বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

জরুরি অবস্থা ও সঙ্কট উত্তরণ


বাংলাদেশ কি প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে? রাজনীতির এ আগুন কি নিভবে না? এ ধরনের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বিদেশে এসে। দেশের ভেতরে থেকে এ উত্তাপ যতটা পেয়েছি, বাইরে এসে যেন তাপটা আরো খানিকটা বেশি অনুভব করছি। ইন্টারনেট আর স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সুবাদে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত কোথায় কী ঘটছে তার খবর পেয়ে যাচ্ছেন প্রবাসীরা। এর পরও তাদের আগ্রহ আর উৎকণ্ঠার শেষ নেই। কিছু দিন আগে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এক প্রতিবেদনে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে জরুরি অবস্থা জারির একটি বিকল্পের কথা লিখেছিলাম। এখন দেশের পরিস্থিতি সেই অবস্থায় নেই। প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেছেন, শেখ হাসিনা এখন গণপ্রজাতন্ত্রী ঢাকার প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। সারা দেশে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ চাচ্ছেন না, চাচ্ছে না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও; এর পরও কেবল প্রতিবেশী দেশের সমর্থনের ভরসায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থেকে একতরফা নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সেই স্বপ্নকেও ফিকে করে দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। তিনি নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নিজ দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আবার আলোচনায় উঠে এসেছে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি। এ লেখাটি যে দিন প্রকাশ হবে সেই দিন স্বাভাবিক আইন থাকবে নাকি জরুরি আইন বলবৎ হবেÑ নিশ্চিত করে তা বলা যায় না। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্ন উঠেছে জরুরি অবস্থা বাংলাদেশে জারি করবেন কে? ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণই বা থাকবে কার হাতে? ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, তাতে জরুরি অবস্থা জারি করার কোনো বিধান রাখা হয়নি। সেই সময়কার আওয়ামী লীগের সরকার ১৯৭৩ সালে সংবিধানে দ্বিতীয় সংশোধনী এনে জরুরি অবস্থা জারি করার বিধান আনে। সংবিধানের নবম ক ভাগে এই বিধানটি সংযোজিত করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় এ বিধানে কিছু কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের মেয়াদ দুই বছর টেনে নেয়ার আগে এ বিধান নিয়ে আলোচনা ততটা ছিল না। সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদে এ ব্যাপারে বলা হয়েছেÑ যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশ বা এর কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন। তবে এর বৈধতার জন্য ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে। আর জরুরি অবস্থা জারি করা হলে এ সময় সংবিধানের বেশ কিছু অনুচ্ছেদের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে। এ সময়ে সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকারসংক্রান্ত বিধানাবলির (অনুচ্ছেদ ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪২) বিপরীত আইন করতে পারবে সরকার। জরুরি অবস্থার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে এসব বিধানও অকার্যকর হয়ে যাবে। জরুরি অবস্থা জারির ১২০ দিনের মধ্যে সংসদের অনুমোদন না পেলে তা কার্যকর থাকবে না। এ সময় সংসদ না থাকলে অথবা ১২০ দিনের মধ্যে ভেঙে গেলে পরবর্তী সংসদ গঠিত হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে তা অনুমোদন হতে হবে। তা না হলে এরপর আর জরুরি অবস্থা কার্যকর থাকবে না।
বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। ফলে এখন জরুরি অবস্থা জারি করা হলে এই বিধান পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে সংসদ অধিবেশন বসার পর ৩০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে। ২০০৭ সালে দুই বছরের কাছাকাছি সময় জরুরি অবস্থা বহাল রাখা হয়েছিল। জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকের মৌলিক অধিকার থাকে না বলে সরকারের হাতে প্রভূত ক্ষমতা চলে যায়। রাষ্ট্র্রপতিকে দিয়ে ইচ্ছামতো অধ্যাদেশ জারি করে নতুন নতুন বিধান করা যায়। এটি ২০০৭ সালের বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হয়েছিল।
বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারির প্রয়োজন হলে সেটি কে করবেন? রাষ্ট্র্রপতির জরুরি অবস্থা এককভাবে জারি করার বিধান সংবিধানে রাখা হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর হলেই যে রাষ্ট্র্রপতিকে তাৎক্ষণিকভাবে এ পদক্ষেপ নিতে হবে, সেটিও সুনির্দিষ্টভাবে বলা নেই।
একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে সরকার কার্যত এখন দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি ব্যবহার করেও সরকার প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না দেশের ওপর। এখন কেবল বাকি আছে সেনাবাহিনী। জরুরি অবস্থা জারি করা হলে তা বলবৎ করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। সেনাবাহিনী একটি সরকারের বৈধ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একতরফা নির্বাচনের জন্য অথবা ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ানোকে কি সঠিক মনে করবে? ২০০৭ সালে দেশে বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এখনকার পর্যায়ে পৌঁছেনি। এর পরও সেনাবাহিনী একতরফা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে সম্মত হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তার অর্থ যদি সরকারকে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণের বিরুদ্ধে নামার আহ্বান হয়ে থাকে সেই দায়িত্ব সেনাবাহিনী কি পালন করবে?
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সেনা মোতায়েনের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সে অনুরোধে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি সেনাবাহিনী। একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেই সহযোগিতা দিলে ২০০৭ সালের মতো জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে তেমন ইঙ্গিত অনানুষ্ঠানিকভাবে সামরিক বাহিনীর কাছে এসেছে বলে বিভিন্ন সূত্রের খবরে বলা হচ্ছে।
একতরফা নির্বাচন থেকে এরশাদের জাতীয় পার্টির সরে আসার পর এখন মূলত আওয়ামী লীগ ও এর কয়েকটি বাম সহযোগী দল এ নির্বাচনে থাকছে। এ অবস্থায় জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলন ও দেশের বর্তমান সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে এক ধরনের ফলাফল ঘোষণা মার্কা নির্বাচন হয়তো হয়ে যেত। কিন্তু প্রতিদিন যেভাবে প্রাণহানি ও সম্পদ নষ্ট হচ্ছে তাতে যেকোনো সময় নির্বাচন স্থগিত করার ঘোষণা আসার বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে। বাস্তবে সেটি ঘটার পর জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতায় থেকে যাওয়া হয়তো সম্ভব বলে মনে করা যেত যদি সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সমর্থনে যেভাবে সেনাবাহিনী আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে সেই রকম বাংলাদেশে ঘটে থাকত। তেমন অবস্থা হবে বলে কেউই আশা করছেন না এখানে।
প্রশ্ন দেখা দিতে পারে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে শূন্যতা পূরণ হবে কিভাবে? ২০০৭ সালে তদানীন্তন রাষ্ট্র্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে চাপের মুখে ইস্তফা দিয়েছিলেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অনুসারে ড. ফখরুদীনকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়। তার সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন আয়োজন করে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনার সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা সংবিধান থেকে তুলে দিয়েছে। ফলে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলে সংবিধান অনুসারে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের স্বাভাবিক সুযোগ নেই। তবে এ অবস্থায়ও ডকট্রিন অব নেসেসিটিঅনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি সরকার গঠন করতে পারেন। তিনি জরুরি অবস্থা জারি করলে সংবিধানের মৌলিক অধিকার ভাগের পরিপন্থী অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতাও তার হাতে আসবে। এ অবস্থায় ১৯৯০ সালের মতো রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব।
২০১৩ সালের মতোই ১৯৯০ সালের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিধান ছিল না। প্রধান বিচারপতির পক্ষে অস্থায়ী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে আবার পুরনো পদে ফিরে যাওয়ার বিধানও তখন ছিল না। রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়ায় নতুন সংসদ গঠনের পর সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অবৈধকাজের বৈধতা দেয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশে বর্তমান যে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনকল্পে ১৯৯০ সালের মডেলকে অনুসরণ করা যেতে পারে। বর্তমান সময়ে একটি বাড়তি সুবিধা হচ্ছে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি রয়েছেন। তার পদত্যাগের দাবি কেউই করছেন না। ফলে সাংবিধানিক ব্যবস্থা অুণœ রেখেও জাতির জরুরি প্রয়োজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য স্বল্প সময়ের নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
এ ধরনের নির্বাচনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানের কথাও বলা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে পরিস্থিতিতে জাতিসঙ্ঘের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন দেখা দেয়, সেই অবস্থা বাংলাদেশে এখনো সৃষ্টি হয়নি। সঙ্কটে পড়া সদস্য রাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের রাজনৈতিক বিভাগের একটি শাখা রয়েছে। এর নাম হলো Electrol Assistance Group (EAG) বা নির্বাচনী সহায়তা গ্রুপ। পাশের দেশ নেপালসহ বিশ্বের যেসব দেশে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা রাজনৈতিক বিভাগ ও নির্বাচনী সহায়তা গ্রুপ সম্পন্ন করেছে। পরে রাজনৈতিক বিভাগ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কাছে সামগ্রিক বিষয়টি অবহিত করে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব প্রয়োজন মনে করলে বিষয়টি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জানান।
বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যদি কোনো সমঝোতা না হয়, তা হলে জাতিসঙ্ঘের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি আলোচনায় চলে আসতে পারে। ওই নির্বাচনে বিবদমান কোনো পক্ষকে রাজি করানো না গেলে এবং জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনটি অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব তার উদ্যোগ সফল হয়নি মর্মে সাধারণ পরিষদকে অবহিত করেন। সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারিত হয়। এর মধ্যে বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের পাঠানো হবে কি না তা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর এটি সাধারণ পরিষদের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়। যদি নিরাপত্তা পরিষদে এ ইস্যু পাঠানো হয়, তা হলে জাতিসঙ্ঘের সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তবে নিরাপত্তা পরিষদে যাওয়ার পর ওই বিরোধ সম্পর্কে পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ করার জন্য যে ওয়ার্কিং গ্রুপ রয়েছে তাতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হয়। এরপর যদি তারা দেখতে পান শান্তির প্রতি হুমকি, স্থিতিশীলতা ও শান্তির শর্তাবলি ভঙ্গ করাসহ সামগ্রিকভাবে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে, তা হলে সেই দেশের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। এ ব্যবস্থার মধ্যে সতর্ক করা থেকে নানা মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়গুলো রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার প্রথমেই চলে আসতে পারে জাতিসঙ্ঘের শান্তি মিশনে সেনাসদস্য নিয়োগের বিষয়টি। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে চলাচলে, যাতায়াত, ভ্রমণ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্র পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের রাজনৈতিক সহকারী মহাসচিব তারানকো ফার্নান্দেজ বারবার সফর করলেও পরিস্থিতি এ ধরনের হস্তক্ষেপের পর্যায়ে পৌঁছেনি। শেখ হাসিনার অনমনীয়তা সামনেও চলতে থাকলে তেমন পরিস্থিতির আশঙ্কা কেউ কেউ করছেন।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের একটি কারণ, সেটি হলো তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা একতরফাভাবে সংবিধান থেকে তুলে দেয়া। এ ব্যবস্থা তুলে দেয়ার পক্ষে কোনো সময় দেশের জনমত ছিল না অথবা রাজনৈতিক দলগুলো এর পক্ষে কথা বলেনি। কথা বলেনি দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরাও। এর পরও এ ব্যবস্থা তুলে দেয়ার সময়ই এখনকার মতো রাজনৈতিক সহিংস পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন বলেই বিচারপতি খায়রুল হক দুই বারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেছিলেন। সেই বক্তব্যের জের ধরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
যেকোনো দেশের আইন ও সংবিধান সে দেশের জনগণের জন্য। জাতির বড় প্রয়োজনের সময় আইন কোনো দিন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। ফলে বাংলাদেশকে বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য শেখ হাসিনার ক্ষমতা ত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নতুন সরকারের কোনো বিকল্প পথ নেই। এর বাইরে জরুরি অবস্থা জারি করে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইলে দেশে চলমান সহিংস পরিস্থিতি আরো সর্বগ্রাসী রূপ নিতে পারে, যা কোনো বিবেকমান মানুষের কাম্য হতে পারে না। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads