বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

আওয়ামী রাজনীতির গতিধারা


বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকের শুরুতে ইউরোপের জার্মান রাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচনে এডলফ হিটলারের নেতৃত্বে নাজি তথা নাৎসি দল ক্ষমতা লাভ করে। ক্ষমতা গ্রহণের পর হিটলার নাজি গেস্টাপো ক্যাডারদের সহায়তায় সারা দেশে এক তাণ্ডব সৃষ্টি করে। হিটলারের নাজি গেস্টাপোর তাণ্ডবে সারা দেশে বিরোধী দল, সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ইহুদি সম্প্রদায় হত্যা, গুম, হানাহানির আতঙ্কে তটস্থ হয়ে পড়ে। যেমনিভাবে একুশ শতকের প্রথম দশকে, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর তাদের ক্যাডার যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মীদের দিয়ে সারা দেশে হত্যা, গুম, হানাহানির মাধ্যমে নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি করে। সর্বপ্রথম দেশের মানুষ অবাক হতবিহ্বল। এরপর আমরা দেখলাম পিলখানায় ৫৭ জনের নির্মম হত্যাকাণ্ড। এহেন হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর মানুষ এর আগে অবলোকন করেছে কি না জানা নেই। এমনি দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক ও খণ্ডকালীন যুদ্ধেও এমন হতাহত দেখা যায় না; কিন্তু এমন একটি বিপর্যয়কর দুর্ঘটনার ষড়যন্ত্রকারীদের স্বরূপ উন্মোচনে কোনো উদ্যোগ নেয়া হলো না, দোষীদের চিহ্নিত করা হলো না, কার স্বার্থে। এরপর চার দিকে হত্যা, গুম, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, ক্ষমতাবাণিজ্য, সিটবাণিজ্য ও গ্রেফতার বাণিজ্য অবাধে চলছে। প্রায় ৪০০-এর বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এনকাউন্টারের মাধ্যমে, যা পৃথিবীর সব মানবাধিকার সংস্থার বিবরণীতে প্রকাশ করা হয়েছে। বহু লোক এখনো নিখোঁজ। এরা জীবিত না মৃত তা কেউ জানে না। সম্প্রতি বেশ কিছু বস্তাবন্দী কঙ্কাল মাতুয়াইলের ভাগাড়ে পাওয়া গেছে। তা হেফাজতে ইসলামের কর্মী কিংবা উপরে বর্ণিত নিখোঁজ ব্যক্তিদের কেউ কি না, কেউ জানে না। হতে পারে চৌধুরী আলম, ইলিয়াছ আলী বা জামায়াত ও শিবিরকর্মীর হাড় এর অন্তর্ভুক্ত। ভাগাড়ের কঙ্কালদের নিয়ে ইতোমধ্যে নানা খেলা শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতন্ত্রী দল হিসেবে প্রচার করে থাকে; কিন্তু এরা বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে নানা রকম বাধার সৃষ্টি করে। এমনকি এরা মানববন্ধনেরমতো একটি নিরীহ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে বাধা দিচ্ছে। হরতালে কোনো জ্বালাও পোড়াও ভাঙচুর হলে আওয়ামী সরকার বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ না করে কেস ফাইল করছে। নেতাকর্মীরা আতঙ্কিত। ধরা পড়লে শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও রিমান্ড টর্চার, গ্রেফতারবাণিজ্য, জামিনবাণিজ্য তো আছেই। বিরোধী দলকে মিছিল করতে দেয়া হয় না; কিন্তু আওয়ামী দলীয়দের পুলিশি পাহারায় মিছিল হরতাল করতে দেয়া হয়। আর বিরোধী পক্ষকে পয়েন্ট ব্লাক গুলি করে হত্যার হুকুম দিয়ে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন চার শকর্মী ও সাধারণ মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গত সাড়ে চার বছরের বর্তমান আওয়ামী আমলে দুর্নীতি অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে। ইতোমধ্যে শেয়ার মার্কেট লুট, হলমার্কের সরকারি ব্যাংক লুট (কর্তৃপক্ষের সহায়তায়), ডেসটিনির প্রতারণা বাণিজ্য, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, রানা প্লাজা, পদ্মা সেতু দুর্নীতি প্রভৃতি মারফত হাজার হাজার কোটি টাকা সরকার তদীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে। এমন কোনো বাণিজ্য নেই যেখানে এসব নেতাকর্মীর পদধূলিতে বিষাক্ত না হয়েছে। দেশের মানুষের সাধারণ ধারণা দেশের প্রত্যেকটি শাসনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সরকার কুক্ষিগত করে ফেলেছে বা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই দেখা যাচ্ছে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার মামলা করছে, পুলিশ গ্রেফতার করছে, তারপর কোর্টে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে এবং তা গ্রহণ করা হচ্ছে আর সেখানে এসব আসামিদের সাইজ করা হচ্ছে, তারপর জেলহাজতে পাঠিয়ে চলছে জামিনবাণিজ্য। এ হলো বর্তমান অবস্থা। মজার ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এমনকি তাদের এমপিদের বিভিন্ন সময় অস্ত্র হাতে এমনকি পুলিশের সাথে অস্ত্র হাতে বিরোধী পক্ষের মিছিলে আক্রমণে দেখা গেলেও এরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়, এমনকি সিলেটের কলেজের ছাত্রাবাসে আগুন দিতে দেখা গেলেও ওইসব অপরাধীকে মুক্ত অবস্থায় আমাদের চার পাশে চলতে ফিরতে দেখা যায়। যাবতীয় সরকারবিরোধী দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠককে বলছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি। চলছে আটক ও মামলা, অপহরণ ঘুম। বর্তমান আওয়ামী সরকার কিছুসংখ্যক বামপন্থীকে নিয়ে নিজেদের অতি প্রগতিশীল সাব্যস্ত করতে ইসলামি জীবন দর্শনকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে প্রয়াস পাচ্ছে। তা করে এরা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বা সেকুলার ঘোষণা করছে আর ইসলামপন্থীদের প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে ঘোষণা করছে এবং তাদের জঙ্গি কানেকশন আবিষ্কার করে পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলোকে খুশি করতে ও তাদের সহায়তার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই এরা বাংলার বেশির ভাগ মানুষকে সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দিচ্ছে এবং নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলে দাবি করে চলেছে। তাদের এ প্রচেষ্টা কখনো বাংলার মুসলমানদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতার নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। বাংলার মুসলমানদের উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আগেও ছিল না এবং এখনো নেই। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজকাল যেভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে, তেমনভাবে ছিল না। বর্তমানে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা যেখানে ১০ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘুর বাস, সে অঞ্চলের মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করুন কারা সাম্প্রদায়িক। ভুয়া চেতনার প্রচলনের প্রচেষ্টা বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৪৭ থেকে এখন পর্যন্ত তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক শাসকদের দিয়ে শাসিত হয়ে আসছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন মুসলমান তথা সংখ্যালঘুদের কী অবস্থা! আওয়ামী লীগ কী কারণে ইসলামি আদর্শের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে এ দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমানের ধ্যানধারণা প্রত্যাখ্যান করে ইসলাম ধর্মনিরপেক্ষতাকে তাদের আদর্শ হিসেবে বেছে নিলো তা বোধগম্যের বাইরে।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads