সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

বিরোধী দল নির্মূলের অভিযান


সরকারের একদলীয় নির্বাচনের কৌশল দেশে-বিদেশে কোনো মহলের কাছেই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে না। স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় আসন্ন দশম সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এটি বর্তমান সরকারের একদলীয় নির্বাচনের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থার উদাহরণ। তবুও সরকারের মধ্যে বোধোদয়ের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সরকার এখন বিরোধী দলের আন্দোলনকে ব্যর্থ করার জন্য নানামুখী কৌশল গ্রহণ করছে। একদিকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যৌথবাহিনীর মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন অবদমন ও নিপীড়নের চিত্র, অপরদিকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ও পেট্রলবোমা অভিযানের সব দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানোর প্রবণতা। যৌথবাহিনীর অভিযান এখন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথবাহিনী শুধু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, অভিযানের সময় ঘরবাড়ি ধ্বংসসহ গুলীর ঘটনাও ঘটছে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা তৎপর হয়ে বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। ফলে সাতক্ষীরায় এখন হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। আর নাশকতার পরিকল্পনায় সরকারি দলের লোকজন যে জড়িত রয়েছে তার সচিত্র প্রতিবেদন মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকায়। সাতক্ষীরার দেবহাটায় এক সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন দেয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গাফফার। আবার গত ২৪ ডিসেম্বর নোয়াখালীর সেনবাগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের গ্রামের বাড়িতে হামলার সময় এলাকাবাসী ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অথচ সরকারের প্রোপাগান্ডা মেশিন ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এসব ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবির ও বিরোধী দলের আন্দোলনকে দায়ী করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন তৎপরতার মাধ্যমে সরকার বিরোধী দলের ব্যাপারে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস পেলেও অবশেষে জনগণের কাছে প্রকৃত সত্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সরকার গণবিরোধী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মানুষের কাছে যে অপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা কোনো কৌশলেই আর ঢেকে  রাখতে পারছে না। এখন বিরোধী দলের ইমেজ নষ্ট করার লক্ষ্যে সরকার আর কি কি কৌশল অবলম্বন করে সেটাই দেখার বিষয়।
সরকার হয়তো একদলীয় ও একতরফা একটি গণবিরোধী নির্বাচন সম্পন্ন করে ফেলতে চাইবে। কিন্তু এমন একটি নির্বাচনই কি সরকার ও দেশের জন্য শেষ কথা? সরকারের এমন নির্বাচনতো দেশে-বিদেশে কারো কাছেই গ্রহণীয় হবে না। নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই সরকার মুখ দেখাবে কেমন করে? এমন দুর্বল ও গণসমর্থন বঞ্চিত সরকার তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না। বরং আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকারই হবে তার নিয়তি। আর প্রহসনের মাধ্যমে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করায় জনগণের মনে ক্ষোভের মাত্রা বাড়তেই থাকবে। ফলে রাজপথের আন্দোলন হবে আরও বেগবান। এসব চ্যালেঞ্জ তখন সরকার মোকাবিলা করবে কিসের ভিত্তিতে? তাই পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, সরকারের মধ্যে যদি কিছুটা দূরদর্শিতা বর্তমান থাকে, তাহলে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন না করে সবাইকে নিয়ে গণআকাক্সক্ষার অনুকূলে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই তাদের জন্য হবে কল্যাণকর। বিষয়টি উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads