রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টি


দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৮৭ জন প্রার্থীর  মধ্যে ৪৮ জনের সম্পদ বেড়েছে ৩৬৩ ভাগ। মন্ত্রীদের গড়ে সম্পদ বেড়েছে ২৪৭ ভাগ। প্রতিমন্ত্রীদের বেড়েছে ৪৫৯ ভাগ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে  দুর্নীতির সকল কালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পৌনে ৫ বছরে বাংলাদেশ দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশের ৪২ বছরের ইতিহাসে এত ক্ষতি হয়নি। হলমার্ক গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনি, পদ্মাসেতু, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারীর মাধ্যমে এ দুর্নীতি করা হয়েছে। আর এ দুর্নীতির সাথে সরাসরি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ  জড়িত। আওয়ামী লীগ বিল বোর্ড বাবদ ব্যয় করেছে ৬০ কোটি টাকা। জনগণ এ টাকার উৎস  জানতে চায়। বিগত পৌনে ৫ বছরে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে লুট করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দুর্নীতিকে জাতীয়করণ করে ফেলেছে। এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির সয়লাব করে দেয়নি। একেবারে এটা শুরু হয়ে ছিল টেন্ডারবাজি দিয়ে। ডেসটিনির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মহানায়করা লুটে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে আওয়ামী লীগের দরবেশরা লুটে নিয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। 
দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত রেলের কালো বিড়ার ধরতে গিয়ে নিজেই কালো বিড়াল সেজে বসেছেন। সম্প্রতি জানা গেছে, রেলওয়েতে তেল চুরি হচ্ছে। সারা দেশের ১১টি শেড থেকে ৮ লাখ টাকার তৈল প্রতিদিন চুরি হচ্ছে। আর তৈল বিক্রির ভাগ রেলওয়ের নি¤œশ্রেণীর অসাধু কর্মচারী থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাতে চলে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারি কোষাগার শূন্য করে ফেলেছে। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলেছে, যে কোনও রাষ্ট্রের নাগরিকদের খাদ্যনিরাপত্তা হিসেবে ৬০ দিনের খাদ্য মজুদ থাকা প্রয়োজন। সে হিসেবে খাদ্য মজুদ প্রয়োজন ২৭ লাখ ৬০ হাজার টন খাদ্য। অথচ খাদ্য গুদামে মজুদ আছে মাত্র ২২ দিনের খাদ্য। দেশের মোট জনসংখ্যার একদিনের খাদ্য চাহিদা ৪৬ হাজার টন। এক মাসে প্রয়োজন ১৩ লাখ ৮০ হাজার টন। খাদ্য অধিদফতরের সর্বশেষ খাদ্য মজুদ আছে মাত্র ১০ লাখ ৯১ হাজার ৮৪ টন। বর্তমানে দেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছে। বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ পণ্য সুবিধা পেলেও তৈরি পোশাকে এই সুবিধা নেই। তৈরি পোশাক হল যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রফতানি পণ্য। তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রফতানি আয়ের মাত্র শূন্য দশমিক ৫৪ ভাগ জিএসপি সুবিধা পেয়ে থাকে। যার পরিমাণ ২০১২ সালে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর মোট রফতানি আয় ছিল ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিএসপি সুবিধা স্থগিত হওয়ায় ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এদেশের পণ্য  প্রবেশ করাতে হবে। শ্রমমান ও কর্মনিরাপত্তার ব্যাপারে অভিযোগ এনে গত ২৭ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা  দেন। এ ঘোষণায় বারাক ওবামা বলেছেন, বাংলাদেশ তার শ্রমিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রেও বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যানের বিবৃতিতেও বলা হয়েছে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিদগ্ধ  হয়ে শতাধিক শ্রমিকের এবং রানা প্লাজা ধসে ১২ শতাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। সরকার অদ্যাবধি এ টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। অর্থমন্ত্রী আবুল  মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, চার হাজার কোটি টাকা তেমন কোন ব্যাপার নয়। কারণ তার কাছে এর চেয়ে বড় দুর্নীতির তথ্য আছে। অথচ তারেক রহমানকে নিয়ে রূপকথার গল্প তৈরি করেছে। ঘুষ খাওয়ার গল্প রচনা করে পৌনে ৫ বছরে তোলপাড় করেছে এবং করছে। এসব প্রচারণায় তারেক রহমানকে মহিমান্বিতই করেছে এবং তাকে রাজনীতিতে আরো শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। এই সাড়ে ছয় বছরে শেখ হাসিনার ডেকে আনা মঈন ফকরের সামরিক সরকার এবং শেখ হাসিনার আঁতাতের সরকার কেউই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনীত একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারেননি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের মামলায় একাধিক সাক্ষী খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য একজন লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের লজ্জা থাকলে তারেক রহমানের নাম মুখে আনত না। বরং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলো যখন প্রত্যাহার করা হলো তখনই প্রত্যাহার করা উচিত ছিলো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। আর পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতিতে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনার সরকার। বিশ্ব ব্যাংক, জাইকা, এডিপি এই প্রকল্পে প্রায় ২০০ কোটি টাকা অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।  
 বিশ্বব্যাংকের মূল আপত্তি ছিল একটি মানুষকে নিয়ে। সংস্থাটি বলেছে, পর্যাপ্ত তথ্য থাকার পরও সাবেক যোগাযাগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুর হোসেনকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেনি। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বাদ পড়েছেন একজন সৈয়দ আবুল হোসেন। বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্রানেল এ অবস্থায় বলেছে, পদ্মাসেতু নিয়ে দুদকের তদন্ত সম্পূর্র্ণ ও সঠিক হয়নি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সাথে জড়িত সকলের নাম বিশ্ববাসী জেনে গেছে। তারপর একটি নাম আছে কানাডিয়ান সরকার প্রকাশ করেনি। কারণ সেই নামটি এক সময় প্রকাশ হবে। কানাডার আদালতে এনএনসি লাভালিয়ান কেলেঙ্কারীর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত যখন শুরু হবে তখন আর সে নাম গোপন থাকবে না। এদিকে  ব্যাংক খাতের বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এর মূল কারণ, ব্যাংকের দুর্নীতি ও ব্যবসায়িক মন্দা এবং ঋণ জালিয়াতি। সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সরকারের শেষ সময়ে এসে বিএডিসির  শতকোটি টাকা প্রকল্পে লুটপাটের আয়োজন চূড়ান্ত করে এনেছে একটি মহল। ক্রয়নীতি এড়িয়ে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র পদ্ধতি বাদ দিয়ে কর্তাদের পছন্দের লোকদের মাধ্যমে ইউপিভিসি পাইপ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএডিসির সেচ বিভাগ।  প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করে তা আবার বাতিল করা হয়েছে। বিএডিসি প্রতিবছর কয়েকশ কোটি টাকার ইউপিভিসি পাইপ ক্রয় করে থাকে। চলতি বছর সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ১২০ কোটি টাকার পাইপ ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। একনেকে অনুমোদিত এই প্রজেক্টগুলোতে আগে পাইপ কেনা হত উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে। কিন্তু বিএডিসি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করার পরিবর্তে সরাসরি ক্রয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিএডিসির কর্মকর্তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে। আর একাজে সরকারি দলের লোকজন জড়িয়ে আছে বলে জানা গেছে। সরকারি খাতসহ রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্নীতি সংঘটনের চেষ্টা চালানো হয়। এ কারণে আওয়ামী লীগ দুর্নীতিগ্রস্ত সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সরকার বিল বোর্ডে যে আর্থিক বিবরণ দেখিয়েছে তার সাথে বাস্তবের অর্থনৈতিক  পরিসংখ্যানের সাথে মেলে না। বিদায়ী অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণ মূল বাজেটে নেয়া লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ ব্যংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের শেষ মাসে সরকর ঋণ নিয়েছে বেশি। প্রথম ১১ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিকট ঋণ ছিল ১২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে সেই ঋণের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। এসব কারণে ব্যাংকগুলো মূলধন সংকটে পড়েছে বিধায় লভ্যাংশে আঘাত হেনেছে। এই ঋণ নিয়ে সরকার কি উন্নয়ন করেছে তার ফিরিস্তি পাওয়া যায়নি। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার ও সরকারি দলে লোকজনের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য মন্ত্রীরা প্রায় দেশভ্রমণ করেন জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। এটা আনন্দ ভ্রমণ ছাড়া আর কিছুই না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি নিজের বোনঝির বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ৪২ জন সরকারি লোক ও আত্মীয়-স্বজন সরকারি খরচে লন্ডনে গিয়ে বিলাসবহুল হোটেলে থেকে দেশে জনগণের পকেটের কোটি কোটি খরচ করে এসেছেন। এ টাকা তারা দুর্নীতি মনে করেন না। বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে যে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে, সেই লুটপাটের ঐতিহ্য, এ ধরনের সফরের মাধ্যমে ও রক্ষিত হচ্ছে। আর মিডিয়াগুলো যতই নিয়ন্ত্রিত হোক তার ফাঁক ফোকর দিয়ে তথ্য প্রকাশিত হতে থাকল। কেনো প্রকাশিত হলো সে রকম একটা প্রতিহিংসার বসেই এখন আমার দেশ বন্ধ এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কারারুদ্ধ হয়েছেন। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি বিদেশ সফর করে বিশ্বে রের্কড সৃষ্টি করেছেন। সরকার প্রায় ১৫শ’ দিন ক্ষমতায় তার মধ্যে ৫শ’ দিন দীপু মনি বিদেশে কাটিয়েছেন। এ সময় তিনি জনগণের কোটি কোটি টাকা অপচয়  করেছেন। একাধিকবার ভারত সফর করেছেন এ সময় তিনি দেশের জন্য ঘোড়ার ডিম ছাড়া আর কিছুই আনতে পারেননি। মেয়াদের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পেট আর পকেট পুর্তির উন্মাদনায় আওয়ামী লীগ এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খান্বা বাণিজ্য এসছে সর্বশেষ উপলক্ষ হিসেবে। বিদ্যুৎখাতে বড় ধরনের কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলেও এর মধ্যে ১২ লাখ খাম্বা কেনা হয়েছে। আবার নতুন করে সরকার ৬০ হাজার  ৬২৫টি খান্বা কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৮ লাখ পল্লী গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য এ খান্বাগুলো দরকার। লাখ লাখ কিলোমিটার তার কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। খাম্বা ছাড়া সরাসরি কমিশন এবং মুনাফা পাওয়া যায় এমন অনেক কিছু খাতেও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই। যেমন ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে জ্বালানি তৈল ক্রয় করার জন্য ১২ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর দু সপ্তাহের মধ্যে আরও প্রস্তাব উঠেছে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য।  অথচ এসব প্রকল্পের কোন অস্তিত্ব নেই। সবই রয়েছে কেবল কাগজপত্রে। এ জন্য এ প্রকল্পগুলো সরকারের স্বপ্ন বিলাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের আড়াল নিয়ে এসবের সাথে জড়িয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের রুই কাতলারা। মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের নামতো বটেই, উচ্চারিত হচ্ছে বিদেশে বসবাসকারীদের বিশিষ্টজনদের  নামও বটেই। হরিলুট চলছে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। যেমন বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বা এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ক’দিন আগে প্রকাশত রিপোটে দেখা গেছে, অর্থবছরের শেষ প্রান্তে এসে রাতারাতি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার এবং বিপুল অর্থ ব্যয় দেখানোর  ধুম পড়ে গেছে। হরিলুটের নতুন রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে এবার।
২০১২-১৩ অর্থ বছরের সংশোধিত এডিপির ২৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে জুন মাসে। মোট বরাদ্দের ৯৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ নাকি ব্যয় হয়ে গেছে। অথচ এত অল্প সময়ে এত বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। দেখা গেছে, পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ১৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ।  আবার ১১টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে, এমনকি ১৭ থেকে ২৪ শতাংশ বেশি। সরকার ও তাদের অতিরিক্ত অর্থ দিয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে প্রতিদিন গড়ে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তথ্যাভিজ্ঞরা জানিয়েছেন, নির্বাচন এগিয়ে  আসায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। টাকার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ খয়রাতি চাল, গম প্রভৃতি লোপাট হয়ে গেছে। সরকার তাদের আগাম চেক দিয়েছে। কিছু কিছু কাজ করা হলেও মান নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে লোপাট হয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এ যেন আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মত ব্যাপার স্যাপার। সবই ঘটেছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে। সামনে জাতীয়  নির্বাচন। দলের কর্মী ও ক্যাডাররা অস্ত্রে শান দিয়ে বসে আছ্।ে তাদের হাতে রাখতে হবে।  এ জন্য কাগজ-পত্রে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ৯৫ থেকে ৯৯ শতাংশ সম্পন্ন দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই লুটের  অর্থ শুধু আওয়ামী ঠিকাদার ও ক্যাডারদের পকেটে যাচ্ছে না, ভাগ মন্ত্রী  এমপি থেকে সরকারি কর্মকর্তারাও পাচ্ছে। না হলে শেষ মুহূর্তে খাম্বা কেনা দৌড় কেন? এদিকে নির্বাচন কমিশন যেভাবে মাঠ সাজাচ্ছে তা পুরোপুরি ক্ষমতাসীনদের পক্ষে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মূলত রকিব কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর রয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিরোধীদল যাতে নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকেই নানাবিধ প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। যাতে বিরোধী দল ছাড়া র্নিবাচন করে এককভাবে ক্ষমতায় আসা যায়। যদি কোন কারণে  নির্বাচন না হয় তাহলে তো বিদায়ী সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকার সাংবিধানিক অধিকার রাখা রয়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোহাম্মদ নাসিম সে কথা প্রকাশ্যভাবে বলেছেন। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেছেন, গাধার মতো বিএনপি সবার আগে নির্বাচনে আসবে। আসলে এ ধরনের অশালীন মন্তব্য করে মুলতঃ বিরোধী দলকে নির্বাচনে  অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করছে। কারণ তত্ত্বাববধায়ক সরকার আসলে তারা তাদের দুর্নীতির কারণে ফেঁসে যেতে পারে। ছাত্র লীগ তো সারা দেশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সারা দেশে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের তা-বে সাধারণ ছাত্ররা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছে। আবার কোথাও বা সিলেটের এমসি কলেজের মতো আগুন দিয়ে ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়ার মত রেশ কাটতে না কাটতেই ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। আর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ফাও মদ খেতে না দেয়ায়  রাস্তায় অবরোধ, পরীক্ষার হলে পিস্তল দেখিয়ে শিক্ষককে ভয় প্রদর্শন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রভৃতি ঘটনা প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে। আবার মাঝে আইওয়াশ  হিসেবে কিছু কিছু ছাত্র বহিষ্কার করা হয়। এর শতভাগ কারণ হল, শিক্ষক লাঞ্ছনা, ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ, ক্যাম্পাসে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাথে মারামারির ঘটনা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি। এ সরকার মানুষ হত্যা করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনার সরকারের সাড়ে চার বছরে ২২ হাজার ৭৬৯ জন মানুষ খুন হয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ২৮২জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫১ জন, মার্চ মাসে ৩১৭ জন, এপ্রিলে ৩০২ জন, মে মাসে ২৭৬ জন, জুন মাসে ২৭২ জন, জুলাই মাসে ৩১২ জন, আগস্ট মাসে ৩২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এ সব হত্যাকা- অধিকাংশ বিচার বহির্ভূত। ফলে দেশী বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads