শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৩

দলীয় সরকারই পুনর্গঠিত হলো


বেগম খালেদা জিয়ার দাবি ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চাই। তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকেরা। কিন্তু শেখ হাসিনা বলে আসছিলেন, কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান নেই। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু সৃষ্টি হয়েছিল একটা বিশেষ অবস্থায়। হাইকোর্ট ডিভিশন এক রিট আবেদনের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দেন। সে মতে, জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এ ব্যাপার নিয়ে উভয় দলের মধ্যে তুমুল বাগি¦তণ্ডা চলতে থাকে। আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রী বললেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই থাকবেন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের প্রধান। এই সমস্যার সুরাহা হওয়ার আগেই শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিলেন। সরকারের সব রকম সুযোগসুবিধা গ্রহণ করে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়লেন। তিনি ধরেই নিয়েছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচন বর্জন করলেও নির্বাচন হবে।
বেগম জিয়া প্রথমে লাগাতার তিন দিনের হরতাল দিলেন। এরপর আরো চার দিনের হরতালের ঘোষণা দিলেন। এসব হরতাল অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতায় রূপ নেয়। তবে নতুন উপসর্গ দেখা দিলো। বহু স্থানে উল্টো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হলো হরতালকারীদের ওপর। এতে আহতদের সংখ্যা বেড়ে গেল অনেক।
যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী রাস্তার দুধারে কড়া পাহারায় নিয়োজিত ছিল, সেখানে পুলিশের ব্যূহ ভেদ করে হরতালকারীদের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করার সুযোগ কিভাবে পায়? তবুও ঘটনা ঘটল। এটা হয়েছে পুলিশ প্রটেকশনে। যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা খুবই তৎপর ছিল হরতালের সময়। তাৎক্ষণিকভাবে ককটেল নিক্ষেপকারীদের কেউ ধরা না পড়লেও পরে জামায়াত ও বিএনপির বহু কর্মী ও নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ দিকে শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণা জোরেশোরে চালাতে লাগলেন। এরই মধ্যে তিনি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করলেন। বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার এই সরকার গঠনের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করে, তাকে এ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। শেখ হাসিনার এই সরকার কখনোই সর্বদলীয় নিরপেক্ষ সরকার নয়। এতে আওয়ামী লীগের মহাজোট সরকারকেই পুনর্গঠিত করা হয়েছে।
 
প্রেসিডেন্ট সংবিধানের দোহাই দিয়ে হস্তক্ষেপকরতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে কোনো সিদ্ধান্তই দিতে পারলেন না রাষ্ট্রপতি। এ দিকে সর্বদলীয় সরকার নিয়েও তুমুল ঝড় উঠেছে। শেখ হাসিনার ভয় ছিল, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যদি মহাজোট থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে অনেকটাই দুর্বল হয়ে যাবে জোটটি। এরশাদ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে নির্বাচনে যাবেন না। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করবে। অথচ এরশাদ পুনর্গঠিত সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর পদ পেয়ে সব কথা ভুলে গেলেন, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হলেন। এ নিয়ে এরশাদের দলের মধ্যেই তুমুল বিতর্ক। দলের সিনিয়র নেতারা বারবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বলে এসেছেন, মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসুন, স্বাধীনভাবে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টির আসন অনেক বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত লোভে পড়ে তিনি হাসিনার সাথে ভিড়লেন।
এই এরশাদকে দেশের মানুষ ভালো করে চেনে। তিনি সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন ৮২ সালে। তার ক্ষমতা দখলের পর শেখ হাসিনা প্রথম তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদের নির্বাচনে যে ধরনের কারচুপি হয়েছে, তা এর আগে হয়নি। কর্নেল (অব:) অলি আহমদ বলেন, এরশাদ চরম সুবিধাবাদী। তিনি কখনোই মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করেন না, নিজের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই রাজনীতি করে থাকেন।
বর্তমানে সারা দেশে থমথমে ভাব। শুধু দেশের মানুষ নয়, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা দারুণ উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। সংলাপের মাধ্যমে দুই নেত্রীর বিবদমান পরিস্থিতির অবসান চান তারা।
সময় শেষ হয়ে আসছে। নির্বাচনের তারিখ আসছে ঘনিয়ে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দুর্বলচিত্তের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর অবাধ্যহওয়ার সাহস তার নেই। নিরাপত্তা বাহিনী, ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের ক্যাডাররা মাঠেই থাকবে। তা ছাড়া প্রতিটি সেন্টারেই উপস্থিত থাকবে মহাজোটের কর্মীবাহিনী। তারা কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর প্রটেকশনে নির্বাচনে ভোট কারচুপি করার সুযোগ পাবে বলেই জনগণ মনে করে। এমতাবস্থায় বিএনপি কঠিন কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হবে, মৃত্যুর সংখ্যা সাধারণ হরতালের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু বিপর্যয় দেখলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও যদি পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, তাহলে দেশ চরম অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হবে। বিরোধী দলের নেত্রী চরম আন্দোলন চালিয়ে যান। সেই সাথে নির্বাচনে অংশগ্রণের প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ১৮ দলীয় জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে। কারণ গণজোয়ার বিএনপির পক্ষে। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads