রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের বিকল্প নেই

রাজনীতিতে কোন কাজটি এখন এ মুহূর্তে করতে হবে এবং কোনটির জন্য করতে হবে অপোÑ এটি নির্ধারণ করা অপরিহার্য। জাতীয় নির্বাচন আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। প্রধানমন্ত্রী সংবিধান থেকে এক চুলও নড়ব নাবলে তার নির্বাচনী কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু বিরোধী দলের রাজনীতি হয়ে আছে এলোমেলো ও দ্বিধাবিভক্ত। এ অবস্থায় কোনো দাবি আদায় অসম্ভব ব্যাপার। আওয়ামী লীগের মতো দলের কাছ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে হলে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের কোনো বিকল্প নেই। এ ল্েয জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, গড়ে তুলতে হবে ইস্পাত কঠিন ঐক্য। এই ঐক্য গড়ার এখনই যথাযথ সময়। জাতীয়তাবাদী শক্তির দাবিদার এ দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক দল। শক্তির পরিমাপে এসব দল বাংলাদেশের রাজনীতির প্রায় ৭০ শতাংশ শক্তির অধিকারী। উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। তাতে ফলও হয়েছে আশাতীত। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুললে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে পপাতহীন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাবস্থা করতে সরকার বাধ্য হবে; না হয় একতরফা নির্বাচন তো দূরের কথা, জনরোষে পড়ে লেজ গুটিয়ে তাদের মতা থেকে বিদায় নিতে হবে। চাপ প্রয়োগ ছাড়া কোনো দাবি আদায় হয়েছেÑ এমন নজির রাজনীতিতে নেই। সরকারের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়Ñ এখন পর্যন্ত এমন কোনো শক্তিশালী গণ-অন্দোলন বিরোধী জোট গড়ে তুলতে পারেনি। গণ-আন্দোলনকে একটি যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া ছাড়া সরকারের টনক নড়বে বলে মনে হয় না। আসলে যেকোনো গণ-আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা অপরিহার্য; আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ছাড়া সফলতা আসে না। আর একটি গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে এবং তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে, চার পাশ থেকেই আন্দোলনের পে সাপোর্ট আসতে হয়; শুধু কর্মী বাহিনীর ওপর নির্ভর করে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা যায় না। এর জন্য পেশাজীবী, লেখক-সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন ও সক্রিয় অংশ নেয়া প্রয়োজন। এই সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই জনমত সংগঠিত হয় এবং একটি গণ-আন্দোলনের প্রোপট তৈরি হয়। কাজেই গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার েেত্র বিরোধী জোটকে সব মেশিনারিজ সক্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নির্দলীয় সরকার ইস্যুতে বিরোধী জোটের সাথে শাসকদলের দূরত্ব এখন চরমে। এ ইস্যুতে সরকারের প থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বিরোধী জোট তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরবে না। সরকারও তার সিদ্ধান্তে অটল। এ ব্যাপারে কোনো আলোচনায় বসতে চাচ্ছে না। এই পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থায় কার্যত রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পথ বেরিয়ে আসছে না। এ অবস্থায় বিরোধী জোটের রাজপথে নামা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। শাসকদলের নেতারা দেশটাকে মগের মুল্লুক পেয়েছেন, তারা বিরোধী দলকে বলছেন হাসিনাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মেনে নিতে। তাদের কাছে প্রশ্ন, তারা কি ২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে মেনে নিয়েছিলেন? মেনে নেননি, তা হলে একজন রাজনৈতিক দলের প্রধানকে (শেখ হাসিনা) বিএনপি মেনে নেবে কোন যুক্তিতে? নির্দলীয় ও নিরপে সরকার শুধু বিরোধী জোটের দাবি নয়, এটি জনদাবি। এটি নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ দাবিতে বিরোধী জোট যেখানে জনসভা ডেকেছে, সেখানেই সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে; মানুষের অভাবনীয় সারা সেখানে ল করা গেছে। রাজনীতির স্বকীয়তা সেখানে ফুটে উঠেছে। কার্যত এটি এখন বাংলাদেশের রাজনীতির মূল বিষয় হয়ে আবির্ভূত হয়েছে, দেশের সব রাজনৈতিক দল একবাক্যে এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। কেননা একটি সুষ্ঠু, পপাতহীন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কেবল নির্দলীয় ও নিরপে সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত করা সম্ভব; কোনো দলীয় সরকারের অধীনে এটি আশা করা অবান্তর। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে মধ্য-আয়ের দেশের দিকে। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা জরুরি। কে বা কোন দল মতায় গেল, সেটি বড় করে না দেখে, দেশকে বড় করে দেখতে হবে; গোটা দুনিয়া বাংলাদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন দেখতে চায়, কেননা এর মধ্যেই তারা সৃজনশীল, পরিচ্ছন্ন ও অর্থনৈতিকভাকে অগ্রসরমান এক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads