সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

কাঙ্ক্ষিত অভিযাত্রার অপেক্ষায়


রাষ্ট্র পরিচালনায় মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও রাজনীতিবিদদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেই নয়, তাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত আচার-আচরণের প্রতিও লক্ষ্য রাখে দেশের জনগণ। জনগণ চায় তারা হবেন কর্তব্যপরায়ণ, নীতিনিষ্ঠ ও সুন্দর আচরণের ধারক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও রাজনীতিবিদরা শুধু জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণেই ব্যর্থ হননি, হতাশ হওয়ার মতো উদাহরণও সৃষ্টি করেছেন। এমন উদাহরণ জাতির জন্য লজ্জাকর। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনের গত ২৯ সেপ্টেম্বরের একটি খবরের কথা উল্লেখ করা যায়। খবরটির শিরোনাম হলো, ‘সরকারের টাকা মেরে দিলেন উপদেষ্টা, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ’।
খবরটিতে বলা হয়, কোনো লোকসান না হলেও পুরো টাকা মেরে দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদরা বকেয়া ফেলেছেন ১২০০ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন চুপ থাকলেও বিটিআরসি শেষ পর্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতার মালিকানাধীন এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাদের ১০টি আইজিডব্লিউ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা উদ্ধার কিভাবে হবে তা কেউ জানেন না। বিষয়টিকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না ট্্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতি ও ব্যবসাকে একাকার করে ফেলা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ও প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিবিদরা ব্যবসায় জড়াচ্ছেন। আর প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো রাজস্ব পাচ্ছে না কিংবা রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। তাই ব্যবসা থেকে রাজনীতিকে আলাদা করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসতে পারেন কিন্তু তারা যদি অধিক মুনাফার জন্য রাজনীতিতে আসেন, তখন রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা থাকবে না। এতে শাসন ব্যবস্থাও ক্রমাগত ভেঙ্গে পড়বে।
উল্লেখ্য যে, প্রশ্নবিদ্ধ এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে রয়েছেন সরকারের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। শুরু থেকে তাদের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির পাওনা বকেয়া রেখে আসছে। এর ফলে ধীরে ধীরে পাওনার পরিমাণ ১২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। অর্থ পরিশোধের জন্য বিটিআরসির পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে পাওনা পরিশোধ না করে সময় ক্ষেপণ করে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সরকারের শেষ সময়ে এসে পাওনা পরিশোধ না করে এ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার পরিবর্তনের পর  কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে। এ কারণেই হয়তো তারা পুরো টাকা মেরে দেয়ার উদ্দেশ্যে পাওনা পরিশোধ থেকে বিরত রয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পাওনা পরিশোধ না করায় আগস্ট মাসে ৪টি আইজিডব্লিউ’র সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলো বিটিআরসি। কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের চাপে এদের ছেড়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে ২৬ আগস্টের মধ্যে ৬টি অপারেটরকে ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে সময় বেঁধে দেয় বিটিআরসি। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয়নি।
বিটিআরসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক জেনেছেন, বকেয়া পরিশোধ না করা প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রী, উপদেষ্টা এমপিসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মালিকানাধীন হওয়ায় এদের ওপর বিটিআরসির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
রাজনৈতিক বিবেচনায় পাওয়া এসব লাইসেন্সের মালিক বিটিআরসিকে টাকা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা কলের পুরো টাকাই রেখে দিচ্ছেন, যার ফলে সরকারের হাজার কোটি টাকার রাজস্ব চলে যাচ্ছে আইজিডব্লিউ’র প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেটে। এই যদি হয় সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও রাজনীতিবিদদের আচরণ, তাহলে দেশ এগুবে কিভাবে? আর জনগণই বা ভরসা রাখবে কাদের ওপর? রাজনীতি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে এমন মন্দ উদাহরণ থেকেই চলে আসে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রসঙ্গ। দুর্বৃত্তায়নের এমন চক্র ভাঙ্গার ক্ষমতা কি সরকারের নেই? রাষ্ট্র ও সমাজ কি দুর্বৃত্তায়নের এমন দৌরাত্ম্য চেয়ে চেয়ে দেখতেই থাকবে? রাষ্ট্র এবং সমাজে যখন এমন পরিস্থিতি বিরাজ করে তখনই অনিবার্য হয়ে ওঠে গণআন্দোলন কিংবা গণজাগরণের অভিযাত্রা। আমাদের সামনে হয়তো অপেক্ষা করছে এমন অভিযাত্রাই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads