রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

বিজয় দিবস


মহান বিজয় দিবসের এই শুভলগ্নে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই জনপদের সব মানুষকে জানাই বিজয় অভিবাদন। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে জনগণের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা বাস্তবে রূপ লাভ করেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে। তাই প্রতি বছর এই দিনটিকে জাতি স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধা ও অহংকারের সাথে। আমাদের বিজয়ের ৪২ বছর পূর্ণ হবে এই ডিসেম্বরে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের পাতায় বিগত ৪২ বছরে যুক্ত হয়েছে আনন্দ-বেদনা এবং গর্ব ও লজ্জার নানা ঘটনা এমন পেক্ষাপটে বিজয়ের দামামা বাজানোর পাশাপাশি আমাদের পালন করতে হবে আত্মসমালোচনার দায়িত্বও। কারণ আত্মসমালোচনা ছাড়া কোনো জাতি তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না।
ইতিহাসের পাঠক মাত্রই এ কথা জানেন যে, এই জনপদের মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা দীর্ঘ দিনের একটি লালিত বিষয়। স্বাধীনতার লক্ষ্যে তারা যুদ্ধ করেছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার এই দীর্ঘ পরিক্রমায় নেতৃত্ব প্রদানের জন্য আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে থাকি নবাব সিরাজউদ্দৌলা, শহীদ তিতুমীর, নবাব সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ জিয়াউর রহমানসহ আরও অনেক মহান নেতাকে। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বিশেষভাবে অবদান রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ জিয়াউর রহমান। জাতির স্থপতি হিসেবে আজ স্বীকৃতি পেয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা জানি যে, স্বাধীনতা অর্জনের চাইতেও কঠিন বিষয় হলো স্বাধীনতা রক্ষা এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা। এ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত না হলে স্বাধীন রাষ্ট্রও পরিণত হতে পারে ব্যর্থ রাষ্ট্রে। এই বিষয়টি জাতির স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া বেশ ভালভাবেই উপলব্ধী করেছিলেন।
স্বাধীনতার ৪২ বছরে আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছি। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও সহিষ্ণুতার অভাবে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ক্ষেত্রে আমরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ব্যর্থতার কারণে আমরা কাক্সিক্ষত উন্নয়ন, জীবনমান, সুশাসন ও নিরাপত্তা লাভে সমর্থ হইনি। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট আজ দেশে-বিদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তারানকো। প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও তিনি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতির ব্যাপারে সফল হতে পারেননি। তিনি শুধু সরকারি দল ও বিরোধী দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে সংলাপ শুরু করার কাজটি করতে সমর্থ হয়েছেন। এরপর কয়েকটি বৈঠক হয়েছে দুইপক্ষের মধ্যে কিন্তু এখনও কোনো সুরাহা বেরিয়ে আসেনি। নির্বাচনী সিডিউলও পেছানো হয়নি। সরকার একতরফা ও একদলীয় নির্বাচনের পথেই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫১ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটাতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ভোট ছাড়াই বিজয় লাভের এক নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বিজয়ের এই মাসে গণতন্ত্র হত্যার এমন উদাহরণ স্বাধীনতার লক্ষ্যকে যেন পরিহাস করছে। সরকারের একগুঁয়েমি আচরণের কারণে দেশে হিংসা-বিদ্বেষের আগুন জ্বলছে। দমন-অবদমন এবং গুলী-ককটেল ও সংঘাতে এখন প্রতিদিন মানুষের জীবন যাচ্ছে। তবুও সমাধানের সবুজ বাতি জ্বালার ব্যাপারে সরকারের মধ্যে কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় নাগরিকদের সম্মানজনক জীবন, শোষণমুক্ত সমাজ, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অঙ্গীকার সরকার পূরণ করবে কিভাবে? এমন বাস্তবতায় স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে জনমনে দেখা দিয়েছে হতাশা। সরকার ও রাজনীতিবিদরা যদি এই হতাশা দূর করার ব্যাপারে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণে সমর্থ হয়, তাহলে আমাদের বিজয় উৎসব পালন সার্থক হয়ে উঠবে। তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads