বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বর্তমান বিশ্ব এবং ভাদ্রের সাত কাহন


পৃথিবীর এখন যে হালহকিকত, তার বিরুদ্ধে তিনি যে কোন্্ ভাষায় নিন্দাবাদ করতেন তা আমরা এখন বলতে পারবো না। তবে ধারণা করতে পারি, তিনি বেঁচে থাকলে ‘বিদ্রোহী’র মতো কবিতার সংখ্যা আরও বেড়ে যেত। এখনতো ‘উন্নত মম শির’ বলার মতো লোকের দুর্ভিক্ষ চলছে। দেশে-বিদেশে অন্যায়-অবিচারের প্লাবন চলছে, অথচ তার বিরুদ্ধে দ্রোহের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দ্রোহ দূরে থাকুক, মৃদু ভাষায় সত্য উচ্চারণও কেউ করতে চাইছে না। অথচ নজরুল দেশের কিংবা বিদেশের কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। নজরুল রাজপুত্র ছিলেন না, দরিদ্র ঘরের এই সাধারণ মানুষটি শুধুমাত্র কর্মগুণে কোটি কোটি মানুষের অন্তর জয় করে নিয়েছেন। তার বিজয়ের মূলমন্ত্র ছিলÑ অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। তিনি শুধু কবিতা লেখেননিÑ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন। দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের মুক্তির জন্য জনপদে ছুটে গেছেন অভিযাত্রীর মতো। দেশের এবং বিদেশের শোষক ও জালেমদের বিরুদ্ধে ছিল তার আপসহীন লড়াই। অমর এই কবিকে আমরা দিয়েছি জাতীয় কবির মর্যাদা। কিন্তু আজ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের নেতা-নেত্রী, সমাজপতি ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি শুধু বচনেই নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে মেনে নিয়েছি? আমাদের আচরণে তো জাতীয় কবির চেতনার প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। মানুষ হিসেবে যদি এখন আমরা নিজেদের মূল্যায়নের চেষ্টা করি তাহলে লজ্জায় মাথা নত হয়ে যাওয়ার কথা। এমন অবনত মস্তকের মানুষ কী করে উচ্চারণ করবে, ‘উন্নত মম শির’র। তাই অনেক সময় মনে হয়, আমরা কেন নজরুলকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিতে গেলাম? জাতি যাকে ধারণ করতে পারে না, তাকে নিয়ে বাগাড়ম্বর প্রহসনের মতোই মনে হয়। জানি না, প্রহসনের এমন পরিবেশ থেকে কখন আমরা মুক্তি লাভ করতে পারবো।
আমরা আগেই বলেছি, সমকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা নজরুলের দৃষ্টি এড়াতে পারতো না। শুধু কাব্যে নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে তিনি দেশের সীমানা পেরিয়ে চলে গেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। নজরুল ভাল করেই জানতেন, পৃথিবী নামক ছোট্ট এই গ্রহের এক পাশের ঢেউয়ের আঘাত প্রভাব ফেলবে অন্য পাড়েও। এই বিষয়টি বর্তমান সময়ে আমরাও স্বীকার করছি, তাই তো আমরা পৃথিবীকে বলছি গ্লোবাল-ভিলেজ।  বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও গতির কারণে আসলেই পৃথিবী এখন যেন একটি ছোট্ট গ্রাম। তাই স্বদেশের মতো আন্তর্জাতিক বিশ্বের ঘটনা প্রবাহের প্রতিও আমাদের থাকতে হয় সচেতন। কিন্তু নজরুল যে অর্থে সচেতন থাকতেন আমরা কি সে অর্থে সচেতন আছি? পৃথিবীতে এখন শুভ-অশুভ কিংবা ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্ন যেন গৌণ হয়ে পড়েছে। সবাই যেন ছুটছে ব্রেড ও বাটারের পিছনে। অবশ্য এই ব্রেড ও বাটারের মধ্যেও রকমফের আছে। কেউ ছুটেছে লাল ব্রেডের পিছনে কেউ বা সাদা ব্রেডের পিছনে। ব্রেড ও বাটারের পিছনে ছুটতে গিয়ে মানুষের বিবেকে যেন আবরণ পড়ে গেছে। এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন শব্দও। তাই তো আজকাল মিডিয়া ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে মতান্ধ, দলকানা, দলদাস, জ্ঞানপাপী ইত্যাদি শব্দ। ব্রেড ও বাটারের অবয়ব এক রকম না। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র নেতাদের অনুগত রাখতে একরকম ব্রেড ও বাটার ব্যবহার করা হয়, দল ও ব্যক্তিদের কব্জায় রাখতে ব্যবহার করা হয় আবার অন্যরকম ব্রেড ও বাটার। বর্তমান সময়ে মিসরের সেনাবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র যে ধরনের ব্রেড ও বাটার দিচ্ছে তার আলোচনা চলছে ব্যাপকভাবে।
মিসরের সেনাবাহিনীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১.৩ বিলিয়ন ডলার দিয়ে থাকে। আমরা জানি যে, এই ডলারের কারণে মিসরে সেনাবাহিনী অনেকটাই কুপোকাত। ভাবতে অবাক লাগে, কোনো কারণে যুক্তরাষ্ট্র যাতে এই অর্থটা বন্ধ করে না দেয় সেই জন্য মিসরের সেনানায়করা ইসরাইলি সেনানায়কদের কাছে ধরনা দিতেও লজ্জিত হয় না। আরও মজার ব্যাপার হলো, মিসরের সেনানায়করা এখন কর্পোরেট বাণিজ্যেও জড়িয়ে পড়েছে। আরও ভয়ঙ্কর বার্তা হলো, মিসরের সেনাবাহিনীর এসব অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কোনো অডিট হয় না। এমন সেনাবাহিনী দিয়ে কি দেশের ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব? তাই তো মিসরের সেনাবাহিনীর গুলীতে এখন রাজপথে জনগণের রক্ত ঝরছে। মিসরের নীল নদ এখন জনতার রক্তে লাল হয়ে গেছে। মিসরের স্বৈরাশাসকদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে লালিত সেনাবাহিনী, আদালত ও আমলাদের গণতন্ত্রকে বড় ভয়। কারণ জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এসব কায়েমী স্বার্থবাদীদের দীর্ঘদিনের বিকৃত শাসন ও বিলাসী জীবনের অবসান ঘটবে। তাই তো ইসরাইল ও মার্কিন শাসকদের সাহায্য নিয়ে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এবং নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে বিপর্যস্ত ও লাঞ্ছিত করতে তারা মোটেও কুণ্ঠিত নয়।
আমরা জানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের শাসকরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে বড় বড় থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের পরামর্শ গ্রহণ করে থাকে। এমন একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের নাম ‘র‌্যান্ড কর্পোরেশন’। এর কাজ হলো আমেরিকার সামাজিক, রাজনৈতিক, সমরনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে গবেষণা করা। এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণার ভিত্তিতে চূড়ান্ত তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন নীতি বা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই থিঙ্ক-ট্যাঙ্কটি ভালোভাবেই অবগত ছিল যে, মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈর শাসকরা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার তাঁবেদারী করতে করতে একেবারে পচে গিয়েছিল। বাইরে তাদের ঠাটবাট ও জৌলুসের ইমেজ রক্ষার চেষ্টা চললেও তাদের বিরুদ্ধে জনমনে ঘৃণার  মাত্রা চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। তাই তারা আমেরিকার তেল প্রাপ্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থ রক্ষায় স্বৈরাশাসকদের হটিয়ে উদার নৈতিক বা মডারেট মুসলিম নেটওয়ার্ক  তৈরি করার কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শ দেয়। এরপর আমরা দেখি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আরব বসন্ত। র‌্যান্ড কর্পোরেশন ভেবেছিল, গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে এভাবে লিবারেল মুসলিম সরকার গঠন করে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করা যাবে। কিন্তু নির্বাচনের পর দেখা গেল মিসরসহ বিভিন্ন দেশে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের পরাজয়ের দৃশ্য। মিসরে ব্যর্থতার বিষয়টি তাদের জন্য খুব বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই মুরসির বিরুদ্ধে মার্কিন ও ইসরাইলি ষড়যন্ত্র নির্মম রূপ নেয়। মুসরির বিরুদ্ধে মিসরে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। হাজার হাজার মিসরীয়দের রাজপথে হত্যা করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। পাশ্চাত্যসহ বিভিন্ন মিডিয়া নিহত ব্যক্তিদের শুধু মুরসির ব্রাদারহুড দলের সমর্থক বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এসব প্রচারণা যে সঠিক নয় সে কথা এখন উচ্চারণ করছেন বিখ্যাত ব্যক্তিরাও। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় মিসরীয় বংশোদ্ভূত প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিক রামাদানের কথা। তিনি বলেছেন, মিসরে এবারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যারা ব্যাপক ও অব্যাহত বিক্ষোভ করে এসেছেন তাদের মধ্যে এমন নারী-পুরুষও ছিলেন যারা ব্রাদারহুডের লোক নয়, সালাফি কিংবা ইসলামপন্থীও নয়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন তারুণ্যে ভরা ব্লগার, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং কষ্টিক খৃস্টানও। আসলে মিসরের জনগণের কাছে এখন বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মুরসি ও ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় চালানো হয়েছে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের রেখে যাওয়া সেনাবাহিনী, বিচারক ও আমলারা কায়েমি স্বার্থের কারণেই গণতন্ত্রকামী মুরসির শাসনকে বরদাশত করতে চায়নি।
অবশেষে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসির কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত মুহাম্মদ আল বারাদিও স্বীকার করলেন যে, মোহাম্মদ মুরসি সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন এবং বাস্তবতা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্র হয়েছে। হোসনি মোবারকের শাসন আবার ফিরে আসছে। তিনি আরো বলেনÑ মিসরের সেনাবাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম ও অর্থনৈতিক সেক্টরে মোবারকের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে এবং এ কারণে মুরসিকে সরিয়ে দেয়া সহজ হয়েছে। এছাড়া মিসরের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পেছনে কয়েকটি আরব দেশ এমনকি আমেরিকা ও ইসরাইলেরও হাত ছিল। উল্লেখ্য যে, আল বারাদি এর আগে মুরসির সমর্থক বিক্ষোভকারী জনতার উপর সেনাবাহিনীর নৃশংস দমন অভিযান ও হত্যাকা-ের প্রতিবাদে অস্থায়ী সরকারের প্রধান আদলি মানসুরের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দুই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এই দুই মাসে মিসরে দমন-অবদমন, হত্যাকা- এবং বহু অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে কেউ কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় মুরসির ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে সেনা অভ্যুত্থানের ব্যাপারে যুক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের এমন বিশ্লেষণ যে প্রহসনমূলক তা আল বারাদির বক্তব্য থেকেও উপলব্ধি করা যায়। আল বারাদি তো স্পষ্টভাবেই বলেছেন, মুরসি সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন এবং বাস্তবতা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্র যে হয়েছে তার বড় প্রমাণ হলোÑ স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের দীর্ঘদিনের শোষণ-দুর্নীতি ও গণবিরোধী শাসনের ফলে দেশে যে পর্বতপ্রমাণ সমস্যা ও সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, তা দূর করার জন্য তো মুরসির হাতে কোনো জাদুর কাঠি ছিল না; দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, অপশাসন ও জনদুর্ভোগ দূর করার জন্য মুরসির সময়ের প্রয়োজন ছিল; কিন্তু কায়েমী স্বার্থের প্রতিভূ মিসরের সেনাবাহিনী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগ মুরসিকে সেই সময় দেয়ার জন্য মোটেও রাজি ছিল না। এ কারণে মাত্র এক বছরের মধ্যেই মুরসির বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানো হলো। আল বারাদিও স্বীকার করেছেন যে, দেশের কোনো কোনো মহল বিদেশীদের সাথে যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে মুরসি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার তৎপরতা চালিয়েছিল। এজন্য তারা মিসরের বিভিন্ন শহরে গোপন বৈঠকও করেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বহু মানুষকে মুরসির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামিয়ে আনা হয় এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনী মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
মিসরে আপাতত ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়েছে। সেনা সমর্থিত অস্থায়ী সরকারে মোবারকপন্থীদের প্রভাব ও আধিপত্যের বিষয়টি এখন স্পষ্ট। বর্তমান অস্থায়ী সরকারে মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও উচ্চপদে যেসব ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগই সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের প্রশাসনের গুরত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ফলে মিসরের বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্যই মোবারকের অনুগত। বলা যায়, মোবারক আমলের মত জরুরি অবস্থা মিসরে আবার ফিরে এসেছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী মুরসির সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে গুলী চালাচ্ছে। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, মিসরের বর্তমান সরকার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার নামে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মোট কথা মোবারক আমলে মিসরে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল এখন সে অবস্থাই বিরাজ করছে। তাই এখন প্রশ্ন জাগে, মুরসির মাত্র এক বছরের সরকারের আমলে যেসব সেক্যুলার ও বামপন্থী রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীরা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সুশাসনের বুলি আউড়িয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন তারা দেশটিকে কোথায় নিয়ে গেলেন? জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ও মুক্তির চেতনাকে তারা এভাবে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিলেন কেন? মিসরের জনগণতো হোসনি মোবারককে খুনি বলেই মনে করে। কিন্তু তারপরও আদালত তাকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে দিল। আরব বসন্ত মিসরের সাধারণ জনগণের মুক্তির ব্যাপারে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল, প্রতিহিংসাপরায়ন ও দায়িত্বহীন রাজনীতিবিদদের অপতৎপরতা আপাতত তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে দিল। আরো লক্ষণীয় বিষয় হলো, মুরসি বিরোধী আল বারাদি সেনাসমর্থিত অস্থায়ী সরকারের সাথে হাত মিলালেও আজ তাকেও স্বীকার করতে হচ্ছে যে, মোহাম্মদ মুরসি সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন এবং বাস্তবতা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কঠোর ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমরা জানি যে, ষড়যন্ত্রকারীদের স্থায়িত্ব বেশিদিনের নয়, অবশেষে জয় হয় সত্য ও ন্যায়ের। মুরসির ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের রক্তে লাল হচ্ছে আজ মিসরের নীলনদ। ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চলছে জেল-জুলুম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন। তবে ইতিহাস এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জনসমর্থিত দলকে বেশিদিন দাবিয়ে রাখা যায় না। জনগণের সমর্থনে জননন্দিত দল ব্রাদারহুডের বিজয় আগামীদিনে অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। এটাই প্রকৃতির বিধান।
দুঃখের বিষয় হলো, ব্রেড ও বাটারের পূজারিরা শুধু আমেরিকা বা মিসরেই থাকে না, বাংলাদেশেও তাদের অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও টকশোতে তারা ইনিয়ে বিনিয়ে ব্রাদারহুড ও মুরসিকে সাম্প্রদায়িক ও চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইসলামের নামে যেন তাদের গাত্রদাহ হয়। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসলামের মর্মবাণীর অবলোকে যখন দেশ ও সমাজ শাসিত হয়েছে তখন শুধু মানুষ নয় প্রকৃতিও বিকশিত ও শান্তিময় জীবন লাভ করেছে। কবি নজরুল এ বিষয়টি জানতেন। তাই তিনি তার লেখায় সা¤্রাজ্যবাদী বিদেশী শক্তি ও দেশীয় শোষক সমাজপতিদের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন। কিন্তু এখন আমাদের অনেক রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতিসেবী মুখে নানাভাবে নজরুলের প্রশস্তি গাইলেও আচরণে বিদেশী সা¤্রাজ্যবাদ ও দেশীয় শোষক ও শাসকদের পদলেহনেই ব্যস্ত। পরাজিত মানসিকতার এইসব অভিনেতারা কখনো বলতে পারবে না ‘উন্নত মমশির’। আমরা জানি ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছিলেন। এই ভাদ্র মাসেই তাকে কেন্দ্র করে কিছু কথা বলার চেষ্টা করলাম। জানি না ভাদ্রের এই সাতকাহনে জাতির কোনো উপকার হবে কি না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads