মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

আইন-শৃঙ্খলা প্রসঙ্গ


আওয়ামী সরকারের শেষ সময়ে এসে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অপহরণ, গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, কমিশনবাজি, টেন্ডারবাজি, জালিয়াতি, দখলবাজি, প্রতারণা, নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্য, ঘুষ ও দুর্নীতি বহুগুণে বেড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে অনেকগুলো চাঞ্চল্যকর হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর আন্ডার ওয়ার্ল্ড অপরাধ জগতের গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়ংকর সদস্য কিলার শিমুলের কাছ থেকে সাম্প্রতিক সময়ের অপরাধ জগতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১-এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল কিসমত হায়াত এক সংবাদ সম্মেলনে কিলার শিমুলের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য জানিয়ে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে বসে, বিদেশে থেকে, প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে থেকে এবং আত্মগোপনে থেকে অপরাধ ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। ধৃত আসামী শিমুল কথিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ব্যাংকক সুমনের নির্দেশে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও হত্যাকা- সংঘটিত করে আসছে বলে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। ব্যাংকক সুমনের নির্দেশে গত এক বছরে সে মহাখালী এলাকায় আরও কয়েকজনকে গুলী করে হতাহত করার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। একজন ব্যাংকক সুমনের নির্দেশে শিমুলের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, মাদক ব্যবসায়ে লিপ্ত থাকার মতো আরও অসংখ্য দাগী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে বিভিন্ন ধরনের গুরুতর অপরাধ সংঘটনে সক্রিয় রয়েছে। বিশেষত কারাগারে বসে, সরকার ও সরকারি দলের মদদে এবং আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে জামিনে বেরিয়ে এসে দাগী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লোমহর্ষক তৎপরতা উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে।
ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীÑ অপরাধীরা সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাই সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে-ই থেকে যাচ্ছে। সশস্ত্র সন্ত্রাস, সিরিয়াল কিলিং, অপহরণ, খুন, গুম, প্রত্যক্ষ অপরাধ সংঘটন ও অব্যাহত চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, জালিয়াতি, প্রতারণা, মাদক ব্যবসায়, নারী ও শিশু পাচারের মতো অপরাধমূলক ঘটনাসহ বহুসংখ্যক মামলায় আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী, অপরাধীদের কেউ কেউ জেলখানাকে যেন নিরাপদ জোন হিসেবে গ্রহণ করেছে। জেলখানার বাইরে থাকা নিজ দলের কাডারদের দিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়সহ নানাভাবে প্রাপ্ত বিপুল অংকের টাকায় তারা কারাগারেও রাজারহালে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং মোবাইল ফোনসহ তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জেলখানা বা কয়েদখানা থেকে অপহরণ, খুন, গুম, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় এবং চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক সক্রিয় রাখছে। বর্তমান আওয়ামী সরকারের বিগত সাড়ে ৪ বছরে সন্ত্রাস ও অপরাধ অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। জেলখানার চার দেয়ালের ভেতরে বসে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের খবর বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় আগেও প্রকাশিত হয়েছে। ‘কারাগারে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে ল্যাপটপ’ শিরোনামের একটি সংবাদ ২ বছর আগে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পুরস্কার ঘোষিত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে নিয়ম অনুসারে ডা-াবেড়ি পরানোর কথা থাকলেও তাদেরকে আয়েশী জীবন-যাপন ও মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নির্দেশ, কারা কর্তৃপক্ষের সমর্থন ছাড়া বিচারে সাজাপ্রাপ্ত বা আটক বিচারধীন অপরাধীদের কারাগারে বসে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহারের সুযোগ কি করে সম্ভব হচ্ছে?
আওয়ামী সরকার বিগত সাড়ে ৪ বছর ধরে রাষ্ট্রের পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে প্রায়ই হিটলারি কায়দায় ব্যাপকহারে মূলত সরকারবিরোধী বৃহত্তম গণতান্ত্রিক জোটের রাজনৈতিক কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে ব্যবহারের কারণে এমনিতেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাইবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, অপহরণ, খুন, গুম, ধর্ষণ, অবৈধ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। দেশের সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা পুলিশের মূল দায়িত্ব হলেও পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় দাগী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা আরও বেপরোয়া তৎপরতার মাধ্যমে নাগরিক জীবনকে সন্ত্রস্ত ও নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার ও ধরপাকড়ের মধ্য দিয়ে একদিকে দেশের প্রায় প্রতিটি কারাগারে ধারণ ক্ষমতার ৩ গুণেরও বেশি কারাবন্দী ঢুকিয়ে কারাগারগুলোতে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে কারাগারে দাগী অপরাধী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে লালন-পালন ও অপরাধ পরিচালনার সুযোগ দেয়া হলেও বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের নিছক রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করে ডা-াবেড়ি পরিয়ে ও পুলিশী রিমান্ডে নেয়ার অজ¯্র উদাহরণ সৃষ্টি করেছে পুলিশ। বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি বা সংশোধনের জায়গা কারাগার যদি শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কিলারদের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়, তাহলে আইনের শাসন ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার থেকে দেশের সাধারণ মানুষ শুধু বঞ্চিতই হয় না, গোটা সমাজকে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতার বিভীষিকাময় অন্ধকারও গ্রাস করে। আওয়ামী সরকারের শেষ সময়ে এসে জাতীয় সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ও সরকারি দলের মদদে এখন চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দাগী অপরাধীরা আত্মগোপন থেকে বা জামিনে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। নির্বাচনে মাসলম্যান হিসেবে ব্যবহারের জন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের কাছে এই সন্ত্রাসীদের কদর বহুগুণে বেড়ে চলেছে। সন্ত্রাস, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দলবাজি নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মী নামধারীদের সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে বিগত সাড়ে ৪ বছরে পুলিশ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনো প্রকার ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। শাসক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে গত সাড়ে ৪ বছর ধরে পুলিশের শক্তি-সামর্থ্যরে প্রায় পুরোটাই রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম দমনে ব্যবহারের নীতি পরিহার করে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, হত্যা, গুম, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি, লুটপাট ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে পুলিশের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনে ও জবাবদিহিতা এখনও নিশ্চিত করা হবে না কেন? কারাগারগুলোকে সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের শাস্তির জায়গা হিসেবেই দেখতে চায় দেশের জনগণ, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের জায়গা হিসেবে নয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads