রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জনগণের চাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া দরকার


বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে রূপ দেখা যাচ্ছে, তাতে গণতন্ত্র শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে একটু ভয় আসে। গণতন্ত্রকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে শাসক গোষ্ঠী। দেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ভালোবাসে বলেই সব সময়ই প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ভোট দিতে কখনো পিছপা হয়নি। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র এসেছিল সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করার জন্য। আর সে সুযোগে যারাই মতায় আসীন হয়েছেন তারাই গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন। গণতন্ত্র হোঁচট খেলেও বন্দিদশা থেকে বারবার মুক্ত হয়ে ফিরে এসেছে জনতার মাঝে। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে গণতন্ত্রকে মর্যাদা দিচ্ছে না। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল গণতন্ত্র সুরার প্রয়াসে। বাংলাদেশের রাজনীতি সব সময়ই ছিল অস্থির ও সঙ্ঘাতময়। এই অস্থিরতার পথ ধরেই আমরা এক একটি সরকারের সময় অতিক্রম করে আসছি। মহাজোট সরকারের মেয়াদ আর বেশি দিন নেই। এ দেশের মানুষ মহাজোট সরকারকে মতায় বসিয়েছিল গণতন্ত্রকে রা করার জন্য ধ্বংস করার জন্য নয়; কিন্তু বিধি বাম যে যায় মতায় সে হয়ে যায় রাজতন্ত্রের সুকৌশলী। এ দেশের মানুষ খুবই সহজ সরল হওয়ায় বাজিকরেরা যা বলেন তাই তারা বিশ্বাস করে থাকেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল ১০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে সার আর ঘরে ঘরে চাকরি; কিন্তু এরা মতায় আসার পর পরই জনগণকে তাদের দেয়া সব প্রতিশ্রতি আর নির্বাচনী ওয়াদা বেমালুম ভুলে গেলেন। বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও এক শ্রেণীর মিডিয়া থেকে শুরু করে সরকারপ্রধান পর্যন্ত সবাই হেফাজত ও ১৮ দলীয় জোটকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য এ দেশের মানুষ যেন আর ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলোকে সমর্থন না করে। বিশেষ করে নানা কূটকৌশলে জামায়াতে ইসলামীকে অস্তিত্বহীন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৪২ বছরে জামায়াত প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচন করেছে। সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে হতাশায় ভুগছেন দেশবাসী। নির্বাচন হবে কী হবে না। আর হলেই সে নির্বাচন কি একতরফাভাবে সরকার করবে, নাকি তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিতে করবে? এ রকম হাজারো প্রশ্ন নিয়ে প্রতিদিনই বেসরকারি টেলিভিশনে দেশের বিশিষ্টজনেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তিনি বলেছেন, আমি সব সময় বলে আসছি নির্বাচন হবে না। মতা ছাড়ার সম্ভাবনা আছে এমন কোনো নির্বাচন আওয়ামী লীগ করবে না। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে সে নির্বাচন অর্থবহ হবে না। পৃথিবীর কোথাও সংসদ বহাল রেখে নিবার্চন হয় তা আমার জানা নেই। সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনের টকশো ফ্রন্ট লাইনে ১৮ আগস্ট তিনি এসব কথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে জাতীয় দৈনিক ইংরেজি পত্রিকা নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবির বলেছেন, আওয়ামী লীগ ৯৬ সালে বিএনপিকে যেভাবে রাজপথের আন্দোলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিতে বাধ্য করেছিল বিএনপিও যদি এবার আওয়ামী লীগকে সেভাবে বাধ্য করতে পারে তবে সমাধান একভাবে হবে। না হয় ইতিহাস তার আপন গতিতে চলবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি বেআইনি পথে মতার পথ দীর্ঘায়িত করতে চায় তবে ইতিহাসের পরিণতি তাকে ভোগ করতে হবে। ইতিহাসের কাছে কেউ ছাড়া পায়নি তারাও পাবে না। ইতিহাসকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার সাধ্য কারো নেই। ইতিহাস কাউকে মা করতে পারে না। আমরা যদি একটু পেছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করে যে গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়েছিল, সেই দিন থেকেই বাংলাদেশ নামক দেশটির গণতন্ত্রের দাফন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমে এসেছে বলে তারা দিশেহারা।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads