বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

বেগম জিয়ার সংবাদ সম্মেলন


সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ১৮ দলীয় জোট এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত মঙ্গলবার গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্র হত্যাকারী আখ্যা দিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আরও বিস্তৃত করার জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর রোববার ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন প্রতিহতের চলমান আন্দোলনের জন্য সুনির্দিষ্ট চার দফা করণীয় এবং নীতি-কৌশল ঘোষণার পাশাপাশি তিনি সমঝোতারও আহ্বান জানান। তার মতে, সমঝোতা করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না। পুরো এক ঘণ্টার বক্তব্যে তার কণ্ঠে ছিল গণতান্ত্রিক ন¤্রতা।
আমরা বেগম জিয়ার গণতান্ত্রিক নিষ্ঠা ও সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত তার বক্তব্যের জন্য তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি এবং জাতিকে দিকদর্শন প্রদানের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি তার বক্তব্যে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘ প্রতিনিধি সূচিত আওয়ামী লীগ-বিএনপির তিন দফার ব্যর্থ ও অকার্যকর সংলাপ, সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকাসহ বিভিন্ন ঘটনার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করেন। তিনি নির্বাচনী তফসিল বাতিল করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের বিকল্প কোনও পথ খোলা থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বেগম খালেদা জিয়া চলমান আন্দোলনের জন্য দেশবাসীর উদ্দেশে ৪ দফা করণীয় ও নীতি-কৌশল ঘোষণা করেছেন। এর প্রথম দফায় বলা হয়েছে, ভোটাধিকার হরণকারী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রাণক্ষয়ী লড়াইয়ে যারা শরিক আছেন এবং হচ্ছেন তাদের মধ্যে সমন্বয় সমঝোতা ও ঐক্য গড়ে তোলা অপরিহার্য। দ্বিতীয় দফায় তিনি বিভক্তি ও বিভাজনের বিষাক্ত রাজনীতির অবসান ঘটানোর জন্য জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে মূল্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জাতীয় ক্ষেত্রে বিতর্কিত বিষয়সমূহ অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনা এবং গণভোটের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় মীমাংসার রাজনৈতিক সংকল্পনাকে জোরদার করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তৃতীয় দফায় তিনি ভোট কেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটিগুলোর পাশাপাশি দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলনরত সকল পক্ষকে নিয়ে অবিলম্বে জেলা-উপজেলা ও শহরে সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা সংগ্রাম কমিটি গঠন করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী তামাশা প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিটি জেলার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখুন এবং জনগণের জানমাল এবং জীবিকার নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে স্ব স্ব নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন। চতুর্থ দফায় বেগম জিয়া গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বী, সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের যুক্ত করার পাশাপাশি তাদের জানমালের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের সরকারি ষড়যন্ত্র সরকারদলীয় লোকদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।
বেগম জিয়ার বক্তব্যটি ছিল সর্বাঙ্গীন, সাবলীল এবং এর মধ্যে সরকারের গণতন্ত্র হত্যা, বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন, হামলা-মামলা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের বিস্তারিত বিবরণী প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে তিনি জাতির সামনে দেশের প্রকৃত অবস্থাই তুলে ধরেছেন এবং স্বাধীনতার সুরক্ষা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জাতির কর্তব্য সম্পর্কে তাদের সঠিক দিকনির্দেশনাই দিয়েছেন। তিনি সরকারকেও পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন ও জেদ পরিহার করে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তার সামগ্রিক আচরণ ও কর্মসূচি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসমৃদ্ধ। তিনি সরকারকে তিন দিন সময় দিয়ে ২৯ তারিখে ঢাকামুখী গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা আশা করি, সরকার এরই মধ্যে সিডিউল বাতিল করে সমঝোতার পথে ফিরে আসবেন এবং গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পথে কোনও বাধার সৃষ্টি করবেন না। অন্যথায় পূর্ববর্তী সঙ্কটগুলোর ন্যায় পরবর্তী সঙ্কটের জন্য তারা দায়ী হবেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads