সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

রাজনীতির ঝড় ও বিপন্ন জাতি


দেশ ও জাতি এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কিছু দিন আগে আমেরিকার মিসিসিপি রাজ্যের লুজিয়ানায় হারিকেনের তাণ্ডবে সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে, সারা বিশ্ব তা জানে; কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই হারিকেনের যে নীরব তাণ্ডব বয়ে যাচ্ছে তার খবর কেউ রাখেন না। লুজিয়ানায়, কেবল বাড়িঘর গাছপালা ভেঙে দিয়ে গেছে; কিন্তু বাংলাদেশে মানুষের জীবনমান সুখ, শান্তি, অর্থনীতি সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত দেশের মানুষ তা নির্বিকার সয়ে যাচ্ছে, যা দেখার কেউ নেই, বলারও কেউ নেই। শুরুটা হয়েছিল শেয়ারবাজার দিয়ে তারপর একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে তা ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। মানুষ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে নতুন ঘটনা নিয়ে। মিডিয়াগুলোও অতীতের ঘটনা ভুলে গিয়ে নতুন ঘটনা নিয়ে মেতে উঠতে দেখা যায়। যারা ঘটনাগুলো ঘটিয়েছিল, তারা খুবই ঠাণ্ডা মাথায় প্ল্যান করে তা করেছিল। কারণ তারা জানে বাঙালি জাতি একটা কিছু শুনলে তা নিয়ে কয়েক দিন মাতামাতি করে, তারপর ভুলে যায়। সরকার জানে নাÑ খবর রাখে না তা ঠিক নয় বরং সরকারের মধ্যে ওঁৎ পেতে থাকা কিছু কুচক্রীর কারসাজিতে দিনের পর দিন লুটপাট ও দুর্নীতি চলেছে। চার হাজার কোটি টাকা অর্থমন্ত্রীর কাছে কিছুই না।শেয়ার মার্কেটের হাজার হাজার কোটি টাকা লাপাত্তা হয়ে গেল, তার কোনো হদিস মিলল না। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, কিছু দুষ্টলোক এ কাজ করেছে; কিন্তু ওই দুষ্টলোকগুলো কারা তিনি কি জানেন না? ওরা তো বিদেশে থেকে হঠাৎ এসে এসব অপকর্ম করে হাওয়া হয়ে যায়নি। ডেসটিনি এবং হলমার্ক নামের টাউট কোম্পানি কী করে সরকারের নাকের ডগার ওপর দিয়ে অর্থ লুট করে নিয়ে লাখ লাখ মানুষকে রাস্তায় বসিয়ে দিলো, তা সরকার টেরই পেলো নাÑ এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? সরকার এবং সরকারের হাইব্রিড মন্ত্রী ও দলীয় আমলারা দেশের মানুষকে যত বোকা ভাবুন না কেন, দেশের মানুষ অত বোকা নন। অর্থমন্ত্রীর হাসি এবং মাথা দোলানো কথাবার্তা শুনে মনে হয়, তিনি সবাই জানেন এবং সব খবরই তিনি রাখেন; কিন্তু জনসমক্ষে তা বলতে মানা। তাই কিছু দিন আগে দু-একজন নেতা তাকে কথা কম বলার পরামর্শ দিয়েছিলেন পাছে ছালার বিড়াল না বাইর বেরিয়ে আসে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বেশ কিছু দিন আগে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের চেয়েও অতি বেশি আওয়ামীরা প্রধানমন্ত্রীকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীদের প্রবেশ নিষেধ। প্রধানমন্ত্রী কি কিছুই জানেন না। কিছুই কি তিনি বুঝে না? তা হলে তিনি এই শীর্ষ পদে আছেন কেন? ছাত্রলীগ-যুবলীগের মতো অঙ্গসংগঠন যদি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে দেশের ১৬ কোটি মানুষ সামলাবেন কী করে? রাস্তাঘাটে বলাবলি করতে শোনা যায়, আগের আওয়ামী লীগ নাকি দেশী, আর বর্তমান আওয়ামী লীগ হাইব্রিড। ওবায়দুল কাদের যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন, কখনো এই স্টেশন তো কখনো ওই স্টেশনে গেছেন। দুর্নীতি আর চুরি দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। চোর ও লুটেরাদের তিনি অনেক কথাই বলেছেন, শুধু বলতে পারেননি একটি কথা বঙ্গবন্ধুর মতো, ‘আমার ডানে চোর বাঁয়ে চোর সামনে পেছনে চোর; এত সব চোর নিয়ে আমি দেশ চালাব কেমন করে।১৯৭৪ সালে বন্যাকবলিত কুড়িগ্রামে শেখ মুজিব কথাগুলো বলেছিলেন। তার মন্ত্রিপরিষদের একজন মন্ত্রীকে বলতে পারতেন চার হাজার কোটি টাকার ডাকাতির কিছুই না? তার মন্ত্রিসভায় কি ঠাঁই পেতেন অদক্ষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অফিসের একজন নিম্নশ্রেণীর স্টাফকে কন্ট্রোল করার দক্ষতা যার নেই, তিনি কি হতে পারতেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী? তার মন্ত্রীদের মধ্যে কি নাস্তিক হাইব্রিড কেউ থাকতে পারতেন? অবাক লাগে, যখন ভাবি এই দেশটি আজ কাদের হাতে পড়ে সর্বনাশের দিকে ছুটে চলেছে। আজ ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে অনেকেই খেয়াল খুশিমতো দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ রাজনীতির নামে রাহাজানি সন্ত্রাস খুন লুণ্ঠন করে দেশের বারোটা বাজাতে উঠেপড়ে লেগেছে। দেশের মানুষ জিম্মি, সুখ নাই, শান্তি নাই। আভাস পাওয়া যাচ্ছে অশনি সঙ্কেতের। লুটেরাদের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। তাহলেই গণতন্ত্র বা শান্তি নামের যে পাখিটি উড়াল দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে, তা ফিরে আসবে। অন্যথায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নসাধ সব ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। ছাত্রদের কাজ হবে শুধু পড়ালেখা করা, রাজনীতি নয়। এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads