মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন

যত দিন যাচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে তত। সরকার তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা মানতে নারাজ। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের একটি অংশের দোহাই দিয়ে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সংবিধান থেকে তিনি এক চুল নড়বেন না।আজ যে সংবিধান থাকে কাল তা পরিবর্তন হয়ে যায়, পরবর্তী সংবিধানই তখন অনুসরণীয়। প্রয়োজনে আবার সংবিধান পরিবর্তন করে সেটা মেনে নিলে তো সংবিধান থেকে নড়া হচ্ছে না। সুতরাং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করতে সমস্যা কোথায়? গণমাধ্যমের জরিপ অনুযায়ী শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এমন অবস্থায় সরকার যদি অনড় অবস্থানে থাকে, তা হলে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা। সত্যকে স্বীকার করার মধ্যে পরাজয় থাকে না, বরং থাকে দায় পূরণ। যে সত্যকে স্বীকার করে সে-ই বিজয়ী। প্রধানমন্ত্রী যদি আজই ঘোষণা দেন যে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এবং এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করার জন্য বিরোধী দলগুলোর সাথে তিনি আলোচনা করবেন, এতে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমই প্রকাশ পাবে। নির্দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে নামেই হোক, দাবি মেনে নেয়ার পর বিরোধী দল বলতে পারে যে, তাদের আন্দোলনের মুখেই সরকার এ দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এ কারণে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা মেনে নিতে অস্বীকার করা যৌক্তিক হতে পারে না। বিরোধী দল যদি ক্ষমতায় যায়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাদের অধীনে নির্বাচন কখনোই মেনে নেবেন না। প্রধানমন্ত্রী অতীতে আন্দোলন করে এই ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছিলেন। তার নিজের জন্য যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়, সেটা অন্যদের জন্য বাতিল করে দেয়া অন্যায়। মইন-ফখরুদ্দীন সরকারের কথা প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন, সেটা তো ছিল একটা অসাংবিধানিক সরকার এবং মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। তাদের অপকর্মের কথা বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অস্বীকার করা কি উচিত? প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেন থেকে ঘুরে এসে বললেন ব্রিটেনে যেভাবে নির্বাচন হয় এ দেশেও সেভাবেই নির্বাচন হবে। এ কথায় দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে নাকি বিদেশপ্রেম, ভেবে দেখতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিগত তিনটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন এবং বাংলাদেশ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রাচীন সূতিকাগার গ্রিসও তাদের নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার মেনে নিতে যদি এই সরকার অস্বীকার করে, তখন সঙ্ঘাত সৃষ্টি হলে তাদেরকেই সেজন্য দায়ী হতে হবে। বিরোধী দল যদি ক্ষমতায় এসে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়, তবে জনগণ বর্তমান সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনতে পারে। কিন্তু এই সরকার যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বিসর্জন না দিয়ে, জনগণের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার মেনে নিতে গড়িমসি করে তখন জনগণ নিতে পারে। সরকারের শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেয়া এবং জনসমর্থনহীন বামদের এড়িয়ে চলাই উচিত।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads