বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কঙ্কাল কথা বলতে শুরু করেছে


হেফাজতের ওপর শাপলা ট্র্যাজেডি চাপানোর পর অনেক সময় গড়িয়ে গেছে। তারপরও নানা বিতর্ক ও গুজব এখনো সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সরকার ক্র্যাকডাউনের পর বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল। সৈয়দ আশরাফের ভাষায়Ñ লেঙ্গুড় তুলে রাজাকার-আলবদরদের ছেলেপুলে, নাতি-পুতিরা পালিয়েছে। আমরা বলেছিলাম, এত আস্ফালন ভালো নয়। হেফাজত ইস্যু সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে ভোগাবে, পোড়াবে। হয়তো বা পতনও নিশ্চিত করবে। আমাদের মন্তব্যের জের চলছে। আরো দীর্ঘ দিন চলবে। মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের অন্যায় ও অন্যায্য যুদ্ধ বিধাতা সহ্য করেন না। মানুষ মানুষের অপমান করুকÑ এটা বিধাতা চান না। এখন লাশের সংখ্যা, ভাগাড়ের কঙ্কাল, অধিকারের বক্তব্য, আদিলুর রহমানের গ্রেফতার ও হেফাজতের সর্বশেষ বিবৃতি সরকারের বিরুদ্ধে দুধারী করাত। দুদিকেই সমানে কাটছে। ভাগাড়ে পাওয়া কঙ্কালও যেন কথা বলতে শুরু করেছে। এরিখ মারগোলিস জগৎখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক। তিনি নাই শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। আফগানিস্তানের মাটিতে পোঁতা লাশগুলো সম্পর্কে তার মন্তব্য ছিল, মার্কিন সৈন্য ও সৈন্যদের নির্দেশদাতারা একদিন পতনের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে আফগান প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা শুনতে পাবেন। জানি না আমাদের ভাগ্যে কী ঘটবে। ভাগাড়ে পাওয়া কঙ্কালগুলো সৃষ্টির সেরা তথা আশরাফুল মখলুকাতের দেহের বিচ্ছিন্ন হাড়গোড়। বিচ্ছিন্ন হাড়ের সাথে রক্ত-মাংস শুকিয়ে আছে। অবশিষ্ট রক্ত-মাংস পচে গলে নিঃশেষ হয়ে গেছে। মাথার খুলি উদোম হয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হাত-পায়ের অংশ চিহ্নিত করা যাচ্ছে। যে বীভৎস দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না তা-ও দেখা যাচ্ছে কিংবা দেখতে হচ্ছে। সৃষ্টির সেরা মানুষের লাশ থাকার কথা কবরে। অথচ হতভাগ্যদের দেহাবশেষ পাওয়া গেল মাতুয়াইলের ময়লার ভাগাড়ে। সিটি করপোরেশনের ভাগাড় থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় বনিআদমের এ হাড়গোড় উদ্ধার করা হলো। মানুষ ও মানবতার এত অপমান-অসম্মান দেখেও ক্ষমতার টনক নড়ে না। বিবেক জাগ্রত হয় না। বস্তার মধ্যে দুটি মাথার খুলি দুজনের লাশের বিষয়ে ধারণা দেয়। তবে আলামত বলছে লাশের সংখ্যা আরো বেশি হবে। ধারণা করা হচ্ছেÑ আট-দশটি লাশ হতে পারে। মাথার খুলি হয়তো এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের হত্যা করে লাশ লুকানো হয়েছিল কি না তদন্ত করেও দেখা হয়নি। পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টাও জোরালো নয়। হাড়গোড়ের পরীা করতে প্রচুর সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন, কেন এত অবহেলা কিংবা রাখঢাক। আমরা কেউ কি নিশ্চিত করে বলতে পারি আমাদের মৃত্যু কিভাবে হবে, কোথায় হবে, কখন হবে আর লাশের ভাগ্যে কী জুটবে? তাহলে আমাদের বোধোদয় ঘটছে না কেন? আমরা কেন এত পাষণ্ড কিংবা নিষ্ঠুর-বর্বর। বেশুমার খুন, গুম, গুপ্তহত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জোরদার আলোচনার প্রেক্ষাপটে মানুষের দেহাবশেষ উদ্ধারে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দেয়াটাই স্বাভাবিক। আজকাল খাল-বিল-ঝিলেও লাশ পাওয়া যায়। কঙ্কাল পাওয়ার শুরুতেই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে। তারপর আর কোনো সন্তোষজনক খবর নেই। এ যেন ভাগাড়ে মাছের কানকো, মরা বেড়ালের ছানা অথবা উচ্ছিষ্ট খুঁজে পাওয়ার মতো সাধারণ ঘটনা। পথশিশু বা টোকাইরা যেন আমাদের আস্ফালন এবং ক্ষমতার দম্ভকেই উদোম করে দিলো। পথশিশু নামের টোকাইরা ময়লার স্তূপে ভাঙারিসামগ্রী খুঁজতে গিয়ে প্লাস্টিকের বস্তার পাশে মাছি ভন ভন করে উড়তে দেখে মানুষের হাড় ও কঙ্কালের অস্তিত্ব টের পায়। তারপর পরিছন্নতাকর্মীরা দেখতে পান মৃত মানুষের মাথার খুলি, পা ও শরীরের হাড়গোড়। এ যেন ধর্মের কল বাতাসে নড়ার মতো ব্যাপার। অতঃপর ঘটনাটি পুলিশ হয়ে সরকারের কানে পৌঁছে যায়। মাথার খুলি, হাত ও পা এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের খণ্ডিত মোট ১৬ টুকরো হাড় উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এখনো ঘটনা ডিএনএ পরীা-নিরীার পর্যায় রয়ে গেছে। সেই সাথে চলছে নানা টালবাহানা। ময়লার ভাগাড় থেকে উদ্ধার করা সব হাড়গোড় ও মাথার খুলি মিলিয়ে কটি লাশ হবে সে সম্পর্কে কেউ এখনো নিশ্চিত নন। পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বর্জ্যরে মধ্যে পড়ে থাকা ১০টি বস্তায় থাকা লাশের হাড়গোড় উদ্ধার করে সাদামাঠাভাবে বলছে ময়লার ডাম্পিং থেকে মানুষের হাড়গোড় ও কঙ্কাল পাওয়া গেছে। এর সাথে যে শত প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে সেটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। হাজার হাজার উৎসুক মানুষ যে প্রকৃত সত্যটা কী তা জানতে চাচ্ছেÑ সে ব্যাপারে সরকার মোটেও জবাবদিহির স্তরে নেই। রাজধানীর মাতুয়াইলের ভাগাড়ে পাওয়া কঙ্কালগুলো কাদের, কারা তাদের হত্যা করে লাশ এখানে রেখে গেছে তা নিয়ে কেউ মুখ খুলছে না। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কত মানুষের কঙ্কাল রয়েছে সে ব্যাপারেও এখনো কেউ নিশ্চিত হতে চাচ্ছে না। উদ্ধারকৃত কঙ্কালের মধ্যে কোনো মহিলার কঙ্কাল রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তি মেলেনি। এমনকি এসব তথ্য উদঘাটন করতে পুলিশ, ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ফরেনসিক বিভাগের কোনো তৎপরতাও সন্তোষজনক নয়। ভাগাড় থেকে এত কঙ্কাল উদ্ধারের খবরে দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলো। সরকারের সতর্কতা বলতে ভাগাড়ের আশপাশে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এমনকি সাধারণ মানুষকেও সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। জনমনে ঘুরে ফিরে একই প্রশ্নÑ এ রকম সংরক্ষিত এলাকায় এত কঙ্কাল কিভাবে নেয়া হলো। কারা নিলো। মানুষ জানতে চাইছে এই লাশগুলো কাদের তা জানার জন্য জনগণ উদগ্রীব হলেও সরকার নীরব। পিলখানা ট্র্যাজেডির ব্যাপারে সরকারকে দায়সারা অবস্থায় প্রত্যক্ষ করলাম। রানা প্লাজার লাশ, আহত-নিহতের সংখ্যা, জীবিতদের পুনর্বাসন, মাওলানা সাঈদী ইস্যুতে গণহত্যার সংখ্যা, শাপলা ট্র্যাজেডিতে হতাহতের সংখ্যা, রামু ও ফটিকছড়িতে ক্ষয়ক্ষতিÑ কোনো ব্যাপারে সরকারকে দায়িত্বশীল ও যৌক্তিক অবস্থানে পাওয়া গেল না। ভাগাড়ে পাওয়া কঙ্কাল নিয়ে এখন চলছে চরম অবহেলা ও লুকোচুরি। কারো যেন কোনো গরজ নেই। পরিকল্পিতভাবে এক সময় প্রচার করা হলো কঙ্কালগুলো মেডিক্যাল ছাত্রদের। অথচ কঙ্কালগুলো মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে এমন তথ্যকে নাকচ করে দিয়েছেন কয়েকটি সরকারি হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসকেরা। সাধারণত যে লাশটি কেটে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় তার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাবোধ রেখেই কাজ করা হয়। শিক্ষার্থীদের বলা হয়, এই লাশগুলো কাটা হলেও তিনি আমাদের মতো মানুষ ছিলেন। অন্য মৃত মানুষের লাশের প্রতি যেভাবে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো হয় ছাত্রদের শেখানোর কাজে ব্যবহৃত ওই লাশটির প্রতিও সেরূপ সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখানো হয়। সুতরাং সেই লাশ কোনো ভাগাড়ে ফেলার প্রশ্নই ওঠে না। এক সময় একটি মহল কঙ্কালগুলো অ্যানাটমি বিভাগের বলে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। এর প্রচারে নামানো হয় পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে। তারা মিডিয়াকেও ম্যানেজ করতে চেয়েছেন। দুর্ভাগ্য কঙ্কাল ও হাড়গোড় উদ্ধারের পর থেকেই তা নিয়ে চলছে নানা ধরনের লুকোচুরি ও রাখঢাক। সতর্কতার সাথে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই চোখে পড়ে। এভাবে পুরো বিষয়টিকে কেন রহস্যাবৃত করা হচ্ছেÑ তারও সদুত্তর নেই। হাড়গোড়ের কিছুই অক্ষত ছিল না। পুলিশ কর্মকর্তা কিভাবে নখে নেইল পলিশ খুঁজে পেয়েছিলেন তা-ও শত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে ব্রিফিং দিতেই বা গেলেন কেনÑ এভাবে বিষয়টি নিয়ে আরো বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। জটিল করা হচ্ছে সন্দেহপ্রবণ মানুষের প্রশ্নবিদ্ধ চিন্তাকেও। গুজবগুলোকেও বাস্তবতা দেয়া হয়ে যাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করেছি, ঘটনার পর থেকেই ঘিরে রাখা হয়েছে ময়লার ওই ভাগাড়। কাউকে সেখানে ঢুকতে দেয়া হয় না। এমনকি সংবাদকর্মীরাও ঢুকতে পারেন না। সেখানে কি গোপনে আরো অনুসন্ধান চলছে। যে অনুসন্ধানের ফলাফল জনগণ কোনো দিন জানবে না। যে দেশে গুম সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে, সে দেশে লাশ ও লাশের কঙ্কাল গুম করা হবে না, তা কি হলফ করে বলা যায়! সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ভাগাড় থেকে কঙ্কাল উদ্ধারের তদন্ত থেমে গেছে। সরকার বুঝতে পারছে না কঙ্কালরহস্য ভেদ করতে না পারলে ভবিষ্যতেও কম করে সাতটি প্রশ্নের অবয়বে বিভিন্নভাবে নানা জিজ্ঞাসার জন্ম দিতেই থাকবে। এর প্রত্যেকটি সরকারকে কুরে কুরে ঘায়েল করবে। ঘুরে ফিরে প্রশ্ন উঠবেই লাশগুলো কার, কয়টা লাশ, কারা ভাগাড়ে ফেলল, নারী ও মেডিক্যাল ছাত্রদের বলে প্রচারণা চালানো হলো কেন, কেন সরকার সক্রিয় নয়, তদন্ত তৎপরতায় নিষ্ক্রিয়তার কারণ কী? হেফাজতের লোকদের ধারণা লাশগুলো তাদের, যা ৬ মে ট্র্যাজেডির সময় পরিকল্পিতভাবে বাতি নেভানো অবস্থায় রাতের অন্ধকারে পুলিশ ময়লার গাড়িতে করে সরিয়ে নিয়ে ভাগাড়ে ফেলেছে। এই প্রচারণার ডালপালা মেলার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। সরকার বলেছে ওই রাতে শাপলা চত্বরে গুলি হয়নি, লাশ পড়েনি, হেফাজতের লোকেরা ভড়ং করে রঙ মেখে শুয়েছিল, অবশেষে লেঙ্গুড় তুলে পালিয়েছে, কুরআন পুড়ে তাণ্ডব করেছে। কোনো কোনো সরকারি মুখপাত্র বলছেন, একটি লাশের প্রমাণ মিললে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। আবার অধিকার ৬১ লাশের তালিকা দিতে চেয়েছে তদন্ত কমিটি হলে। পুলিশ এক সময় ১৭ লাশের হদিস দিয়েছিল। হেফাজত বলছে, তাদের কাছে বেশুমার হতাহতের সাথে লাশের তালিকাও আছে। তদন্ত কমিটি হলে জমা দেবে, নয়তো নয়। সেই রাতে আশপাশের মানুষ শাপলা চত্বরে গোলাগুলির বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে। বলা হলো একটা গুলিও হয়নি। যুগান্তর লিখল বেশুমার গুলি খরচের হিসাব। কাউকে প্রতিবাদ করতে শুনিনি। রক্তাক্ত এলাকা পানি ঢেলে ধোয়া হলো; বলা হলো, রঙ মেখে হেফাজতের লোকেরা শুয়েছিল। রক্ত ধোয়া হলো, না রঙ পরিষ্কারে এত পানি ঢালা হলো তারও সদুত্তর পাওয়া গেল না। এ সব কিছু কি মুছে যাবে, গুজব বলে উড়িয়ে দেয়া যাবে? একটা মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে মিথ্যার কথামালা সাজাতে হবে? এ সব জিজ্ঞাসার জবাব পেতেই হবে। বর্বর পাকিস্তানিরা শত চেষ্টা করেও কিছুই লুকাতে পারেনি। যা-ও বা লুকাতে চেয়েছে তা হাজার গুণ ফেঁপে ফুলে প্রকাশ পেয়েছে। মৃতের তালিকার কথা বলে অধিকার এখন কাঠগড়ায়। হেফাজত হয়রানির মুখে। রাতের দৃশ্য প্রচারের অভিযোগে গণনন্দিত দুটি টিভি চ্যানেলে তালা ঝুলছে। অধিকারের মুখপাত্র জেলে। মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠনগুলো বলছে সরকার পুরো মানবাধিকারকে কারাগারে ঢুকিয়ে বন্দী করে রেখেছে। এখন সত্যাসত্য চিহ্নিতকরণ ও প্রমাণ করার দায় সরকারের। সঙ্গত কারণেই সব অভিযোগের তীর সরকারের দিকে। বর্তমান সরকার দায়মুক্ত হতে না চাইলেও এক সময় তদন্ত কমিটি হবে, হতেই হবে। তাই সরকারের উচিত হেফাজত ও অধিকারের অভিযোগ খণ্ডানোর জন্য হলেও তদন্ত কমিটি করা। গোয়েন্দা দিয়ে সরকার তালিকা ভুল প্রমাণ করতে গেলে অধিকার বললÑ গোয়েন্দাদের তথ্য-উপাত্ত ও তাদের তালিকা এক নয়। হেফাজতও গোয়েন্দা তথ্য নাকচ করল। তাহলে সরকার আবারো ভুল পথে হাঁটতে চাইল। এখনো সময় আছে, দুর্বলতা না থাকলে হেফাজতের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন, বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন, সরকারের পছন্দমতো একজন ও সুপ্রিম কোর্ট বার ও ঢাকা বারের নির্বাচিত একজন করে আইনজীবীর সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। অবিতর্কিত একজন উচ্চ আদালতের সাবেক বিচারপতিকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে দুজন মানবাধিকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বকেও রাখা সম্ভব। তবে পুলিশ, বিডিআর, র‌্যাব ও প্রশাসনসংশ্লিষ্ট কাউকে রাখা যাবে না। একই সাথে আজ্ঞাবহ ড. মিজান কমিশনকেও পরিহার করতে হবে। আমরা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসনের স্বার্থে একটি গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিটি চাই। আমাদের এমন প্রস্তাবই গ্রহণ করতে হবে, তা বলছি না। তবে গ্রহণযোগ্য বিশ্বস্ত তদন্ত জরুরি। নয়তো জনগণ হেফাজত ও অধিকারের বক্তব্যের সত্যতা ধরেই ভাগাড়ে পাওয়া কঙ্কালের ব্যাপারে একটা উপসংহার টানতে চাইবে। ভবিষ্যতে ভাগাড়ে আরো লাশের সন্ধানে খোঁড়াখুঁড়ির দাবিও জোরদার হবে। এক সময় কঙ্কালের হাড়গোড়গুলোও কথা বলতে শুরু করবে। তখন পাপের বোঝা অনেক বেড়ে যাবে। প্রায়শ্চিত্তের ধরনও পাল্টে যাবে। সত্যকে চাপা দিয়ে রাখা মানুষের সাধ্যাতীত। সত্য আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবেই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কুরআন পোড়ার জন্য হেফাজতকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের বক্তব্যকে গণমানুষ চাতুর্যের বিষয় ছাড়া আর কিছুই ভাবছে না। কারণ সরকার সততার সাথে ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করছে না। যারা দাবি করছেন তারা কুরআনের দাবি পূরণের জন্য রাস্তায় নেমেছেনÑ তাদের বিরুদ্ধে কুরআন পোড়ানোর অভিযোগ জনগণ বিশ্বাস করবে কোন দুঃখে? ব্যক্তি আলেম মন্দও হতে পারে কিন্তু আলেম ওলামা সামগ্রিকভাবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য। এখনো তারা সৎ, নিরাপদ এবং নৈতিক শিক্ষার গুরুর স্তরে অবস্থান করছেন। তাদের বিশ্বস্ততা রাজনীতির কালিমামুক্ত। প্রধানমন্ত্রী কিছু বখে যাওয়া ধর্মবিদ্বেষী কিংবা ধর্মদ্রোহী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেকে আলেম-ওলামাদের প্রতিপক্ষ বানাচ্ছেন। কখনো কখনো মদিনা সনদের দোহাই দিচ্ছেন। আলেম ওলামা ও দ্বীনদারদের অসম্মান কিংবা অভিযুক্ত করে তিনি কোন মদিনা সনদ চানÑ তা কি ভেবে দেখবেন না? তা ছাড়া মদিনা সনদ ধর্মনিরপেক্ষও নয়, রাজনীতির গাঁজাখোরী গল্পও নয়Ñ সেটি আল্লাহ ও আল্লাহর নবীর ইচ্ছারই প্রতিফলিত অধ্যাত্মবাদমণ্ডিত নীতিমালা। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads