বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

নৈতিক অবক্ষয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের করুণ চিত্র


আজ সমাজে নৈতিক অবক্ষয় মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। সমাজ কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ চরমভাবে লোপ পেতে বসেছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধারোধের অভাব আর নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে সমাজে অপরাধ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আগের বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় যে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় ছিলো, তাতে আজ ফাটল ধরেছে। সমাজ জীবনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ফলে নানারকম অপরাধ, খুন, ধর্ষণ, হাইজ্যাকিং, চুরি, ডাকাতি প্রতারণা ইত্যাদি প্যারাসাইটের মতো সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। ছেলেমেয়ে আজ পিতা-মাতা ও বয়ঃজ্যেষ্ঠদের আর আগের মতো শ্রদ্ধা করে না। তারা পিতা-মাতার উপদেশও ভ্রƒক্ষেপ করে না। অনেক ছেলে-মেয়ে অন্ধকার জগতে পা বাড়ায়। তারা অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাই পরিবার থেকে সন্তানদের অনুশাসন এবং মাদকাসক্ত বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।
সমাজে চলমান অপরাধের তালিকায় খুন বাড়ছেই। সর্বশেষ সন্তানের হাতেই পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক ও তার স্ত্রী খুন হয়েছেন। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে নিহত পুলিশ দম্পতির মেয়ে ঐশী মাদকাসক্ত ছিলো, রাজধানীর একটা ইংরেজি স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী। ইয়াবা সেবনও করতো বলে জানা গেছে। সমাজের এই বেড়ে ওঠা অপরাধপ্রবণতা সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পশ্চিমা সমাজের নেতিবাচক দিকের অন্ধ অনুকরণ এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এর জন্য অনেক দায়ী। তাছাড়া পারিবারিকভাবে সন্তানের ব্যাপারে পিতা-মাতাও পরিবারের উদাসীনতা এবং তাদের আচরণ বুঝে তাদের সাথে ব্যবহার না করা এটাও একটা কারণ।
পাশ্চাত্য আধুনিকতার খারাপ দিকগুলো গ্রহণ, পরিশ্রম ছাড়াই সহজ কিছু পাওয়া এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সামাজিক মূল্যবোধের অভাবই সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনেক বিষয় আবহমান বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যে কারণে সমাজ ও নতুন প্রজন্ম খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশের যুব সমাজ আজ ভারতের হিন্দি আকাশ সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট। ঘরের ঝি-বৌ থেকে অধিকাংশ লোকই ভারতের টিভির সিরিয়ালসহ নানা অনুষ্ঠান দেখতে এত ব্যস্ত থাকে যে, তাদের  তাড়নায় বৃদ্ধরা দেশী টিভি’র প্রোগ্রাম দেখতে পান না বা দেখতে বাধা দেয়। ভারতে আকাশ সংস্কৃতি তথা বোম্বের যৌন সংস্কৃতি আজ বাংলাদেশের সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে পড়ছে। ফলে ছেলে-মেয়েরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গুরুজন সন্তানদের প্রথম থেকেই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও ভারতের হিন্দিমার্কা সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত না রাখলে এ সব সন্তান বিপথগামী হওয়াটাই স্বাভাবিক। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনেক বিষয় বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যে কারণে আজ নতুন প্রজন্ম খারাপ হচ্ছে।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে সমাজ জীবনের কাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে। সমাজ এখন জটিল হয়ে গেছে। আগের মতো সেই সামাজিক মূল্যবোধ নেই। সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের এবং বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের পারস্পরিক সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে অনেক শিথিল হয়ে গেছে। এমনটি আগে ছিলো না। এ ক্ষেত্রে বিদেশী স্যাটেলাইটকেও দায়ী করা যায়। তার প্রভাবে বিদেশী সংস্কৃতি সমাজে প্রভাব ফেলেছে। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে অনেক চোরাচালানি মাদক ব্যবসায়ীর মাদক চোরা চালান বন্ধ না করতে পারলে সমাজে অবক্ষয় হতেই থাকবে। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সরবরাহকারী ও গ্রহীতাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশের মানুষকে পাখির মতো গুলী করে মারলেও ভারত থেকে আসা মাদক চোরাচালানীদের তারা কিছুই বলছে না। ভারত বাংলাদেশের যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে মাদকদ্রব্য ও আকাশ সংস্কৃতি বাংলাদেশে চালান দিচ্ছে।
বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের প্রসার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে হচ্ছে। অথচ তা তারা প্রতিরোধের তেমন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এমন অভিযোগও রয়েছে যে, মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে পুলিশের কোন কোন সদস্য মাসোহারা পেয়ে থাকে। তাই রাস্তার অলি-গলিতে এই মরণ নেশার ছোবল ছড়িয়ে পড়ছে। ফেনসিডিল, চরস, ভাঙ, ইয়াবা, শিশা ইত্যাদি সবই এখন নেশাখোরদের হাতের নাগালে। ফলে এটা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারীতে থাকলে মাদকদ্রব্যের এমন ছড়াছড়ি হতে পারতো না। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত উভয় দেশের নিরাপত্তা বাহিনী কড়াকড়িভাবে মাদকদ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ করলে মাদকের প্রাপ্তি সহজলভ্য হবে না। দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এর জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরটি একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠান। এর জনবল ও যন্ত্রপাতির প্রকট অভাব। প্রেষনের লোক দিয়ে এ দফতর চলছে। তাই তারা কাজে তেমন নিষ্ঠাবান নয়। মাদকাসক্ত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলোও প্রায় অচল। মাদক অধিদফতরকে ঢেলে সাজাতে হবে। সরষের মধ্যে ভূত থাকলে সে ভূত তাড়ানো যায় না। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সম্বন্ধে এ ধরনের অভিযোগ আছে।
আজকের সমাজ ব্যবস্থায় মা-বাবা ছেলেমেয়েকে তেমন সময় দেন না। তারা আধুনিক সমাজের উগ্র সংস্কৃতিতে ব্যস্ত আছেন। সভা-সমিতি ক্লাব ও দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য বৈধ-অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত। তাদের ছেলে-মেয়েরা কি করে কোথায় থাকে সে দিকে দৃষ্টিপাত করার সময় নেই। একান্ন পরিবার না হওয়ায় বাবা-মা চাকরি বা অন্য ব্যবসায় সম্পৃক্ত হলে বাচ্চারা গৃহে চাকর-চাকরাণী নির্ভর হয়ে পড়ে। আর তারা টেলিভিশন ছেড়ে দিয়ে হিন্দিমার্কা ছবি ও সিরিয়াল দেখে। বাচ্চারাও তাতে আকৃষ্ট হয়ে যায়। তারা টেলিভিশনে মারামারি, যৌন আবেদনময়ী প্রগ্রাম দেখে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে বিকৃত হতে থাকে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর যেসব সাথী ছাত্র-ছাত্রী পায় তারাও একই রোগে আক্রান্ত। তখন সংঘবদ্ধভাবে তারা খারাপ জগতের দিকে পা বাড়ায়। একজন নেশাগ্রস্ত বন্ধুর পাল্লায় পড়ে অন্যরা আকৃষ্ট হয়। উহার স্বাদ অনুভব করার জন্য প্রথমে অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে নেশা করা শুরু করে। পরে তাতে আসক্ত হয়ে যায়। বাবা-মা যদি তাদের ছেলেমেয়েদের সময় দিয়ে সঠিকভাবে পরিচালনা করতেন তবে আমাদের যুব সমাজের এই নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা যেত। ছেলেমেয়েকে সুনাগরিক, সুশিক্ষিত করার চেয়ে আর কোন বড় সম্পদ নেই। তাই সম্পদ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার জন্য লাগামহীন দৌড় ঝাঁপে পারিবারিক কোন লাভ না হয়ে ক্ষতিই হয়। সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও নৈতিক চরিত্রে উন্নত ছেলেমেয়েদের মত আর কোন বড় সম্পদ হতে পারে না। আগে যৌথ পরিবার ছিল। দাদা-দাদী, নানা-নানী ও সংসারের অন্যান্য সদস্যের ¯েœহ-মমতায় বাচ্চাদের লালন-পালন করলে ঐশীর মত দানব মেয়ে সৃষ্টি হতো না যে বাবা-মাকে হত্যা করতে এতটুকু দ্বিধা তার মনে জাগেনি। এই বাবা-মার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সে দিনে দিনে দানব হয়েছে। বাবা-মা তাকে কোন সময় না দেয়ায় সে বাইরে ১৫ জন বয়ফ্রেন্ড নিয়ে বিশৃঙ্খল জীবন যাপন করেছে। বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন যদি ঐশীকে ছোটবেলা থেকে সময় দিতো তবে সে এ খারাপ পথে অন্ধকার জগতে যেতো না। প্রত্যেক বাড়িতে যদি ধর্মচর্চা থাকতো তাহলে প্রত্যেকটি ঘর শান্তির নীড় হতো। যে কোন ধর্মই মানুষকে ভাল পথে চলায় উৎসাহিত করে। সে ধর্মীয় বন্ধনও আজ শিথিল হয়ে গেছে। মা-বাবারা ছেলেমেয়েদের ঘরে কোন ধর্মীয় শিক্ষা দিচ্ছে না। তাই তাদের মধ্যে বেহেস্ত-দোজখের চিন্তাও নেই। ন্যায়-অন্যায়ের বাছ-বিচার তাদের অন্তরে জাগে না। এই ঐশীরা যখন বাবা-মার নিকট থেকে প্রচুর চাহিদা মত টাকা-পয়সার যোগান পায় না তখন তারা বিগড়ে যায়, বাবা-মার প্রতি বিরূপ হয়। অর্থ সংগ্রহের জন্য বিকল্প পথ খোঁজে। তারা তখন নেশার ব্যবসায় জড়িয়ে যায়- সেই অন্ধকার জগতে তারা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ফলে তারা খুন, ডাকাতি, হাইজ্যাকও করে। এই চরিত্রের জন্য ঐশীরা বাবা-মাকে নিজ হাতে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। বাংলাদেশের সমাজে আজ এ রকম হাজার হাজার ঐশী তৈরি হয়ে যাচ্ছে। একে প্রতিরোধ না করতে পারলে সমাজ এক দানবীয় রূপ ধারণ করবে।
সমাজে তিন শ্রেণীর মানুষ আছে। এক শ্রেণী হতদরিদ্র বস্তিবাসী। তাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়াশোনা করে না। রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় এবং দলে পড়ে বিড়ি-সিগারেট টানা শুরু করে। পরে অন্ধকার জগতের দিকে পা বাড়ায়। নেশা খাওয়া শুরু করার পর তাদের অনেকেই আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মহারথীদের চোখে পড়ে। তারা তাদেরকে অর্থের প্রলোভন দিয়ে নেশার জিনিস ইয়াবা-সীসা ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করায় এবং একস্থান থেকে অন্যস্থানে বহন করে। পরবর্তীতে এসব ছেলেমেয়ে নিজেরাই সন্ত্রাসী হয়ে যায়। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা গৃহে বাবা-মার ¯েœহ-মমতা পায় ও তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে তাদের ছেলেমেয়েরা এখনও ভাল আছে। তারা গৃহে ধর্মীয় শিক্ষাও দিয়ে থাকে। তবে আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে এ মধ্যবিত্ত শ্রেণীতেও কিছু সন্তান বন্ধু-বান্ধবের খপ্পরে পড়ে খারাপ হচ্ছে। তবে তাদের সংখ্যা নগন্য। আর উচ্চবিত্তশীলদের লোকদের চরিত্র সবচেয়ে ভয়াবহ। বিত্তবানরা তাদের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য এমনসব জঘন্য কাজ করে যা পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলে। সন্তানরা তাদের আর্থিক অনৈতিক কর্মকা- ও অসৎ চরিত্রের আলামত থেকে তারাও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে যায়। বাসায় তারা বাবা-মার ¯েœহ-মমতা তেমন পায় না। তারা ঝি-চাকরের সংস্পর্শে থাকে। খালি বাসায় এসব গৃহকর্মীরা অধিকাংশ সময় টেলিভিশনে অশ্লীল সব প্রোগ্রাম দেখে। ঘরের বাচ্চারাও তাতে আসক্ত হয়। তারা যখন স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে তখন তাদের মতো বিগড়ে যাওয়া আরও বহু সাথী পায়। তারা তখন দলবেঁধে নেশাজাতীয় বস্তু ব্যবহার করে। তারা যেহেতু উচ্চস্তরের পরিবারের সন্তান, তারা প্রচলিত বেশি দামের নেশা করতে শুরু করে। আজ তারা ইয়াবা ও সীসায় আকৃষ্ট। এসব খেয়ে ছেলেমেয়ে মিশে নানা অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়। বাবা-মার কাছে চাইলে অর্থ পাওয়া যায়, তাই তারা বল্গাহীন হয়ে ওঠে। যখন বাবা-মা অর্থ জোগাতে অস্বীকার করে ও শাসন করতে চায় তখন তারা বিগড়ে যায়। সে সময় তারা বাবা-মাকে খুন করতেও দ্বিধা করে না, যা করেছে ঐশী। এ রকম শত শত ঐশী সমাজে তৈরি হয়ে গেছে। তাছাড়া বাসা থেকে টাকা না পেয়ে এরা নিজেরাই নেশাদ্রব্যের ব্যবসা শুরু করে বড় বড় নামী-দামী হোটেলে বা বিশেষ কতকগুলো স্পটে। ঢাকা শহরে নাকি ৩০০ স্পট আছে। হোটেল মালিকরা তাদের আর্থিক লাভের নেশায় হোটেলের এক বিশেষ জায়গায় এই নেশার ব্যবস্থা করে দেয়। উচ্চ শ্রেণীর এসব ছেলেমেয়ে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করে যেখানে নীতি শিক্ষার কোন ব্যবস্থাই নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা তাই লাগামহীন এক পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হয়। তারা সমাজ চিত্রকে নষ্ট করছে। প্রায়ই পত্রিকায় এসব উঁচু শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের অনৈতিক কা-ের সচিত্র ছবি দেখা যায়। তারা খুন, ডাকাতি, হাইজ্যাকিং ও সমাজের অন্যান্য অপকর্ম করে। এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতারা তাদেরকে খুন-খারাবী করার জন্য বা রাজনৈতিক কোন সভাকে বানচাল করার জন্য ভাড়াটে হিসেবে ব্যবহার করে সমাজকে আরও নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
 ছেলেমেয়েরা আমাদের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। তাদেরকে মানুষ করতে পারলে তার চেয়ে আর কোন বড় সম্পদ হতে পারে না। তাই শিশুদের প্রত্যেক পিতাকে সময় দিতে হবে। তাদেরকে আদর-যতেœ মানুষ করতে হবে। ছোটবেলা থেকে তাদেরকে ধর্মীয় রীতিনীতিতে অভ্যস্ত করতে হবে। গৃহে তাদের ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বাবা-মা তাদের জীবনে এমন কোন খারাপ আচরণ করবে না যার খারাপ প্রভাব শিশুদের কচি মনে আঘাত হানতে পারে। বাসায় ঝি-চাকরকে স্বাধীনভাবে টেলিভিশন দেখতে দেয়া উচিত নয়। তারা খারাপ প্রোগ্রাম দেখে এবং তার প্রভাব শিশুদের ওপর পড়ে। বাংলাদেশে ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতির যে আগ্রাসন চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের কোন চ্যানেল পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতে দেখাবার অনুমতি সে দেশের সরকার দিচ্ছে না। আমি বুঝি না বাংলাদেশ সরকার কেন এসব ভারতীয় চ্যানেল বাংলাদেশে বন্ধ করছে না। ইহা কোন সরকারই করেনি। এর রহস্যটা আমার বোধগম্য নয়। ইহাসহ সব বিদেশী চ্যানেল যাতে অশ্লীল বিষয় না দেখায়, তা বন্ধ রাখতে হবে।
বর্তমান সরকার শিক্ষা-ব্যবস্থা থেকে ধর্মীয় শিক্ষা ঝেটিয়ে বিদায় করার জিহাদ ঘোষণা করেছে। শিশু থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা সভ্য ও ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠছে না। প্রত্যেক ধর্মই চায় প্রত্যেকে একজন ভাল মানুষ হোক। ইসলামেই ইহা আরও দৃঢ়ভাবে কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ আছে। তার এ জগতের ভাল-মন্দ কাজের ফল সে পরজগতে পাবে। তাই একজন নিষ্ঠাবান মুসলমান কখনো কোন খারাপ কাজ করতে পারে না। সমাজে আজ যে উচ্ছৃঙ্খলা চলছে তা বন্ধ করতে হলে স্কুল-কলেজে ধর্মীয় শিক্ষা গুরুত্বসহকারে দিতে হবে। ধর্মহীন সমাজের কুপ্রভাব ইতিমধ্যে দেশে দেখা দিয়েছে ইহা বন্ধ করতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads