মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধি আসবে কি?

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 
আওয়ামী লীগ হয়তো উপলব্ধি করছে না যে, তার ক্ষমতার ক্ষেত্র প্রতিদিনই আরও বেশি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। পুলিশের গুলীতে পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের গুলীতে প্রাণ যাচ্ছে ডজন ডজন মানুষের। আর শেখ হাসিনা প্রতিদিনই রেকর্ডে একই গান বাজাচ্ছেন যে, এসব হত্যাকা-ের জন্য ১৮ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দায়ী। রক্তের পিপাসায় খালেদা জিয়া উন্মত্ত হয়ে পড়েছেন। আর কতো রক্ত চান তিনি! দেশের সংবাদপত্রগুলো এই অবরোধের পেছনের কারণ কোনোভাবেই উল্লেখ করছে না। শুধু জামায়াত-শিবির জামায়াত-শিবির বলে এক ধরনের হল্লা করছে। যে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিলো, কোনো কোনো ২৪ পৃষ্ঠার পত্রিকার পাতা ঘেঁটে ঐ শব্দটির দেখা মেলে না। একদলীয় নির্বাচনের সমালোচনা অবশ্য কেউ কেউ করছেন। কিন্তু তা এমনই মুরগি ছানার মতো মিনমিন গলায় যে, কেউ শুনতে পাচ্ছে না। ১৯৭১ সালে যারা পাক বাহিনীকে সহায়তাকারীদের রাজাকার রাজাকার বলে চিল্লাচ্ছে, এখন যারা গ্রামাঞ্চলে ধ্বংস করার জন্য বিরোধী দলীয় নেতাদের ঘর, বাড়ি যৌথবাহিনীকে দেখিয়ে দিচ্ছে তারা কি তবে রাজাকার নয়? ৪২ বছর পরে যদি কাউকে রাজাকার সাজিয়ে বিচার করা যায়, প্রাণদ- দেয়া যায়, তাহলে দুই এক বছর পরে এইসব নব্য রাজাকারদের প্রাণদ-ে দ-িত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
আমরা বারবার বলেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলন এখন শুধুমাত্র বিএনপি বা জামায়াতের আন্দোলন আর নেই। এটি হয়ে গেছে এদেশের ১৬ কোটি মানুষের দাবি। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে অস্ত্রের জোরে শেখ হাসিনা এদেশের ১৬ কোটি মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছেন। আর এখন সেই ১৬ কোটি মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে জান বাজি রেখে রুখে দাঁড়িয়েছে। প্রথম দিকে যখন এই আন্দোলনে চার/পাঁচ জন করে লোক শাহাদাৎ বরণ করতে থাকলেন, তখন ধারণা করা হয়েছিলো যে, ভয়ে অন্দোলন ছেড়ে ঘরে ঢুকে যাবে মানুষ। কিন্তু না। দেখা গেলো হাজারে হাজারে, লাখে লাখে মানুষÑনারী, পুরুষ, তরুণ, যুবক যারা ঘরে ছিলেন, তারাও যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন। এখন ঢাকার বাইরে শেখ হাসিনা সরকারের কোনো অস্তিত্বই নেই।
এক ভারতের জোরে শেখ হাসিনা ১৬ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছেন। তার পরে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়েরা ময়দানে নেমেছে। এতেও শেখ হাসিনার হুঁশ হবে কিনা সন্দেহ। ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র  যে সাভারের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যাননি তার অর্থ দাঁড়ায়, তাদের সহ্যের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গেছে। এরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মালের সঙ্গে দেখা করে স্পষ্ট ভাষায় জানতে চেয়েছেন যে, ৫ জানুয়ারি যে একদলীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কি? জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ টি আসনই আওয়ামী প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। কোনো ভোটারকেই ভোট দিতে হয়নি। ভোট কেন্দ্রে যেতেও হয়নি। কবুরে শান্তিতে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে।
ড্যান মজিনা যা জানতে চেয়েছেন সরকার তা জানাবে কিনা সে প্রশ্ন এখন অবান্তর। সরকার জানাক বা না জানাক আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়েরা তাদের খেলার ধারা অব্যাহত রাখবেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে যে, ওবামা প্রশাসন এখন ব্যস্ত আছে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের করণীয়র ব্যাপারেও। যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করতে পারে। ব্যাপারটি তাদের কাছে এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে যে, ভারত বাংলাদেশে একটি একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় মদদ দিয়ে যাচ্ছে। এবং বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র যে এটি চায় না, তা বোঝানোর জন্য ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে দিল্লীতে পাঠিয়েছিলেন বারাক ওবামা। তাতে যে কোনো ফায়দা হয়নি সেটি খুব স্পষ্ট। আর সে কারণেই ড্যান মজিনা দিল্লী থেকে গিয়েছেন চীন। তিনি চীন সরকারকেও বিষয়টি অবহিত করেছেন। তারপর ওয়াশিংটনে ফিরে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরকে গোটা বিষয়টি অবহিত করেছেন। আর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ড্যান মজিনাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে টেলিফোনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আর যে চীন কখনোই কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলে না, সে চীনের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত মুখ খুলে বললেন, ‘আমরা “স্বাধীন” বাংলাদেশ দেখতে চাই।’ শেখ হাসিনা বা মনমোহন সিং কেউই সম্ভবত এ কথার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেননি।
দিল্লী তো কিছুটা ধরাকে সরা জ্ঞান করেছেই। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানীকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দিল্লীর ভাষায় ‘অসম্মানজনকভাবে’ তল্লাশি করেছে। তাছাড়া তার গৃহকর্মীকে ভুয়া দলিলপত্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেছেন দেবযানী। এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মের চেয়ে কম বেতন দিয়েছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন মামলা দায়ের করেছে। সে মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার শেখ হাসিনার মতোই একবারে খড়গহস্ত হয়ে নয়াদিল্লীস্থ মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা বেষ্টনী একবারে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কমিয়ে দিয়েছে তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সংখ্যাও। সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বিমান বন্দরে অবাধ যাতায়াতের পাস জমা দিতে বলেছে। জমা দিতে বলেছে পাসপোর্টসহ অন্যান্য দলিলপত্র। একই সঙ্গে তাদের যাবতীয় কূটনৈতিক দলিলপত্র, গৃহকর্মীদের বেতন ভাতাদির ডকুমেন্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। এতে অবশ্যই সীমাহীন অপমানের মধ্যে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রকে কতোটা অপমান করা যায়, সে কা-জ্ঞানও ভারতের মতো দেশ হারিয়ে ফেলেছে। ভারতীয় পার্লামেন্টে যুক্তরাষ্ট্রকে দেবযানী ইস্যুতে ক্ষমা চাওয়ার দাবি পাস করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র চুপচাপই ছিলো। কয়েকদিন পর তারা কঠোর ভাষায় জানিয়ে দিলো, ক্ষমা চাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। দেবযানীর মামলাও চলবে। এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে দেবযানীকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদ- ভোগ করতে হবে।
ভারত হয়তো ভেবেছিলো, বাংলাদেশে নিয়ে যা করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে বোধকরি তা করা যায়। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তারা উপলব্ধি করলো, কতো বড় বিপদের দিকে তারা পা বাড়িয়েছে। ফলে তাদের সুর ক্রমেই নরম হতে শুরু করলো। এখন যেনো যুক্তরাষ্ট্রের শুধু পায়ে ধরা বাকি। চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভারতকে দরকার। সে মোকাবিলা পরিকল্পনা অনেক দূরবর্তী। কিন্তু চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব ভারতের শতগুণ বেশি দরকার। তা না হলে হিমাচল প্রদেশ আর উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
শেখ হাসিনার সাজানো নির্বাচনী ছকের ভেতরও বোধহয় ত্রুটি কিছু রয়েই গিয়েছিলো। তিনি ভেবেছিলেন, ১৯৮৬ সালে তিনি জেনারেল এরশাদকে যেভাবে সমর্থন করে তার সরকারকে দীর্ঘায়ূ করে দিয়েছিলেন। একইভাবে জেনারেল এরশাদও তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য কিংবা তার একদলীয় শাসনকে স্থায়ী মর্যাদা দেবার জন্য কাজ করে যাবেন। সেভাবেই সবকিছু চলছিলো। এরশাদ একবার বলছিলেন, তিনি নির্বাচনে যাবেন না। আবার বলছিলেন, নির্বাচনে না গেলে জাতির ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে যাবে। তারপর আবার যে কি হলো। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কয়েকদিন আগে তিনি হুট করে বলে বসলেন যে, সকল দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তিনি নির্বাচনে যাবেন না। এবং তার দলের সকল প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিলেন। এবং তিনি নিজেও যে সব আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সেসব আসন থেকে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেন। তার দলের যে ছয়জন ‘নির্বাচনকালীন সর্বদলীয়’ সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি তাদের পদত্যাগ করতে বললেন। তিনি আরও বললেন, একদলীয় নির্বাচনে যদি তিনি যান তবে লোকে তার মুখে থুথু দেবে। এই বয়সে তিনি সেটি আর চান না। এই যাত্রা এরশাদকে কেমন যেনো একটু দৃঢ়ই মনে হলো। যদিও সবাই ধরে নিয়েছিলেন যে, এরশাদের কথার কোনো মূল্য নেই। তিনি সকালে এক কথা বলেন। বিকালে আর এক কথা বলেন। কিন্তু এরশাদ দৃঢ়কণ্ঠে জানান দিলেন যে, সব দল অংশ না নিলে নির্বাচনে যাব না, এটাই ফাইনাল, এটাই ফাইনাল কথা। এর মধ্যে আরও কা- ঘটলো। চিকিৎসার নামে র‌্যাব পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে এরশাদকে জবরদস্তিমূলকভাবে সিএমএইচ এ নিয়ে আটকে রেখেছে। এরশাদ সেখান থেকে স্পষ্টই বলেছেন, আমি অসুস্থ নই। আমাকে আটকে রাখা হয়েছে। এরশাদের মুখপাত্র ববি হাজ্জাজকে সরকার জোর করে বিমানে তুলে লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এর আগে এরশাদের এই দৃঢ় অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে ছুটে এলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। এবং সমস্ত প্রটোকল ভেঙে তাকে দেখা করতে দেয়া হলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে। আর জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে। সেখানে তিনি আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর প্রায় ৪৫ মিনিট শেখ হাসিনার সঙ্গে ও ৩০ মিনিট এরশাদের সঙ্গে একান্তে কথা বললেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বৈঠকটি ছিলো নিতান্তই নিয়ম রক্ষার। নাহলে কেমন দেখা যায়, তাই। এরশাদকে যখন সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলেন, সুজাতা সিং আপনাকে কি বলে   গেলেন? জবাবে এরশাদ এ যাত্রা একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন। তিনি বললেন, সুজাতা সিং তাকে বলেছেন, তিনি যদি নির্বাচনে অংশ না নেন, তাহলে বাংলাদেশে জামায়াতের উত্থান ঘটবে। এরশাদও সুজাতা সিংকে জানিয়ে দেন যে, উত্থান যদি ঘটেও তার জন্য তিনি দায়ী নন। দায়ী সরকার। আর জামায়াতের উত্থান ঘটলে তার কিইবা করার আছে। এ থেকে বোঝা গেলো যে, সুজাতা সিং একান্ত বৈঠকে শেখ হাসিনাকেও সম্ভবত একই কথা বলে গেছেন।
সুজাতা সিং এর এই মিশন ছিলো বাংলাদেশে বিরোধী দলবিহীন একদলীয় নির্বাচন করার সর্বশেষ ভারতীয় প্রচেষ্টার অংশ। ঢাকা মিশন শেষে সুজাতা সোজা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান বাংলাদেশ সংকট সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে অবহিত করতে। তাতেও তার নতুন কথা কিছু ছিলো না। তিনি শেখ হাসিনার বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাইছিলেন। এই ধরনের একটি কুপরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র আরও রাগান্বিত হয়ে পড়ে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের এই মনোভাবকে ‘গণবিরোধী’ বলে অভিহিত করেছেন। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের যে বিশ্বজনীন নীতি বাংলাদেশে প্রয়োগের ব্যাপারে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। তারা চায়, পৃথিবীর দেশসমূহে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ, সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি স্থিতিশীল নির্বাচন।
সর্বশেষ গত ১১ই ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। সুজাতা সিং জন কেরির সঙ্গে কথা বলেছিলেন ১০ ডিসেম্বর। জানা যায়, তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টির অনুরোধ করেন, যাতে বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। বিস্ময়করভাবে তারা দুইজনেই উপলব্ধি করেন যে, শেখ হাসিনা আগের চেয়েও অনেক বেশি অনমনীয়। কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা জন কেরিকে স্পষ্ট করে বলেন যে, ৫ জানুয়ারি যেকোন মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে একেবারেই স্তম্ভিত হয়ে যান জন কেরি। ওয়াশিংটনে কূটনৈতিকদের সূত্রে জানা গেছে, জন কেরি শেখ হাসিনাকে এই বলে টেলিফোনটি রেখে দেন যে, ‘গুড লাক টু ইউ’। তারপর অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত নজিরবিহীন কূটনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন যে, এই বিরোধের পেছনে বাংলাদেশ একটি প্রধান কারণ।
যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে মানবাধিকারের নিষ্ঠুর লঙ্ঘনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। কিন্তু তাতেও কোনো ফায়দা হয়নি। গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছে, ‘বাংলাদেশ একটি কারাগার।’ এখন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান-চীন আশঙ্কা করছে যে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তবে হাসিনা সরকারের জন্য একটি বিপদ থেকেই যাবে। তা হলো খুব শীগগীরই দিল্লী-ওয়াশিংটনেরড যে কূটনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে তা মিটবে বলে মনে হয় না। সেই বিরোধের ফলে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার একদলীয় সরকারের স্বপ্ন কতোটা বাস্তবায়িত হবে এবং কতোদিন স্থায়ী হবে, বলা মুশকিল। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads