বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

চলমান রাজনৈতিক সংকট


বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যাকাশে আজ এক মহা দুর্যোগের ঘনঘটা। ঈশান কোনে দেয়াটা আস্তে আস্তে গুড়ুম গুড়ুম করে ডাকছে। চারদিক থেকে ঘন কালো মেঘ এসে সেখানে জড়ো হচ্ছে। সমস্ত জনগণ এক মহা আতংকে দিন কাটাচ্ছে, এই বুঝি প্রলয়ঙ্করী ঝড় শুরু হলো! সবারই মনে ভয় না জানি কি হয়! আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে রাজনৈতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিটাই বেশী হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিটা হয় দেশের কতকটা অঞ্চল জুড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিটা হয়ে থাকে দেশজুড়ে। তাই আজ সারা দেশের মানুষ এক মহা দুর্যোগের ভয়ে আতংকিত হয়ে আছে।
লোকে বলে আমার কথা নাকি ফলে যায়। কিšুÍ কথাটা সত্য নয়। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম হাবা গোবা। এ জন্য অনেকেই আমাকে আদু বলে ডাকতো। আমার মা ডাকতেন অলগদ্ধা বলে। অলগদ্ধা মানে সবচেয়ে বড়ো বোন্ধা। আদু বা বোন্ধা যাই হোক, পরিচিত জনরা আমাকে দেখলেই জিজ্ঞেস করেন, “আদু ভাই, নির্বাচন কি হবে?” আমি কোনো কিছু না ভেবেই বলি ‘হবে।’ তখন তারা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট তো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তয় নির্বাচন হবে কেমন করে?” উত্তরে আমি বলি কেনো হতে পারবে না? ১৯৭১ সনে তুমুল যুদ্ধের মাঝেও একটি নির্র্বাচন হয়েছিলো। লোকেরা পাস করে এমপি হয়েছিলো, মন্ত্রী হয়েছিলো। ১৯৯৬ সনেও তেমনি একটি নির্বাচন হয়েছিলো। সেবারও লোকেরা পাস করে এমপি, মন্ত্রী হয়েছিলো। বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবারও তেমন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশটা মিটিয়ে নেন তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এটা তো আমাদের ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা। এর জন্য দরকার একটু বুদ্ধির। তখন অনেকেই বলে বসেন, “এটা করা সম্ভব হবে না। আঠারো দলীয় জোটকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন করা অসম্ভব। আঠারো দলীয় জোট তা প্রতিহত করবে। ভয়ে মানুষ ভোট দিতে যাবেই না।” উত্তরে আমি বলি, কচু করবে। প্রতিহত করার সুযোগই পাবে না। নির্বাচনে কোনো ভোটারের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ারই দরকার পড়বে না। তখন জিথনের রাজ্জাক মামা বলেন, “আরে বেটা, মানুষ ভোট দিতে না গেলে নির্বাচন হবে কি করে? সেটা কি আইনসিদ্ধ হবে? দেশের মানুষ বা বিশ্বাবাসী কি সেটা মেনে নেবে?” উত্তরে আমি বলি, হাঁ সেটা খাঁটি আইন অনুযায়ীই হবে। আর বিশ্ববাসী বা অন্য কেউ সেটা মানলো বা মানলো না তাতে কারো কিছু এসে যায় না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমার ধারণা বিশ্ববাসী মেনে নেওয়ার মতো করেই একটি নির্বাচন করা হবে। মসুয়া গ্রামের মানিক ভাই বললেন, “বিষয়টা বুঝলাম না। একটু খোলাসা করে বলুন না ভাই।”
মানিক ভাইয়ের সাথে আরো কয়েকজন এসে আমাকে ধরলো বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে। আমি তখন বললাম এর জন্য দরকার একটু বুদ্ধির। বুদ্ধি করে পটিয়ে পাটিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিকে, বিরোধী দল ও ব্যক্তিকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। যেমন জেনারেল এরশাদ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ছক্কু মিয়াসহ বেশ কিছু লোককে তার বিরোধী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিতেন। এর মধ্যে জেনারেল এরশাদ দলবল নিয়ে ছক্কু মিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করতে রাজিও হয়ে গেছেন। তার দলের কয়েকজনের মন্ত্রিত্বও উপহার হিসেবে পেয়েছেন। অনেকে বলছেন দুই একজন সুন্দরী বান্ধবী পেলেই তিনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তখন যেভাবে নাচতে বলা হবে তিনি তেমনি নাচবেন। একটি ইসলামী দলকে জন্ম দিয়েও সে ভূমিকায় অভিনয় করানোর ব্যবস্থাও প্রায় পাকাপাকি। প্রয়োজনে ১৪ দলের দুই একটি দলকেও বলা হবে জোট ছেড়ে আলাদাভাবে নির্বাচন করতে। এ ছাড়াও প্রতিটি সিটের জন্য আরো কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও দাঁড় করানো হবে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে। তখন সরকারি দল বলবে যে বিরোধী দলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিন, আগে থেকে নির্ধারিত লোকেরা ছাড়া, অন্য সব প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে। এভাবে ৩০০ সিটের সব ক’টিতেই সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিরা অতি সহজেই পাস করে আসবে। ইচ্ছে করলে বিশ ত্রিশটি সিটে যৌথ বাহিনীর প্রহরায় কিছু লোক দেখানো নির্বাচনের ব্যবস্থাও করা হতে পারে। সে নির্বাচনকে কেহই অবৈধ বলতে পারবে না। কারণ সেটা সংবিধান অনুযায়ীই হবে। যা দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার তেমনি একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে। যদি তাই করা হয় সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে? একজন নিরপেক্ষ লোক হিসেবে আমি বলবো, না।  আমি যখন এ লেখাটি লিখছি তখন সফররত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একজন সাংবাদিক এ প্রশ্নটা করেছিলেন। উত্তরে মার্কিন মন্ত্রী বলেছিলেন, “এটা নির্ভর করবে দেশের জনগণ সেটাকে কিভাবে নেবে তার ওপর।” তার উত্তরটা যেমন সুন্দর তেমনি সঠিক। কারণ দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। তারা সেটাকে মেনে নিলে কারো কিছু বলার নেই। কিšুÍ যদি মেনে না নেয়, তা হলেই সমূহ বিপদ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। সরকারকে অচল করে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের আছে।  যদি তাই করে তবে তাতে বহু মানুষের প্রাণ যাবে। বহু মায়ের কোল খালি হবে। বহু মেয়ে বিধবা হবে। বহু ছেলেমেয়ে এতিম হবে। বেগম খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনার গায়ে আঁচড়টিও লাগবে না। চলমান আন্দোলনে বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে। বহু মানুষের গা, চোখ, মুখ পুড়ে বীভৎস হয়ে গেছে। কিন্তু জয়, আরাফাত বা তারেকের গায়ে তো একটি আঁচড়ও লাগেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েও শেখ জামাল বা শেখ কামালের গায়ে কোনো আঁচড় লাগেনি। যুদ্ধই বলেন, বিপ্লবই বলেন বা আন্দোলনই বলেন, সকল ক্ষেত্রেই প্রাণ যায় সাধারণ মানুষের। সাধারণ মানুষের রক্তেরঞ্জিত হয় রাজপথ। বড়োরা সুখেই থাকে। বরং আমরা দেখি ঈদ এলেই দুই নেত্রীই ব্যস্ত হয়ে উঠেন কার আগে কে ঈদ শুভেচ্ছ পাঠাবেন। এখনো নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে ইচ্ছেটা পোষণ করলেই সব ঠিক হয়ে যায়।
যে সংঘাত চলছে সেটার কারণ আর কিছুই নয়। একজন চাচ্ছেন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অনেকদিন টিকে থাকতে। অন্য জন চাচ্ছেন ক্ষমতায় যেতে। পাটা শীলের এই লড়াইয়ে প্রাণ যাচ্ছে মরিচের। অনেক প্রাণ গিয়েছে। আরো অনেক যাবে। শীতে শিমূল, জিগার গাছের পাতা যেমন করে ঝরে পড়ে তেমনি ঝড়ে পড়ছে অগণিত তাজা প্রাণ। এর কি শেষ নেই? এ জন্যেই কি লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছিলো? এভাবে চলতে থাকলে একশোবার স্বাধীন হলেও এদেশের মানুষের কোনো মঙ্গল হবে না। দেশটা কি শুধু দুই নেত্রীর উত্তরাধিকার সম্পত্তি হয়ে গেছে? কে দেবে তার উত্তর? ১৬ কোটি মানুষের দেশে একটি উপযুক্ত পুরুষ নেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। এ লজ্জাটা ঢাকি কি করে? ২০১৩ সালে যতগুলো লোকের প্রাণ গেলো ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত তেইশ বছরেও ততগুলো মানুষ রাজপথে মারা যায়নি। কি বলবো! ১৯৭৩ সনের ১ জানুয়ারি প্রেস ক্লাবের কাছে আমেরিকান তথ্য অফিসের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরকার বেগম মতিয়া চৌধুরীর সামনে মেরে ফেলে ৮ তরুণ যুবককে। বেগম মতিয়া চৌধুরীও আহত হয়েছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে তিনি বঙ্গবন্ধুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে পালাচ্ছিলেন। তাদেরই উত্তরাধিকারীগণ যদি মানুষ মারে তাতে বলার কি আছে? আমি জোর গলায় বলতে চাই যে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা একজন অবৈধ এমপিকে মন্ত্রী বানিয়ে যেভাবে পাখীর মতো মানুষ মেরেছেন তা কেউ মেনে নিতে পারে না। এডভোকেট সাহারা খাতুনের চেহারাটা সুন্দর না হতে পারে, তার মনটা খারাপ ছিলো না। তাই তিনি মানুষ মেরে হাত রাঙ্গাননি।

ক্ষমতার জন্য মানুষের এতো লোভ কেনো? আমি তো একজন অত্যন্ত সাধারণ মানুষ। কিন্ত আমি নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে করি। বেগম জিয়া বা শেখ হাসিনা কেনো তা পারেন না? কেনো তারা ক্ষমতার লোভে মানুষ হত্যার খেলা থেকে বিরত হতে পারেন না? শেখ হাসিনা যেমন বাবা, মা, ভাই সব আপনজনকে হারিয়েছেন, বেগম জিয়াও তো হারিয়েছেন তার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে। একজন মেয়েলোকের কাছে তার স্বামী সমস্ত পৃথিবী থেকেও প্রিয়, সেরা। আপনারা উভয়েই এতো এতো রক্ত দেখেও কেনো থামছেন না? বেগম জিয়ার লোকেরা যেমন বোমা মেরে, পুড়িয়ে লোক মারছে, শেখ হাসিনার লোকেরাও গুলী করে, লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে এবং বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে লোক মারছে। Responsibility lies the head that wears the crown,” কথাটি যদি সত্য হয় তা’হলে বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা দু’জনের কেহই মানুষ হত্যার দায় এড়াতে পারেন না। তবে শেখ হাসিনার দায়টা বেশি যেহেতু তিনি ক্ষমতায় আছেন। একজন লোক যদি রাস্তার মাঝখানে বসে পায়খানা করে এবং অন্য একজন যদি তার পাছায় লাথি মারে সে ক্ষেত্রে দুজনকেই দায়ী করতে হবে, যে লাথি মারলো শুধু তাকে নয়। দেশটা কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়। দেশটা আমাদেরও। আমরা সাধারণ মানুষেরও। যেমন ছাত্রদল, যুবদলের কর্মীরা বোমাসহ ধরা পড়ছে, তেমনি উজ্জলের মতো ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরাও বোমাসহ ধরা পড়ছে। আপনারা কেনো বলেন না যে আর যাই করো মানুষের গায়ে বোমা মেরো না। বাসের ভেতর বোমা মেরো না। মানুষ মেরো না। যে লোকগুলো গুলী খেয়ে বা বোমার আগুনে পুড়ে মরেছে বা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে তারা তাদের বাবা মা’র কাছে কোনোক্রমেই তারেক বা জয়ের চাইতে কম প্রিয় নয়। আপনারা যেমন চাচ্ছেন বার বার প্রধানমন্ত্রী হবার, তারা চাচ্ছিলো শুধু কোনো রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে। মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে তার প্রাণটা। বেঁচে থাকার জন্যে মানুষের কি যে আকুতি তা আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। জিথন গ্রামের আব্দুল জব্বারের হাত পায়ের আঙ্গুলগুলো কুষ্ঠরোগে ভোগে পঁচে ঝরে গিয়েছিলো। পায়খানা প্র¯্রাব বিছানাতে শুয়েই করতেন। সারাক্ষণ জ্বর ও গায়ের ব্যথায় কান্নাকাটি করতেন। কিন্ত জব্বার সাহেব মরতে চাইতেন না। মরে যাবেন এই ভয়ে তার জন্যে খতমে ইউনুছ পড়াতে দিতেন না। আর আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে অথবা ক্ষমতায় যেতে কত মানুষের সেই প্রিয় প্রাণ কেড়ে নিচ্ছেন তার সংখ্যা বলা মুস্কিল। মনে রাখবেন, “ঊাবৎু ধপঃরড়হ যধং বয়ঁধষ ৎবধপঃরড়হ.”
এক পক্ষ বলছেন যে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রবর্তন ছাড়া কিছুতেই নির্বাচনে অংশ নেবেন না। অন্য পক্ষ বলছেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক মামদো ভূত আর নয়। বস্তুতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এমন একটি সরকার যা রাষ্ট্রের ভেতর আর একটি রাষ্ট্র। এর নজীর রাষ্ট্র বিজ্ঞানের কোথায়ও নেই। এটাকে বলা যেতে পারে An unnecessary devil” বা একটি অপ্রয়োজনীয় আপদ। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর যখন এ ব্যবস্থাটা গ্রহণ করা হচ্ছিল তখন আমি একটি লেখায় বলেছিলাম যে এ ব্যবস্থাটা শুধু একবারের জন্যেই করা হোক। এটাকে সংবিধানে ঢুকানোর প্রয়োজন নেই। এটা এক সময় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্ত আমার মতো নগণ্য আদুর পরামর্শটার প্রতি আমাদের হাতী নেতা, গন্ডার নেতা, সিংহ নেতা, বাঘ নেতা এমন কি শিয়াল খাটাস নেতারাও কান দিলেন না। এটা সোজা কথা যে যিনিই ক্ষমতায় থাকবেন তিনি হিসেব নিকেশ করেই তার প্রিয়ভাজন লোককেই প্রধান বিচারপতি বানাবেন যাতে সময়ে তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানাতে পারেন এবং তাকে দিয়ে ফায়দা লুটতে পারেন। তখন সকল দল বা নেতারা একমত ছিলেন। তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। এখন যদি আওয়ামী লীগ বিএনপির দাবী মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন করেন, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগও একই দাবী করবে তাতে সন্দেহমাত্র নেই। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটাকে হয় পাকাপোক্ত করতে হবে নতুবা পুনরায় দেশ সমস্যার কেচিকলে আটকা পড়বে। আমার বলতে দ্বিধা নেই যে আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটা উঠিয়ে দিয়ে একটি ভালো কাজই করেছিলেন। কিন্তু সেটা রহিত করতে যে পথটা অনুসরণ করেছেন সেটা ভুল পথ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন করা হয়েছিলো সকল দল ও মানুষের মতামতের ওপর ভিত্তি করে। কিন্ত সেটা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে মূলত এক দল বা একটি জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। হুট করে যে কোনো কিছু যেমন সংবিধানে ঢুকানো ঠিক নয়, তেমনি হুট করে শুধু মেজরিটির জোরে সংবিধান সংশোধন করাও ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞনী জনাব গেটেল বলেছেন, ÒNo tyrany is so great as that of majority rule.” একটি দেশের শাসনতন্ত্র সব কিছুর ঊর্র্ধ্বে। এটি দেশের সকল মানুষের অধিকারের রক্ষা কবচ। এটাকে যত্রতত্র বদল করা ঠিক নয়। এটা বাচ্চার হাতের পুতুল নয় যে মনে লইলো তা নিয়ে খেললো, মনে লইলো না ভেঙ্গে ফেললো। এটার আভিজাত্য ক্ষুন্ন করা মোটেই ঠিক নয়। কিন্ত আমাদের দেশের নেতারা শাসনতন্ত্রকে একটি সুন্দরী ফালতু মেয়ে বানিয়ে ফেলেছেন। যার যখন খুশি তাকে ধর্ষণ করছে। বড়ই মজার ব্যাপার হলো যারা প্রথম শাসনতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিলেন তারাই দুই বছরের মাথায় ১৯৭৪ সনে তার গায়ে হাত দেয়া হয়। তা করে সকল পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেয়। তারপর যখন যেই ক্ষমতায় এসেছে সে-ই তাকে ইচ্ছে মতো ধর্ষণ করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে ঢুকানোটা এবং বাদ দেয়াটা দুটোই ধর্ষণের শামিল। শাসনতন্ত্রের কোনো বিধান সংযোজন বা বিয়োজন করতে হলে তা নিয়ে সংসদে এবং সংসদের বাইরেও দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করা প্রয়োজন। অন্য দেশে তাই হয়। আমাদের দেশে তা হয় না। বলতে পারেন যে সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিক্রমেই এটা সংশোধন করা হয়েছে। মাফ করবেন, আমাদের দেশের সংসদ সদস্যরা অনেকটা ভেড়ার মতো। সামনের ভেড়াটি যেদিকে যায় অন্য সব ভেড়া তার পেছন পেছন যায়। তাদের নেতার বিরোধিতা করার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। নেতার বিরোধিতা করলে তার সদস্যপদ হারাতে হয়। ফলে একজন সংসদ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে বিবেকের বিরুদ্ধে হলেও নেতা বা নেত্রীর কথা মতো কাজ করতে হবে। ফলে এখানে একজন সংসদ সদস্যের স্বাধীনতা চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এ ছাড়াও সংসদের মিটিংয়ের সময় আমরা দেখতে পাই যে সম্মানিত সদস্যগণ বক্তব্য রাখতে উঠে দাঁড়িয়ে তাদের নিজ নিজ নেতা বা নেত্রীর ভজন সংগীত গাইতে গাইতেই তাদের জন্যে বরাদ্দকৃত সময় পার করে দেন। যখন মাননীয় স্পীকার বলেন, “মাননীয় সদস্য আপনার সময় শেষ,” তখন তিনি বলেন, “মাননীয় স্পীকার, আমি তো আমার এলাকার জন্যে কোনো কথাই বলতে পারি নাই। দয়া করে আমাকে আরো এক মিনিট সময় দেন।” অর্থাৎ তারা যে কথা বলার জন্যে সংসদে এসেছেন সে কথা বলতে সময় পাননা। সংসদের কার্যবিরণী চেক্ করে দেখুন। যদি আমার কথা সত্য না হয় তবে আমি জনসমক্ষে কান ধরে সাতবার উঠা বসা করবো। এ রকম তিন শত সদস্যের কাছ থেকে একজন মানুষের জ্ঞান আশা করা যায় না। আর তারাই সংবিধান সংশোধন করে থাকেন। যখন তখন করে থাকেন।
এখন এ সংকট থেকে বের হয়ে আসার উপায় কি? উপায় একটাই। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। কিন্ত কোনো পক্ষই তো আলোচনায় আসছে না। মাঝখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়ার ফোনালাপ হবে শুনে দেশবাসী বেশ আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্ত আলাপের পর দেখা গেলো অগ্রগতি দূরে থাক বরং সমস্যার অবনতি হয়েছে। তাদের কথাবার্তায় বুঝা গেলো কেহই সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে আসতে চান না। ওটা আলোচনা ছিলো না। ওটা ছিলো একটা ডিবেট বা তর্কযুদ্ধ। প্রথম তর্কযুদ্ধটা হয় টেলিফোন নিয়ে প্রায় দশ মিনিট। এর পর শেখ হাসিনা বললেন, “কেমন আছেন?” উত্তরে বেগম জিয়া বললেন, “ভালো আছি।” কিন্ত আমাদের দেশে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তিনি বললেন না, “আপনি কেমন আছেন?” শেখ হাসিনা বললেন, “আগামী আটাশ তারিখ (২৮-১০-১৩) সন্ধ্যায় গণভবনে আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি।” জবাবে বেগম জিয়া বললেন, “আমি যাদের প্রয়োজন মনে করবো তাদেরকে নিয়ে যাবো। তবে সেটা হতে হবে ২৯ তারিখের হরতাল শেষ হবার পর।” এর পর শুরু হয় দুই নেত্রীর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। কাকে কে হারাবেন সেই চেষ্টা। যেটাকে গ্রামের ভাষায় বলে থাকে ‘মাইয়ালোকের দন।’ শেখ হাসিনা একবারও বলেননি যে আসুন সব ভুলে গিয়ে আমরা আলোচনা করে একটা সমাধানে পৌঁছি। বরং খালেদা জিয়া অন্তত তিনবার বলেছেন, “অতীত ছেড়ে দিয়ে আমি বলতে চাই এখন সামনের দিকে কি করে আগাবেন সেটার পথ খুঁজে বের করি। .....সামনের দিকে এগোতে চাই।” তিনি এও বলেন, “১৯৯১ সালে আমরা দু’জন আন্দোলন করে গণতন্ত্র আনলাম।” মানুষ বলে যে ফোনালাপে বেগম জিয়া, যদিও তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডিগ্রিধারী শেখ হাসিনার থেকে এগিয়ে আছেন। শেখ হাসিনা যদি সত্যি সত্যি আলোচনা চাইতেন, তবে তিনি ২৯ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার পর আলোচনার জন্য রাজি হয়ে যেতেন। তাতে তার অন্তত কূটনীতিক জয় হতো। প্রিয় দেশবাসী, ২৯ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার পর বা ৩০ তারিখ মিটিং করতে রাজি হলে কি অসুবিধেটা হতো? ২৮ তারিখের রান্না করা খাবার নষ্ট হয়ে যেতো? অপরপক্ষে, বেগম জিয়াও তো ২৮ তারিখের পর শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে বলতে পারতেন, “একটা সময় দেন।” কারণ শেখ হাসিনা তো বলছেন, “আলোচনার দাওয়াত এখনো বহাল আছে।” অর্থাৎ দুজনের কেউই আলোচনার জন্য আগ্রহী নন। আবার আলোচনার টেবিলে বসলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তাও নয়। মূলত সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় পক্ষেরই আন্তরিকতা থাকতে হবে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার আলোচনার মাধ্যামে সমস্যা সমাধান করে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় না। কারণ এর মধ্যে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ১.৯ (আমার জরিপে) এ নেমে গেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে ভেবেই তারা কৌশলের পথ ধরেছে। ক্ষমতায় আসতে হলে ভালো কাজ করে মানুষের মন জয় করে আসতে হবে। কিন্তু তারা সেটা পারছেন না। তাদের কৃতিত্বের মাঝে আছে শুধু যুদ্ধাপরাধীর বিচার। এটা দিয়ে গণমানুষের মন জয় করা সম্ভব হয়নি। উদ্যোগটা ছিলো মহতি কিন্তু বিচারকার্যটা হয়েছে প্রশ্নসাপেক্ষ। তাছাড়া এতোদিনের পুরনো বিষয় নিয়ে মানুষের আকর্ষণ নেই। বরং এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীরা মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। সাঈদীর ফাঁসির রায় শুনে সারা দেশের মানুষ যেভাবে গর্জে উঠেছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খোদ আওয়ামী লীগের কোনো একটি লোকও তেমনি গর্জে উঠেনি, একমাত্র কাদের সিদ্দিকী ছাড়া। শেখ হাসিনাকে যেভাবে হত্যা করতে চেয়েছিলো এবং সেখানে যে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছিলো তারপর তার দলের দেশ অচল করে দেয়ার কথা ছিলো। কই, তারা কেউ তো রাজপথে আসেনি। ভালোবাসা জোর করে আদায় করা যায় না। যখন মানুষ কাউকে ভালবাসে জোর করে তাদের কেউ ফেরাতেও পারে না। সাঈদীকে মানুষ ভালবাসা দেখিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গণহত্যার নায়কদের কেউ কোনো ভালোবাসাই দেখায়নি। তাই যুদ্ধাপরাধের বিচারের গান সাধারণ মানুষের কাছে তেমন বোধগম্য নয়। যেমন কবি নির্মলেন্দু গুণ একবার এমপি ইলেকশনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি আমার হাতে একটি পোস্টার দিয়ে বলেছিলেন, “আমার জন্য কাজ করো।” আমি বলেছিলাম, আপনাকে মানুষ চেনে না। মানুষের কাছে আপনার কথা কী বলবো? তিনি বলেছিলেন, “বলবা, মুজিব হত্যার প্রতিবাদকারী।” আমি বলেছিলাম, এ কথাটি দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সাধারণ মানুষ তার মানে বুঝে না। সেবার নির্মলেন্দু গুণ মাত্র চার ভোট পেয়েছিলেন। তেমনি যুদ্ধাপরাধীর বিচার কথাটি সাধারণ মানুষ তেমন বুঝে না। আওয়ামী লীগও এ কথা বুঝে। তাই জনমতের ভয়ে নির্বাচনকে কৌশলে ভিন্নরূপ দেয়ার চেষ্টা করলে সেটা হবে আরো ভয়ঙ্কর। আমার বলতে দ্বিধা নেই যে, ১৯৯১ সনের নির্বাচনে পাস করে বেগম জিয়া খুব ভালো কাজ করেছিলেন। কিন্ত পরেরবার ছেলের হাতে নাটাইটা ছেড়ে দিয়ে তিনি ডুবেছিলেন। ১৯৯৬ এর নির্বাচনে শেখ হাসিনাও অত্যন্ত ভালো কাজ করেছিলেন। জনাব নাসিমের বাড়াবাড়ি না হলে তিনি পরেরবারও ক্ষমতায় আসতেন। এবার তিনি মোটেই ভালো কাজ করেননি। শেয়ারবাজার, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারি চাপা দেবে কেমন করে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জোর গলায় তারেকের কেলেঙ্করির কথা বলতেন। আদালতে সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এখন তার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বল বেগম খালেদা জিয়ার কোর্টে। আন্তর্জাতিকভাবেও শেখ হাসিনা সরকার ব্যর্থ। তার একটি প্রমাণই যথেষ্ট। সেবার তিনি বিদেশ থেকে ১৮টি ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন, এবার একটিও পাননি। যদি সাজানো নির্বাচন দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় যেতে চান সেটা হবে চরম ভুল। দেশ চরম বিপর্যয়ের দিকে চলে যেতে পারে। তাতে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে। অপশক্তি অজুহাত পাবে ক্ষমতা দখলের। শেখ হাসিনা যতই বলুন না কেন, “আমরা শাসনতন্ত্র সংশোধন করে নিñিদ্র করে দিয়েছি যাতে কোনো অপশক্তি আসতে না পারে।” এ কথটা নিতান্ত অজ্ঞতার পরিচায়ক। অপশক্তি কখনো শাসনতন্ত্রের পথ ধরে আসে না। অপশক্তি আসে রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে। ১৯৭৪ সনেও শাসনতন্ত্রকে আরো বেশি নিñিদ্র করা হয়েছিলো। কিন্ত পেরেছিলেন অপশক্তিকে রোধ করতে?
তাই দেশের ও দেশের জনগণের স্বার্থে, শান্তি এবং সমৃদ্ধির স্বার্থে উভয় নেত্রীরই উচিত খোলা মন নিয়ে আলোচনায় বসা। শুধু লোক দেখানো আলোচনা নয়, সত্যিকার অর্থেই সঙ্কট সমাধানের স্বার্থে আলোচনা করতে হবে। একানব্বইয়ের মতো সকলে মিলে আলোচনা করে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান বের করতে হবে। সেটা করতে হবে দ্রুত। কারণ সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারেও ফিরে যাওয়া উচিত হবে না। আমার মতে, শুধু এবারের নির্বাচনটা পরিচালনা করার জন্য একটি নির্বাচন পরিচলনা কমিটি/কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচন শেষ হলে নতুন সরকার শপথ নেয়ার সাথে সাথে এই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে চিরদিনের জন্য। এজন্য শাসনতন্ত্রের সংশোধনেরও প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ কমিটির সদস্যরা হবেন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন দুজন অধ্যাপক, যারা কখনো লাল, সাদা, সবুজ বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না; দু’জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যারা জজ থেকে পদোন্নতি পেয়ে বিচারপতি হয়েছিলেন; দু’জন অবসরপ্রাপ্ত সচিব যারা চাকরিজীবনে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব বা উপদেষ্টা ছিলেন না এবং সশস্ত্র বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা যার পদবী মেজর জেনারেলের নিচে নয় এবং যিনি কখনো প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব বা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেননি। যদি প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রি সভার অন্য সদস্যরা ক্ষমতায় থাকতে চান তা থাকতে পারেন। তবে তারা তাদের দফতরের রুটিন কাজ হিসেবে নথি সহি করতে পারেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তারা সেটাই মেনে নেবেন। কমিটির সদস্যরা রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টার সমপদমর্যাদাসম্পন্ন হবেন। নির্বাচন কমিশন এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করবেন। কমিটি ইচ্ছা করলে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীসহ সকল নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। অথবা আওয়ামী লীগ সরকারের পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভায় দুই-পঞ্চমাংশ মন্ত্রী বিএনপি জোট থেকে সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরে দায়িত্বে একজন বিএনপি জোটের সুপারিশকৃত ব্যক্তিকে নিতে হবে। একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আওয়ামী লীগের একজন প্রতিমন্ত্রী থাকতে পারেন। এই মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন। নির্বাচন শেষে নির্বাচিত সরকার শপথগ্রহণের সাথে সাথে এই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই মন্ত্রিসভার সদস্যগণ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান, তবে তা তারা পারবেন। কিন্তু তারা নির্বাচনী কাজে সরকারি কোনো যানবাহন, প্রচারযন্ত্র বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সেবা পেতে পারবেন।
আমিও এদেশের একজন নাগরিক। দেশের কথা, দেশের জনগণের ভালো মন্দের কথা বলার অধিকার আমারও আছে। তাই আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা চিন্তা করতে পেরেছি, তাই বলেছি। গ্রহণ করা না করা সংশ্লিষ্টজনদের ব্যাপার। তবে আমি আবার বলছি, সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার বিকল্প নেই। কাউকে খাটো করে ভাবার উপায় নেই। তাই আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতেই হবে।
গতবছর নবেম্বরের শেষদিকে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নে আমাকে একটি মেসেজ দিয়ে হাসু আপাকে পৌঁছে দিতে বলেছিলেন। আমি চেষ্টা করেও সেটি তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। তিনি এ বছর আরো দুদিন আমাকে তাগিদ দিয়েছিলেন মেসেজটি পৌঁছে দিতে। কিন্তু তিনি তো এটা জানেন না যে, আমার মতো চুনোপুঁটি প্রধানমন্ত্রীর ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঠিক দুদিন আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আমি কৌশলে হস্তগত করেছিলাম। কিন্তু আমি সেটি বঙ্গবন্ধুকে দিতে পারিনি। কারণ তার কাছে পৌঁছার ক্ষমতা আমার ছিলো না, যেমন তার কন্যার কাছেও আমি যেতে পারিনি। আমি আমার লেখা ‘আজব দেশের আজব মানুষ’ উপন্যাসটিতে সে বার্তাটির বর্ণনা দিয়েছি। শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার দুদিন আগে আমি কিছু আলামত দেখতে পেয়ে মোহাম্মদপুর থানার ডিউটি অফিসারকে ফোনে জানিয়েছিলাম। কিন্ত ঐ ব্যক্তি তাতে গুরুত্ব দেননি। যদি গুরুত্ব দিতো তবে অনেকগুলো মানুষ প্রাণে বেঁচে যেতো, অনেককে সারাজীবন যন্ত্রণা বয়ে চলতে হতো না। ঘটনা ঘটার পর আমি এ নিয়ে আইজি সাহেবকে বেনামীতে বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। মনে হয়, তিনিও তাতে কান দেননি। আমাদের দেশের অবস্থা এমন কেন? প্রধান মন্ত্রী কী আমারও প্রধানমন্ত্রী নন? কেন আমরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারি না?
পথ চলতে চলতে মাঝে মাঝে দেয়ালে দেয়ালে দেখি অপশক্তির পদছায়া। ভয় হয় আবার কী আমরা হারিয়ে যাবো অন্ধকারের অতলগহ্বরে? যদি আমাদের দুই নেত্রী হুঁশিয়ার না হন তবে সামনে খুব অন্ধকার দিন আসছে। এই বুড়ো বয়সে চাই না আবার অন্ধকারের যুগে ফিরে যেতে। আমি আলো চাই। আলো, আরো আলো।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads