাবেই চালাচ্ছে। টিভি ও সংবাদপত্রে আজকাল কেবলই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মানুষের মৃত্যুর এবং বেঁচে যাওয়াদের যন্ত্রণার খবর প্রচার করা হচ্ছে। বিচ্ছিন্নভাবে শুনলে ও দেখলে মনে হবে যেন হত্যা ও সহিংসতা শুধু বিরোধী দলই চালাচ্ছে! যেন বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারে-কাছে যাওয়ার পরিবর্তে শুরু থেকেই সহিংসতার ভয়ঙ্কর পন্থায় নেমে পড়েছে! অন্যদিকে প্রকৃত অবস্থা কি আসলেও তেমনই? প্রশ্ন হলো, আন্দোলনরত বিরোধী দল কেন এমন নৃশংস কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়বেÑ যার কারণে জনমত তাদের বিপক্ষে চলে যাবে? দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাসীনরা পুড়িয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগ তুললেও আজও পর্যন্ত কেন বিরোধী দলের একজন কথিত দুর্বৃত্তকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়নি বা হচ্ছে না? কেন তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হাজির করা হচ্ছে না? কেন প্রধানমন্ত্রী তার কাছে ‘খবর’ আছে বলার পরপরই শরিয়তপুরে তিন-তিনটি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে? প্রশ্নগুলো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এ কারণে যে, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যথেষ্ট যোগ্য ও সক্ষম। সুযোগ দেয়া হলে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করা তাদের জন্য কয়েক মিনিটের বিষয় হওয়ার কথা। তা সত্ত্বেও একদিকে কোনো একজন প্রকৃত দুর্বৃত্তকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে না এবং অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ ও বয়সে প্রবীণ নেতাদের বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার অভিযোগে কারাগারে ঢোকানো হচ্ছে। একই কারণে বেগম খালেদা জিয়া তার ২ ডিসেম্বরের বিবৃতিতে এসব প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হয়েছেন। পর্যালোচনায় কিন্তু তার অভিযোগের সত্যতাই প্রমাণিত হবে। আসলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় গু-া-সন্ত্রাসীদের দিয়ে হত্যার পৈশাচিক অভিযান সরকারই চালাচ্ছে। উদ্দেশ্য সম্পর্কেও বেগম খালেদা জিয়া যথার্থই বলেছেন। ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাতে এবং জনগণকে নিজেদের পক্ষে টানতে চাচ্ছেন। কিন্তু সুচিন্তিত হলেও ক্ষমতাসীনদের এই ষড়যন্ত্র হালে পানি পায়নি বরং তাদের নোংরা উদ্দেশ্যই ধরা পড়ে গেছে। সাধারণ মানুষও বুঝে ফেলেছে, র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখের সামনে যানবাহনে আগুন আসলে কারা দিচ্ছে এবং কারা মানুষ পুড়িয়ে মারছে।
এমন মন্তব্য অকারণে করা হচ্ছে না। পর্যালোচনায় দেখা যাবে, এবার ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিক দিনগুলো থেকেই শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী দলের ওপর প্রচ- দমন-নির্যাতনের অভিযান চালিয়ে আসছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে সরকার এমনকি সাধারণ মিছিল এবং সভা-সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয়নি। প্রতিটি উপলক্ষে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গু-া-সন্ত্রাসীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শয়ের অংকে নয়, হাজারের অংকে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কথিত যুদ্ধাপরাধের সাজানো মামলায় কারাগারে ঢোকানো হয়েছে। তাদের কয়েকজন এখন ফাঁসির মঞ্চে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিসে তালা ঝোলানো হয়েছে ২০১০ সালের জুন মাসে। বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসেও মাঝে-মধ্যেই সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালানো হচ্ছে। এই তো মাত্র ক’দিন আগেও, ২৯ নভেম্বর গভীর রাতে মই বেয়ে দোতলায় উঠে এবং জানালা-দরোজা ভেঙে বিএনপি অফিসে লুণ্ঠন ও ভাংচুর চালিয়েছে সরকারের সাদা পোশাক পরা লোকজন। তারা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভিকেও গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। প্রসঙ্গক্রমে এই সময়ে চলমান আন্দোলনের দিকেও লক্ষ্য করা দরকার। ১৮ দলীয় জোটের ডাকে এ আন্দোলন চলছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে। দাবিটি নিয়ে আলোচনার জন্য বেগম খালেদা জিয়া বহুবার সংলাপে বসার আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু মাঝখানে টেলিফোন সংলাপের নাটক সাজালেও ক্ষমতাসীনরা প্রথম থেকেই এগিয়েছেন ফ্যাসিস্ট পন্থায়। প্রচ- দমন-নির্যাতনের অভিযান চালানোর পাশাপাশি সরকারের ক্যাডার ও এজেন্টরা নাশকতাও চালাচ্ছে যথেচ্ছভাবে। এ শুধু বিরোধী দলের অভিযোগ নয়, অপরাধ সংঘটনের ধরন ও নৃশংসতা দেখেও তথ্যাভিজ্ঞরা বলেছেন, এত নিপুণভাবে গান পাউডার দিয়ে যানবাহনে আগুন ধরানোর এবং আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা কেবল আওয়ামী লীগেরই রয়েছে। তাদের সঙ্গে আবার দেশ বিশেষের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বা কমান্ডোরাও অংশ নিয়ে থাকতে পারে। বড়কথা, ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে কেবল দোষারোপই করে চলেছেন। কিন্তু কোনো একটি ঘটনার ক্ষেত্রেই আজ পর্যন্ত একজন কথিত সন্ত্রাসীকেও চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে পারেনি সরকার। প্রকৃতপক্ষে তেমন উদ্যোগই নিতে দেখা যায়নি। সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ না নেয়ার কারণও সহজবোধ্য। সে কারণ হলো, মানুষ হত্যা আসলে করছে সরকারের ক্যাডার ও এজেন্টরাই। উদ্দেশ্যও গোপন রাখা যায়নি। সরকার চাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাতে, যাতে বিশেষ করে বিদেশীদের কাছে বিরোধী দলকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিত্রিত করা যায়। মূলত এ উদ্দেশ্য থেকেই সর্বশেষ এক উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এমনকি আল-কায়েদা ও ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও বিরোধী দলকে তুলনা করে বসেছেনÑ যাতে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসলামবিদ্বেষী পাশ্চাত্যকে উস্কানি দেয়া যায়। বিষয়টি কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে এজন্য যে, ক্ষমতাসীনরা সম্ভবত মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর নিজেদের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা তথ্য সংগ্রহের জন্য অন্য কোনো মাধ্যম নেই, যেন তারা সরকার যা বোঝাবে তা-ই বিনা জিজ্ঞাসায় বিশ^াস করে নেবে!
বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে অন্য একটি বিশেষ কারণে। সে কারণটি হলো, বিদেশী দূত ও প্রতিনিধিদের অনেককেও সরকার এবং ধান্দাবাজ আওয়ামী সুশীল ও মিডিয়ার সুপরিকল্পিত প্রচারণার ফাঁদে পড়ে বিভ্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন সন্ত্রাস ও সহিংসতা কেবল বিরোধী দলই করছে! তারা সংকটের মূল কারণের দিকে তেমন মনোযোগই দিচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রমাণিত সত্য হলো, দমন-নির্যাতন চালানোর মাধ্যমে সরকার বাধ্য করছে বলেই আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের পক্ষে রাজপথে নেমে আসা এবং মিছিল-সমাবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের বাসা-বাড়িতেও যখন-তখন তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। গ্রেফতারের পর চালানো হচ্ছে প্রচ- শারীরিক নির্যাতন। ফলে আন্দোলনরত নেতাকর্মীরা পালিয়ে যেতে এবং রাজনৈতিক পরিভাষা অনুযায়ী ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ থেকে আন্দোলন চালিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে এ অবস্থারই সুযোগ নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। বিরোধী দলকে তারা জঙ্গী-সন্ত্রাসী এমনকি আল-কায়েদা পর্যন্ত বানানোর জন্য উঠে-পড়ে লেগে আছেন। সর্বশেষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বিরোধী দলকে আল-কায়েদার সঙ্গেও একাকার করে ছেড়েছেন! বলেছেন, বিএনপির মুখপাত্র নাকি ওসামা বিন লাদেনের মতো ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আন্দোলনের নির্দেশনা পাঠাচ্ছেন! তার পুলিশ ও গোয়েন্দারা যে মাত্র ক’দিন আগেই বিএনপির আরেক মুখপাত্রকে গভীর রাতে সন্ত্রাসী কায়দায় কেন্দ্রীয় অফিস থেকে গ্রেফতার করে এনেছে এবং গা বাঁচানোর পাশাপাশি আন্দোলন পরিচালনার বৃহত্তর প্রয়োজনেই যে বিএনপির বর্তমান মুখপাত্রকে ভিডিও বার্তা পাঠাতে হচ্ছে সে সত্য কথাটার ধারে-কাছেও যাননি প্রধানমন্ত্রী।
ঘটনাপ্রবাহের সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই আন্দোলন ও অবরোধের বর্তমান পর্যায়ে জনগণের কাছে তো বটেই, বিদেশীদের কাছেও সরকারের ফ্যাসিস্ট কর্মকা- সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা দরকার। বিশেষ করে এই সত্যটুকু জানানো দরকার যে, সহিংসতার জন্য বিরোধী দল দায়ী নয় বরং সরকারই বিরোধী দলের সামনে আইনসম্মত আন্দোলনের সব পথ বন্ধ করেছে। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য যে কোনোভাবে একতরফা বা একদলীয় নির্বাচন করে হলেও আবারও ক্ষমতায় আসা। তাদের ইচ্ছা বা চাওয়াটাই অবশ্য সব নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অমন কোনো নির্বাচন যে গ্রহণযোগ্য হবে না সে কথাটা অনেক আগে থেকে জানিয়ে আসার ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিনেও পরিষ্কার করেছেন বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার দূত ও প্রতিনিধিরা। যেমন কমনওয়েলথের প্রতিনিধি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়ে দিয়েছেন, সব দল অংশ না নিলে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কমনওয়েলথের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই কথা বলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউসহ কয়েকটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র আবারও সংলাপ ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছে। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, প্রধান বিরোধী দল অংশ না নিলে সে নির্বাচনের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। একই বার্তা নিয়ে গতকাল ৬ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে এসেছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। এরও আগে স্বয়ং মহাসচিব বান কি মুন চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর কাছে। তিনিও বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার এবং সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করার তাগিদ দিয়েছেন। মূল কথায় প্রত্যেকেই সর্বতোভাবে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন, এখনও জানাচ্ছেন। সব মিলিয়েই বোঝা যাচ্ছে, একদলীয় নির্বাচন চেষ্টার পাশাপাশি বিরোধী দলের ওপর নিষ্ঠুর দমন-নির্যাতন চালানোর এবং পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে দলীয় গু-া-সন্ত্রাসীদের দিয়ে মানুষ হত্যার কারণে সরকার কার্যত সঙ্গিহীন হয়ে পড়েছে। আপত্তি ও উদ্বেগের কারণ হলো, এ ধরনের পরিস্থিতিতে উচিত যেখানে ছিল সমঝোতা প্রতিষ্ঠা ও সব দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসাসহ গণতন্ত্রসম্মত পথে পা বাড়ানো সরকার সেখানে উল্টো পথে এগিয়ে চলেছে। সরকারের ফ্যাসিস্ট দমন-নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে নারী-শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা রাজপথে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছেন না। বলা বাহুল্য, এমন নীতি ও কর্মকা-ের পরিণতি সব সময় অশুভ হয়ে থাকে বলেই সরকারকেও সব দিক থেকে বিচ্ছিন্ন ও সঙ্গিহীন হয়ে পড়তে হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সফরকালে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন ঘটে কি না এবং হত্যা ও দমন-নির্যাতন ছেড়ে তারা গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে আসেন কি না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads