সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

নাপিতের দোকানের সমাজ দর্পণ ও দেশের বিদ্যমান অবস্থা


এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষদিকে প্রায় দশ দিনের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। যাবার আগের দিন চুল-দাড়ি কাটার জন্য নাপিতের দোকানে ঘণ্টাখানেক কাটাতে হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণীর এবং বয়সের আট/দশজন লোক ছিলেন। কেউ চুল-দাড়ি কাটছিলেন, কেউ অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর দোকানের বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন থেকেই সব মানুষ সরব হয়ে উঠেন। কেউ বললেন, সরকার কয়েক দিন আগে দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন উপলক্ষে হাতিরঝিলে আতশবাজি পুড়িয়ে সাফল্য উদযাপনের পর হঠাৎ করে শীতের এই দিনে লোডশেডিং করে দেশবাসীর কাছে তার প্রতারণার মুখোশটি উন্মোচিত করে ফেলেছেন। আবার একজন বলে উঠলেন সবই ভোজবাজি। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার একটি নাটক। আবার আরেকজন বললেন, সরকার দেশের পনের কোটি মানুষকে বাঙাল বানিয়ে ছেড়েছেন। যেন তারা কিছুই বুঝে না। তারা বলে বেড়াচ্ছেন এবং শহরে নগরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিলবোর্ড লাগিয়ে মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, তারা উন্নয়নের জোয়ার এনে দেশকে ভাসিয়ে দিয়েছেন। একজন বললেন, সবই পরিহাস। মহানগরীর রাস্তাঘাটের জীর্ণ দশা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের করুণ অবস্থা তাদের উন্নয়নের প্রতিফলন। চাঁদাবাজির ঠেলায় ঠিকাদাররা চলে যাওয়ায় এই মহাসড়কগুলোকে চার লেনে রূপান্তর করণের কাজ ৩৫/৩৬% এ এসে স্থবির করে রেখেছে। দুই বছর আগে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কেয়ারটেকার আমলে সূচিত এই কাজ পাঁচ বছরের মাথায় এসে স্তব্ধ হয়ে আছে। আরেকজনের কথা হচ্ছে সরকারের অগ্রাধিকার হচ্ছে শহরের বড় বড় প্রকল্প, যেমন উড়াল সড়ক। এগুলোতে লাভ বেশি। কিছুদিন পর পর এসটিমেট সংশোধন করে ব্যয় বৃদ্ধি করে ঠিকাদারদের মনোরঞ্জন করা হয় এবং এর ফলে ঘুষের পারসেন্টেজও বাড়ে। কাজের মান যে কি হচ্ছে চট্টগ্রামের গার্ডার ধসে ১৬ ব্যক্তির প্রাণহানি ও দুই শতাধিক লোকের আহত হবার ঘটনাই প্রমাণ কর। সেলুনে আমি একটি লোক পাইনি যে সরকারের পক্ষে কথাবার্তা বলেছে। এই সেলুন বা নাপিতের দোকানকে আমার মনে হয়েছে একটি সমাজ দর্পণ। সরকার যদি এই দর্পণে তার চোহারাটি দেখতেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারতেন যে তা কত কদর্য এবং কুৎসিত।
যাবার আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিনিধি তারানকো ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি দুই জোটের নেতাদের সংলাপে বসিয়ে গিয়েছেন। সংলাপ চলছিল। আমি ভেবেছিলাম যখন দেশে ফিরে আসব তখন চলমান রাজনৈতিক সংকটের একটি সুরাহা দেখতে পাব। বিদেশে থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের বিধ্বস্ত ইমেজের খ-াংশ আমি দেখতে পেয়েছি। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পনের কোটি জনপদের এই দেশটিকে আন্তর্জাতিকভাবে দেউলিয়া করে ছেড়েছেন। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক-কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্র-ছাত্রীদের বৃহত্তর অংশ রাতে ঘুমাতে পারেন না। দেশে তাদের পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, স্বৈরাচারী আচরণ, বিরোধী দল নিধন, ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী দলগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও খ্যাতনামা আলেম-ওলামাদের নির্বিচারে হত্যা আমাদের এই প্রিয় দেশটির ভাব-মর্যাদাকে ভূলুন্ঠিত করেছে। আমাদের প্রবাসী শ্রমিক কর্মচারী এবং বিদেশে অধ্যয়নরত ছাত্ররা দেশের এই বিপন্ন অবস্থা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে যেভাবে তুলে ধরছেন তাতে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমাদের আর কোন মর্যাদাই থাকছে না। তাদের এখানে দোষ দেয়ার কিছুই নেই। তারা দেশের বাস্তব অবস্থারই প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে বলে মনে হয়। এই সংকটে স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন নির্বাচনের নামে প্রহসন করে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার যে অপচেষ্টা চলছে তা জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনয়ন, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশ্ববাসীর উদ্বেগে রূপান্তরিত হয়েছে এবং এর ফলে আমরা বন্ধুহীন হয়ে পড়েছি। এই অবস্থা বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত বেদনার।
 দেশে যখন ফিরে আসলাম, উড়োজাহাজ থেকে নেমে বিমানবন্দরে প্রথম বাংলাদেশী যে লোকটির সাথে দেখা হলো তার কথাটি আমাকে অত্যন্ত বিচলিত করেছে। তিনি বললেন স্যার, কেন দেশে ফিরে এসেছেন? দেশ তো আর দেশ নেই। তার কথাটির তাৎপর্য বুঝলাম বিমানবন্দরের বাইরে এসে। যে অবরোধ রেখে গিয়ছিলাম সেই অবরোধ নতুন করে তখনো চলছে। সরকার তার একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং দেশের প্রায় আশি ভাগ ভোটারের সমর্থনপুষ্ট বিরোধীদলীয় জোটকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য সর্বত্র সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছেন  এবং শত শত লোককে নির্বিচারে গুলী করে হত্যা করছেন। এটি একটি গণহত্যা। বিশেষ ব্যবস্থায় একটি গাড়ি সংগ্রহ করে যখন বাসায় ফিরলাম তখন আমার জন্য একটি মর্মান্তিক চমক অপেক্ষা করছিল। আমার বড় নাতি, বড় মেয়ের বড় সন্তান, ঢাকা কলেজের ছাত্র। তের তারিখ শুক্রবার তার পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে সে বাসযোগে বাড়ি ফিরছিল। মতিঝিলে এসে বাসটি বিক্ষোভকারীদের মুখে পড়ে এবং বাসচালক সমস্ত যাত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে নিরাপদ গন্তব্যের দিকে ফিরে যায়। আর এই সুযোগে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারী ও অসহায় যাত্রীদের বেদমভাবে প্রহার করতে শুরু করে এবং আমার নাতিটিও এর শিকার হয়। তারা তাকে নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করে এবং আইডি কার্ড দেখানোর পর পায়ে ছয়টি গুলী করে ছেড়ে দেয়। একটি স্বাধীন দেশে পুলিশের এই নিষ্ঠুর আচরণ কি ভাষায় আমি প্রকাশ করব জানি না। সারা দেশে যৌথ অভিযানের নামে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা ও গুম করছে। বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। নিহতদের আত্মীয়-স্বজনদের লাশ দাফন করারও সুযোগ দিচ্ছে না। লক্ষ্মীপুরে আমার এক বন্ধু ডা. ফয়েজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন প্রথম সারির নেতা হওয়া ছাড়াও বরেণ্য একজন চিকিৎসক এবং সমাজসেবক ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারি নির্দেশে তাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করে তার বাড়ির ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয় এবং তার চারতলা বাড়িটিকে এমনভাবে তছনছ করে দেয় যে, বাড়িটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যায়। একই অবস্থা হয়েছে শুনেছি সাতক্ষীরায়। সেখানে জামায়াতের জেলা ও উপজেলা আমীর ও নায়েবে আমীরের বাড়ি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। বগুড়া, জয়পুরহাট, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, ফেনী, নোয়াখালী, মেহেরপুর, সীতাকু-, বাঁশখালী, কোম্পানীগঞ্জসহ সারা দেশে যৌথবাহিনীর তা-ব চলছে। তারা এমন নৃশংসভাবে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, যার নজির গত একশ বছরে পাওয়া যাবে না। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের মানবিক মূল্যবোধের এমন অবক্ষয় হয়েছে যে, এখন যে কোনো রকমের হত্যা, নির্যাতন তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না। এটা অনেকটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে পড়েছে বলে মনে হয়। তাদের এই অনীহা ও নিশ্চুপ অবস্থানের মধ্যে আমি বিরাট একটি ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পাই। এই ঘূর্ণিঝড় এই দেশকে ল-ভ- করে দিতে পারে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের আচরণ অত্যাচারী রোম স¤্রাট জার এবং ফরাসি স¤্রাট ষোড়শ লুইকেও অতিক্রম করেছে বলে মনে হয়। তিনি দেশের মালিক ও দ-মু-ের কর্তা হয়ে দেশ শাসন করছেন। তার সমালোচকদের এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের যেভাবে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছেন ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে তা গ্রহণযোগ্য কোনো অবস্থান নয় এবং এর পরিণতিও সুফল বয়ে আনতে পারে না। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি এলিট ফোর্স হিসেবে আমরা জানতাম। তারা এখন কিলার গ্রুপে পরিণত হয়েছেন। জেনারেল এরশাদ যখন একদলীয় পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করে সরকারি জোট থেকে বেরিয়ে আসলেন এবং তার দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেন তখন র‌্যাব বাহিনীর আরেকটি চেহারাও প্রকাশ পেলো। তারা জেনারেল এরশাদকে নির্লজ্জভাবে গ্রেফতার করলেন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে বন্দী করে রাখলেন। কিন্তু দেশবাসীকে জানালেন যে, জেনারেল এরশাদ অসুস্থ বোধ করায় তাকে তারা হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। মনে হয় অসুস্থ এরশাদকে দেখার আর কোনও লোক নেই। আমি বিস্মিত হই দুটি কারণে, এক. র‌্যাব রাজনৈতিক নেতাদের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব কখন নিলেন? দুই. তারা কি বাংলাদেশের মানুষকে এতোই বোকা ও বাঙাল মনে করেন যে, তারা কিছুই বুঝেন না? আমি বৃটিশ আমল দেখিনি, পাকিস্তান আমল দেখেছি এবং বাংলাদেশ আমলের ৪২ বছরের রাজনীতি প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু এই সরকারের ন্যায় নির্লজ্জ ও নিষ্ঠুর সরকার আর কখনও দেখিনি। ইতিহাসের পাতায় পড়াও হয়নি। তবে এর পরিণাম দেখার অপেক্ষায় আছি। যদি দেখতে না পারি, অবশ্যই বিশ্বাস করি যে, আমার পরবর্তী বংশধররা তা দেখে যাবেন। সরকারের এই স্বৈরাচারী আচরণ বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গণহত্যা প্রভৃতির একটি কারণ ইতোমধ্যে দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে বলে মনে হয় এবং তা হচ্ছে বিত্ত-বৈভবের লোভে ক্ষমতার লিপ্সা। এই সরকার হাজার হাজার মামলা দিয়ে লাখ লাখ লোককে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে যে বাণিজ্য করেছেন এবং লাখ লাখ কোটি টাকা উপার্জনের পথ সৃষ্টি করেছেন তা এখন কারোরই অজানা নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তারা উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে সরকারি দল এবং তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ অর্থের ভাগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, চাকরি বাণিজ্য, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির জবরদখল প্রভৃতি অর্থবিত্ত সংগ্রহে তাদের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। পত্র-পত্রিকা এবং সামাজিক মিডিয়ায় এর বেশকিছু তথ্য এরই মধ্যে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। একজন শীর্ষ নেত্রীর একমাত্র পুত্রের বিদেশী ব্যাংকে ৮৬২ মিলিয়ন ডলারের ডিপোজিট এবং আরো তিনশ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের স্বর্ণ ও বন্ডের সঞ্চিতি দেশ-বিদেশে নানা প্রশ্নের অবতারণা করেছে। ফজলে নুর তাপসের আয় বহির্ভূত ৩৩০ কোটি টাকার সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ বৃদ্ধির বিভিন্ন রকমের তথ্য ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। দৈনিক সংবাদ, প্রথম আলো, মানবজমিন অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে এসব তথ্য তুলে ধরছে। এসব তথ্য অনুযায়ী, বিগত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের নেতারা নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পাঁচ বছরে তার স্ত্রীর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২২৯০ গুণ। মন্ত্রী মান্নান  খানের সম্পদ বেড়েছে ১০৭ গুণ। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের পাঁচ বছর আগে মালিকানাধীন জমির পরিমাণ ছিল ২০ একর। এখন তা হয়েছে ২৮৬৫ একর। রাজিউদ্দিনের চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদ ৩০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। মহিউদ্দিন খান আলমগীর স্বল্প সময়ের মন্ত্রিত্বে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তিনি এ সময় ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় ও কন্টেইনারবাহী জাহাজের মালিক হয়েছেন। ২০০৮ সালে এই মহিউদ্দিন খান আলমগীর সপরিবারে গ্রেফতার হয়ে ১৩টি মামলায় ১৩ বছর কারাদ-ে দ-িত হয়েছিলেন। এখন তার নামে কোন মামলা নেই। ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাজের মালিক হওয়া ছাড়াও তিনি নগদ ৫ কোটি টাকার মালিক এবং অন্যান্য স্থায়ী সম্পদ আছে ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকারও বেশি। পাঁচ বছরে শেখ সেলিমের সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণ এবং এই সময়ে তার ব্যাংক একাউন্টে আমানত বেড়েছে ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। জাহাঙ্গীর কবির নানকের সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ কোটি ২৮ লাখ টাকায়। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ছিল তা ৯৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ পাঁচ বছরে তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণও ৪২ লাখ থেকে ৫ কোটি ৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
বলাবাহুল্য বিগত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে দুর্নীতির দায়ে আওয়ামী লীগের প্রায় আট হাজার নেতা-কর্মী বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। দলটি ক্ষমতায় এসে তাদের প্রত্যেককে মুক্ত করে দিয়ে তাদের দ- মওকুফ করে দিয়েছেন। এই নেতারাই মুক্ত হয়ে পূর্ণ উদ্যমে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন। কেয়ারটেকার সরকার অথবা আওয়ামী বহির্ভূত কোন সরকার আসলে জবাবদিহি করার ভয়ে তারা এখন ভীত সন্ত্রস্ত। আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোতে মন্ত্রী-এমপিদের এবং সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি বছর সম্পদের হিসাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেউই এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। এখন নির্বাচন কমিশনে দেয়া তাদের সম্পত্তির হিসাবে সম্পদ বৃদ্ধির যে ছিটেফোঁটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা থেকেই পত্র-পত্রিকাগুলো কিছু কিছু তথ্য পরিবেশন করছে। অনেকে মনে করেন যে, বাস্তব অবস্থা আরো ভয়াবহ। ক্ষমতাসীন দল ও জোটের মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রভৃতি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এবং পুলিশ, র‌্যাব ও আওয়ামীপন্থী সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাংক একাউন্ট এবং নামে-বেনামে সম্পত্তি ক্রয়ের হিসাব পাওয়া গেলে যে চিত্র ফুটে ওঠবে তাতে এই দেশের মানুষের লোম খাড়া হয়ে যাবে। এই সম্পত্তি রক্ষা এবং আগামীতে ক্ষমতায় গিয়ে বিত্ত বৈভব সংগ্রহের অভিলাষ পূর্ণ করার জন্যই ক্ষমতাসীন দল দেশ-বিদেশের জনমতকে উপেক্ষা করেই নির্বাচনের নামে এই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সাধারণ মানুষের ধারণা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads